প্রসঙ্গঃ মহানবী স. এর অবমাননা, ইসরাইল এখন আমেরিকার গলার কাঁটা
লিখেছেন: ' guest' @ শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১২ (১১:৩৪ অপরাহ্ণ)
মহানবী স. এর অবমাননাকারী চলচ্চিত্র প্রযোজনা তথা অর্থায়ন করেছে এক ইয়াহুদী। এদের কুরআনের অভিশপ্ত জাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হল মার্কিন স্বার্থ। লিবিয়ার মার্কিন একজন ঝানু কুটনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ চার জন নিহত হয়েছে। আফগানিস্তানের প্রকাশিত খবরে এখন পর্যন্ত ১২ জন (অপ্রকাশিত খবরে আরও বেশি হয়) নিহত হয়েছে। এছাড়াও তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে আরও বেশি। আফগানিস্তানের ১১ টি তেলের ট্যাংকার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হামলার আশংকায় পাকিস্তান থেকে তাদের রসদ সরবরাহের রুট (এটাই তাদের সবচেয়ে সস্তা রুট) আপাততঃ বন্ধ আছে। এছাড়া সারা বিশ্বে মার্কিন নাগরিকরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। বিভিন্ন দেশে তাদের দুতাবাসে হামলার আশংকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এতে নিরাপত্তা বাবদ খরচও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে মার্কিন ব্যবসায়িক স্বার্থ যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে মার্কিন পণ্য বয়কটের মুখে পড়েছে। ভবিষ্যতে আরও পড়বে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় ইতঃমধ্যেই মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে মার্কিন অন্যতম প্রভাবশালী ওয়েবসাইট ইউটিউব ব্লক করে দেয়া হয়েছে। এতে তাদের মূল ব্যবসা বিজ্ঞাপনের বাজার যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাতে কোনই সন্দেহ নেই। এছাড়া পাকিস্তান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য মার্কিন সরকারের বেশ খরচ করতে হয়েছে। পাকিস্তানের জন্য উর্দূ ভাষায় একটি বিজ্ঞাপন বানানো হয়েছে ৭০ হাজার ডলার খরচ করে। এটি প্রচারে আরও খরচ করতে হবে। হিসেবে করলে দেখা যাবে এই সামান্য ভিডিওর কারনে মার্কিন অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ডলার ছাড়াবে। এর মন্দার যুগে আমেরিকার জন্য এটা একেবারে কম নয়।
পক্ষান্তরে এই ভিডিওর মূল টর্গেট মুসলমানদের ক্ষতির পরিমাণ কি? পৃথিবীর একজন মুসলমানও এই ভিডিও দেখে ঈমান হারাবেন না বা মুহাম্মাদ স. সম্পর্কে তাদের শ্রদ্ধার ঘাটতি হবে না। বরং বিভিন্ন দেশে এর প্রতিক্রিয়া ও আমাদের আশেপাশের সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ করে দেখা যায় এই ঘটনা মুসলমানদের ইসলামী চেতনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মুহাম্মাদ স. এর ব্যপারে শ্রদ্ধা ও আরও বেড়ে গেছে। ধুরন্ধর ইয়াহুদী জাতি যে এটা বুঝে না তা নয়। এ ব্যপারে পরে বলছি। অন্য দিকে যারা বানিয়েছে অর্থ্যাৎ ইয়াহুদীরা তারাও এখন পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ। মুসলমান দেশে ইসরাইলের কোন দুতাবাস বা রাষ্ট্রদূত নেই। এক ছিল মিশরে তা নির্বাচনের আগে বিক্ষোভের মুখে অস্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আরেক আছে ধর্ম নিরপেক্ষ তুরস্কে। সেখানে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে, কিন্তু সেটাও মার্কিন সরকারের বিরূদ্ধে, ইয়াহুদীদের বিরূদ্ধে নয়। এখন পর্যন্ত শুধু একজন ইসরাইলী সৈন্যের নিহত হবার কথা শুনে গেছে মিশর সিমান্তে তাও এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত নয়। আর প্রযোজক ইয়াহুদী পলাতক। তার টিকিটির নাগাল কেউ পায় নি এখনও।
অর্থ্যাৎ এই সিনেমার সাথে জড়িত দুই পক্ষ মুসলমান ও ইয়াহুদীদের তেমন কোন ক্ষতিই হল না। মধ্যখানে বোকা মার্কিনীরা মারা পড়ল আর তাদের কোটি কোটি ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হল এমন এক সময় যখন তারা প্রচন্ড অর্থ কষ্টে হিমশিম খাচ্ছে।
এখন দেখি এর পিছনে কি আছে? আসলে অত্যাচারী চিরকালই ভীরু। পরম মাত্রার সামরিক শক্তি ও পারমানবিক অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল সব সময়ই আতঙ্কে থাকে। বিশেষতঃ ইদানিং ইরানের পরমানু গবেষণা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ইসরাইল চেয়ে ছিল ইরান আক্রমন করবে। কিন্তু একা করতে সাহস করছে না। চেয়েছিল আমেরিকা বা জাতিসংঘের সমর্থনে করবে। কিন্তু ইরাকে ও আগফানিস্তানে দুই দুইটি যুদ্ধে পর্যদুস্ত হয়ে আমেরিকার অবস্থা এখন ত্রাহি মধুসূদন। বিশেষ করে আফগানিস্তানে তাদের অবস্থাকে কাফের বিশ্লেষকরাই সামরিক পরাজয় বলছেন। আর ইরাক যুদ্ধে যদিও তারা সাদ্দাম হোসেন কে নিহত করতে সফল হয়েছে কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক ও কুটনৈতিক বিজয় তারা পায়নি। বরং বর্তমান শিয়া ইরাক প্রশাসন অনেক বেশি ইরান ঘেঁষা। যা এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব ক্ষুন্ন করেছে এবং ইরান ও সিরিয়ার প্রভাব বাড়িয়েছে। এর উপর এই যুদ্ধের কারণে তাদের উপর সওয়ার হয়েছে বিপুল অর্থনৈতিক ঘাঠতি। এই অবস্থায় আমেরিকার পক্ষে ইরান আক্রমন করা একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু না। এছাড়া ইরাক ও আফগানিস্তানের চেয়ে ইরান সামরিক ভাবে অনেক অনেক শক্তিশালী। এর উপর ইরানের সাধারণ জনগনের সংহতি ইরাক ও আফগানিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। ইরাক ছিল শিয়া, সুন্নি ও কুর্দি এই তিন ভাগে বিভক্ত। আর আফগানিস্তানে ছিল অআফগান উত্তর আঞ্চলীয় জোট এবং আফগান তালেবান বিরোধী জোট। সেই হিসেবে ইরানে তেমন কোন বিরোধী জোট নেই যারা আমেরিকার হয়ে ইরানের ভিতর থেকে আমেরিকাকে সাহায্য করবে। ইরান আক্রমন হবে তাই অনেক বেশি ব্যয় বহুল, রক্তক্ষয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী। সংগত কারণেই মার্কিন প্রশাসনের পক্ষে ইসরাইলের এই আহবানে সাড়া দেয়া সম্ভব ছিল না। এমন কি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাত করতেও অপারগতা প্রকাশ করেছেন। বরং তিনি এক কমেডি শোতে নিজের পরিবারকে সময় দিবেন।
এর প্রেক্ষিতে ইরসাইল আমেরিকার উপরে এক প্রতিশোধ নিলো তড়িঘড়ি করে এক বিতর্কিত চলচ্চিত্র প্রকাশ করে। না হলে এটা তাদের পরিকল্পনা ছিল না। ইরান রেডিওতে বলা হয়েছে এর উদ্দেশ্য ছিল ইননোসেন্স অব বিন লাদেন নামে ভিডিও বানানো যেখানে বিন লাদেন সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে কিছু দোষ ও অপবাদ চাপানো। আমেরিকার অসহযোগিতার তারা তড়িঘড়ি করে কিছু কলাকুশলী ডেকে এনে ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটি রেকর্ড করায় এবং আরবীতে ডাবিং করায়। পরিশেষে প্রকাশ করে। যদিও অভিনেতা অভিনেত্রীদের বলা হয়েছিল দুই হাজার বছর আগের এর বীরের উপরে ডেজার্ট ওরিয়র নামে এক চলচ্চিত্র হবে।
এই ইসরাইলে মধ্যপ্রাচ্যে বসানোর জন্য সবচেয়ে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিল আমেরিকা। এর মূল কারণ ছিল মধ্যপ্রাচ্যে এর অস্থিতিশীল পরিবেশ কায়েম করে এতদঃ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করা এবং এই এলাকার তেল সম্পদ কুক্ষগত করা। এর সাথে ভোটের রাজনীতিতো ছিলই। যে যুগে আমেরিকার ইয়াহুদী ছিল অনেক, সেই তুলনায় মসুলমান ছিল খুবই কম। এছাড়া আমেরিকার বড় বড় ব্যবসা ইয়াহুদীদের হাতে। আমেরিকার প্রধান দুই দলের নির্বাচনী খরচ মূলতঃ ইয়াহুদীরাই বহন করে।
আসলেই এটাই আল্লাহ বিচার। এই ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যে টিকিয়ে রাখতে আমেরিকার প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খরচ, মিডিয়া খরচ, গোয়েন্দা খরচ। অথচ এর বিনিময়ে আমেরিকা তাদের থেকে যড়ষন্ত্র ছাড়া কিছুই পায় নি। এতেও যদি ওদের শিক্ষা না হয়! আল্লাহ তায়ালা কুরআন পাকে ইয়াহুদীদের অভিশপ্ত বলেছেন। বস্তুতঃ ওদের যারা বন্ধু বানায় তারা অভিশপ্ত। অভিশপ্ত ইসরাইল ও ইয়াহুদীরা তাই আমেরিকার জন্য অভিশাপ ছাড়া কিছুই নয়।