রোগ যখন মহামারি আকার ধারণ করে ডাঃ এর ব্যস্ততা তখন বেড়ে যায়। ২
লিখেছেন: ' habib008' @ সোমবার, অগাষ্ট ১, ২০১১ (১:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
মুসলমানদের মধ্যে দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা মহামারি আকার ধারণ করেছে অনেক আগেই। তার চেয়েও দুঃখ জনক হল রোগ সম্পর্কে রুগীর কোন ধারনাই না থাকা। অর্থাৎ রুগী জানে না যে তার রোগ হয়েছে। না জানার কারণে চিকিৎসা নিচ্ছে না । কেও যদি নিজে সেধে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে তখন তাকে নানা কটু বাক্যবাণে জর্জরিত করা হয়। সেই কটু বাক্য হজম করে দীনের দাওয়াতের কাজ করার মত মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে রোগ আরও বাড়ছে।
দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, আবার অজ্ঞতা সম্পর্কেও কোন ধারণা না থাকার কারণে মুসলমানগণ কত যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তার ফিরিস্তি লিখে শেষ করা যাবে না। সব চেয়ে আশংকা জনক কথা হচ্ছে এই অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় মানুষ নিজেকে মুসলমান হিসেবে দাবী করার পরেও এমন কিছু কথা বলে বা কাজ করে যা ইসলাম ও ঈমানের পরিপন্থী। অনেক সময় এতে রোগাক্রান্ত দুর্বল ইমানটাও শেষ পর্যন্ত চলে যায়। এতে অন্য কারো ক্ষতি হোক বা না হোক নিজের আখেরাত নিশ্চিত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যা মোটেও কাম্য নয়।
দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা নিজের মধ্যে আছে কিনা তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। যার কারণে চিকিৎসা করানো আর সম্ভব হয় না। রোগ আছে কিনা তা বুঝার কয়েকটি উপায় আমি বলার চেষ্টা করব আর তার সমাধান কিভাবে করা যায় তা নিয়েও একটু আলোচনা করার প্রয়াস পাব।
১। আদালত থেকে এক সময় বলা হল সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ। এই কথা যারা বললেন বা সমর্থন করলেন বা ফতোয়া নিষিদ্ধ ঘোষণার রায় এর বিরধীতাকারি আলেম সমাজের সাথে মারা মারি করলেন, কোনোও সন্দেহ নাই তাদের ইমান চলে গেছে। কারণ সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ বলা মানে কোরানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা। তাদেরকে তৌবা করে ইমান আনার পরামর্শ দিচ্ছি, তাদের কাছে যদি ইমানের কোন মূল্য থাকে । আবার ইমান আনুন নিজের স্বার্থে। আর না আনলেও আমার কোনও অসুবিধা নাই। আমার কাজ আপনাকে সতর্ক করা । মানা না মানা আপনার ব্যাপার। উল্লেখ্য গ্রামে গঞ্জে ফতোয়ার নামে যা হয়েছে তা আসলে ফতোয়া নয়। তা ছিল গ্রাম্য মাতবরদের সালিশ। এ রকম আরও অনেক রোগে মুসলমানগণ আক্রান্ত।
মুসলমানদেরকে এই সমস্ত মারাত্মক রোগের চিকিৎসার জন্য ডাঃ এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে তাদেরকে যারা দীনি জ্ঞান রাখেন। নবী করীম সঃ বলেছেন بلغوا عني ولو آية অর্থাৎ পৌঁছে দাও আমার পক্ষ হতে, যদিও তা এক আয়াত পরিমাণও হয়। যাদের উপর এই দায়িত্ব আছে তারা অনেকেই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছেন। নিজেকে নিয়েই যেন তারা ব্যস্ত। ভাবটা যেন এমন, ‘কে কি করল তাতে আমার কি?’ অথচ আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে দাওয়াতের কাজ করার জন্য। كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ ۗ তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। সুরা আলে ইমরান = ১১০,
আর যারাও কিছুটা দাওয়াতের কাজ করছেন তাদের অনেকের কর্ম পদ্ধতি সঠিক না হওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। আল্লাহ তালা বলেছেন ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ ﴿١٢٥﴾ আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।
উপরোল্যেখিত রোগে আক্রান্ত কোনোও ব্যক্তির সাথে তার ভুল ধারনা সম্পর্কে কথা বলতে গেলে তারা যে কারণে কথা গুলো গ্রহণ করেন না তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যে
২/ তারা মনে করেন আপনি বা আমি আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য তার সাথে ধর্ম সম্পর্কে কথা বলছি। এটা হচ্ছে আরেকটা রোগ যা আগেরটার চেয়েও মারাত্মক। এরোগের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে সেকুলারিজমের ভণ্ডামি। তারা মনে করে ধর্ম ব্যক্তিগত ভাবে পালন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ভাবে ধর্ম পালন করা যাবে না।
এই রোগটির কারণেও ইমান চলে যাই। কারণ তাদের কথা যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে কোরানের কিছু অংশ অস্বীকার করা হয়, যা ইমানের পরিপন্থী। আল্লাহ তালা বলেন , أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ সুরা বাঁকারা ৮৫
অর্থাৎ তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।
উল্লেখিত দুটি প্রধান রোগ থেকে মুসলমানদের মুক্তি পাওয়া খুব জরুরী । এর জন্য দায়ীকে অনেক গুলো কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। যার মধ্যে
১/ ইখলাস বা নিষ্ঠা। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দাওয়াত দিতে হবে।
২/ যাকে দাওয়াত দিবেন তার জন্য আল্লাহর কাছে হিদায়তের দোয়া করতে হবে।
৩/ তার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। যাতে সে বুঝতে পারে যে আপনি তার কল্যাণ চান।
৪/ নরম ভাষা ব্যবহার করতে হবে।
৫/ যথা সম্ভব তার দুনিয়াবি উপকারও করতে হবে।
৬/ বার বার দাওয়াত দিতে হবে।
৭/ দায়ীকে শরিয়ত মতে চলতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক দায়ী বানিয়ে দিন, আপনাকে ধন্যবাদ।
@মুসাফির, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক দায়ী বানিয়ে দিন,আমীন ,আপনাকেও ধন্যবাদ।
জবাব
সুন্দর এই লেখাটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@রাসেল আহমেদ, আপনাকেও ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহ।
@anamul haq, আপনাকেও আল্লাহ তালা উত্তম বিনিময় দিন
সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@সত্যের সন্ধানী ১০০%, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ