আমার হারিয়ে যাওয়া ছাতাটি
লিখেছেন: ' Habibullah' @ সোমবার, জুন ৬, ২০১১ (৩:০৯ পূর্বাহ্ণ)
আমি তখন সাতকানিয়া মির্জাখিলে এক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করি। ঢাকা থেকে আমার সমবয়সী মামা ও কয়েকজন বন্ধু এল বীর চট্টলার দর্শণীয় স্থান সমূহ দেখার জন্য।
পরের দিন # সকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বের হলাম। দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামের ফয়েসলেক,আন্দকিল্লাহ, সার্কিটহাউজ হাটহাজারী মাদ্রাসা ইত্যাদি দেখে বিকালে সাতকানিয়ার দিকে ফিরছি। আকাশে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। মামা বললেন আমরা বান্দরবান যেতে চাই। দিনের এই শেষ বিকেলে অল্প সময়ে তা দেখা সম্ভব নয় বলে আমি যেতে চাইনি। তাদের পিড়াপিড়িতে অবশেষে কেরানীর হাট নেমে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আছরের পর পর বান্দরবানের (মেঘলা)য় গিয়ে পৌছলাম। এমনিতেই এই মেঘ এই রোদ্র অবস্থা, তার উপর মেঘলার সেই সুউচ্চ পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে গেলাম। সুবহানাল্লাহ! মেঘগুলো পাহাড়ের গা ঘেষে ঘেষে উড়ে যাচ্ছিল। বিকাল এবং বৃষ্টি থাকায় মেঘলা পিকনিক স্পট গেট বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা বিশেষ অনুরোধ করে ঢুকলাম। টিকিট মাষ্টার আমাদেরকে বললেন আধাঘন্টার মধ্যেই ফেরৎ আসতে হবে। আমার মোবাইল নাম্বারটি তিনি টুকে রাখলেন। ঢুকে পড়লাম মেঘলায়। ঝুলন্ত সেতু আর লেকের উচু নিচু ধারে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম। যা ঘটল তা এবার বলছি : সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে প্রায়। বৃষ্টির কারণে চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। ভিতরে একজন পাহাড়ী নিরীহ চিকনাচাকনা লোকের সাথে দেখা হল। অনেক্ষণ যাবৎ সে আমাদেরকে ফলো করছিল। আমাদের কাছাকাছি চলছিল। অথচ তখন মেঘলায় আমরা এ কজন ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়েনি। লোকটি দরিদ্র বলেই মনে হল। লোকটি আমাকে ইশারায় কাছে ডেকে এক শত টাকা চাইল। বলল তার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই। এমনিতেই আমরা লোকটিকে সন্দেহের চোখে দেখছিলাম। এবার সে টাকা চাওয়ায় ছাইরা দে মা কাইন্দা বাচিঁ এই অবস্থা হল। ঝটপট মানিব্যাগ থেকে ৫০ টাকা বের করে দিয়ে কেঁটে পড়লাম। ফিরে আসব এই মুহুর্তে মামার সখ হল দুই একটা ছবি তোলার। ছবি তুলতে গিয়েই ঘটল গঠনাটি। আমার খুব প্রিয় একটি ফোল্ডিং ছাতা ছিল। (প্রিয় বলার কারণ এটা আমাকে আমার এক প্রিয় মানুষ উপহার দিয়েছিল তাই ) পাশে রেখে ছবি তুলছিলাম। ছবি তোলা শেষ হতেই দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে এলাম। কিন্তু …..? আমার শখের সেই ছাতাটা আনতে ভুলে গেলাম। গেইট থেকে বের হতেই আল্লাহর মেহেরবানী কেরানীর হাটের বাস পেয়ে গেলাম।
ছাতাটা হারিয়ে আফসোস করে রাস্তার ভিজতে ভিজতে মাদ্রাসায় এসে পৌছলাম। সকালে এক অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এল।
হ্যালো : আপনি কি গত কালকে বিকালে মেঘলায় এসেছিলেন ওই লোক? হ্যা, কেন ? কি ব্যাপার? আমি মেঘলা থেকেই বলছি। আপনিতো আপনার ছাতাটা ফেলে গেছেন! আমি অবাক হলাম। বললাম, যদিও ছাতাটি আমার খুব সখের কিন্তু এত দুরে গিয়ে ছাতাটি আনা আর সম্ভব হবে না। আপনি এটা নিয়ে নেন। কিন্তু বেচারা নাছুড় বান্দা। আপনি আপনার ঠিকানা বলুন আমি নিয়ে আসতেছি। আবারো অবাক হলাম। যেহেতু সে শুনেছে আমি সাতকানিয়া থাকি তাই সে দুপুরে কেরানীর হাট এসে আমাকে আবার ফোন করল আপনি কোথায় আমি কেরানির হাট এসেছি আপনার ছাতা নিয়ে!!! এবার এবাক নয়, একেবারে হতবাক হলাম। নিজেকে কেমন যেন দোষী দোষী ভাব লাগছে। লোকটিকে একটি হোটেলে বসার জন্য বলে আমি বন্ধুর মটরসাইকেল নিয়ে কেরানীর হাট যাই। উক্ত হোটেলে প্রবেশ করতেই গতকালের সেই দ্ররিদ্র ব্যক্তিটির সৎ ও মায়াবী চেহারাটি দেখতে পেলাম। বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। চা-পান করালাম। এস আলমের একটি বাসে বান্দরবানের টিকিট করে দিলাম। গতকাল যেহেতু আমার কাছে কিছু টাই চেয়েছিল তাই জেজ্ঞেস করলাম কিছু টাকা পয়সা লাগবে? লোকটি কিছুতেই নিতে রাজি হলনা। বান্দরবানের উদ্দেশ্যে এস আলাম ছেড়ে গেল। জানালা দিয়ে যতক্ষণ আমাকে দেখা যায় হাত নাড়ালো। আমি হাত উচিয়ে দাড়িয়েঁই রইলাম, হয়তবা হাত নাড়াইনি। হারিয়ে যাওয়া পুরান একটি ছাতাকে নিয়ে অপরিচিত এই লোকটি কেনই বা এত দুর থেকে নিজের তাগদায় এল তা আজো হিসেব মিলাতে পারিনি। গঠনাটি মনে হলে এখনো হিসাব মিলাতে আনমান হয়ে যাই……………………
আমার মনে হয় লোকটি খুব ভাল। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
পোষ্টখানি পড়ে খুব ভাল লাগল । এখানে সততা বিজয়ী । কিন্ত লোকটা এত দূর থেকে আসলো একদিন থাকার আমন্ত্রন জানালেন না ? আর মাত্র এক কাপ চা পান করিয়ে……… !
চমৎকার একটি সত্য গল্প। ধন্যবাদ
দারিদ্রতা তার সততা ম্লান করতে পারেনি।