আলেম কারা এবং প্রকৃত আলেমের পরিচয়
লিখেছেন: ' হাফিজ' @ রবিবার, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭ (১২:৫৯ অপরাহ্ণ)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
প্রথমে আমরা দেখবো সাহাবী কারা:
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সংস্পর্শে যারা এসেছেন এবং রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক যারা এজাযত (অনুমুতি) প্রাপ্ত হয়েছেন তারাই সাহাবী। অর্থাৎ শুধু সোহবত বা সংস্পর্শে আসার কারণে সাহাবী হবে না, কেননা আবু জেহেল, আবু লাহাব, আবু তালিব এরাও রসূলের সংস্পর্শে এসেছে কিন্তু সাহাবী হিসেবে রসূল কর্তৃক অনুমোদন** লাভ করেনি।
আবার অনুমোদন আছে কিন্তু সোহবত প্রাপ্ত হয়নি তিনিও সাহাবী হবেন না। যেমন ওয়ায়েস করণী (রহঃ), যিনি রসূল কর্তৃক প্রশংসিত এবং অনুমোদন প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও শুধু সোহবতে আসতে না পারার কারণে সাহাবী ছিলেন না। সাহাবীদের সংস্পর্শে আসার কারণে তাবেয়ীন ছিলেন।
তাবেয়ী কারা?
সাহাবা আজমাঈন (রাঃ) এর সংস্পর্শে যারা এসেছেন এবং সাহাবী কর্তৃক এজাযত (অনুমতি) প্রাপ্ত হয়েছেন তারাই তাবেয়ী।
অর্থাৎ সাহাবীদের শুধু সোহবত বা সংস্পর্শে আসার কারণে কেউ তাবেয়ী হবেন না, তাদের সংস্পর্শে আসা, তাদের থেকে তালিম নেয়া এবং তাদের কর্তৃক এজাজৎ বা অনুমোদন প্রাপ্ত হলেই তাকে তাবেয়ী বলা হয়।
তাবে-তাবেয়ী কারা? ঠিক একইভাবে তাবেয়ীনদের ছাত্রকে তাবে-তাবেয়ীন বলা হয়।
আলেম কারা?
ঠিক সেইভাবে প্রকৃত আলেম সেই হবে যিনি অন্য একজন প্রকৃত হক্কানী আলেম এর “সোহবত” , “সংস্পর্শে” গিয়েছেন এবং তার কর্তৃক এজাজৎ প্রাপ্ত হয়েছেন। এবং সেই প্রকৃত আলেম অন্য একজন প্রকৃত আলেম থেকে এজাজৎ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং এভাবে তার সনদ বা chain রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
দলীল? এই হাদীসটি খেয়াল করুন:
“আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী” [তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজা] [হাদিস স্তর : হাসান, সহীহ]
উত্তরাধিকার বলতে কি বুঝায়? কেউ যদি বলে আনাস এর ছেলে আব্দুল্লাহ তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বুঝায় আনাস এর উত্তরিধাকারী আব্দুল্লাহ হবে। তার সম্পদ স্বাভাবিকভাবেই উত্তরাধিকার হিসেবে আব্দুল্লাহর কাছে পোঁছবে।
ঠিক সেইভাবে প্রকৃত আলেম সেই হবে যিনি উত্তরাধিকারী হিসেবে অন্য একজন প্রকৃত হক্কানী আলেম এর “সোহবত” , “সংস্পর্শে” গিয়েছেন এবং তার কর্তৃক এজাজৎ প্রাপ্ত হয়েছেন। এবং সেই প্রকৃত আলেম অন্য একজন প্রকৃত আলেম থেকে এজাজৎ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং এভাবে তার সনদ বা chain রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
উপরের হাদীসটিই তার দলিল। মনে করুন, একজন ভদ্রলোক এর নাম “আনাস” , তার সন্তানের নাম “আব্দুল্লাহ” , তার সন্তানের নাম “রহিম” এবং সবশেষে রহিম এর ছেলে “সালমান”
আনাস –> আব্দুল্লাহ –> রহিম –> সালমান
রহিম এর ছেলে সালমান তাহলে আমরা বলতে পারে “সালমান” তার পিতা “রহিম” এর উত্তরাধিকারী।
এখন ধরুন প্রমাণিত হলো রহিম এর প্রকৃত পিতা আব্দুল্লাহ নয়। তাহলো কিন্তু কোনোভাবেই বলা যাবে না “রহিম” আব্দুল্লাহর উত্তরাধিকারী। কিন্তু “সালমান” তার পিতা “রহিম এর উত্তরাধিকারী যদিও এটা সঠিক। ঠিক সেইভাবে কোনো একজন আলেম উনি অন্য একজন আলেমের থেকে এজাজৎ পেলো যিনি যোগ্যতাসম্পন্ন কিন্তু তিনি কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন আলেম থেকে সনদ পাননি, তাহলে কিন্তু তার সাথে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত কোনো উত্তরাধিকারী সম্পর্ক হলো না। যেকারণে সেটা আর গ্রহণযোগ্য নয়।ঠিক সেইভাবে কেউ যদি প্রচুর ইসলামিক বিষয়ে পড়াশোনা করে থাকেন কিন্তু কোনো আলেমের সংস্পর্শে এসে তালিম না নেয় এবং এজাজৎ প্রাপ্ত না হয় তাহলে সে “স্কলার” , “পন্ডিত” , “মহাজ্ঞানী” ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত হতে পারেন কিন্তু সে “আলিম” হবে না। কেননা রসূলের হাদিস অনুযায়ী সেই “উত্তরাধিকারী” বৈশিষ্ট অর্জন করতে পারেনি।
এ কথার সত্যতা আমরা তাসাওফ বা তরিকতের লাইন এ যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। যেমন কেউ নিজেকে “পীর” দাবি করলো। আমরা কিভাবে যাচাই করবো সে সঠিক/হক্কানী শায়খ কিনা? এর যাচাইয়ের মানদণ্ড হলো দেখতে হবে তিনি অন্য কোনো হক্কানী শায়খের সংস্পর্শে থেকে তালিম নিয়ে এজাজৎ প্রাপ্ত হয়েছেন কিনা এবং সেই শায়খের সিলসিলা বা chain রাসূলুল্লাহ (সা) পর্যন্ত পোঁছেছে কিনা? যদি পৌঁছে তাহলেই তিনি প্রকৃত পীর/শায়খ।
তাই ইসলামিক বিষয়ে কারো প্রচুর পড়াশোনা থাকলেই সেই আলেম হবে না কেননা তার শায়খ GOOGLE, কোনো প্রকৃত আলেম নয়। আপনি নামকরা প্রকৌশলী হতে পারেন, যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তার হতে পারেন, প্রথিতযশা Farmasist হতে পারেন। এগুলো অর্জন করার জন্য যেমন আপনার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী বা এজাজৎ নিতে হয়েছে তেমনি আলেম হতে গেলেও তেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আলেমদের নিকট থেকে সার্টিফিকেট/এজাজৎ/ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
উপসংহার
এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, বুঝলাম সব কিছু কিন্তু আগে বলুন আপনি আলিম কিনা? এর উত্তর হলো “না, আমি আলিম নই। আমি আলেমদের সংস্পর্শে আছি কিন্তু এজাজৎ পাইনি” ।
এখন আপনারা বলতে পারেন “আপনি যদি আলেম না হন তাহলে আপনার কথা মানব কেন?”
এর উত্তর “আমার কথা আপনি মানবেন না, বরং আপনি এই কথাগুলো আলেমদের সাথে আলাপ করবেন। যদি তারা এটাকে অনুমোদন দেন তখনি আপনি সেটা মানবেন” ।
হেদায়েতের পথে যারা আছেন তাদেরকে সালাম।
** অনুমোদন বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে সাহাবী হিসেবে স্বিকৃতি পাওয়া, অন্য সাহাবীদের মধ্যে সাহাবী হিসেবে গ্রহনযোগ্য হওয়া। এমন নয় যে রসুলুল্লাল্লাহ (সা) থেকে মৌখিক/লিখিত হতে হবে। রসুলুল্লাল্লাহ (সা) এর মৌন সম্মতিও এর অন্তর্ভুক্ত।
জাযাকাল্লাহ ।