একটি শিক্ষণীয় ঘটনা এবং আমাদের সন্তান
লিখেছেন: ' হাফিজ' @ রবিবার, অক্টোবর ২১, ২০১৮ (১২:২৮ অপরাহ্ণ)
আমরা অনেকেই জানি গির্জার দেয়ালে কাল্পনিক বিভিন্ন ছবি অঙ্কন করা হয়। হজরত ঈসা (আ), হজরত মরিয়ম (আ) এর মতো সম্মানিত ব্যাক্তিগনের ছবি অঙ্কনকে খৃস্টানগণ পুণ্যের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন।
কয়েক শতাব্দী আগের ঘটনা। তেমনি এক গির্জায় ছবি আকার জন্য একজন শিল্পী নির্বাচন করা হলো। উদ্দেশ্য হলো, ঈসা (আ) এর সচিত্র জীবনের ছবি অঙ্কন করা। সবকিছু আকা শেষ হলো, শুধু বাদ থাকলো দুজন ব্যাক্তির ছবি চিত্রায়িত করা। হজরত ঈসা (আ) এর ছবি এবং তার সহচর ঘৃণিত ইহুদি স্ক্রীয়ুটার ছবি। বাইবেলে লেখা আছে এই ইহুদি সহচর স্ক্রীয়ুটা মাত্র ৩০ টাকার লোভে হজরত ঈসা (আ) এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে শত্রুদের কাছে গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছিলো।
এদুটি ছবির উপযুক্ত কোনো নমুনা শিল্পীর মনে আসছিলো না। শিল্পী এমন দুজন ব্যাক্তি খুঁজছিলেন যাদের দেখে এ দুটি ছবির আইডিয়া পাওয়া যায় এবং সে অনুযায়ী গির্জার দেয়ালে আঁকা যায়।
একদিন নগরীর এক প্রান্ত দিয়ে সেই শিল্পী হেটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন ১২ বছরের এক কিশোর সঙ্গীদের সাথে খেলা করছে। কিশোরটির মুখের অবয়ব ছিল নিষ্পাপ এবং অপূর্ব সুন্দর। শিল্পী ভাবলেন একেই ঈসা (আ) এর সাদৃশ্য করে চিত্রায়িত করা যায়। ঈসা (আ) এর মতো করে আঁকা হলে মানানসই হবে ভেবে তাকে বাসায় নিয়ে আসলেন। ঘরে এনে তাকে বসিয়ে ছবি আঁকা শুরু করলেন এবং কিছুদিনের মধ্যে তার কাজ শেষ হলো। ছবিটি খুবই অপূর্ব হলো এবং একেই ঈসা (আ) এর বাল্যকালের ছবি হিসেবে তিনি নির্বাচন করলেন।
তবে এখনো আরো একটি ছবি আঁকা বাদ রয়ে গেলো। সেই ইহুদি স্ক্রীয়ুটা যে ঈসা এর সহচর ছিল এবং তারই সাথে বিস্বাসঘাতকতা করেছিল। তার ছবি এমন হতে হবে যাতে তার চেহারার মধ্যে “কুৎসিত”, “হতাশ” , “ভয়ঙ্কর” ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তোলা যায়। অনেক লোককে তিনি যাচাই বাছাই করলেন কিন্তু পরিশেষে কাউকেই পছন্দ হলো না। এভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে গেলো।
একদিন শিল্পী মদের একটি আড্ডায় বসা ছিলেন এবং দরজার দিকে তাকিয়ে দুর্বল, হালকা পাতলা কৃশকায় এক লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন।
যার চেহারায় বীভৎসতা, হতাশা, কুৎসিত একটি ভাব ছিল যা বর্ণনাতীত। লোকটি ঘরে ঢুকে বলতে লাগলো “মদ” , “মদ” । মানুষ যত পাপ করতে পারে তার সবই ওই চেহারায় ফুটে উঠেছে। শিল্পী এই ভেবে আনন্দিত হলেন যে একেই সেই ইহুদি “স্ক্রীয়ুটার” ছবি হিসেবে এঁকে ফেলা যায়। তিনি তাকে মদের লোভ দেখিয়ে বাসায় নিয়ে আসলেন এবং ছবির কাজ শুরু করে দিলেন। ছবি আঁকা শেষ হলে লোকটি নিজের ছবি নিজেই দেখে ভয় পেয়ে গেলেন এবং মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন।
শিল্পী লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো “কি ব্যাপার, কি হলো?”
লোকটি কিছুক্ষন দুহাত দিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে রইলো। অবশেষে শিল্পীকে লক্ষ করে বললো “আপনি আমাকে ভালো করে দেখুন। আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?”
শিল্পী বললো “না চিনতে পারিনি, কে তুমি?”
লোকটি বললো “আমি সেই বালক যাকে কয়েক বছর আগে আপনি ঈসা (আ) এর নিষ্পাপ বাল্যকালের ছবি আকার জন্য নির্বাচন করেছিলেন। আজ আমাকেই আবার নির্বাচন করেছেন বিশ্বাসঘাতক “স্ক্রীয়ুটার” ছবি আঁকার জন্য।”
শিল্পী অবাক হয়ে চেয়ে রইলো।
———————————-
প্রিয় পাঠক, ওপরের ঘটনাটি ১৯৬৩ সনের মে মাসে আমেরিকার New York থেকে প্রকাশিত রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। পৃথিবীর ৭০টি দেশ থেকে রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকা ১০ মিলিয়ন এর মতো ছাপা হতো, যা প্রিন্টেড মিডিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ।
ঘটনাটির মাধ্যমে আমরা শিখলাম একই ব্যাক্তি উপযুক্ত পরিবেশ পেলে যেমন পুণ্যবান চরিত্রের হতে পারে, সেই একই ব্যাক্তি অনাকাঙ্খিত পরিবেশে থাকলে নিকৃষ্ট স্বভাবের অধিকারী হতে পারে। আমাদের সবার উচিত সন্তানকে শিক্ষা-দীক্ষা দেবার সময় এই বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করা। তাদেরকে উন্নত মানসিকতা, ধর্মীয় অনুভূতি, ভদ্রতা, বড়োদের প্রতি সম্মানবোধ ইত্যাদি যথাযথ ভাবে শিক্ষা দিতে পারার মধ্যেই নিহিত রয়েছে একজন পিতামাতার জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।