অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি মানবতা
লিখেছেন: ' হাফিজ' @ শুক্রবার, মে ৩১, ২০১৯ (১:২১ পূর্বাহ্ণ)
১৩৯৬ সনে বর্তমানে তুরস্কে অবস্থিত বুর্সা (২) শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বড় মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছে করেন উসমানীয় (ottoman ) সুলতান প্রথম বায়েজিদ। বিভিন্ন জায়গায় পর্যবেক্ষণ করে শহরের মাঝখানে একটি জায়গা নির্বাচন করলেন সুলতানের কর্মকর্তারা। সেখানে যারা অধিবাসী ছিল তাদেরকে বলা হলো অন্যত্র তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে এবং এর বিনিময়ে তাদের অন্যত্র জমি ও টাকা দেয়া হলো। কিন্তু বেঁকে বসলো শুধুমাত্র একটি পরিবার। খ্রিষ্টান। তার কথা, বাবার ভিটেমাটি ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না।
দরবারের লোকেরা খবর পেলেন লোকটি খ্রিষ্টান এবং মুসলমানদের জন্য মসজিদ তৈরী হবে এটা উনি চাচ্ছেন না। আবার এই জমি না হলে মসজিদ হবে না, কেননা খ্রিস্টান লোকটির জমি মসজিদের জমির কেন্ত্রবিন্দুতে অবস্থিত। অনেক আলোচনার পর মোটা অংকের অর্থ দেবার বিনিময়ে তিনি জমি হস্তান্তরে রাজি হলেন, তবে একটি শর্ত জুড়ে দিলেন। শর্তটি হলো, তার জায়গায় মসজিদ তৈরী হোক তাতে তার আপত্তি নেই, কিন্তু তার অংশে কেউ নামাজ পড়তে পারবে না। এমন অদ্ভুত শর্ত শুনে অবাক হলেন সুলতানের প্রতিনিধিরা। মসজিদ হবে তবে এই নির্দিষ্ট অংশে নামাজ পড়া যাবে না, তাহলে সেই অংশে কি করা যেতে পারে? এই অংশটি যদি যেকোনো এক কিনারে হতো তাহলে না হয় ওযু করার জায়গায় করা যেত, কিন্তু অংশটি তো মসজিদের জায়গার কেন্দ্রবিন্দুতে।
অবশেষে অনেক ভেবেচিন্তে প্রকৌশলীরা সিদ্ধান্ত দিলেন, এই মসজিদের ওজুখানা হবে মসজিদের মাঝখানে। একজন খ্রিস্টান নাগরিকের দাবি করা শর্তের প্রতি সন্মান দেখিয়ে বিষয়টি মেনে নিলেন সুলতান ।
বুর্সা শহরে উলু জামে মসজিদ নামের এই মসজিদে যারা নামাজ পড়েন তারা প্রথমেই অবাক হন মসজিদের মাঝখানে ওযু এবং ঝর্ণা দেখে। কিন্তু তারা জানেনা এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সাধারণ এক খ্রিস্টানের ইচ্ছে এবং ১ লাখ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এর অটোমান সম্রাজ্যের অসামান্য শক্তিধর সুলতান বায়েজিদ এর মহানুভবতা।
তথ্য সূত্র:
১) সুলতান কাহিনী, তামিম রায়হান
২) https://en.wikipedia.org/wiki/Grand_Mosque_of_Bursa
৩) https://en.wikipedia.org/wiki/Bursa