ডক্টর মরিস বুকাইলি ও কোরআন:
লিখেছেন: ' হাফিজ' @ শুক্রবার, মে ৩১, ২০১৯ (১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
ফ্রান্স পুরাতত্ত্বের বিষয়ে গবেষণায় ঐতিহ্যের অধিকারী। ১৯৮১ সনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মিশরের বাদশার কাছে ফেরাউনের লাশ চেয়ে পাঠান গবেষণা করার জন্য। এক সময়ের মিশরের রাজার উপাধি ছিল ফেরাউন, রামেসিস ২ হলো তার মধ্যে একজন যার লাশ সংরক্ষিত আছে। মিশর ফ্রান্সের সে আবেদন রক্ষা করে লাশ গবেষণার জন্য কিছুদিনের জন্য ফ্রান্স পাঠিয়ে দেন। এই গবেষণা টীম এর প্রধান surgeon এবং বিজ্ঞানী ছিলেন ড:মরিস বুকাইলি। ড:মরিস বুকাইলি খেয়াল করলেন সেই লাশের মধ্যে লবণাক্ততা মিশে আছে যেটা প্রমান করে লাশটি সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে। বুকাইলি তার গবেষণা রিপোর্ট দিবার জন্য যখন তৈরী হচ্ছিলেন তখন একজন তার কানে কানে বললো “তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই কেননা মুসলিমরা বলে থাকেন ফেরাউন সমুদ্রে ডুবে মারা গেছেন, এটা নতুন কিছু নয়।” এরপর আরো আশ্চর্য হলেন পরবর্তী কমেন্ট শুনে “মুসলিমদের কোরানে নাকি ফেরাউনের ডুবে যাবার কাহিনী বলা আছে এবং এটাও বলা আছে যে তার লাশ সংরক্ষণ করা হবে।”
তিনি এতে খুবই আশ্চর্য হলেন এবং চিন্তা করলেন “১৮৯৮ সালে ফেরাউনের লাশ আবিষ্কার হয়েছে অর্থাৎ মাত্র ২০০ বছর হল এটা আবিষ্কার হয়েছে যেখানে মুসলমানদের কোরান পড়া হচ্ছে বিগত ১৪০০ বছর ধরে। বাইবেল এবং তাওরাতে শুধু ফেরাউনের মৃত্যুর ঘটনা আছে অথচ কোনোটাতেই তার লাশ বিষয়ক কোনো কথা নেই। মরিস বুকাইলি সমগ্র রাত এ বিষয়ে চিন্তা করলেন।
ফ্রান্স লাশটি মিশরে ফেরত পাঠালো এবং মরিস বুকাইলি একটি মেডিকেল কনফারেন্স উপস্থিত হবার জন্য সৌদি আরবে চলে গেলেন। কনফারেন্স চলার সময় সেখানে তিনি বললেন যে ফেরাউনের লাশ অক্ষত ভাবে সংরক্ষণ করা আছে। তখন একজন উপস্থিত দর্শক আল কোরআন বের করে নিম্নের আয়াত দেখালেন-
“আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।
এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করছিলে। এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।
(সূরা ইউনুস ৯০,৯১,৯২)
ডঃ মরিস বুকাইলি এই আয়াত শ্রবণ করার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন “আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং আল কোরআনে বিশ্বাস স্থাপন করলাম”।
ফ্রান্সে ফিরে এসে ড: মরিস বুকাইলি ১০ বৎসর যাবৎ গবেষণা করলেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল আল কোরআনে উল্লেখিত বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো কথা বা আয়াতের সাথে মডার্ন সাইন্স এর কোনো সংঘর্ষ আছে কিনা? ৫০ বছর বয়সে আরবি শিখতে শুরু করেন শুধুমাত্র আল-কোরআন বোঝার জন্য। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্তে আসলেন যেটা আল কোরানে উল্লেখ আছে :
“এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” (৪১:৪২)
তারপর তিনি একটি বই লিখলেন যা সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে যার নাম হলো “বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান”. বইটি হাজার হাজার কপি বিক্রি হতে লাগলো এবং ফ্রেঞ্চ থেকে আরবি, ইংলিশ, ইন্দোনেশিয়ান, পার্সিয়ান, টার্কিস এবং জার্মানিতে অনুবাদ হলো।
বইটির ভূমিকায় মরিস বুকাইলি লিখেছেন “এই বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র গুলো যা আল কোরআন প্রতিষ্ঠিত/ব্যাখ্যা করেছে যা অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থ করেনি, আমাকে বিস্মিত করেছে এই ভেবে যে, বিশাল পরিমানে এবং অনেক সংখক এবং বিভিন্ন বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ইস্যুগুলো এতো বৈচিত্র ভাবে এবং সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যার অনেকগুলো সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে অথচ গত ১৪০০ বছর যাবৎ সেগুলো আল কোরআনে বিদ্যমান আছে।
১৯৮৮ সালে ফ্রেঞ্চ একাডেমী এই বই এর কারণে মরিস বুকাইলিকে পুরস্কৃত করেন। প্রিয় পাঠক আপনি বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, কোনো মানুষের পক্ষে ভবিষৎ বলা সম্ভব নয় এমনকি বিজ্ঞানের যত আবিষ্কারই হোক এখন পর্যন্ত সে দাবি করেনি আগামী ১০০ বছর পর কি হবে। অথচ অবাক হতে হয় এই ভেবে যে ১৪০০ বছর আগে ফিরাউনের লাশ সমন্ধে আল কোরানে উল্লেখ আছে:
وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنتُ أَنَّهُ لا إِلِـهَ إِلاَّ الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।
آلآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ
এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করছিলে। এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ
অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।
(সুরাহ ইউনুস: ৯০- ৯২)