লগইন রেজিস্ট্রেশন

তাহাজ্জুদ নামাজ এর ফজিলত এবং একটি বিভ্রান্তির পর্যালোচনা

লিখেছেন: ' হাফিজ' @ শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০ (৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ)

তাহাজ্জুদ নামাজ এর ফজিলত এবং একটি বিভ্রান্তির পর্যালোচনা
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন: “ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামাজ”। হযরত হাসান বসরী (রহ:) বলেন- যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ ত্যাগ করে তার এ কাজ কোনো একটি গোনাহের প্রতিফলন মনে করতে হবে।
বর্ণিত আছে, একদা হযরত জিবরিল (আ:) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন: আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) কতই না উত্তম ব্যাক্তি যদি তিনি রাতে (তাহাজ্জুদ) নামাজ পড়তেন। তাকে এ কথা জানানোর পর তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া শুরু করলেন। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব এতো অত্যধিক যে জিবরিল (আ:) এর মাধ্যমে আল্লাহতালা সাহাবীকে সতর্ক করলেন। (মুকাশাফাতুল কুলুব-ইমাম গাজ্জালী (রহ:)। কেউ তাহাজ্জুদ নামাজ না পড়ে সারা রাত ঘুমিয়ে কাটালে সকালে বুযুর্গানে দ্বীন তার চেহারা দেখেই মন্তব্য করে বলতেন-আমরা তোমাকে তো আল্লাহর দরবারে উপস্হিত দেখিনি।
বিশাল খৃষ্টান বাহিনী একবার মুসলিম দেশ আক্রমন করার জন্য জাহাজ নিয়ে অগ্রসর হয়। গাজী সালাহউদ্দিন (রহ:) অত্যন্ত অস্থির হয়ে সারারাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে দোয়া করতে থাকেন। সকালে উনি শুনতে পান যে, খৃষ্টানদের সবগুলো জাহাজ ঝড়ে ধংস হয়ে গেছে। এক আল্লাহর ওলী তখন মন্তব্য করেন- “হে সালাহুদ্দিন (রহ:), তোমার চোখের পানি, রাতের নামাজ বিধর্মীদের জাহাজকে ডুবিয়ে দিয়েছে”।
রসূলের যুগে এক সাহাবীর অভ্যাস ছিল রাত্রিকালে লোকেরা যখন শুয়ে পড়ত, তখন তিনি নামাজে মগ্ন হতেন, কোরআন তেলাওয়াত করতেন আর দোয়া করতেন “হে আল্লাহ, আমাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর”। .. একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন “তুমি আল্লাহর কাছে বেহেশত চাওনা কেনো?” সেই সাহাবী বললেন “ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, আমি উপযুক্ত নই, আমার আমল সেই পর্যন্ত পৌছাতে সক্ষম নয়”। এর কিছক্ষণ পরই জিবরীল (আ:) এসে বললেন “ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আপনি তাকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তার জন্য দোযখ হারাম করে দিয়েছেন, এবং বেহেশতের ফয়সালা করে দিয়েছেন। তাহাজ্জুদ নামাজ এবং দোয়ার বরকত এই ঘটনার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়।

ইমাম আবু ইউসুফ (রহ:) ছিলেন প্রধান বিচারপতি অথচ দৈনিক ২০০ রাকাত নফল নামাজ পড়তেন, রাত্রে তাহাজ্জুদ এবং দিনের নফল নামাজ সহ। ইমাম আবু হানিফা (রহ:) রোজার মাসে দিনে এক খতম, রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে ১ খতম এবং তারাবীতে ৩ খতম অর্থ্যাৎ রোজার মাসে আনুমানিক ৬৩ বার কোরআন খতম দিতেন।

একটি বিভ্রান্তি:

১)
বর্তমানে কেউ কেউ বলে থাকেন “তাহাজ্জুদ নামাজ, ইশরাক নামাজ” তথা যেকোনো নফল ইবাদত করলে নফস শক্তিশালী হয়ে থাকে এবং এই যুক্তি দেখিয়ে তারা নফল সমস্ত ইবাদত থেকে বিরত থাকে। মোজাদ্দেদ আল ফেসানী (রঃ) এর মকতুবাত শরীফ থেকে একটি উক্তি উল্লেখ করে তারা এই যুক্তি দিয়ে থাকেন। মূলত একটি মোকতুবাত শরীফের অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মকতুবাত শরীফে মিলাদ বিদআত বলা হয়েছে সেটা তারা গ্রহণ না করে এর অন্য ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ মকতুবাত শরীফের যেটা আমার পছন্দ হলো সেটার সরাসরি অর্থ গ্রহণ করলাম আর যেটা পছন্দ হলো না সেটার ব্যাখ্যার আশ্রয় নিলাম! বিষয়টি কি তেমন হলো না?

২) “নফল যেকোনো ইবাদত করলে নফস শক্তিশালী হয়” এই যুক্তিতে যদি নফল ইবাদত ছেড়ে দেয়া হয় তাহলো তো নামাজের বাহিরে “কোরআন শরীফ” তেলাওয়াত করাও ছেড়ে দিতে হবে। কেননা সেটাও তো নফল। অথচ কোরআন তেলাওয়াত ঠিকই করা হয়।

৩) তাজাজ্জুদ নামাজ নফল এই যুক্তি দেখিয়ে সেটা পরিত্যাগ করা হয় অথচ এশার নামাজের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বসে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তেন সেটা আবার তারা পরে থাকেন। কোন যুক্তিতে তাহাজ্জুদ নামাজ পরিত্যাগ করা হয় আবার কোনো যুক্তিতে এশার পরের দুই রাকাত নামাজ বসে পড়া হয় সেটা বোধগম্য নয়।

মূলত এগুলোর কোনোটারই সদুত্তর দেবার বিন্দুমাত্র দলিল তাদের কাছে নেই। যে সব পীর সাহেবের দরবারে আলেমদের আনাগোনা থাকে না তাদের দ্বারাই এই ধরণের ফতোয়া প্রকাশ পেয়ে থাকে।

হাদিস শরীফে স্পষ্ট আছে যে নফল ইবাদত দ্বারাই আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য হাসিল হয়ে থাকে, আর সেই নফল ইবাদত পরিত্যাগ করে আবার এর সপক্ষে যুক্তি পেশ করা হয়ে থাকে, যেটা নিত্যন্তই আফসোসের বিষয়। একবার ভালোভাবে চিন্তা করা উচিত এই ধরণের ফতোয়ার কারণের কত অসংখ্য মানুষ, তাদের মুরিদগণ নফল ইবাদত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যেখানে কিয়ামতের দিন ২ রাকাত নামাজ পড়ার জন্যই হয়তো কেউ কেউ না কেউ নাজাত পেয়ে যাবেন।

আল্লাহ পাক আমাদের বেশি বেশি নফল ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নৈকট্য হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২০৫ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৩.০০)