সাহাবীগণের (রা) সমালোচনা
লিখেছেন: ' হাফিজ' @ রবিবার, জুন ৬, ২০২১ (৬:২৭ পূর্বাহ্ণ)
সম্প্রতি ব্লগে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সুমহান সাহাবী, কাতেবে ওহী, সাহাবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম নৌবাহিনীর অধিনায়ক, অসামান্য মুজতাহিদ, অসাধারণ রাষ্ট্র-নায়ক হজরত মুয়াবিয়া (রা) কে নিয়ে নিতান্ত কটূক্তি-পূর্ন একটি আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়েছে। মুয়াবিয়া (রা) এর গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করার জন্য ভিন্ন একটি পোস্ট প্রয়োজন। আমি শুধুমাত্র সাহাবীদের নিয়ে সমালোচনাকারীদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ৩টি হাদিস এখানে উল্লেখ করবো:
হাদিস নং ১
الله الله فى أصحابى لا تتخذوهم غرضا من بعدى فمن أحبهم فبحبى أحبهم ومن أبغضهم فببغضى أبغضهم
অর্থ -“সাবধান! তোমরা আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানিও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আমার প্রতি ভালোবাসার কারণেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে”।
[তিরমিযী-৩৮৬১, ইবনে হিব্বান, হা. ২২৮৪, মুসনাদে আহমদ, খ.৪, পৃ.৮৭, আস-সুন্নাহ, ইবনে আবি আসেম, হা.৯৯২]
এই হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে সাহাবীদের যারা সমালোচনা করে তারা মূলত রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই সাহাবীদের সমালোচনা করে থাকে। এটা কিন্তু আমাদের কথা নয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথা ।
হাদিস নং ২
إذا رأيتم الذين يسبون أصحابى فقولوا لعنة الله على شركم
অর্থ: “তোমরা কাউকে আমার সাহাবীদের সমালোচনা করতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে বলে দাও, তোমাদের মধ্যে (অর্থাৎ তোমরা ও আমার সাহাবাদের মধ্যে) যে নিকৃষ্ট তার উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক”
[ তিরমিযী শরীফ]
আল্লামা ইউসুফ বিন্নৌরী (র.) বলেন, “হাদীসের قولوا শব্দটি আদেশ/ক্রিয়াপদ, যা বিধানটির ওয়াজিব হওয়াকে নির্দেশ করছে। অথার্ৎ সমালোচনাকারীকে মুখের উপর তখন এ জবাব দেওয়া মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব”।
ইমাম আবু হানিফা (র) বলেন, “কাউকে যদি কোন সাহাবী সর্ম্পকে অবমাননাকর উক্তি করতে দেখো তাহলে ধরে নিও যে, লোকটি নিশ্চিত যিন্দীক (ধর্মদ্রোহী)। কারণ কুরআন সত্য, রসূল সত্য, তার আনীত শিক্ষা ও আদর্শ সত্য। এগুলো একমাত্র সাহাবীগনের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসে পৌছেছে। সুতরাং সাহাবা চরিত্রে যে অপবাদ দেয় সে মূলত কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষাকে বিধ্বস্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এ ধরনের হতভাগ্য ব্যক্তি যিন্দীক ছাড়া কিছুই নয়”।
হাদিস নং ৩
হযরত ইবনে আব্বাস(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ রসুলুল্লাহ(ﷺ) ইরশাদ করেছেন-
سب اصحابي فعليه لعنة الله والملائكة والناس اجمعين من
অর্থাৎ -“যারা আমার সাহাবীদেরকে গালী দেয়, তাদের প্রতি আল্লাহর, ফেরেস্তাদের এবং জগতবাসীর অভিশাপ বর্ষিত হোক”।
[তাবরানী ফিল কাবির, হা.১২৭০৯]
স্বয়ং রসূলুল্লাহ(ﷺ) সাহাবীদের সমালোচনাকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। সুতরাং এমন হতভাগ্যদের নিয়ে আমাদের আর কি বা বলার থাকতে পারে?
তথ্য সূত্র:
মাকামে আম্বিয়া ও সাহাবা – মাওলানা তজ্জুমুল আলী
ভুল সংশোধন: শামসুল হক ফরিদপুরী (র)
ইতিহাসের কাঠগড়ায় হজরত মোয়াবিয়া – মাওলানা ত্বকী ওসমানী
শানে সাহাবা – মাওলানা জিয়াউর রহমান ফারুকী
মাকামে সাহাবা – মুফতি মোহাম্মদ শফি
দি রেফারেন্স বুক অফ সাহাবা – হজরত মাওলানা নূর আলম
[ বি: দ্র: এই হাদিস শরীফ গুলো শুনলেই সাহাবীদের সমালোচনাকারীরা জিজ্ঞেস করে থাকে “এই হাদিস কি সহীহ?” অথচ এরাই সাহাবীদের সমালোচনা করার জন্য অসংখ্য শিয়া/রাফেযীদের মিথ্যা ইতিহাসের রেফারেন্স দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে “সহীহ” দরকার হয় না। ]