“রফে ইয়াদাইন” না করার দলীল
লিখেছেন: ' হাফিজ' @ সোমবার, জানুয়ারি ২৫, ২০১০ (২:১৫ পূর্বাহ্ণ)
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
নামাজে “রফে ইয়াদাইন” করা এবং না করা দুটো আমলই হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমানিত । শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাজহাবে “রফে ইয়াদাইন” করা হয়ে থাকে , পক্ষান্তরে “মালেকী” এবং “হানাফী” মাজহাবে রফে ইয়াদাইন করা হয় না । চার মাজহাবের ক্ষেত্রে এই পার্থক্যটুকু শুধু নফল নিয়ে । অর্থ্যাৎ চার মাজহাবই এ বিষয়ে একমত যে , রফে ইয়াদাইন করা হোক বা না হোক এতে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না । যেহেতু এটা নফল ।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় “রফে ইয়াদাইন” না করাও যে হাদিস শরীফ এবং সাহাবীদের আমল দ্বারা প্রমানিত সেটা প্রমান করা ।
হাদিস শরীফ এর দলীল :
হাদিস শরীফ ১: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন , আমি কি তোমাদের রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এর মতো নামাজ আদায় করব না ? এতে তিনি শুধুমাত্র প্রথমবার ছাড়া ( তাকবিরে তাহরিমা ) আর কোনোবার হাত উত্তোলন করেননি । [ তিরমিযী শরীফ , সুনানে নাসাঈ , ইবনে হাযম বলেছেন হাদিসটি সহীহ , ইমাম তিরমিযী বলেছেন হাদিসটি হাসান ]
হাদিস শরীফ ২: হযরত বারা ইবনে আযিব (রা:) বলেন ” রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ আরম্ভ করতেন তখন তার হস্ত দ্বয় কর্ন দ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন । অত:পর আর তা করতেন না । [ ইবনে আবি শায়বা , আবু দাউদ ]
হাদিস শরীফ ৩: হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন ” রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) থেকে বর্নিত , সাত জায়গায় হাত তোলা হবে – নামাজের শুরু , বায়তুল্লাহ শরীফ সামনে রেখে, সাফা মারওয়া ও দুই মাওকিফ সামনে রেখে এবং হিজেরের সামনে ।
[ এটি ইমাম তাবরানী মারফু সুত্রে এবং ইবনে আবু শায়বা মাওকুফ সুত্রে বর্ননা করেছেন , আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ:) নাইলুল ফারকাদাইনে প্রমান করেছেন যে হাদিসটি প্রমানযোগ্য ]
হাদিস শরীফ ৪: হাফিজ ইবনে হাজার (রহ:) মারফু রেওয়াতে বর্ননা করেন ” রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ শুরু করতেন তখন নামাজের শুরুতে হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন । অত:পর নামাজ শেষ করা পর্যন্ত আর হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন না ।
[ হাদিসটি মুরসাল, আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী এর সমস্ত সনদ পরীক্ষা করে বলেছেন এটা নির্ভরযোগ্য হাদিস ]
সাহাবীদের আমল বা আছারে সাহাবা দ্বারা দলীল
সাহাবীদের আমল ১: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা:) বলেন আমি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) , হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) , উমর (রা:) এর পিছনে নামাজ পড়িছি , তারা সকলেই শুধু মাত্র নামাজের শুরুতে হাত ওঠাতেন [ আল জাওহারুন নাকী ]
সাহাবীদের আমল ২: হযরত আলী (রা:) বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) শুধু নামাজের শুরুতেই হাত ওঠাতেন আর কোথাও ওঠাতেন না । [ দারে কুতনী ]
সাহাবীদের আমল ৩ : ত্বাহাভীতে হযরত আসওয়াদ (রা:) থেকে বর্নিত : তিনি বলেন আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রা:) থেকে দেখেছি , তিনি প্রথম তাকবীরের সময় দুহাত তোলেন অত:পর আর হাত তোলেন নি । ”
সাহাবীদের আমল ৪ : হযরত আলী (রা:) নামাজের তাকবীরে হাত উঠাতেন । অত:পর হাতি উঠান নি ।
সাহাবীদের আমল ৫: এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা:) সম্বন্ধে ইবরাহিম বলেন ” ইবনে মাসঊদ (রা:) নামাজে শুরু ছাড়া অন্য কোনো সময় হাত তোলেননি ।
সাহাবীদের আমল ৬: সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে যে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) যিনি হাত উত্তোলন সংক্রান্ত হাদিসের রাবী এবং যার রেওয়ায়াত “রফে ইয়াদাইন” এর সমর্থনকারীগন সবচেয়ে বেশী উল্লেখ করে থাকেন , তার সম্বন্ধে বর্ননা আছে যে তিনি “রফে ইয়াদাইন” করতেন না । দেখুন : মুজাহিদ (রহ:) বলেন , আমি ইবনে ওমর (রা:) এর পিছনে নামাজ পড়েছি । তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যত্র কোথাও হাতি উঠান নি ।
এখন অনেকের মনে হয়ত প্রশ্ন থাকতে পারে , ইবনে ওমর (রা:) “রফে ইয়াদাইন” এর হাদিস বর্ননা করার পর কিভাবে তার ওপর আমল করেননি । এর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগন বলেন , প্রথমদিকে উনি “রফে ইয়াদাইন” করতেন , যেহেতু রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) প্রথমে “রফে ইয়াদাইন” করেছিলেন । পরবর্তিতে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এটা করেননি , তাই তিনি এটা পরিত্যাগ করেন । রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এর এমন অনেক আমল ছিল যেটা উনি প্রথমে করেছিলেন যেমন “নামাজ পড়া অবস্হায় দরজা খুলে দেয়া , সালামের জবাব দেয়া ইত্যাদি” যেটা পরবর্তিতে আর করা হয় নি । এরই পরিপ্রক্ষিতে হানাফী মাজহাব রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এর শেষ দিককার আমল গ্রহন করেছেন , যারই একটি হলো “রফে ইয়াদাইন” না করা ।
এমনিভাবে হযরত উমর (রা:) , হযরত আলী (রা:) , হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এর ন্যায় সাহাবা যারা সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বর ফকীহ ছিলেন , তারা নি:সন্দেহে “রফে ইয়াদাইন” করতেন না । আল্লামা নীমভী (রহ:) বলেন খলীফা চতুষ্টয় থেকে “রফে ইয়াদাইন” করার কোনো প্রমান পাওয়া যায় না । [ আছারুল সুনান , শরহে মাআনিল আছার , মুসান্নাফে ইবনে আবু শায়বা ইত্যাদি ] এবং আপনারাও দেখবেন যারা রফে ইয়াদাইন এর দলীল পেশ করেনে , ৪ খলীফার থেকে কোনো বর্নানা পাওয়া যায় না ।
আমলে মুতাওয়াতির :
হযরত আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ:) “নায়লুল ফারকাদাঈন ফী রফইল ইয়াদাইন” গ্রন্হে বলেন “রফে ইয়াদাইন” এর হাদিস গুলো অর্থগতভাবে মুতাওয়াতির , পক্ষান্তরে “রফে ইয়াদাইন” না করার আমলগুলো আমলীগতভাবে মুতাওয়াতির । অর্থাৎ এত অধিক সংখ্যক সাহাবা , তাবেয়ীন , তাবে তাবেয়ীন এটার ওপর আমল করেছেন , যেটা মিথ্যা হওয়া অসম্ভব । ইমাম মালেক (রহ:) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল , আপনি কেনো রফে ইয়াদাইন করেন না , উনি বলেছিলেন সম্পূর্ন মদীনা শরীফে আমি কাউকে রফে ইয়াদাইন করতি দেখিনি । মনে রাখতে হবে সেটা ছিল খাইরুল কুরুনের যুগ বা উত্তম যুগ যেটা সম্বন্ধে ইমাম মালেক বলেছেন [ আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা ]
কিছু ভুল ধারনার অপনোদন :
অনেক বলে থাকেন ইমাম বুখারী (রহ:) বলেছেন “রফে ইয়াদাইন” না করার কোনো সহীহ হাদিস নাই । এর উত্তর হোলো , অনেক প্রখ্যাত মুহাদ্দিস প্রমান করে দিয়েছেন যে ইমাম বুখারী (রহ:) এর উক্তি সহীহ নয় । মোল্লা আলি কারী (রহ:) এর মাহযুআতে কবীর ও এর মধ্যে পড়বে ।
আর একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো , অনেক আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী (রহ:) এর এই বাক্যটি উল্লেখ করে থাকে “রফে ইয়াদাইন এর হাদিস সনদগত ভাবে মুতওয়াতির” কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় উনার অন্য বাক্যটি তারা উল্লেখ করে না “রফে ইয়াদাইন” না করার আমলটি আমলীগতভাবে মুতওয়াতির” ।
উপসংহার : যখন পরস্পরবিরোধী হাদিস শরীফ পাওয়া যায় , তখন ফকীহগন সাহাবীদের আমল দেখে থাকেন । এবং সেটার গুরুত্ব অপরিসীম । যেহেতু রফে ইয়াদাইন এর পক্ষে বিপক্ষে দুইরকম হাদিস শরীফই পাওয়া যায় তখন আমরা দেখে থাকি যে হযরত উমর (রা:) , আলী (রা:) , ইবনে মাসউদ (রা:) উনারা কেউই রফে ইয়াদাইন করতেন না । এই তিন মনিষী ছিলেন সাহাবায়ে কিরামের ইলমের সারনির্যাস । “আমার পরে কেউ নবী হলে সে হতো ওমর” । “আমি জ্ঞানের শহর আলি তার দরজা” । ইবনে মাসউদ (রা:) কে বলা হতো “হিবরুল উম্মাহ” । তাদের বিপরীতে যারা “রফে ইয়াদাইন” করতেন তাদের বেশীর ভাগ কম বয়স্ক সাহাবী । যেমন ইবনে ওমর (রা:) ও হযরত যুবাইর (রা:) ।
কিছু কমেন্ট :
১। রফে ইয়াদাইন করা এবং না করা দুটোই জায়েজ । কোনো একটিকে বেদআত বলা কোনো ক্রমেই ঠিক নয় । এর অর্থ সাহাবীরা বেদআত করেছেন ( নাউজুবিল্লাহ ) ।
২। কেউ করলেও তাকে বাধা দেয়া উচিত নয় , কেউ না করলেও কোনো অসুবিধা নেই ।
৩। ৪ মাজহাবের দুই মত থাকলেও এটা নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করে না , কিন্তু বর্তমানে একমাত্র লা মাজহাবীরা এটা নিয়ে বাড়াবারি করে। তাহলে অন্ধ কে ? কে গোড়াপন্হি ?
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদের সঠিক বিষয় বোঝার তওফীক দান করুন ।
আমীন ।
রেফারেন্স ::
এই লেখা লিখবার সময় যে সকল বই এর সাহায্য নেয়া হয়েছে
১। দরসে তিরমীযী – আল্লামা তকী ওসমানী
২। আনোয়ারুল মুকাল্লিদিন – শওকত গনী – প্রকাশনা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন
৩। মাজহাব কি ও কেনো – আল্লামা তকী ওসমানী
৪। মাজহাব মানবো কেনো – মুফতী রফীকুল ইসলাম
৫। হানাফীদের আমলের সুদৃঢ় দলীল – মুফতি মনসুরুল হক
উপরের সমস্ত বই আপনারা বাইতুল মোকাররম বই এর লাইব্রেরীতে পাবেন ।
রাফে ইয়াদাইন বারবার করা প্রসংঙ্গে আরেকটি হেকমত ছিল এই যে, আরব পৌত্তলিক যূগে বেদুইনরা মূর্তিপূজায় এত বেশি অভস্থ ছিল যে কেউ কেউ বগলের তলে মুর্তি লুকিয়ে রাখতো ইসলামগ্রহণ করার পরও শরাব এবং সূদের মত অনেক বেদুঈনদের এই মূর্তিপ্রীতি অবশিষ্ট থাকায় নামাজে বারবার হাত তোলার অভ্যাস করানো হয় যাতে মুর্তিগুলো বগলের তলথেকে পড়ে যায়। অবশেষে মানুষের মূর্তিপ্রীতি কেটে গেলে রাফে ইয়াদাইনের হুকুমও রহিত হয়।
রফে ইয়াদাইন করা বা না করা প্রসংঙ্গটি মুস্তাহাব পর্যায়ের । এবং উভয়টিই সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত। ইমাম শাফেয়ী রহ এর ব্যাপারে এমনও বর্ননা পাওয়া যায় যে, তিনি কোন এক সময় ইরাকের হানাফী অঞ্চলের কোন এক মসজিদে নামাজের সময় তিনি রাফে ইদাইন ছেড়ে দিয়েছিলেন।
সুতরাং এটা নিয়ে বাড়াবাড়ির কোন বিশেষ প্রয়োজন অনুভুত হয় না।
আজকের যূগে যেখানে নুতন নুতন সব বিদাত আবিষ্কার হচ্ছে, যেমন নামাজের পরবর্তিতে হাততুলে সম্মিলিত মুনাজাত, দাড়িয়ে ইয়া নবী সালা মালাইকার মত ফিতনা, তখন আমাদের উচিত নামাজের অভন্তরীন এসব প্রতিষ্ঠিত বিষয় নিয়ে বিতর্ক না বাড়িয়ে নবআবিষ্কৃত বিদাত নিয়ে আলোচনা করা।
আল্লাহ সবাইকে হেদায়াত এবং সঠিক পথ অবলম্বন করার তৌফিক দান করুন। আমীন
@বাংলা মৌলভী,
আমি বিতর্ক এড়িয়ে চলতে আপ্রাণ চেষ্টা করি – “রাফি ইয়াদাঈনের” এই বিতর্কে জড়ানোর আমার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না । যে জাতির অধিকাংশ মানুষ তৌহীদের মত মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান রাখে না, তাদের মাঝে “রাফি ইয়াদাঈন” নিয়ে বিতর্ক, priority-তে অনেক পরে আসে। তবে উপরে উদ্ধৃত “রাফি ইয়াদাঈন” নিয়ে আপনার বক্তব্য, ডাহা মিথ্যা কথা/গল্প এবং “মওযু” বা জাল পর্যায়ের বর্ণনা। একসময় আমি অনেক লোককে এই গল্প বলেছি। আজ মনে হলেই তওবা করি এবং ভয়ে আমার কান্না আসে। কেননা আমি জেনেছি: রাসূল (সা.)-এঁর নামে মিথ্যা কোন কিছু বর্ণনা বা আরোপ করার যে হাদীসটি রয়েছে – যেখানে বলা হয়েছে যে “সে (বর্ণনাকারী) জাহান্নামে তার আসন বানিয়ে নিল” সেই হাদীসে শুধু ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলার কথাই বলা হয়নি, বরং না জেনে বা verify না করে অনুমানবশত অনিচ্ছাকৃত কিছু বলার কথাও বলা হয়েছে। যে জন্য আনাস বিন মালিক (রা.)-এঁর মত বহু সাহাবী, অনেক হাদীস জেনেও ভয়ে সেগুলো বর্ণনা করতেন না। আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি – আর তাই আপনাকে সাবধান করে দিলাম! আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করুন, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর! যার ভিতর ১ সেকেন্ডের অবস্থান থেকে বাঁচতে, আদম সন্তান সেদিন (যদি তার আওতায়/মালিকানায় থেকে থাকে তবে) এই দুনিয়া এবং এতে যা কিছু আছে তার সব কিছু বিনিময় করতেও প্রস্তুত থাকবে। কি হবে এই ব্লগে সকলের সাথে সকল তর্কে জিতে বা গোটা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ যুক্তিবাদী হয়ে – যদি তাতে জাহান্নামে ১ সেকেন্ড অবস্থানের ভয়ও থাকে??!!
@মেরিনার,
আমি বিতর্ক এড়িয়ে চলতে আপ্রাণ চেষ্টা করি – “রাফি ইয়াদাঈনের” এই বিতর্কে জড়ানোর আমার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না । যে জাতির অধিকাংশ মানুষ তৌহীদের মত মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান রাখে না, তাদের মাঝে “রাফি ইয়াদাঈন” নিয়ে বিতর্ক, priority-তে অনেক পরে আসে।
আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত । আমি পূর্বেও এমন ছোটখাট বিষয়ে কোনো লেখা দিই নি । যেখানে বেশীরভাগ বাংলাদেশের মুসলমান নামাজ পড়ে না সেখানে এই ইসু তৈরী করা নিতান্তই অবান্তর । কিন্তু যেহেতু অভিযোগ উঠেছে , রফে ইয়াদাইন বেদআত , তাই সাধারনের মাঝে যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায় এর জন্য এই পোস্টের অবতারনা ।
এবং ভবিষ্যতে আমি সবাইকে অনুরোধ করব এধরনের নফল বিষয় নিয়ে পোস্ট না দিয়ে , নামাজের গুরুত্ব , রোজার গুরুত্ব , সুন্নতের গুরুত্ব , হালাল হারাম এসব নিয়ে লেখা দিতে ।
তবে নফল বিষয় নিয়ে কেউ যদি বিভ্রান্তি ছড়ায় সেটার সমাধান কল্পে উত্তর আমাদের দিতে হবে বৈকি ।
@বাংলা মৌলভী,এসব কথার কোন দলীল নেই
মূল সমস্যা হলো আহলে হাদীসরা ফেকাহ শাস্ত্রকে গুরুত্ব দেয়না। অথচ ফেকাহ শাস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। এপ্রসঙ্গে একটি ঘটনা তুলে ধরছিঃ
ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণনা করেন, আমরা কয়েকজন বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাদ্দেছ হযরত আ’মাশের রঃ দরবারে বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি এসে মাসআলা জিজ্ঞেস করলো। আ’মাশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর জবাব দিলেন- মাসআলাটির জবাব আমার জানা নাই। আবু হানীফাও রঃ সেই মজলিসে বসা ছিলেন। তাঁর প্রতি লক্ষ্য করে আমাষ বললেন, আবু হানিফা! তোমার জানা থাকলে সমাধানটি বলে দাও। আবু হানীফা রঃ জিজ্ঞাসিত বিষয়টির একটি চমৎকার জবাব দিয়ে দিলেন। জবাবটি আমাশের খুব পছন্দ হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, জবাবটি তুমি কোন হাদীসের ভিত্তিতে দিলে? আবু হানীফা বললেন, আপনার কাছ থেকে শিক্ষা করা অমুক হাদীসের ভিত্তিতে। শুনে আ’মাশ মন্তব্য করলেন, আমরা (মুহাদ্দেসরা) হচ্ছি যারা ঔষধি দ্রব্য নিয়ে নাড়াচাড় করে তাদের ন্যায় (আত্তার বিশেষ)। আর তোমরা হলে ঐ ঔষধ তৈরি করে এবং রোগ নির্ণয় করে রোগীকে তা সেবন করতে দেয়।
@দ্য মুসলিম,
আমরা (মুহাদ্দেসরা) হচ্ছি যারা ঔষধি দ্রব্য নিয়ে নাড়াচাড় করে তাদের ন্যায় (আত্তার বিশেষ)। আর তোমরা হলে ঐ ঔষধ তৈরি করে এবং রোগ নির্ণয় করে রোগীকে তা সেবন করতে দেয়।
” কারন অনেক পৌছে দেয়া ব্যাক্তি মুবাল্লিগ বা হাদিস পৌছেদেয়া মাধ্যমের ব্যাক্তির চাইতে যত্নবান বেশী হবেন” আল হাদীস অর্থাত সেই হাদিসটি বর্নণাকারীর চাইতে ব্যাক্তকৃত ব্যাক্তিই বেশী বুঝবেন।@বাংলা মৌলভী, সহমত ।
@দ্য মুসলিম, আপনি খুবই সুন্দর সময়োপযুগী একটি উদাহরন দিয়েছেন । ধন্যবাদ ।
@হাফিজ,
ধন্যাবাদ।
হিজরী চতুর্থ শতাব্দির প্রখ্যাত মুহাদ্দেস ইমাম আবু বকর মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রঃ তাঁর রচিত ‘মাআনিউল-আখরার’ নামক গ্রন্হে লিখেছেন, শরীয়ত বিশেষজ্ঞ কেবলমাত্র ফেকাহবিদগণকেই বলা চলে। অন্যান্য এলেম বিশেষ একটি বিষয় কেন্দ্রীক হয়ে থাকে। যেমন তফসীরবিদগণ শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন। মুহাদ্দেসগণের চর্চা প্রধাণতঃ হাদিসের শব্দ, সনদ ও মতনের মধ্যেই আবর্তিত হয়। কিন্তু একজন ফেকাহবিদ অত্যাবশ্যকীয়ভাবেই হাদিস-তফসীরের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ হওয়ার পাশাপাশি আরো অনেকগুলি জাগতিক জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। সম্ভবতঃএ কারণেই কুরআন এবং হাদিসের প্রকৃত মর্ম অনুধাবনের জন্য ফেকাহ আয়ত্ব করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
@দ্য মুসলিম, অবশ্যই । আপনি সুন্দর বলেছেন। এইজন্য ইমাম আওযায়ী যখন ইমাম আবু হানিফাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনি কেনো ইবনে ওমর (রা:) এর হাদিস গ্রহন না করে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এর হাদিস গ্রহন করেছেন রফে ইয়াদাইন এর ক্ষেত্রে । ইমাম আবু হানিফা (রহ:) বলেন “ইবনে মাসউদ (রা:) এর বর্ননাকৃত হাদিস এর সমস্ত রাবী ফুকাহা বা ফেকাহবিদ, তাদের জ্ঞানের গভীরতা আর সকলের বেশী । তাই আমি এই সনদের হাদিস গ্রহন করেছি ” ।
@দ্য মুসলিম,
মূল সমস্যা হলো আহলে হাদীসরা ফেকাহ শাস্ত্রকে গুরুত্ব দেয়না।
কেউ কোরান হাদিস নিয়ে গবেষনা করে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করতে চাইলে বা মাসআলা বের করতে চাইলে তাকেও ফতোয়া দিতে হবে । আর এই ফতোয়ার সংকলন হচ্ছে মাজহাব ।
আহলে হাদিসগন নতুন করে ফতোয়া দেয়া শুরু করেছে , যেগুলো অনেক আগেই মাজহাবের ইমামরা বের করে গেছেন । তারা এখন যে “রফে ইয়াদাইন” এর ফতোয়া বের করছে , সেটা বহু আগেই দেয়া হয়ে গেছে ।
এইজন্য আপনি দেখবেন তাদের “রোজা” , “হজ্ব” , “যাকাত” ইত্যাদি নিয়ে কোনো সমাধান/মাসআলা/ফতোয়ার বই নেই । কেননা কেবল নামাজের ফতোয়াই তারা শেষ করতে পারে নাই । আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন “তোমরা যাকাত, রোজা, হজ্ব” এসব পালন কর কিভাবে সহীহ হাদিসের আলোকে ? আপনি দেখবেন তাদের কোনো উত্তর নেই । এসব তারা মাজহাবের বই থেকে অনুসরন করে , কিন্তু স্বীকার করে না ।
@হাফিজ,
কেউ কোরান হাদিস নিয়ে গবেষনা করে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করতে চাইলে বা মাসআলা বের করতে চাইলে তাকেও ফতোয়া দিতে হবে । আর এই ফতোয়ার সংকলন হচ্ছে মাজহাব ।
সহমত।
@হাফিজ,
ওদের কাজ কর্ম দেখে মনে হয় শুধু মাত্র বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে ওরা হানাফী মাজহাবের বিরুদ্ধে এ ধরণের প্রচারনা চালাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হিদায়াত দিন।
ধন্যবাদ হাফিজ ভাই।
@তালহা তিতুমির, আপনাকেও ধন্যবাদ
মাজহাব নিয়ে বিতর্ক করতে চাই না। কিন্তু মাজহাব নিয়ে গোড়ামীও করতে চাই না।
লা-মাজহাবী কিংবা Blind হানাফীও হতে চাই না। কারণ রাসুল(সা)ছাড়া কোন
মানুষই ত্রুটিমুক্ত নন।
সালাম।
অত্যন্ত সুন্দর একটি লেখা।
এটা কোন বিতর্কমূলক লেখা নয়, বরং বিতর্ক নিরসনমূলক লেখা।
লেখক বলেছেন:
১.নামাজে “রফে ইয়াদাইন” করা এবং না করা দুটো আমলই হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমানিত ।
২.শাফেয়ী এবং হাম্বলী মাজহাবে “রফে ইয়াদাইন” করা হয়ে থাকে , পক্ষান্তরে “মালেকী” এবং “হানাফী” মাজহাবে রফে ইয়াদাইন করা হয় না ।
৩.চার মাজহাবের ক্ষেত্রে এই পার্থক্যটুকু শুধু নফল নিয়ে । অর্থ্যাৎ চার মাজহাবই এ বিষয়ে একমত যে , রফে ইয়াদাইন করা হোক বা না হোক এতে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না । যেহেতু এটা নফল ।
৪.আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় “রফে ইয়াদাইন” না করাও যে হাদিস শরীফ এবং সাহাবীদের আমল দ্বারা প্রমানিত সেটা প্রমান করা ।
শেষে কমেন্ট করেছেন:
১। রফে ইয়াদাইন করা এবং না করা দুটোই জায়েজ । কোনো একটিকে বেদআত বলা কোনো ক্রমেই ঠিক নয় । এর অর্থ সাহাবীরা বেদআত করেছেন ( নাউজুবিল্লাহ ) ।
২। কেউ করলেও তাকে বাধা দেয়া উচিত নয় , কেউ না করলেও কোনো অসুবিধা নেই ।
৩। ৪ মাজহাবের দুই মত থাকলেও এটা নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করে না , কিন্তু বর্তমানে একমাত্র লা মাজহাবীরা এটা নিয়ে বাড়াবারি করে। তাহলে অন্ধ কে ? কে গোড়াপন্হি ?
৩ নম্বর পয়েন্ট অবশ্য লেখক না দিলেও পারতেন।
@সাদাত,ধন্যবাদ