লগইন রেজিস্ট্রেশন

আমাদের শিক্ষানীতি

লিখেছেন: ' হাফিজ' @ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৫, ২০১০ (৯:৪১ পূর্বাহ্ণ)

আমাদের শিক্ষানীতি নিয়ে একটি খসড়া তৈরী হয়েছে যেটা চুড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে । এটার দায়িত্বে রয়েছেন যতদুর জানি “বামপন্হী” কিছু হর্তা কর্তা ।

বাংলাদেশের কওমী মার্দাসা বোর্ড “বেফাকুল” এই শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনার জন্য মুক্তাংগনে “মিটিং/সমাবেশ” করার জন্য আবেদন করেছিল । সরকার সেটা প্রত্যাখান করেছে । অর্থ্যাৎ গনতন্ত্র নামক ব্যবস্হায় এটার অনুমোদন থাকলেও ইসলামের নামে কোনো সভা/আলোচনা করতে দিতে অনেক প্রগতিবাদীরই ঘোড়তর আপত্তি ।

এই শিক্ষানীতিতে “ললিতকলা” কে বাধ্যতামুলক করা হয়েছে এবং “ইসলামিক শিক্ষা” কে Optional করা হয়েছে । একজন মুসলমানে হিসেবে আমাদের কি কোন চিন্তাভাবনা নেই ? আমরা কি অন্তত: সবার মাঝে সচেতনতা বা বিরূপ জনমত গড়ে তুলতে পারি না এই ঘৃন্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ??

কিছুদিন আগে সাপ্তাহিক শিক্ষাবিচিত্রা পত্রিকায় ( ১৫-২১ জানুয়ারী ২০১০ ) বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটি এর ভিসি প্রফেসর ড. এম. কোরবান আলীর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয় । আমার নিজস্ব বক্তব্যের চেয়ে ওনার কথাগুলো অনেক মুল্যবান তাই সেগুলো তুলে ধরলাম :

১। নতুন শিক্ষানীতিতে শিশু শ্রেনী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা এবং নবম ও দশম শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষা তুলে দিয়েছে । এই বিষয়টি সরকারের করা উচিত হয়নি । সাধারন জনগন এই পাচ শ্রেনীতে ধর্মীয় শিক্ষা তুলে দেওয়া বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিবেনা ।

২। তৃতীয় শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সেখানে আরো ৩ টি ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক করা হয়েছে । একজন মুসলিম শিক্ষার্থি অন্য ধর্ম সম্পর্কে ৬ বছর পড়ার কোনো যোক্তিকতা নেই । সে কোনো এক শ্রেণীতে এক বার পড়ে নিলেই সে ঐ ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে ।

৩। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক না রেখে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে । ফলে দেখা যাচ্ছে একজন শিক্ষার্থি শিশু শ্রেনী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনী পর্যন্ত ব্যাপক ধর্ম শিক্ষার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না । যার ফলে ইউনিভার্সিটি লেভেলে সে এই বিষয় পড়ার আগ্রহ রাখবে না । এর ফলে ৪/৫ বছর পর এ দেশ থেকে ( স্কুল , কলেজের মধ্যে ) ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি পুরোপুরি উঠে যাবে ।

মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ে :

৪। মাদ্রাসাতে শিক্ষার্থিরা ভর্তি হয় কোরআন এবং হাদিস গভীরভাবে জানার জন্য । এখানে দেখা যাচ্ছে যে , ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রায় ৬টি সাধারন বিষয় বাধ্যতামুলক করে দেয়া হয়েছে । এর ফলে শিক্ষার্থিরা কোরআন এবং হাদিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানবে না । … এখন তো তারা পুরাপুরি আরবী শিক্ষা ভুলে যাবে ।
সর্ববিষয় বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে এই শিক্ষানীতি সম্পূর্নভাবে আমাদের ইসলাম শিক্ষাকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য প্রনয়ন হয়েছে ।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩৫৬ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৪.৩৩)

১০ টি মন্তব্য

  1. শিক্ষানীতি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানি না।
    একটু বিস্তারিত লিখুন নীতিমালা উল্লেখপূর্বক। তারপর সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে।

    হাফিজ

    @সাদাত,

    কিছুদিন আগে সাপ্তাহিক শিক্ষাবিচিত্রা পত্রিকায় ( ১৫-২১ জানুয়ারী ২০১০ ) বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটি এর ভিসি প্রফেসর ড. এম. কোরবান আলীর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয় । আমার নিজস্ব বক্তব্যের চেয়ে ওনার কথাগুলো অনেক মুল্যবান তাই সেগুলো তুলে ধরলাম :

    ১। নতুন শিক্ষানীতিতে শিশু শ্রেনী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা এবং নবম ও দশম শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষা তুলে দিয়েছে । এই বিষয়টি সরকারের করা উচিত হয়নি । সাধারন জনগন এই পাচ শ্রেনীতে ধর্মীয় শিক্ষা তুলে দেওয়া বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিবেনা ।

    ২। তৃতীয় শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি সেখানে আরো ৩ টি ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামুলক করা হয়েছে । একজন মুসলিম শিক্ষার্থি অন্য ধর্ম সম্পর্কে ৬ বছর পড়ার কোনো যোক্তিকতা নেই । সে কোনো এক শ্রেণীতে এক বার পড়ে নিলেই সে ঐ ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে ।

    ৩। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক না রেখে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে । ফলে দেখা যাচ্ছে একজন শিক্ষার্থি শিশু শ্রেনী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনী পর্যন্ত ব্যাপক ধর্ম শিক্ষার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না । যার ফলে ইউনিভার্সিটি লেভেলে সে এই বিষয় পড়ার আগ্রহ রাখবে না । এর ফলে ৪/৫ বছর পর এ দেশ থেকে ( স্কুল , কলেজের মধ্যে ) ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি পুরোপুরি উঠে যাবে ।

    মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ে :

    ৪। মাদ্রাসাতে শিক্ষার্থিরা ভর্তি হয় কোরআন এবং হাদিস গভীরভাবে জানার জন্য । এখানে দেখা যাচ্ছে যে , ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রায় ৬টি সাধারন বিষয় বাধ্যতামুলক করে দেয়া হয়েছে । এর ফলে শিক্ষার্থিরা কোরআন এবং হাদিস সম্পর্কে ভালোভাবে জানবে না । … এখন তো তারা পুরাপুরি আরবী শিক্ষা ভুলে যাবে ।
    সর্ববিষয় বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে এই শিক্ষানীতি সম্পূর্নভাবে আমাদের ইসলাম শিক্ষাকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য প্রনয়ন হয়েছে ।

    দ্য মুসলিম

    @হাফিজ,

    এই শিক্ষা নীতি যদি চালু থাকে তবে, ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করা মানে অরন্যে রোদন। যা করার ঘরে বসে নিজেদেরকেই করতে হবে।

  2. অনেক কিছুই করতে চাই, কিন্তু কিছুই করতে পারি না। ঃ(

  3. “ইসলামিক শিক্ষা” যা নামমাত্র আছে তাও যদি Optional করা হয়, তবে আগামী প্রজন্মের নৈতিকতা কোথায় গিয়ে দাড়াবে ভাবতেই আৎকেঁ উঠতে হয়। শিক্ষানীতি প্রনয়ণ কমিটির সভাপতি কবীর চৌধুরী একজন স্বঘোষিত নাস্তিক, এটা জানার পরেও সরকার তাকে উক্ত পদে বসাল কিভাবে? কোন বাইরের ইঙ্গিতে কি….

    সাদাত

    @mahmud,

    শিক্ষানীতিতে কি বলা হযেছে, সেটা আগে উল্লেখ করলে ভালো হয়।

    মালেক_০০১

    @সাদাত, এই লিংক থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারেঃ http://www.bn.bdeduarticle.com/?p=90

    দ্য মুসলিম

    @মালেক_০০১, পড়া যাচ্ছিলো না। তাই নিচে কপি পেষ্ট করলাম।

  4. পড়া যাচ্ছিলো না। তাই এখানে কপি পেষ্ট করলাম।

    জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ও ড. কাজী খলীকুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন শিক্ষা কমিশন তাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রীর নিকট দাখিল করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর চুড়ান্ত খসড়া গত বছরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছেন। শিক্ষানীতি সম্পর্কে দেশবাসীর মন্তব্য আহবান করে খসড়া নীতিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছিল, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত যে কেউ মতামত দিতে পারবেন বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের কত শতাংশ মানুষের পক্ষে ওয়েবসাইট থেকে এত বড় শিক্ষানীতি ডাউনলোড করে পড়ে ওয়েবসাইটেই মতামত দেওয়া সম্ভব? ব্যক্তিগতভাবে আমার মতামত হলো- এই খসড়াটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ওয়েবসাইট ছাড়াও অন্যান্য কার্যকর ফোরাম, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশযোগ্যতা ও মতামত ধারণ সম্ভব, সেখানেও আলোচনা করা যেত বা এখনো হয়তো সুয়োগ রয়েছে।

    শিক্ষানীতি ২০০৯-এর ভূমিকাটি শুরু হয়েছে এভাবে: “স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, আলাপ-আলোচনা, পর্যালোচনা-পরিকল্পনা খুব একটা কম হয়নি। ইতিপূর্বে ছয়টি শিক্ষা কমিশন/কমিটিও গঠিত হয়েছে এবং প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ ছাড়া এ যাবৎ বাংলাদেশে কোনো জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তিত হয়নি। তবে এটিও ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর বাস্তবায়ন হয়নি। প্রথমে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিটি (২০০২), এরপর একটি নয়া জাতীয় শিক্ষা কমিশন (২০০৩) গঠন করা হয়। ওই কমিটি এবং কমিশনও প্রতিবেদন জমা দেয়। বর্তমান কমিটি পূর্বের সবগুলো প্রতিবেদন ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ পর্যালোচনা করে। কুদরত-ই-খুদা (১৯৭৪), শামসুল হক (১৯৯৭) কমিটির প্রতিবেদন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০০ বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।” (পৃ. ২)। এমন ভূমিকা পুরনো সংকটগুলোকে তুলে ধরেছে, যা আমাদেরকে যতটা আশান্বিত করে, তারচেয়েও বেশি আতঙ্কিত করে। কেননা শিক্ষানীতি নিয়ে বর্তমান চর্চাও কতটা গণমুখী এবং তা কতটা বাস্তবায়ন হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ থেকে যায়।

    সরকার থেকে বলা হয়েছে, এটি একটি যুগান্তকারী নীতি; মৌলিক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটিকে উচ্চাভিলাষী শিক্ষানীতিও বলছেন কেউ কেউ। মাধ্যমিক পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায় কতগুলো মূল বিষয়ের অভিন্ন পাঠ্যক্রম সুপারিশ এবং তার মাধ্যমে বিভিন্ন ধারার মধ্যে একটি সমন্বয়ের চেষ্টা বিশেষভাবেই প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্তিও অভিনন্দনযোগ্য। তবুও ঘোষিত নীতি ও কৌশলের মধ্যে কিছু অসংগতি রয়েছে, যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

    ভূমিকায় বলা হয়েছে, “আজকের পৃথিবী দ্রুত পরিবর্তনশীল, তীব্র এর ছুটে চলার গতি, প্রবল প্রতিযোগিতাপূর্ণ এর যাবতীয় অর্থনৈতিক বিধি ব্যবস্থা ও কর্মকাণ্ড। অগ্রসরমান প্রক্রিয়া এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক বিকাশ বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থাকে বাংলাদেশের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য আরো কঠিন চ্যালেঞ্জের ব্যাপার করে তুলেছে। এহেন পৃথিবীতে ‘যোগ্যতমের টিকে থাকা’ কথাটা বিজ্ঞানীর কল্পনা নয়, অতি নির্মম, কঠিন, বাস্তব সত্য বটে। আর এই পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেবল টিকে থাকা বা কোনোমতে আত্মরক্ষাই নয়; বরং দৃঢ় পদক্ষেপ উন্নত শিরে এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষা ও দক্ষতায় বলীয়ান, শক্ত মেরুদন্ডের হতে হবে।” (পৃ. ৩)।

    আপাতদৃষ্টিতে বাক্যগুলো শুনতে চমৎকারই লাগে কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই শিক্ষানীতি কোন উদ্দেশ্য প্রণীত? ‘বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থা’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য, নাকি আজ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর দেশকে কোন জায়গায় দেখতে চাই সে বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়ার জন্য। ‘যোগ্যতমের টিকে থাকা’র নীতিটিও কোন মানবিক নীতি নয়। ‘বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থা’ র চ্যালেঞ্জগুলো আসলে কি? কিভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা হবে? বিশ্ব পুজিঁবাদের উন্মুক্ত বাজারের আগ্রাসনের মুখে নিজস্ব মেধা, মনন, সম্পদ, সংস্কৃতির সৃজনশীল বিকাশ ঘটিয়ে কিভাবে দেশকে একটি পর্যায়ে উন্নীত করা যায়? কিছুই বলা হয়নি এ বিষয়ে। অর্থাৎ প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির চুড়ান্ত খসড়ায় দর্শনের জায়গাটি খুব স্পষ্ট নয়। কিন্তু যেকোন শিক্ষানীতির মূল ভিত্তিই হলো দর্শন।

    ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’-এ বলা হয়েছে, “এই শিক্ষানীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে সেক্যুলার, গণমুখী, সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে।”(পৃ. ৭)। এ প্রস্তাবনাটি খুবই আশাব্যাঞ্জক। কারণ এদেশের ছাত্রসমাজের দীর্ঘদিনের দাবী, একটি সেক্যুলার ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা। কিন্তু এ আশাটি হোচট খায় মাত্র দুই পৃষ্ঠা পরেই । অধ্যায়-২, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ৪নং কৌশলে বলা হয়েছে, “মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত সকল ধর্মের শিশুদেরকে ধর্মীয়জ্ঞান, অক্ষরজ্ঞানসহ আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে গণ্য করা হবে।”(পৃ. ১০)। সুতরাং একটি শিশুর জীবনের শুরুতেই, এমনকি অক্ষরজ্ঞানেরও পূর্বে কোমলমতি শিশুদের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে পাঠিয়ে ‘ধর্মীয়জ্ঞান অক্ষরজ্ঞান সহ আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচী’ জারি রেখে কিভাবে একটি শিক্ষানীতিকে ‘সেক্যুলার’ দাবী করা সম্ভব? এটি শিশুকাল থেকেই শিশুমনে এক ধরনের বিভাজনের জন্ম দেয়।

    জাতীয় শিক্ষানীতির চুড়ান্ত খসড়ায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, “প্রাথমিক শিক্ষা হবে সার্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক, এবং সকলের জন্য একই মানের।”(পৃ. ১১)। তার আগে ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, “জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ প্রণয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বিধৃত সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে।”(পৃ. ৭)। এবং তারও আগে ভূমিকায় সংবিধানের ১৭ ধারার প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। সংবিধানের ১৭ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র একই পদ্ধতির, গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।” এখন প্রশ্ন হলো, প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন ধারা, যেমন সরকারী ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়/ শিক্ষাকেন্দ্র বজায় রেখে কিভাবে ‘একই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা’ চালু করা সম্ভব? এ বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের নজরে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

    ‘উচ্চশিক্ষা’ অধ্যায়ে কৌশল ১০ এ বলা হয়েছে, “সরকারি অনুদান ছাড়াও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যয় নির্বাহের জন্য শির্ক্ষাথীর বেতন ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যক্তিগত অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা চালাতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ভর্তি ফি ও বেতন খুবই সামান্য । অভিভাবকের আর্থিক সচ্ছলতার প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে শির্ক্ষাথীর বেতন নির্ধারণের চেষ্টা করা হবে। এতে অসচ্ছল অভিভাবক ও ছাত্রছাত্ররা উপকৃত হবে। অসচ্ছলতা প্রমাণের মূল দায়িত্ব অভিভাবকের উপর ন্যস্ত থাকবে, তবে তার জন্য যথাযথ নিয়মনীতি প্রণয়ন করতে হবে।”(পৃ. ৩২)। এটি উল্লেখ করা যেতে পারে যে, অতীতের প্রায় সকল শিক্ষা রির্পোটেও শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল সাধারণ গরীব মানুষের বাস্তবতা অনুধাবন না করেই। এটি শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের অপপ্রয়াস মাত্র। এমনকি সর্বশেষ বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ সমর্থিত পিআরএসপি’র ড্রাফট রির্পোটেও শিক্ষাব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ছাত্র বেতন বাড়িয়ে। এটি একটি গণবিরোধী প্রস্তাবনা, এবং এটি বাস্তবায়িত হলে উচ্চশিক্ষায় শ্রমজীবি মানুষের সন্তানদের অভিগম্যতা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

    খসড়া শিক্ষানীতির ‘তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা’ অধ্যায়ের কৌশল-১ এ বলা হয়েছে, “শিক্ষার একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে কম্পিউটারকে শিক্ষা দেয়ার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষা দিতে হবে।”(পৃ. ৪০)। এখানে বলে রাখা ভাল, ‘তথ্যপ্রযুক্তি’ আর ‘কম্পিউটার’ সমার্থক শব্দ নয়। মোবাইল, টিভি, রেডিও, ডিভিডি, ভিসিডি এসবও তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় পড়ে। সুতরাং কেবল কম্পিউটার নয়, ইলেকট্রনিক প্রতিটি ডিভাইসের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে কিভাবে শিক্ষনকে ত্বরান্বিত করা যায় সে বিষয়ে শিক্ষানীতিতে কোন সঠিক নির্দেশনা নেই। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় এসব মাধ্যম ব্যবহার করে দেশের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষাসেবাসহ তথ্যপ্রযুক্তির সকল সেবাই পৌছানো সম্ভব।

    শিক্ষানীতির ‘নারী শিক্ষা’ অধ্যায়ের কৌশল-২ এ বলা হয়েছে, “ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ঝরে পড়া ছাত্রীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদেরকে এভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না তাদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। (পৃ.৪৮)। এক্ষেত্রে যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়গুলো থেকে ছেলে ও মেয়েদের ঝরে পড়ায় কারন, ধরন ও সংখ্যা কোনটিই এক নয়। আবার প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুল থেকে মেয়েশিশু ঝরে পড়ার কারণও অনেকাংশেই ভিন্ন। তাই মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমানোর জন্য ছেলে শিক্ষার্থীদের মতো শুধু বৃত্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না; এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গণসচেতনতা। সুতরাং এ বিষয়টিকে পৃথকভাবে দেখা একান্ত প্রয়োজন।

    সুতরাং একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও যথার্থ রাষ্ট্র এবং আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত জাতি গঠন করতে হলে প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির অসামঞ্জস্য ও অসংগতিগুলো দূুর করা এখনই প্রয়োজন। এজন্য সর্বপ্রথমে প্রয়োজন শিক্ষানীতির দর্শনটি স্পষ্ট করা; আর সেটি আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রেক্ষিতে নয়, দেশীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রয়োজনসাপেক্ষেই শিক্ষাকাঠামোটিকে ঢেলে সাজাতে হবে।

    লেখক পরিচিতি: প্রকল্প প্রধান, নেক্সট জেনারেশন ই-লার্নিং সিস্টেম, ডি.নেট (ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্ক), ঢাকা; এম.ফিল গবেষক , (ই-লার্নিং), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।