ন্যায়বিচারের অনন্য দৃষ্টান্ত
লিখেছেন: ' হাফিজ' @ সোমবার, জানুয়ারি ১০, ২০১১ (১০:২৭ পূর্বাহ্ণ)
খলীফা হযরত আলী ( রা) এর সময়কার ঘটনা ।
হযরত আলী ( রা) তখন মুসলিম বিশ্বের খলীফা । শুরাইক দেশের কাজী বা প্রধান বিচারপতি। হযরত আলী ( রা) এর একটি ঢাল ( সমরাস্ত্র ) হারিয়ে যায় এবং এক ইহুদী জিম্মি সেটি কুড়িয়ে পায়। হযরত আলী ( রা) সেটা ইহুদীকে ফেরত দিতে বললে সে সেটা ফেরত দিতে অস্বীকার করে ।
এর পরিপ্রক্ষিতে হযরত আলী ( রা) বিচারকের কাছে বিচার দেন সেই ইহুদীর নামে।
শুরাইক বা প্রধান বিচারপতি তখন হযরত আলী ( রা) এবং ইহুদী দুজনকেই ডেকে পাঠান। এরপর তাদের মধ্যে যে কথা বার্তা হয় সেটা নিম্নে উল্লেখ করা হল:
বিচারক শুরাইক ইহুদিকে : এই ঢালটা কি আপনার ?
ইহুদী : ঢালটা যে আমার তার প্রমান .. ঢালটা আমার হাতে
বিচারক শুরাইক আলী ( রা) কে : আপনার কোনো সাক্ষি আছে যাতে প্রমানিত হয় ঢালটি আপনার ?
আলী ( রা): হ্যা আছে ..আমার ছেলে “হাসান (রা)” এবং দাস “কানবার”
বিচারক শুরাইক : আপনার দাস “কানবার” এর সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য কিন্তু আপনার ছেলে হাসান (রা) এর সাক্ষি গ্রহনযোগ্য নয়।
আলী ( রা) তখন বললেন : আপনি কি এই হাদিস শোনেননি যে “হাসান এবং হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার ? এরপরেও তার সাক্ষি গ্রহনযোগ্য নয় ?
বিচারক শুরাইক : হ্যা শুনেছি তবে পিতার ক্ষেত্রে পুত্রের সাক্ষ্য আমি গ্রহনযোগ্য মনে করি না… তাই এই রায় আমি ইহুদীর পক্ষে দিলাম..
আলী ( রা) : আমি এই বিচার মেনে নিলাম
আলী ( রা) বিচার মেনে নেবার পর ঢালটি ইহুদিকে দিয়ে দেয়া হয় । ইহুদি এতে এত আশ্চর্য এবং মুগ্ধ হন যে উনি স্বিকার করেন ঢালটি আলি (রা) এর এবং ঢালটি ফেরত দিয়ে দেন । এরপর বলেন ” আপনার দীন-ধর্ম সত্য মুসলমানদের কাজী রায় দেন বর্তমানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি এদেশের রাষ্ট্রপ্রধান- এর বিরুদ্ধে আর তিনি বিনা তর্কে মাথা নত করে সেটা মেনে নেন । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসুল … এবং তখনি ইহুদি ইসলাম গ্রহন করলেন।
ইহুদীর এভাবে ইসলাম গ্রহন করায় আলী (রা) এতো খুশী হলেন যে তিনি তাকে ঢালটা উপহার হিসেবে দিয়ে দিলেন.. এটা স্নরন রাখতে হবে যে তখনকার দিনে ঢাল মুল্যবান সমরাস্ত্র হিসেবে ব্যবহ্রত হতো |
ঘটনার বিশ্লেষন এবং শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ:
আসুন উপরের ঘটনাটি আমরা বিশ্লেষন করি:-
* হযরত আলী (রা:) ইহুদীকে একবারও ইসলাম গ্রহন করতে বলেননি । কিন্তু ইহুদী তারপরও ইসলাম গ্রহন করল – কেনো ? একটিই কারন তা হোলো মুসলমানদের ন্যায়পরায়ণতা বা উন্নত আখলাক পরিদর্শন করে । আজ আমরা বুঝতে পারি কেনো এত দ্বীনের ওয়াজ নসীহত তাবলীগ সত্বেও মানুষের মনে প্রতিক্রিয়া হয় না । তার একটিই কারণ আমাদের কথার সাথে কাজের মিল নেই । আমরা মুখে মুখে কোরআন হাদিস বলি কিন্তু কাজের বেলায় হালাল হারামের যাচাই বাছাই করি না , ত্যাগ স্বীকার করি না । এলেম অনুযায়ী আমল করি না ।
* হযরত আলী (রা:) তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলীফা । অথচ দেখুন কত সহজে একজন বিচারকের বিচার নির্দিদ্ধায় মেনে নিচ্ছেন । বর্তমানে আমরা যারা ক্ষমতায় আছি তারা কি বিষয়টি ভেবে দেখতে পারি ? যেখানে অহরহ বিচারের নামে প্রহসন চলছে সেখানে এই ধরনের ন্যায়বিচারের ঘটনা আশ্চর্যজনক বটে ।
* বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র যেমন প্রচুর মুল্যবান তেমনি তখন “ঢাল” ছিল খুবই দামী যুদ্ধাস্ত্র । এবং দামী ছিল বিধায় আলী (রা:) বিচারের জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন । তারপরে ইহুদীর ইসলাম গ্রহন করায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দান করে দিলেন । দানশীলতার চমৎকার উদাহরন আমরা দেখলাম ।
*বিচারক “শুরাইক” এর নির্ভিক সাহস এবং ন্যায়পরায়ণতা অনুসরণযোগ্য । উনি ঠিকই জানেনে আলী (রা:) এর ক্ষমতা অথচ কত নির্ভিকভাবে বললেন “পুত্রের” সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য নয় । এটা তখনই সম্ভব যখন মানুষের অন্তের “খোদাভীতি” বিরাজ করে । আমরা সবসময় চেষ্টা করি “আইন কানুন” শক্তিশালী করার কিন্তু এটা ভুলে যাই আইন করে কারো স্বভাব বদলানো যায় না । এর জন্য প্রয়োজন খোদাভীতি । একমাত্রে খোদাভীতিই পারে “হত্যা” , “খুন” , “এসিড নিক্ষেপ” , “ইভটিজিং” এর মতো আরো অপরাধ দমন করতে । শত শত পৃষ্ঠার আইন রচনা করে নয় ।