খ্যাতির মোহ, রিয়ার উৎস ও কিছু কথা
লিখেছেন: ' হাসান আল বান্না' @ বুধবার, মার্চ ২৪, ২০১০ (১০:০২ অপরাহ্ণ)
মানুষের চতুর্দিকে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়াকে বলে ‘জাহ’ অর্থাৎ জাকজমক। এরূপ খ্যাতি খুব কল্যাণকর নয়, বরং নাম-নিশানাশূন্য থাকা এর চেয়ে অনেক উত্তম। তবে আল্লাহ তা’আলা যদি তাঁর দ্বীন প্রচার করবার সুখ্যাতি দান করেন এবং এতে সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তির চেষ্টা-চরিত্রের কোন লেস না থাকে, তবে এ ধরনের স্বতঃস্ফুর্ত খ্যাতিতে কোন সমস্যা নেই।
হযরত হাসান (রাঃ) বর্ণনা করেন, হযরত মাসউদ (রাঃ) একদিন বাড়ী থেকে বের হলে অনেক লোক তাঁর পেছনে যেতে লাগল। তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, তোমরা আমার পেছনে পেছনে আসছ কেন? আল্লাহর কসম! যে কারণে আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ রাখি, তা যদি তোমাদের জানা হয়ে যায়, তাহলে দুটি লোকও আমার সাথে চলবে না।
এ ছাড়া হযরত হাসান (রাঃ) একদিন বাড়ী থেকে বের হলে লোকজন তাঁর পেছনে পেছনে যেতে লাগল। তিনি বললেন, কোন প্রয়োজন আমার নিকট থাকলে ভাল, নতুনা এটা কোন বিষ্ময়কর কিছু নয় যে,এ পেছনে পেছনে চলা ঈমানদারদের অন্তরে কিছু অবশিষ্ট রাখবে না।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন –
“আখেরাতের সেই ঘর আমি তাদেরকে দান করব – যারা পৃথিবীতে উচ্চ হওয়ার এবং ফাসাদ সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে না: এবং নিষ্ঠাবানদের জন্যই পরকাল। ” সুরা- ২৮- আয়াত-৮৩
“That Home of the Hereafter We shall give to those who intend not high- handedness or mischief on earth: and the end is (best) for the righteous. ”
এই বিষয়ের অবতারনা করবার কারণ হলো, আমরা ও আমাদের তথাকথিত নেতারা সম্পুর্ণরূপে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নির্দেশিত রাস্তার উল্টোদিকে ধাবিত হচ্ছি। আর এতেই আমরা মগ্ন। শুধু তাই নয়, এর জন্যে আমাদের কিছু নামধারী পীর বুজুর্গ রীতিমত নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে দেশের অলিগলিতে নিজের নামের অসংখ্য টাইটেল সংবলিত পোষ্টারে দেয়ালগুলো ছেয়ে দেয়। তথাকথিত এইসব পীর-বুজুর্গ কেন, মন্ত্রী এমপিরাও জনগনের টাকায় নিজেদের নাম পাথরে খোদায় করে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। আর এতে আমরা-জনগণের সমর্থনও কম নয়।
শুধু তাই নয়, এর জন্যে আমাদের কিছু নামধারী পীর বুজুর্গ রীতিমত নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করে দেশের অলিগলিতে নিজের নামের অসংখ্য টাইটেল সংবলিত পোষ্টারে দেয়ালগুলো ছেয়ে দেয়।
সত্যি বলেছেন, আগের পীর-বুজুর্গ আর বর্তমানের সাথে আকাশ পাতাল ফারাক। ওদের এসবের ভিত্তি কি? এবিষয়ে মাঝে মাঝেই চিন্তা করতাম।
বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত সংবাদ, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে নাকি কার সাথে যেন তুলনা করা হয়েছে, সেখানে দেখলাম যে- তরিকত ফাউন্ডেশনই এসব নিয়ে বেশী নাচানাচি করছে। প্রশ্ন হলো, ওরা যে কুশপুত্তলিকা দাহ করছে, সেটা কতটুকু ইসলাম সম্মত?
@দ্য মুসলিম,
ওরা যে কুশপুত্তলিকা দাহ করছে, সেটা কতটুকু ইসলাম সম্মত?
@হাফিজ,
শুধু কুশপুত্তলিকা নয়, এছাড়া এই ইস্যু নিয়ে ওরা অনেক অনৈসলামিক কর্মকান্ড করেছে। ভাবছি, ডাকাত কিভাবে চোরের বিচার করবে?
@দ্য মুসলিম, সহমত ।
@দ্য মুসলিম,
বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত সংবাদ, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে নাকি কার সাথে যেন তুলনা করা হয়েছে,
খবরটা কিন্তু ভুয়া, আসলে তুলনা করা হয় নাই ।
@হাফিজ,
সহমত।
অবমাননা করেছে এর করছে তারাই, যারা এ বিষয়টি নিয়ে লাফালাফি করছে। দুঃখের বিষয় হলো সেখানে দাঁড়ি-টুপিওয়ালা কিছু লোকও ছিলো। আল্লাহ পাক আমাদের হেদায়াত দিন।
@দ্য মুসলিম, আপনি ইসলামের প্রশংসা করেন আর সমালোচনা করেন , সবসময়ই আপনার পাশে দাড়ি টুপিওয়ালা লোক পাবেন
বাদশাহ আকবরের দরবারে যেমন ছিল আবুল ফজল , ফৈজী যারা দ্বিনে ইলাহি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিল ।
@হাফিজ, বাদশাহ আকবরের দরবারে যেমন ছিল আবুল ফজল , ফৈজী যারা দ্বিনে ইলাহি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিল ।
একমত।
@দ্য মুসলিম,
এসব তথাকথিত তরিকত মূলত ইসলাম দূরীকরণের হাতিয়ার।
@হাসান আল বান্না,
সমস্যা তরিকা বা তরিকতের মধ্যে নয়। মূল সমস্যা হলো বর্তমানের তরিকতের ধারক বাহকের মধ্যে।
@দ্য মুসলিম,
সমস্যা তরিকা বা তরিকতের মধ্যে নয়।
আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “……. আমার উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে”
— কিতাবুস্ সুনান, আবু দাউদ।
@হাসান আল বান্না,
তরিকা বা তরিকত এই ৭৩ ফেরকার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত কিনা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
কেউ যদি বলতে চায় যে, তরিকা বা তরিকত ফেরকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, তাহলে বলতে হবে যে তারা জাহান্নামি। আর তাহলে বলতে হবে যে, হযরত শাহজালাল রঃ, হযরত শাহপরান রঃ, হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রঃ, হযরত আব্দুল কাদের জীলানী রঃ, ইমাম শাফেয়ী রঃ, ইমাম মালেক রঃ, হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী রঃ, হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি রঃ এরা সবাই জাহান্নামী (নাউজুবিল্লাহ), কারন এরা সবাই তরিকতের ধারক-বাহক-প্রবর্তক ছিলেন।
ভালো খারাপ একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। তবে তরিকত কে জাহান্নামী বলতে হলে নিজের ঈমানকে যে যথেষ্ট রিস্কের মধ্যে ফেলতে হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। দুঃখিত, আমি এত বড় রিষ্ক নিতে রাজি না।
হযরত আনাস ও আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত- আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যে লোক আমার বন্ধুকে অপমানিত করে, সে যে আমার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করল। কোন ব্যাপারে আমি দ্বিধা সংকোচ করি না। আমি দ্বিধা সংকোচ করিনা আমার মুমিন বান্দার প্রাণ হরণ করতে, অথচ সে মৃত্যু অপছন্দ করে। আর আমি তার খারাপ বিষয়গুলো অপছন্দ করি। আর তা তার জন্য হওয়া অনিবার্য। দুনিয়ার মোহমুক্তি মুমিন বান্দাহকে আমার নিকটবর্তী করে। আর বান্দার প্রতি আমি যা কিছু ফরজ করেছি তা বাস্তবায়িত করার তুলনায় আমার বেশী গুরুত্বপূর্ণ আর কোন ইবাদত নেই।” (বোখারী)
বর্তমানে পীরদের মধ্যে হাজারো সমস্যা আছে সেটা আমরা সকলে জানি। আর আমিও কোন পীরের মুরিদ নই। কিন্তু তাই বলে তরিকতকে ফেরকা বলে আল্লাহর ওলীগণের অমর্যাদা করার সাহস আমার নেই। আল্লাহ পাক আমাদের হেদায়াত দান করুন। আমিন।
@দ্য মুসলিম, সহমত ।
এখানে আরো একটি বিষয় , হাদিস বর্ননা কারী যেসব রাবী আছেন , যাদের বিস্তারিত জীবনি “আসমাউরল রিজাল” শাস্ত্রে আছে, উনাদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু তরীকত পন্হি ছিলেন । আপনারা হয়ত জানেন , মুহাদ্দিসগন অমানুষিক পরিশ্রম করে , যাচাই বাছাই করে রাবীদের থেকে হাদিস নিয়েছেন , এমনকি কোনো রাবী যদি বেদআতি বা অপছন্দনীয় মিথ্যা বলতেন , তাদের থেকেও হাদিস গ্রহন করা হোতো না ।
তরীকত যদি বেদআত হোতো তাহলে তরীকতপন্হী “রাবীদের” হাদিস গ্রহন করা হোতো না । এটা একটা দলীল আরো অনেক দলীল আছে ।
@হাসান আল বান্না,
সবচাইতে বড় কথা হলো, তরিকত আসলে কি এটা অনেকেই জানিনা। বেশীর ভাগই মনে করি যে, তরিকত মানে হলো পীরের মুরিদ হওয়া আর পীরের ইচ্ছামতো চলা। আর আব্বা বলেছেন তরিকত খারাপ, তাই তরিকত খারাপ। অথচ আমি যতদুর জানি, তরিকত ইখলাসের সহিত ইবাদত শিখতে সাহায্য করে এবং উদ্বুদ্ব করে। ধন্যবাদ।
@হাসান আল বান্না,
আপনাকে ধন্যবাদ, এখানে আমি কিছু পয়েন্ট শেয়ার করছি ।
১) এই হাদীস শরীফ আকীদার সাথে সম্পর্ক , আমলের সাথে না , তাই পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেনো এবং যে দলের সাথেই থাকুক না কেনো সে যদি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) এবং সাহাবীদের (রা:) এর আকীদা অনুযায়ী মেনে চলবে তারাই নাজাত পাবে ।
২) শুধুমাত্র আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত বা সুন্নি দাবী করলেই হবে না , বিশ্বাসের সাথে মিলতে হবে । কেউ যদি দাবী নাও করে কিন্তু বিশ্বাসে পুরাপুরি সুন্নি হয় তাহলে সে “আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত” এর অন্তর্ভুক্ত হবে ।
৩) আর একটা জিনিস এটা কিন্তু বলা হয়েছে “মুসলমান”দের মধ্যে ৭৩ দল হবে । তার মানে কেউ মুসলমান দাবী করার পরও যদি তার এমন কোনো কুফরী আকিদা থাকে যেটার কারনে সে মুসলমান থেকে খারীজ হয়ে যায়, তাহলে সে কিন্তু এই হাদিসের গন্ডীর মধ্যে পরবে না । সে ৭৩ দলেরও বাহিরে ।
৪) আর কেউ যদি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের বাহিরে আকিদা পোষন করে , তাহলে তার আকীদার মধ্যে যদি কুফরী , শেরেকী না থাকে তাহলে সে পাপ ভোগ করার পর একদিন না একদিন জান্নাতে যাবে । হাদিস শরীফে যেটা বলা হয়েছে বাকী ৭২ দল জাহান্নামী , তারা চির জাহান্নামী নয় ।
[সূত্র ১) মাকতুবাত শরীফ মোজাদ্দেদে আল ফেসানী (রহ:) ও ২) ইখলাস পাবলিকেশনস এর প্রকাশানা তুরস্ক থেকে ]
৫) অনেক মাজহাবের মতভেদকে ৭২/৭৩ এর হাদিস শরীফের সাথে মিলিয়ে ফেলে , কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না , এটা আকীদার সাথে সম্পর্ক , ফেকাহর মাসআলার ক্ষেত্রে সম্পর্ক না ।
@হাফিজ,
ঠিক বলেছেন।
@হাফিজ, ৫) অনেক মাজহাবের মতভেদকে ৭২/৭৩ এর হাদিস শরীফের সাথে মিলিয়ে ফেলে , কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না , এটা আকীদার সাথে সম্পর্ক , ফেকাহর মাসআলার ক্ষেত্রে সম্পর্ক না
একমত।