প্যান্ট পায়জামা গুটিয়ে নামাজ পড়া কেমন?
লিখেছেন: ' jaran' @ বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১১ (৮:১৫ অপরাহ্ণ)
কাফফে সাওব এর আভিধানিক অর্থ কাপড় মোচড়ানো, জমা করা , মেলানো।ফিক্হ’র পরিভাষায় সাজদায় যাওয়ার সময় কাপড়কে উপরের দিকে টানা, কোমরের দিকে বা পায়ের দিকে গুটিয়ে বা মোচড়িয়ে নেয়া ও আস্তিনকে (জামার হাত) আধা কব্জি থেকে অধিক তোলে নেয়াকে কাফফে সাওব বলে। হাদীস শারীফ ও ফিক্হ শাস্ত্রের মানসে এবিষয়টি মাকরূহ-ই-তাহরীমী।এাবস্থায় নামায পড়লে কাপড়কে স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে পূর্বাবস্থায় আদায়কৃত নামায পুনরায় পড়ে নেয়াটা ওয়াজিব হয়ে যায়।এ সম্পর্কে বিস্তারিত দলিল পেশ করার পূর্বে কিছু প্রাথমিক কথা স্মৃতি পটে গেঁথে নিন।যখন আপনি নামযের ইচ্ছা করেন, মূলতঃ মহান প্রভুর বার্গাহে হাজির হচ্ছেন। যে দরবার হতে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন আর কোন দরবার নেই।এ জন্য এ দরবারে অতীব আদবের সাথে আসা উচিত। এরূপ নয় যে, মনে হচ্ছে কোন গোঁয়ার (অসংস্কৃত ব্যক্তি)উপস্থিত হচ্ছে। আদব এটাই যে, পোষাক পরিচ্ছদ যথাযথভাবে পরিহিত অবস্থায় হাজির হওয়া। এটাকে একটা উদাহরণের মাধ্যমে এভাবে বুঝে নিন যে, যদি আপনাকে কোন অফিসারের সম্মুখে যেতে হয় প্রথমে নিজেকে সর্বদিক দিয়ে যথার্থ ও ঠিকঠাক করে নিতে হয়। নিজের শরীরের পোষাককে সর্বদিক দিয়ে সাজিয়ে নিতে হয়। আস্তিন উঠানো থঅকলে সেটাকে খোলে সোজা করে নিতে হয়।এবং প্যান্টের পা ইত্যাদি ঠিক করে নিতে হয়। এবং যদি প্যান্টের একপ্রান্ত উপরের দিকে, তো অন্যটা নীচের দিকে, তাহলে সেটাকেও ঠিক নিতে হয়। যখন দুনিয়ার কোন অফিসারের দরবারের জন্য এরূপ বন্তোবস্ত করেন, তাহলে যেটা সকল দরবারের চেয়ে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন দরবার।সে দরবারে যাচ্ছেন তো এরচেয়ে অধিক বন্দোবস্ত হওয়া উচিত – নাকি এর বিপরূত। বরঞ্চ এ সময়ানুনয় ও বিনয়ের অবস্থা অসাধারণ রূপ হওয়া উচিত।কেননা আল্লাহ্ পাকের প্রিয় মাহবূব, সারকারে কায়িনাত, রাসূলে আকরাম মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন ‘তুমি আল্লাহ তা’আলার ই’বাদাত এরূপ কর যে, মূলত তুমি তাকে দেখছ এবং যদিও তুমি তাঁকে দেখছনা ,তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি তোমাকে দেখছেন।এবং আল্লাহ তা’আলা নিজেই ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ তা’আলার সম্মুখে আদব সহকারে দন্ডায়মান থাক’।উদ্দেশ্য আপনার যেন এরূপ অবস্থা না হয় যে একদেকে প্যান্টের পা উপরে এবং অন্যদিকে নীচে, যেটাকে আপনি সাধঅরণ অবস্থায় মোটেও পছন্দ করেন না।
প্রশ্ন(১)ঃপুরুষের প্যান্ট ,পায়জামা ও লুঙ্গি ইত্যাদি লম্বা হওয়ার দরুন অনেকে নামায পড়ার জন্য সেগুলো টাখ্নুর উপরে উঠিয়ে নেয়ার জন্য পায়ের দিকে কিংবা কোমরের দিয়ে গুটিয়ে বা মোচড়িয়ে নেন। এছাড়া জামার হাত ও ভাঁজ করে কব্জির উপর উঠিয়ে নেন। শারীআ’তের দৃষ্টিতে এরূপ করা কেমন ?
উত্তরঃ হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বোখারী (রাহমাতুল্লাহু তা’ আলা আলাইহি) সাহীহ্ বোখারী শারীফে বিশেষভাবে এ মাসআলার জন্য একটি অধ্যায় ‘বাবু লা ইয়াকপু ছাওবাহু ফিস্ সালাতি’নির্ধারণ করেছেন।
ইমাম বোখারী (রাহমাতুল্লাহু তা’ আলা আলাইহি) এ অধ্যায়ে একখানা হাদীস শারীফ উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন-হযরতে ইবনে আ’ববাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা) থেকে বর্ণিতযে, হুযূর রাসূলে আকরাম মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, আমার উপর হুকুম হয়েছে যে, সাতখানা হাঁড়ের উপর সাজদাহ্ করার এবং এটাও হুকুম হয়েছে যে, কাপড় ও চুল না মোচড়ানোর। আর ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রাহমাতুল্লাহু তা’ আলা আলাইহি) বলেন, এহাদীস খানা হাসান ও সাহীহ্। এ হাদীস শারীফের ব্যাখ্যায় স্বীয় যুগের আ’যীমুল মার্তাবাত মুহাদ্দিস, শারিহ্ বোখারী, আ’ল্লামাহ্ বাদরুদ্দীন আ’ইনী আলাইহির রাহ্মাহ্ ইরশাদ করেছেন-
‘‘আবূ দাউদের নিকট কাফফে সাওব’র মাকরূহ-ই-তাহরীমী হওয়ার অত্যন্ত উত্তম সনদে এক বর্ণনা রয়েছে। সেটা এ যে, হযরতে আবূ রা-ফি’ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) কে দেখলেন যে, আপন যুল্ফ সমূহকে(বাবরীচুল) নিজ গর্দানে চুলের গদি বানিয়ে নামায আদায় করেছেন।তখন আবূ রা-ফি(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) সেগুলোকে খোলে দিলেন। এবং বললেন যে আমি নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনতে যে, চুরের গদি শায়তানের আসন এবং ‘মারফা’ নামক কিতাবে আমরা সাবিত(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)এর হাদীস বায়ান করেছি যেটা আবদুল্লাহ বিন হারিস(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে দেখলেন যে তিনি নিজের চুলের গদি বানানো অবস্থায় নামায পড়ছেন তখন আবদুল্লাহ্ বিন আ’ববাস(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) চুলের গদি খোলতে লাগলেন, এবং বললেনরয, আমি রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিযে, এটা শায়তানের আসন।সুতরাং এ হাদীস এ অবস্থায় নামায পড়া অপছন্দের উপর প্রমাণ করছে। এবং ‘আ-ক্বস’এর অর্থ এটা যে ,নেজ কাপড়কে এক জায়গায় জমা করে সুতা দিয়ে বেঁধে দেয়া বা আটা দিয়ে লাগিয়ে দেয়া। অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এর ঐক্যমত যে, হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিষেধ করা প্রত্যেক ঐ নামাযেরই জন্য এটা করুক বা শুরু হতেই এরূপ করাবস্থায়থাকুক। সুতরাং এ হাদীস হতে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, কাফফে সাওব (কাপড়) এবং কাফফে শা’র (চুল) দু’টোতেই নামায মাকরূহ-ই -তাহরীমী ওয়াজিবুল ইয়া’দাহ্ অর্থাৎ নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব হয়ে যায়।
ফাক্বীহ্গণ ও সালীহীন ক্বিরামের বাণী সমূহ
(১ ) দুর্রে মুখতারে আছে ‘‘ওয়া কারিহু কাফ্ফাহু-ই-রফআহু ওয়া লাও লিতুরবিন কামুশাম্মারি কুম আও জায়লি’’ এবং এটার ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে ‘আবিদিন শামী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)লিখেন-‘‘এবং কাফফে সাওব মাকরূহ অর্থাৎ কাপড়কে উঠানো যদিও কাপড় মাটি হতে বাঁচানোর জন্য হোক। যেমন আস্তিন এবং দামন আচল মোচড়ানো। যদি এ অবস্থায় নামাযে প্রবেশ করল যে তার আস্তিন বা তার দামন মোচড়ানো ছিল তখনও মাকরূহ।এবং একথা হতে ঐ কথার দিকে ইশারা করা উদ্দেশ্য যে, এ মোচড়ানো নামাযাবস্থার সাথে বিষেশভাবে নির্ধারিত নয়। চাই নামায শুরু করার পূর্ব হতে বা নামাযের মধ্যখানে হোক সর্বাবস্তায় মাকরূহ (খন্ড-১ম. পৃষ্ঠা-৫৯৮)
(২) জাওয়াহিরাতুন নায়য়িরাহ্ নামক কিতাবে রয়েছে -
‘‘নিজে কাপড়কে না মোচড়ায় এবং কাফফে সাওব এটা যে সাজদাহ্ করার সময় নিজের সম্মুখ হতে বা পিছন হতে কাপড় উঠানো এবং হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- আমায় হুকুম হয়েছে যে, আমি সাতখানা হাড্ডির উপর সাজদাহ্ করব, কাপড় ও চুলকে জড় বা একত্রিত করব না। (খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৮১)
(৩)সাগিরী শারহে মুনিয়াতুল মুসাল্লীতে রয়েছে- নামাযাবস্থা্য় নিজ কাপড় আঁকড়িয়ে ধরে নামায আরম্ভ করা,যেমন আস্তিন মোচড়ানো বস্থায় বা মাটি হতে বাঁচানোর জন্য কাপড় উঠানো, এসব মাকরূহ।(পৃষ্ঠা-১৮৯)
(৪) আলমগীরিতে রয়েছে – নামাযীকে নিজের কাপড় বা দাঁড়ি বা শরীর নিয়ে খেলা করা মাকরূহ এবং কাপড়কে একত্রিত, জড় বা ভাঁজ করাও মাকরূহ।এভাবে সাজদায় যাওয়ার সময় নিজের সম্মুখ বা পিছন হতে কাপড় উঠিয়ে নেয়া। এটা হতে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, কাপড় জড় করা, নামাযে সাজদায় যাওয়ার সময় নিজের বা পিছনের কাপড় জড় বা ভাঁজ করা বা নামাযে এভাবে প্রবেশ করল যে তর দামন(আঁচল) বা আস্তিন মোচড়ানো ছিল বা মাটি হতে বাঁচানোর তাগিদে উঠিয়ে নিল, এগুলি সব মাকরূহ এবং ফুক্বহায়ে কিরাম সাধারণতঃ মাকরূহ বলে মাকরূহ-ই-তাহরীমী উদ্দেশ্য নেন।(খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-১০৫)
(৫)হিদায়া এবং তাবিনুল হাক্বায়িক্বে রয়েছে -
‘নিজ কাপড়কে যেন একত্রিত বা জড় না করে, কেননা এটা এক প্রকারের অহংকার’।(হিদায়া পৃষ্ঠা-১০১, খন্ড-১ম, তাবিন , পৃষ্ঠা-১৫৪,খন্ড-১ম)
পবিত্র কোরআনের বাণী – ‘‘এবং আল্লাহ পাকের সম্মুখেআদব ও বিনয়ের সহিত দাঁড়াও’’।
এ সব হাদীস ও ফিক্হর উদ্ধৃতি হতে সকল মুসলমানের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত এবং নিজের নামায সমূহকে নষ্ট হওয়া হতে বাঁচানো উচিত।প্রত্যেকের উচিত যেন নির্ভর যোগ্য কিতাব সমূহে বর্ণিত মাসআলার উপর আ’মাল করে, মনগড়া ও ভিত্তিহীন কথঅ-বার্তা পরিহার করে। সকল মসজিদের ইমাম সাহেবানদের প্রতি আবেদন যে, এটার উপর নিজেও আ’মাল করুন এবং নিজ মুসল্লীগনকেও আ’মারের শিক্ষা দান করে আল্লাহ পাকের নিকট থেকে পুরস্কৃত হউন।
অভিযোগ সমূহঃ
(১)প্রশ্নঃ যদি আস্তিন আধা কব্জি হতে কম মোচড়ানো হয় তাহলে নামায মাকরূহ-ই-তানযীহী হয় এবং আধা কব্জি বা এর চেয়ে বেশী মোচড়ানো হলে মাকরূহ-ই-তাহরীমী
মূলতঃ সাধারণ ভাবে কাফফে সাওবে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী হওয়া উচিত ?
উত্তরঃ বাহ্যতঃ সাধারণভাবে আস্তিন মোচড়ানো কাফফে সাওব, যাতে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী ওয়াজিবুল ইয়া’দাহ্ হয় কিন্তু আল্লামা ইবনে আবিদিন শামী(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এটা বিস্তারিত বায়ান করেছেন যে, অর্ধ কব্জি হতে কম হলে নামায মাকরূহ-ই-তানযীহীহয় এবং অর্ধ কব্জি এর চেয়ে আস্তিন মোচড়ানো হলে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী হয়। আল্লামা শামী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এর কারণ বলেছেন যে, সাধারণতঃ অযূ করার পর বেখেয়ালী বা বেপরোয়ায়ীর কারণে আস্তিন কিছুটা মোচড়ানো থেকে যায় অতএব সর্বসাধারণের সুবিধার্থে ছাড় দেয়া হয়েছে।
(২)প্রশ ণঃ ‘আক্বস’ এর অর্থ চুল সমূহ বা কাপড় সমূহকে গোছিয়ে নিয়ে বা একত্রেত করে কোন জিনিস দিয়ে বাধা, যখন মোচড়ানোর মধ্যে এ কথা হয়না অতএব এতে মাকরূহ না হওয়া উচিত ?
উত্তরঃ যার সামান্য জ্ঞান রয়েছে সে ব্যক্তি জানে যে বাঁধার উদ্দেশ্য কি হয়। এটাউ হয় যে, যে কোন পন্থায় রুখে দেয়া। এখানেও পায়জামা উপরের দিকে মোচড়িয়ে রুখে দেয় এবং (প্যান্টের)পায়ের কাপড় উপরের দিকে মোচড়ানো হয় যা মাকরূহ্ পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত।
(৩) প্রশ্নঃ কিছু উলামা এবং সাধারণ মানুষ একথা বলেন যে, এ কাজ যদি নামাযাবস্থায় (নামাযের ভিতর) করা হয় তাহলে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী ওয়াজিবুল ইয়া’দাহ হবে?
উত্তরঃ এরূপ কথা যিনি বলেন , তিনি ভীষণ ভুলের উপর রয়েছেন। এবং এটা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার নামান্তর। বোখারী শারীফের বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা বাদরুদ্দীন আ’ইনী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) লিখেন -
‘‘অধিকাংশ ওলামায়ে কিরাম কাফফে সাওব ও কাফফে শা’রকে মাকরূহ-ই-তাহরীমী সাব্যস্ত করেছেন।চই এ আ’মাল তার নামাযের ভিতর হোক বা শুরু করার পূর্বে হোক। হযরত ইমাম হাসান বসরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্ণিত যে, এভাবে নামায আদায় করাতে তা পুনরায় পড়া জরুরী হয়ে যায়।
‘আক্বস’ অর্থাৎ নিজ কাপড় সমূহ বা চুল সমূহ এক জায়গায় জমা করে সুতা দিয়ে বাঁধা বা আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়া।উপরোক্ত হাদীস শারূফ সমূহ ও ফিকহের উদ্ধৃতি সমূহের আলোকে এটা মাকরূহ-ই-তাহরীমী হওয়া সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্কতা ও সাবধঅনতা অবলম্বন করা প্রত্যেক ইমাম সাহেব ও মুসল্লীগণের উপর একান্ত দায়িত্ব। অলসতা ও অবহেলা ও অজ্ঞতার নামান্তর। পরম করুণাময় সবাইকে বুঝার তাওফিক্ব দগান করুন। উল্লেখ্য যেম হাফ বা অর্ধ হাতওয়ালা আস্তিন সহকারে নামায পড়া তদ্রুপ শার্টকে প্যান্টের ভিতর রেখে নামায পড়া আদবের পরিপন্থি-খিলাফে আওলা।আরো উল্লেখ থাকে যে, যারা অজ্ঞতা বশতঃ কাপড় চুলগিরার (টাখনু) নীচে লটকানো অবস্থায় বা কাপড় কোমর বা পায়ের দিকে গুটিয়ে বা মোচড়িয়ে নামায আদায় করে আসছেন অতীতের অজ্ঞতাবশতঃ আদায়কৃত নামায সমূহ পুনরায় পড়তে হবে না। বরং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থণা করবেন এবং ভবিষŠতের জনŠ হুশিয়ার থঅকবেন।
-অসিয়ে আহলে সুন্নাত।
(২)প্রশ্নঃ প্যান্ট ইত্যাদি পায়ের দিকে গুটিয়ে বা মোচগিয়ে নিলে যদি নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী হয়, তবে কোমরের দিকে গুটিয়ে বা মোচড়িয়ে নেয়া যাবে কি? কেননা লুঙ্গিতো এমনিতোই মোচড়িয়ে পরিধঅন করা হয়।
উত্তরঃ উপমহাদেশের প্রখ্যাত ‘আলিম আল্লামা আব্দুস্ সাত্তার হামদানী’ (মাদ্দাজিল্লুহুল আলী) ‘‘মু’মিন কী নামায’’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন যে-
‘‘‘এ মাসআলার ব্যাপারে সাধারণ লোকেরা অত্যন্ত ভুলের মধ্যে রয়েছে যে, অনেক লোককে দেখা যায় নামায আদায় কালে প্যান্ট বা পায়জামাকে (গোঁড়ালীর উপরে)উঠানোর জন্য প্যান্ট বা পায়জামার নিচের দিক উপরের দিকে মোচড়িয়ে দিয়ে থাকে। নামাযের মধ্যে এভাবে প্যান্ট ও পায়জামার নিচের অংশ মোচড়িয়ে উপরে তুলে দেয়াকে খিলাফে মু’তাদ বা স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থি। এতে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী হয়। যদি প্যান্ট বা পায়জামা এত লম্বা যে, টাখ্নু ঢেকে যায়, তবে টাখ্নু বা গোঁড়ালী দেখা যাওয়ার জন্য প্যান্ট বা পায়জামার নিচের দিক মোচড়ানো অনুচিত।বরং (সম্ভব হলে) কোমরের দিক থেকে উপরের দিক থেকে টেনে নেবে। যদি কোমরের দিকে টেনে (মোচড়িয়ে নয়) নেয়ার পরও টাখ্নু বা গোঁড়ালী দৃষ্টিগোচর নাহয় তবে গোঁড়ালী ঢাকা অবস্থাতেই নামাযা পড়ে নেয়া উচিত। এ ভাবে নামায পড়লে অবশ্যই নামায মাকরূহ-ই-তানযীহী হবে। কিন্তু গোঁড়ালী দেখঅর যাওয়ার জন্য প্যান্ট বা পায়জামার নিচের দিকে মোচড়ানোতে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী হয়। আর যে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী হয় তা পুনরায় পড়ে নেয়া ওয়াজিব। আশ্চর্যের কথা হলো, মাকরূহ-ই-তানযীহী হতে বাঁচার জন্য লোকেরা মাকরূহ-ই-তাহরীমী করে বসে আর সুন্নাতের উপর আ’মাল করছে বলে ধারণা করে বসে।(মু’মিন কী নামায, পৃষ্টা-১৮০-১৮১)(দেখুন মাসেক তরজুমান, মাহে শাওওয়াল ১৪২৪ হিজরী. নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০০৩ইং)
লুঙ্গি পরিধান করার জন্য যেটা মোচড়ানো হয় তা লুঙ্গি পরিধানের স্বাভাবিক অবস্থা। এটাকে মোচড়ানোর পর্যায়ে ধরা হবে না। হ্যাঁ তবে স্বাভাবিক ভাবে মোচড়িয়ে লুঙ্গি পরিধঅন করার পর কোমরের দিকে পুনরায় মোচড়িয়ে নেয়া হলে সেটাকে মোচড়ানো বলে ধরে নেয়া হবে।
(৩) প্রশ্নঃ যদি প্যান্ট ইত্যাদি কোমরের দিক দিয়ে বা পায়ের দিক দিক দিয়ে মোচড়ানো না যায় তবে এ অবস্থায় কি করতে হবে,যেহেতু কাপড় মোচড়িয়ে নামায পড়লে কাপড় স্বাভাবিক করে নমায পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজিব হয়ে যাচ্ছে । অপরদিকে আমরা এতদিন জেনে এসেছি যে, প্যান্ট ইত্যাদি টাখ্নু বা পায়ের গোঁড়ালি বা গিঁঠ’র নীচে হলে হারাম ও এ অবস্থায় নামায পড়া জায়িয নেই। যদি তাই হয় তবে তো একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে যে, প্রায় লোকের প্যান্ট ইত্যাদি টাখ্নুর নীচ পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এখন ঐ ব্যক্তি তো পূর্বে উল্লেখিত বক্তব্য অনুসারে (অর্থাৎ)কাপড় মোচড়িয়ে নামায পড়া মাকরূহ-ই-তাহরীমী প্যান্টকে কোমরের দিক দিয়ে কিংবা পায়ের দিক দিয়ে মোচড়িয়ে নিতে পারছেন না আবার টাখ্নুর নীচেও রাখতে পারছেন না, এ অবস্থায় তার করণীয় কি?
উত্তরঃ এ বিষয়ের উপর দলিল পেশ করার পূর্বে কিছু কথা পেশ করছি। তা হলো প্যান্ট ইত্যাদি এত লম্বা সেলাই না করাই উচিত যা টাখ্নুর নীচে হয়।কেননা এটা শুধু নামায অবস্থায় নয় বরং সাধারণ অবস্থায়ও ততটুকু দোষনীয় যতটুকু নামায অবস্থায় দোষনীয়। কেননা রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা ইর্শাদ করেছেন তা সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য। চাই তা নামাযে হোক বা নামাযের বাইরে। কাপড়কে টাখ্নুর নীচে পর্যন্ত লটকানোকে ফিক্হর পরিভাষায় ‘ইসবাল’ বলে। কাপড় অহংকারের নিয়্যাত ব্যতিত টাখ্নুর নীচে থাকাতে নামায মাকরূহ-ই-তানযীহী বা খেলাফে আওলা হয়। তাতে নামায পুনরায় আদায় করে দেয়া জরুরী হয় না। যেমন- ফত্ওয়ায়ে ‘আলমগীরীতে উল্লেখ রয়েছে যে, পুরুষের পায়জামা(লুঙ্গি বা প্যান্ট) গোঁড়ালীর নিচে লটকানো যদি অহংকার বশতঃ না হয় তবে তা মাকরুহ-ই-তানযীহী। (ফত্ওয়ায়ে ‘আলমগীরী,ফাতাওয়া রযভিয়্যাহ্, খন্ড-৩য়,পৃষ্ঠা-৪৪৮) যা পূর্বের আলোচনায় বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি অহংকারের নিয়্যাতে হয় তবেই নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী হবে এবং নামায ওয়াজিবুল ইয়া’দাহ বা (অহংকার মুক্ত হয়ে বা পাখ্নুর উপরে থাকে এমন কাপড় পড়ে) পুনরায় নামায রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদায় করে দেয়া ওয়াজিব। আমরা যা এতদিন জানতাম যে, কাপড় টাখ্নুর নীচে হলে হারা-ম, তা সম্পূর্ণভঅবে সঠিক নয়। বরং হাদীস শারীফের সারমর্ম হচ্ছে যে, যদি ‘খুয়ালা’ অর্থাৎ অহংকার সহকরে কাপড় টাখ্নুর নীচে পরিধান করা হয়, তবে তা হবে দোষণীয় অন্যথায় নয়। সুতরাং হাদীসে পাকের আলেকে ফাক্বীহ্গণ রায় দিয়েছেন যে, অহংকার সহকারে কাপড় টাখ্নুর নীচে হলে মাকরূহ-ই-তাহরীমী আর অহংকার সহকারে নাহলে মাকরূহ-ই-তানযীহী বা খিলাফে আওলা। তবে স্মরণ রাখবেন সর্বাবস্থায় কাপড় টাখ্নুর উপর পরিধান করা পুরুষের জন্য সুন্নাত। সুতরাং অন্য জাতির অণুকরণ করে ফ্যাশনবশতঃ প্যান্ট ইত্যাদি টাখ্নুর নিচে পরিধানের পরিবর্তে মুসলমান হিসাবে প্রত্যেককে সুন্নাতের উপর আ’মাল করা উচিত। এতে নামাযের মতো মূল্যবান ইবদাত নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে, সাথে সাথে সুন্নাতের উপর আ’মাল করার সাওয়াবও অর্জিত হবে। হাদীসে পাকে রয়েছে-‘‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবেসেছে, সে আমাকে ভালবেসেছে, আর যে আমাকে ভালবেসেছে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে’’। (মিশকাত শারীফ, পৃষ্ঠা-৩০)
অন্য হাদীসে রয়েছে- ‘’যে ব্যক্তি উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় আমার সুন্নাত অনুসারে কাজ করে, তাকে একশত শাহীদের সাওয়াব দান করা হবে। (মিশকাত শারীফ, পৃষ্ঠা-৩০)
এবার বিষয়ের দলিল সমূহ পর্যবেক্ষণ করুন। হাদীস এ রয়েছে -‘‘কাপড়ের যে অংশ টাখ্নুর নীচে হবে সে অংশ জাহান্নামে হবে। (বোখারী শারীফ, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৮৬০)
হযরত আবূ যর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্ণিত যে, নাবী কারীম্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন-‘‘আল্লাহ্ তা’আলা ক্বিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, না তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টি দান করবেন। এবং না তাদের পরিচ্ছন্ন করবেন। বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। আমি (হযরত আবূ যর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারা গুনাহগার ও ক্ষতিগ্রস্ত? হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন – কাপড় টাখ্নুর নিচে যে লটকিয়ে রাখে, যে উপকার করে তা দেখিয়ে দেয় এবং নিজ মাল মিথ্যা ক্বসম খেয়ে বিক্রয়কারী বা কু-কর্মকারী ফাসিক। (আবূ দাঊদ শারীফ, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৫৬৫)
সায়্যিদুনা হযরত আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, ‘‘আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামাতের দিন ঐ ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি করবেন না যে অহংকারের সহিত নিজের পায়জামা জমিনের উপর হেঁছড়ায়।(এত নীচে করে নেয় যে, জমিনের সাথে লাগে বা টাখ্নুর নীচে হয়)। (বোখারী শারীফ, খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৮৬১)
সায়্যিদুনা মুহারিব হতে এবং তিনি সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন উ’মার(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে অহংকার বশতঃ কাপড় হেঁছড়ায় আল্লাহ তা’আলা তার দিকে রাহমাতের দৃষ্টি দেবেন না । তখন আমি মুহারিব হতে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কি পায়জামার কথা বলেছেন? তখন মুহারিব বললেন যে , না পায়জামার কথা বলেছেন, না জামার। (বোখারী শারীফ, ২য় খন্ড,পৃষ্ঠা- ৮৬১)
এ হাদীস শারীফ হতে প্রতীয়মান হয়ে গেলো যে, সব ধরণের কাপড়, চাই জুববা হোক বা সালোয়ার , যে কোন জামা হোক না কেন সেটা টাখ্নুর নীচে হলে তার দিকে আল্লাহ তা’আলার দয়ার দৃষ্টি করবেন না।(বোখারী শারীফ,২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৮৬১)
সায়্যিদুনা ইবনে উ’মার(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন যে, নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি নিজের কাপড় অহংকার বশতঃ নীচু করবে, আল্লাহ্ তা’আলা ক্বিয়ামত দিবসে তার দিকে দয়ার দৃষ্টিকরবেন না। সয়্যিদুনা সিদ্দীকে আকবার (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)এ উচ্চমান সম্পন্ন বাণী শ্রবণ করতেই আ’রয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার‘তেহবন্দ’(লুঙ্গি) তো নীচে লটকে যায়। কিন্তু ঐ সময় যে, যখন আমি সেটার বিশেষ খেয়াল রাখব (তাঁর পেট মোবারকের উপর লুঙ্গি রাখা মাত্রই স্থানচ্যুত হয়ে যেত) হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাদের মধ্যে নও যারা ইচ্ছাকৃত অহংকারের নিয়্যাতে লুঙ্গি ও রাখে। অর্থাৎ এ শাস্তি তাদের জন্য যারা ইচ্ছাকৃত অহংকারের নিয়্যাতে লুঙ্গি ও সালোয়ার ইত্যাদি নীচু রাখে। এ হাদীস শারীফ হতে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, কাপড় পায়ের গিঁঠ হতে নীচে লটকানো এর দু‘অবস্থা,(১)অহংকার বশঃ) (২) অহংকার হীন। প্রথম প্রকার হারাম ও নিষিদ্ধ। এতে নামায মাকরূহ-ই-তাহরীমী ওয়াজিবুল ইয়া’দাহ্ হয়ে যায়। এবং দ্বিতীয় প্রকার মাকরূহ-ই-তানযিহী বরঞ্চ খিলাফে আওলা (উত্তমের বিপরীত)।যার কারণে নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব হয়না। হযরত সিদ্দীক্বে আকবার(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এর এ কাজ অহংকার বশতঃ ছিল না। কেননা তাঁর পেট মোবারকের কারণে পায়জামা নীচে নেমে যেত। এ কারণে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন- ওহে আবু বাকার ! তুমি অহংকার বশতঃ কাপড় নীচুকারী নও। এ ‘ইসবাল’’(কাপড় টাখ্নু হতে নীচে করা)লুঙ্গি , জামা,সালোয়ার এবং পাগড়ী সবগুলোতেইনিষিদ্ধ।
যেমন হাদীস শারীফে রয়েছে- ‘‘যে ব্যক্তি লুঙ্গি,সালোয়ার,জামা পাগড়ীর মধ্যে কিছুও অহংকার বশতঃ টাখ্নুর নীচে করবে , আল্লাহ্ তা’আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে দয়ার দৃষ্টি করবেন না।
হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)হতে বর্ণিত যে, হুযূর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-যে ব্যক্তি নামাযে অহংকার বশতঃ লুঙ্গিকে(পায়ের গিঁঠের নীচে) লটকায় তাকে আল্লাহ্ তা’আলার রাহমাত না হেরেমের বাহিরে মিলবে, না হেরেমের ভিতরে মিলবে।(আবু দাউদ, খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-৯৩)
হযরত আবূ হুরায়রা(রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি লুঙ্গি লটকানো বস্থায় নামায পড়ছিল, তখন হুযূর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেন, যাও অযূ কর , সে গেল এবং অযূ করে ফিরে আসল। কেউ আ’রয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কি হল যে,
হুযূর(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অযূর আদেশ দিলেন। ইরশাদ করলেন, সে লুঙ্গি লটকিয়ে নামায পড়ছিল, এবং নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা’আলা ঐ ব্যক্তির নামায ক্ববুল কলেননা , যে লুঙ্গি লটকানোবস্থায় নামায আদায় করে অর্থাৎ লুঙ্গি এত নীচে হওয়া যে টাখ্নু ঢেকে যায়। এবং অগূর আদেশ এ জন্য দিয়েছি যে, তার যেন জানা হয়ে যায়, এটা অপরাধ।এবং অযূ এ অপরাধের কাফ্ফারাহ্ এবং গুনাহর উপকরণকে নষ্টকারী।(লুমআ’ত, শঅয়খ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিসে দেহলভী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)প্রতীয়মান হয় যে, হুযূর(সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম) বলেননি যে, উপর অথবা নীচের দিক হতে মোচড়িয়ে নাও। মূল কথা প্যান্টের পা টাখ্নুর নীচে হওয়া যদি অহংকারের নিয়্যাতে হয় তাহলে হারাম এবং শরীরের ঐ জাহান্নামের আগুন হতে পরিত্রাণ পাবে না। এবঙ যদি অহংকারের নিয়্যাতে না হয় তাহলে শাস্তিও ভৎসনার উপযোগী নয়। বরং মাকরূহ-ই-তানযিহী খিলাফে আওলা।
(৪)প্রশ্নঃ এসব আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হল যে, হুযূর(সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম) কাফফে সাওব অর্থাৎ প্যান্ট ইত্যাদি কোমর ও পায়ের দিকে এবং জামার হাত (আধা কব্জি হতে অধিক) তুলে নেয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ বা একচ্ছত্র ইরশাদ করেছেন , কোন প্রকারের কারণ ইরশাদ করেননি। ইসবাল অর্থাৎ কাপড় টাখ্নুর নীচে লটকানোর ব্যাপারে মাকরূহ-আ-তাহরীমী হওয়ার কারণও ইরশাদ করেছেন যে, ‘‘খুয়ালা’’অর্থাৎ অহংকারের নিয়্যাতে হলে তবে মাকরূহ-ই-তাহরীমী হবে ও ওই অংশ জাহান্নামী হবে। অহংকার ছাড়া হলে নয়। অহংকার ছাড়া হলে নয়। কেননা অহংকার ছাড়া কাপড় টাখ্নুর নিচে হওয়ার মাকরূহ-ই-তানযীহী।সুতরাং কাপড় গুটিয়ে বা মোচড়িয়ে নেয়া অহংকারের নিয়্যাত ব্যতিত কাপড় টাখ্নুর নিচে হওয়া থেকে অধিক দূষণীয় ও ক্ষতিকারক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি কারো প্যান্ট ইত্যাদি লম্বা হয় সাথে সাথে অহংকারও থাকে তবে সে প্যান্টকে গুটিয়ে বা মোচড়িয়ে নিতে পারছে না আবার টাখ্নুর নিচে রাখতে পারছে না এ অবস্থা্য় তার করণীয় কি?
উত্তরঃ প্রথমতঃ তাকে অহংকার নামক মনের ব্যাধি থেক নিজেকে রক্ষা করতে হবে তাহলে সব সমস্যা শেষ। আর এজন্যই তাকে টাখ্নুর উপরে করে নিতে হবে। যাতে অহংকার দূর হয়ে যায়। আর যদি তা না হয় তবে অহংকার থাকার কারণে তার নামায ম্করূহ-ই-তাহরীমী হবে। এবং গুটিয়ে মোচড়িয়ে নেওয়ার কারণেও মাকরূহ-আ-তাহরীমী হবে। আল্লাহ পাক এর ওয়াসীলায় সঠিক মাসআলার উপর আ’মাল করার তাওফিক্ব দিন। আমীন বিজহীন নাবিয়্যিল আমীন (সাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল¬াম)।
(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মোহাম্মদ মুয্যাম্মিলুল হক্ব আল্ আ’ত্তারী লিখিত ‘‘প্যান্ট পায়জামা গুটিয়ে নামাজ পড়া কেমন?’’ বই অবলম্ভনে)
অনেক বড় লেখা, ধন্যবাদ । তবে সমস্যাটা আমার কাছে পরিস্কার হোলো না ।