সরকারের পলিসি : আমাদের করণীয় (পর্ব-২)।
লিখেছেন: ' kawsartex' @ মঙ্গলবার, মে ৮, ২০১২ (১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ)
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য
জাতীয় শিক্ষানীতির একটি মূল্যায়ন
১। এক বছর মেয়াদী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের একটি প্রাথমিক পর্যায়ের ধর্মীয় জ্ঞান দানের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হবে।
২। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতেও ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভূক্তি জরুরী।
৩। তৃতীয় শ্রেণী থেকে জীবন ও গল্পভিত্তিক ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার ধরন ও প্রকৃতি স্পষ্ট নয় এবং প্রয়োজনীয় ফলাফল ও লক্ষ্য অর্জনে এটা যথেষ্ট হবে বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে মূল ধর্মীয় শিক্ষার অন্তর্ভূক্তি আবশ্যক।
৪। সাধারণ ও মাদরাসাসহ (আলিয়া ও কওমী) সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় রেজিষ্ট্রেশন করার বিধান শিক্ষা প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করবে। এখানে সাধারণ ও আলিয়া মাদরাসাকে বিধানের আওতায় রেখে ব্যক্তিগত, পারিবারিক তথা শিক্ষা প্রসারের অন্য সকল উদ্যোগকে নিঃশর্তভাবে উৎসাহিত করা যেতে পারে। শিক্ষাদানের প্রচলিত সকল উদ্যোগ ও আয়োজনকে ‘বিকল্প পদ্ধতি’ হিসেবে গণ্য করার ব্যবস্থা রাখা উচিত বলে মনে করি।
৫। ‘কোন ব্যক্তি বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা কোন এনজিও প্রাথমিক শিক্ষাদানকল্পে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে চাইলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান পালন করে করতে হবে’- মর্মে শিক্ষানীতিতে যে ধারা রাখা হয়েছে, তাতে ঐতিহ্যবাহী, বিশেষায়িত ও স্বতন্ত্রধারার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে বিশেষ শিথিলতা এবং ছাড় থাকা প্রয়োজন। যেমন, ফোরকানিয়া মক্তব, কুরআন হিফজ করার প্রতিষ্ঠান, কেরাআত শিক্ষাকেন্দ্র, নূরানী নাদিয়া ইত্যাদি পদ্ধতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কওমী মাদরাসার প্রাথমিক স্তর। কেননা, ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ও ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সুরক্ষায় এসব প্রতিষ্ঠান যে মৌলিক অবদান রাখছে তা অস্বীকার করে কোন শিক্ষানীতি প্রণীত হলে মুসলিম জনসাধারণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদান ও প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষার পথে কঠিন অন্তরায় সৃষ্টি ছাড়া এ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। যা দেশ ও জাতির জন্য কোনক্রমেই মঙ্গলজনক নয়। পাশাপাশি প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ‘এক ও অভিন্ন পাঠ্যক্রম’ বাধ্যতামূলক হওয়ার ফলে উপরোক্ত শিক্ষারীতি ও ঐতিহ্যও অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব নয়। অথচ মুসলিম জাতির একটি অংশ ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাগ্রহণে ধর্মীয় বিধান অনুসারেই বাধ্য। অতএব, প্রাথমিক শিক্ষায় এক ও অভিন্ন পাঠ্যক্রম ‘বাধ্যতামূলক’ না করে সমান্তরাল বিকল্প পথ খোলা রাখাই হবে অধিকতর বৈজ্ঞানিক, যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য পন্থা। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ ভারতেও যে সুবিধাগুলো বর্তমান।
৬। ‘শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ইবতেদায়ী ও কওমী মাদরাসাসমূহ আট বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা চালু করবে এবং প্রাথমিক স্তরের নতুন সমন্বিত শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে’- এ ধারাটি থেকে কওমী মাদরাসাকে আলাদা রাখা প্রয়োজন। শিক্ষানীতির মৌল নির্দেশনার আলোকে কওমী মাদরাসমূহ নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও সরকারের নতুন সমন্বিত শিক্ষা কর্মসূচির প্রেরণা বজায় রেখে স্বতন্ত্র পাঠ্যক্রম চালাতে পারলে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। উন্নত বিশ্বে যার নজির রয়েছে।
৭। মাধ্যমিক স্তর অর্থাৎ নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রধান কিছু বিষয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় নানা বিষয়কেও অন্যসব বিষয়ের মতই ঐচ্ছিক বা নৈর্বাচনিক পর্যায়ে স্বাভাবিকভাবেই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে মৌলিক ও প্রধান বিষয় হিসেবেও সকল শ্রেণীতে একটি সমন্বিত ধর্ম শিক্ষা বিষয় রাখা আবশ্যক। এতে শিক্ষার্থীরা নীতিবান, ধর্মপ্রাণ ও আদর্শ নাগরিকরূপে গড়ে উঠার প্রেরণা লাভ করবে।
৮। ‘যেহেতু শিক্ষানীতি কোন স্থবির বিষয় নয়, এটির পরিমার্জন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এজন্য প্রয়োজন একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের। এই কমিশনের সদস্য হবেন উচ্চযোগ্যতা, মর্যাদা ও ধী-সম্পন্ন ব্যাক্তিবর্গ যাদের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধি থাকবেন।’ দেশীয় ও সামাজিক বাস্তবতার আলোকে কমিশনে কওমী মাদরাসার শিক্ষক, ইমাম, খতীব ও ইসলামী চিন্তাবিদ প্রতিনিধি থাকা জরুরী। শতকরা ৯০জন নাগরিকের ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মঘনিষ্ট জীবনাচরণের প্রতিফলন না থাকলে জাতীয় পর্যায়ের কোন কাজই পূর্ণরূপে সাফল্য অর্জন করতে পারে না।
৯। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ -এর ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ অংশে প্রধান চারটি ধর্ম শিক্ষা সস্পর্কে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ধর্ম শিক্ষা কৌশল দুটি খুবই চমৎকার ও পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। হিন্দু ধর্ম শিক্ষা অংশটি চলনসই হলেও ইসলাম ধর্ম শিক্ষা কৌশলটি হয়েছে অত্যন্ত অবহেলিত ও দায়সারা গোছের। এতে পবিত্র কুরআন ও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মর্যাদাবান সুন্নাহ্র কথা উল্লেখিত হয়নি। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জীবন ও শিক্ষার প্রসঙ্গও আসেনি। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি, মানবতার নানা সংকট ও মানবজীবনের নানা জটিল গ্রন্থির উম্মোচনে ইসলামী শিক্ষার ভূমিকা নিয়েও কিছু বলা হয়নি। অথচ অন্যান্য ধর্ম শিক্ষায় ছাত্রদের ‘ধর্মানুমোদিত পথে জীবন যাপনের’ কথা, ‘ধর্ম প্রণেতার সাথে সম্পর্কিত কাহিনী ও গল্পের মাধ্যমে নীতিবোধ জাগ্রত করা’ ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ‘বর্তমান জগতের বাস্তব সমস্যা ইত্যাদির কারণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে সচেতন করা এবং তাদের ধর্ম গ্রন্থের আলোকে তা সমাধান’- বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম শিক্ষাঅংশে যা বলা হয়েছে তা খুবই দায়সারা ও অশোভনীয়, যা শিক্ষানীতি প্রণেতাদের সততা ও আন্তরিকতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে পারে। এ অংশটির যথাযথ পূর্ণতা সাধন ও শোভনীয়করণ একান্ত জরুরী।
১০। জাতিকে একটি শিক্ষানীতি উপহার দিতে পারা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এতে যেসব অসঙ্গতি ও অসর্তকতা দেখা যাবে তা দূর করাও সংশ্লিষ্টদেরই কর্তব্য। দু’দিন আগে বা পরে এ দুনিয়ায় আমরা কেউই থাকব না। থাকবে শুধু আমাদের কীর্তি ও অবদান। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী জাতির শিক্ষানীতিতে ধর্মের উপস্থিতি ও প্রভাব যথার্থরূপে বজায় রাখা শাসকগণের ঈমানী দায়িত্ব। এ জন্য আল্লাহর কাছে তারা দুনিয়া ও আখেরাত- উভয় জাহানে পুরস্কৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ।
সূ্ত্রে :
www.islam.com.bd
লিখেছেন: ‘ মাসরুর হাসান’ @ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৩, ২০১২ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)
মূল :
মাওলানা মাহমূদুল হাসান
খতীব,গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইসলামিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসা, ঢাকা
আমীর, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ।
তারিখ, ১৯ জুলাই ২০১০