সরকারের পলিসি : আমাদের করণীয় (পর্ব-১)
লিখেছেন: ' kawsartex' @ মঙ্গলবার, মে ৮, ২০১২ (১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
মদীনার রাষ্ট্র কি ঐতিহাসিক এক্সিডেন্ট ?
প্রবন্ধকার মদীনায় বিশ্ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামের প্রথম রাষ্ট্রকে “এ্যকসিডেন্ট” বলে বিশ্বাস করে। তার অনুসন্ধানে কেবল রয়েছে মদীনার সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদ।
প্রত্যেককে স্বীয় ধর্ম পালনের অধিকার তো স্বয়ং ইসলামেরই আদর্শ। কিন্তু প্রবন্ধকার ২৫ নং অনুচ্ছেদের বরাতে যে বিষয়টি উল্লেখ করেছে তা নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের মৌলিক গ্রন্থসমূহে এই নম্বরে এর কোন উল্লেখ নাই। হয়তো বা তিনি মূল কিতাবের অনূদিত বই-পুস্তকের সাহায্য গ্রহণ করেছেন। কেবল ইহুদীরাই নয় বরং চুক্তির আওতার সকলের জন্যই স্বীয় ধর্ম পালনের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। অদ্যাবধি ইসলামের চুক্তির ক্ষেত্রে একই আইন বিধিত রয়েছে। আর এই অধিকার ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষেই অনুমোদিত। এখান থেকে মদীনার ইসলামী রাষ্ট্র ‘ঐতিহাসিক অ্যাক্সিডেন্ট’ কী করে যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয় তা মোটেই বোধগম্য নয়। কেননা পরবর্তী সময়েও এই রাষ্ট্রীয় ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানেও পৃথিবীতে ৮২টির অধিক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র বিদ্যমান রয়েছে। এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন হয়, যদি ধর্ম-ভিত্তিক রাষ্ট্র বর্তমান বিশ্বেও থাকতে পারে এবং বিভিন্ন মতবাদ, ইজম ও ধর্ম থাকতে পারে তাহলে ইসলাম-ভিত্তিক রাষ্ট্র থাকতে পারে না কেন? ইসলামী রাষ্ট্রকে অ্যাক্সিডেন্ট বলতে হবে কেন? ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হলে ইসলামের সামগ্রিক বিধিবিধানসমূহ কার্যকর করার উপায় কী হবে?
খেলাফত ব্যবস্থা:
যে কোন রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনে অবশ্যই পরিচালনা পরিষদ হতে হয়। যে ভাবেই হোক পরিষদের দায়িত্বশীলদের নামে দায়িত্বে পরিচায়ক পদবিও হতে পারে, বরং হতে হয়। যেমন, এমপি, সংসদ সদস্য, মন্ত্রি, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট। কিন্তু পরিষদকে প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট বলা হয় না। তাদের অধীনে মন্ত্রণালয় থাকে। ঠিক তেমনিভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের মূল হচ্ছে আল্লাহপাক যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আল্লাহপাক কর্তৃক পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ-ভিত্তিক সংবিধানে বর্ণিত খোদায়ী বিধি-বিধান কার্যকর করনের প্রয়োজনে একটি পরামর্শ সভা অথবা পরিষদ হবে, এই পরিষদের বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্তদের নামের সাথেও পরিচায়ক পদবি সংযুক্ত হতে পারে, যথা, উক্ত পরিষদকে কুরআন-হাদীসের আলোকে শুরা অথবা খেলাফত, আর পরিষদের আমীর অথবা প্রধানকে খলীফা বলা হয়। সুতরাং খেলাফত প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকাম কার্যকর করণের ব্যবস্থাপনা। যেখানে কুরআন-হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক কোন ধরনের বিধি-বিধানের অবকাশ নেই মোটেই। খেলাফত ব্যবস্থাপনার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে যে, পরিষদ সদস্যদের পরামর্শ প্রদানের পরিপূর্ণ অধিকার থাকলেও খলীফার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার অধিকার তাদের নেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের একমাত্র অধিকার খলীফার জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংখ্যা ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখানে অবকাশ নেই। যে মতকে খলীফা অধিক মঙ্গলজনক মনে করবেন সে অনুযায়ীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন। তাই গণতন্ত্রের নামে বর্তমান বিশ্বে যে পরিষদ পরিচালিত রয়েছে তা ‘খেলাফত বিধান’ এর সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কিন্তু প্রবন্ধকারের মতে খেলাফতকে গণতান্ত্রিক সাধারণ পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা যেতে পারে। বরং এ পদ্ধতিকে তিনি বর্তমান মুসলিম বিশ্বের বিধক্ষস্ত অবস্থাকে সুসংহত করার ব্যাপারে অত্যন্ত সহায়ক মনে করেন। অবাক লাগে যে, স্বীয় ভ্রান্ত চিন্তাধারা প্রমাণের প্রয়োজনে তিনি কবিদের এবং তুরষ্কের পার্লামেন্টকে আমলে এনেছেন। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামের শুরু সময় থেকে অদ্যাবধি ইসলামের মহান মনীষীদের কর্মপন্থায় বিশ্বাসী হতে পারেননি। স্বয়ং তুরস্কেরই অতীত ও বর্তমান অবস্থা থেকেও চিন্তার খোরাক আহরণে সক্ষম হননি। এমতাবস্থায় সঠিক ও তত্ত্বজ্ঞানের পথ সুগম হতে পারে না।
এই প্রবন্ধে নারীদের প্রতি অবিচারের আর্তনাদ করা হয়েছে। প্রবন্ধকারের মতো কিছু ভ্রান্ত চিন্তাধারায় বিশ্বাসী এবং যৌন অভিলাষীদের কপটতাই বড় বাধা। এই বাধা চূর্ণবিচূর্ণ করে ইসলামেই রয়েছে নারীদের প্রতি ইনসাফ। যারা নারীদেরকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তাদের জন্য কার্যকর বিধিবিধান ইসলামে হয়েছে। প্রশ্ন করতে চাই যে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মায়াকান্নাকারীগণ কি তাদের মহরানা এবং ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত অর্থ-সম্পদের অংশটুকু নারীদেরকে প্রদান কওে থাকেন ? আন্তরিক হলে সবাই মিলে ইসলামের আইন-কানূন কার্যকরের মাধ্যমেই নারী সমস্যার সমাধান হতে পারে। যিনি নারীকে সৃষ্টি করেছেন তার হুকুম-আহকাম পরিহার করে নারী সমস্যার সমাধান করা অবাস্তব স্বপ্ন ব্যতীত আর কিছু নয়।
ইশ্বরবিহীন বিশ্ব:
এই পৃথিবীর মালিক মহান আল্লাহপাক। তিনি এর একক সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। এ ব্যাপারে গুটি কয়েক নাস্তিক মুরতাদ ব্যতীত সমগ্র মানুষের ঐক্যমত রয়েছে। অবশ্য অন্য ধর্মাবলম্বীরা সৃষ্টিকর্তাকে গড, ইশ্বর, ভগবান ইত্যাদি। আর মুসলমানগণ তাঁকে আল্লাহ নামে স্মরণ করে। এমতাবস্থায় ইশ্বর-মুক্ত পৃথিবী গড়ার অভিলাষী মানবরূপী পশুদের জন্য এই নশ্বর, এই যমীন ও আসমানের এলাকা ব্যতীত যদি অন্য কোন এলাকা থাকে সেখানে চলে যাওয়া প্রয়োজন। এই যমীন ও আসমান যারসৃষ্ট, কেবল তার বিশ্বাসীদের জন্যই এই পৃথিবী, নাস্তিকদের জন্য নয়। প্রকারান্তরে এরা সমাজে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সাম্প্রদায়িকতার পথ সুগমকারী বিধায় কঠোর শাস্তির উপযোগী। সরকারের এ ব্যাপারে নিরব থাকা মোটেই সমীচীন নয়। মূলত এদের লক্ষ বস্তু ইসলাম ও মুসলমান। এরা চায় মুসলমানদেরকে উত্তেজিত করতে। এরা চায় ইসলামকে চিরতরে ধক্ষংস করে নৈরাজ্যবাদ কায়েম করতে। ইসলাম বিরোধী চক্রেরই এই ধারাবাহিক অপতৎপরতা সম্পর্র্কে মুসলমানদের অবশ্যই হুশিয়ার ও সজাগ থাকতে হবে।
এ দেশে ধর্মের প্রয়োজন নেই ?
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের লোকদের বসবাস। এ দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণœ রয়েছে। মুসলমানদের কাছে ইসলাম ধর্ম আপন সহায় সম্পদ, মান-সম্মান এমনকি জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয় ও মূল্যবান। যেমন পিতা ব্যতীত সন্তানকে জারজ সন্তান বলা হয়, তেমনি ধর্মহীন মানুষকে জানোয়ার-পশু বলা যেতে পারে। এজন্য সমগ্র পৃথিবীর মানুষ কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাসী। অধিকাংশ রাষ্ট্রসমূহে ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সমস্ত ধর্মের স্বাধীনতার কথা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত রয়েছে। মানুষের সমস্ত কর্মকাণ্ড তাদের ধর্ম-বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই সম্পন্ন হয়ে থাকে, বিশ্বাসই তাকে কর্মস্পৃহা যোগায়। যারা নাস্তিক তাদের আল্লাহর উপর এবং আখেরাতের কঠোর শাস্তি ও পুরস্কারে বিশ্বাস নেই। তারা আখেরাত ও মৃত্যুর পর পুনর্জীবনে বিশ্বাসী নয়। আর যারা আস্তিক, তারা আখেরাত ও পুনর্জীবনে, আল্লাহপাকের আযাব ও প্রতিদানে বিশ্বাসী। এই উভয় দলের কর্মকাণ্ড আদৌ এক ধরনর হয় না, হতে পারে না। সুতরাং যারা বলে এদেশে ধর্মেও প্রয়োজন নেই, তাদের এ ধরনের উক্তি কেবল পাগলের প্রলাপই নয় বরং তাওহীদবাদীদের প্রতি রীতিমত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এতে রয়েছে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ।
সূ্ত্রে :
www.islam.com.bd
লিখেছেন: ‘ মাসরুর হাসান’ @ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ৩, ২০১২ (১:৪৫ অপরাহ্ণ)
মূল :
মাওলানা মাহমূদুল হাসান
খতীব,গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইসলামিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসা, ঢাকা
আমীর, মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশ।
তারিখ, ১৯ জুলাই ২০১০