বহুকষ্টে পাওয়া ইসলাম (নও মুসলিম কাহিনী)
লিখেছেন: ' kawsartex' @ সোমবার, মে ২৮, ২০১২ (১০:৫৭ অপরাহ্ণ)
অনেকেই আমার কাছে আমার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে জানতে চান এবং আমি তাদেরকে খুব সংক্ষেপেই আমার ঘটনাটা বলে থাকি। কিন্তু আজ আমি আপনাদের সাথে আমার কাহিনীর পুরোটাই শেয়ার করতে চাই কিভাবে আমি এই সত্য ও সুন্দরের ধর্ম ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় গ্রহণ করলাম।
প্রায় আট বছর আগের কথা বলছি; হঠাৎ একদিন এক অদ্ভুত রকমের স্বপ্ন দেখলাম; বিশ্বাস করুন, একেবারেই অদ্ভুত এক স্বপ্ন; স্বপ্নটা কোনভাবেই মেলাতে পারছিলাম না। স্বপ্নটা কতটা অদ্ভুত তা গল্পের বাকিটা পড়লেই বুঝতে পারবেন…
ঘটনার প্রথম সূত্রপাত ২০০২ সালেঃ
আ্যকাউনটিং বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য কিছুদিন আগেই আমাকে নিজ শহর ছেড়ে পাশের উপশহরে আসতে হয়েছে। নতুন জায়গা, আশপাশের মানুষরা সব অপরিচিত, নতুন পড়াশোনা-সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল স্কুলের প্রথমদিনটার কথা। প্রথম যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম সেদিনও ঠিক এমনটাই মনে হয়েছিল।
কলেজের প্রথম দিন; প্রথম ক্লাস শুরু হয়েছে প্রায় পনেরো মিনিট হল। দেখলাম মেয়েটি ক্লাসে প্রবেশ করল। হয়ত এমনিতেই খুব বেশী মনোযোগ দিতাম না ওর দিকে কিন্তু দিলাম কারন আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে ওর মতো কাউকে দেখিনি কখনো। আর যদিও বা দুই একজনকে দেখা যায় তাদের দিকে মানুষের দৃষ্টি থাকে ঘৃণা আর অবজ্ঞার। মেয়েটির নাম ফাতিমা; লেবাননের মেয়ে; ইসলামি হিজাবে আপদমস্তক ঢাকা।
একটু পরেই শুরু হবে দ্বিতীয় ক্লাস; ক্লাসে ঢুকতেই ফাতিমার দিকে চোখ পড়ল। কেন জানিনা ওর দিকে তাকাতেই মনে হল ও আমার অনেক দিনের পরিচিত কেউ। ওকে জিজ্ঞাস করলাম, “তোমার পাশে বসতে পারি?”…সেই যে শুরু বন্ধুত্বের, আলহামদুলিল্লাহ্, এতো বছর পরেও আমরা একে অপরের বন্ধু। পুরো কলেজ লাইফে আমরা ছিলাম একেবারে আত্মার আত্মীয়। আমাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা দেখে শিক্ষকরা বলাবলি করতেন আমরা সম্ভবত দু’বোন।
কলেজের ঐ বছরগুলোতে আমি নিজে একজন খ্রিষ্টান হওয়া সত্ত্বেও ফাতিমার ধর্মের (ইসলাম) ব্যাপারে ছিলাম চরম আগ্রহী। সেও যতটুকু জানত আমার সাথে শেয়ার করত। দেখতাম ইসলাম সম্পর্কে কথা বলার সময় তার চোখ দুটো কেমন স্পৃহায় ছলছল করে উঠত। আর এই ব্যাপারটি আমাকে খুব নাড়া দিত। কারণ আমিও একটা ধর্মের অনুসারী অথচ আমার মাঝে ঐ ধরনের কোন বিষয় কাজ করতনা। এমনকি মাঝে মাঝে আমরা আন্তঃধর্ম বিতর্কের আয়োজন করতাম যেখানে আমি কথা বলতে গিয়ে প্রায় রেগে যেতাম যখন দেখতাম নিজের ধর্মের অনেক বিষয়ই আমার জানা নেই বা তার করা কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিনা। তবে ফাতিমার প্রতি ছিল আমার অগাদ শ্রদ্ধাবোধ। আমার এখনও মনে আছে আমি ভাবতাম কি করে ফাতিমা দিনে পাঁচ পাঁচবার করে সালাত আদায়ের জন্য ওজু করত, গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরেও নিজেকে হিজাব পরে ঢেকে রাখত, রমজান মাসে সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখত এমন আরো অনেক বিষয়। অথচ নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান বলে ভাবলেও অনন্ত রবিবার করেও চার্চে যাওয়া হয়ে উঠত না আমার।
আমরা দু’জন দুই ধর্মের হলেও আমাদের জীবন যাত্রার অন্যান্য বিষয়গুলো ছিল একই ধরনের। আমি কখনই ছেলেদের সাথে ঘনিষ্ঠ হতাম না। আর সত্যি কথা বলতে কি, এসব ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই আমার একধরনের লজ্জাবোধ কাজ করে। তবে যে ব্যাপারটি ফাতিমার জন্য স্বস্তির বিষয় ছিল তা হল আমি কখনই খোলামেলা পোশাক পরতাম না যেটা ফাতিমা আর আমার ভিতর সাদৃশ্যগুলোর অন্যতম। একদিন ফাতিমা আর আমি কলেজের ভিতর দিয়ে হেঁটে দুপুরের খাবারে জন্য আমাদের একটা নির্ধারিত জায়গায় যাচ্ছিলাম। আমরা প্রায় ওখানেই খাই। কিন্তু আজ যখন ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন একটি ব্যাপার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। জায়গাটার দিকে ভালো করে খেয়াল করতেই মনে পড়ল সেই অদ্ভুত স্বপ্নটার কথা যেটা একবছর আগে কলেজে ভর্তির শুরুতেই দেখেছিলাম।
মনে পড়ে গেল আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম আমি যেন একটা হিজাব পরা মেয়েকে আমার ডান পাশে নিয়ে কোথাও হেঁটে যাচ্ছি। আর জায়গাটা ঠিক আজকের এই জায়গা। অন্য কেউ হলে হয়ত স্বপ্নে কি দেখল বা দেখেছিল তা নিয়ে মাথা ঘামাতো না। কিন্তু স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার এমন অসম্ভব মিল দেখে আমি একেবারেই হতবাক হয়ে গেলাম। আমার মনে হচ্ছিল আমি আর হাঁটতে পারছিলাম না। হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিল। আমি ফাতিমাকে বললাম, “কি আশ্চর্য! এটা কি করে সম্ভব!! আমি তো এটা স্বপ্নে দেখেছি!!” এমন তো নয় যে ফাতিমার আগে আমার মুসলিম কোন বন্ধু ছিল বা আমি কোনভাবে কাউকে চিনতাম। তাহলে না হয় বলতাম তাদের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি আর তাই হয়ত স্বপ্নে দেখেছি। কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেও কখনো আমি এই কলেজে প্রবেশ করিনি। অথচ হুবহু আমাদের খাওয়ার সে জায়গাটায় স্বপ্নে দেখেছি। এই বিষয়টিই আমার কাছে বেশী আশ্চর্যজনক মনে হয়েছিল। যাই হোক, অনেকেই হয়ত বলবেন এই আর এমনকি, স্বপ্ন নিয়ে কে আর এতো মাথা ঘামায়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ঐ স্বপ্ন ছিল আমার জন্য আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট হেদায়াতের নিদর্শন এবং ফাতিমা আর আমার বন্ধুত্ব হল তাঁরই ইচ্ছার প্রতিফলন। ফাতিমার মাধ্যমেই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন আমাকে ইসলামের সাথে পরিচিত করালেন।
সেদিনের পর থেকে এক অজ্ঞাত কারনে ইসলামের প্রতি আমার আগ্রহ বহুগুণে বাড়তে থাকে। আমি ফাতিমাকে ইসলাম বিষয়ে অনেক অনেক প্রশ্ন করতে থাকি। লক্ষ্য করি, নিজ ধর্মের প্রতি আমার বিশ্বাস ও আস্থা ক্রমশই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে। আমার নীতি হল আমি যদি কোন বিষয়ে একবার সন্দেহ পোষণ করি এবং নিজেকে প্রশ্ন করে সন্দেহের কোন জবাব না পাই তাহলে ধরে নিই যে আমার সন্দেহ বাস্তব এবং আমার বিশ্বাসে গোলমাল আছে।
আমার সকল সন্দেহের অবসান হল যেদিন ফাতিমা আমাকে আহমেদ দিদাত (রাহিমাহুল্লাহ্) এর সাথে খ্রিষ্টান পণ্ডিতদের বিতর্কের কয়েকটি ডিভিডি দিল। দিনটি ছিল সত্যিই আমার জীবনকে বদলে দেয়ার দিন। বিতর্কগুলো দেখার পর আমার অন্তর চক্ষু দিয়ে উপলব্ধি করলাম এতোদিন যে ধর্মকে পুঁজি করে বেঁচে আছি তা আসলে সত্য নয়। আমি দেখলাম কোন একজন খ্রিষ্টান পণ্ডিতও আমার তথাকথিত ধর্মের ব্যাপারে সন্দেহগুলোর সত্য উত্তর দিতে পারেনি। তাহলে আমি কি করে নিজে নিজে আমার সন্দেহ দূর করতে পারি? আমি সত্যিই হতবাক হয়ে গেলাম!! বিশ্বাস করুন, একটুও বাড়িয়ে বলছিনা। ফাতিমার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ কেঁদে ফেললাম। আর কাঁদতে কাঁদতেই বাড়ীর দিকে হাঁটতে লাগলাম। আমার বারবার মনে হতে লাগল, “সর্বনাশ!! আমি এতদিন কী করেছি!!”
আমি তখন আমার সাবেক বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকতাম। সেও নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান বলে মনে করত। আমার ভেঙ্গেপড়া দেখে ও আমাকে সান্তনা দিতে লাগল। ও আসলে বোঝাতে চাচ্ছিল যে ফাতিমা ইসলামের ব্যাপারে আমার মগজধোলাই করার চেষ্টা করছে। প্রথমে শুনে আমারও খানিকটা তাই মনে হল। পরের দিন ফাতিমার কাছে গিয়ে বললাম যে আমি আর ধর্ম নিয়ে তার সাথে কোন কথা বলতে চাই না। উত্তরে ফাতিমা যা বলল তা খুবই সহজ!! কি বলল জানেন? ও বলল, “তোমার কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া আমার কর্তব্য ছিল। আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি। ইসলাম মানবে কি না মানবে সেটা নিতান্তই তোমার ব্যাপার। শেষ বিচারের দিন তুমি আমাকে এই বলে দোষ দিতে পারবে না যে আমি তোমাকে ইসলামের দাওয়াত দেয়নি।”
বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। আমি আর ফাতিমা এখনও আগের মতোই ভাল বন্ধু। ইতোমধ্যেই আমি ফাতিমার পরিবারের সাথে অনেক বেশী সময় কাটাতে শুরু করেছি। ফলে ইসলাম সম্পর্কেও আমার জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি আগের চেয়ে অনেক বদলে গেছে। তাদের সাথে থাকতেও আমার ভাল লাগে। তাদের ওখানে নেই কোন মদ্যপানের আসর বা কোনরকম হারাম কাজকর্ম। এখনও মনে হয় ঐ সময়টা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আটটি বছর আমি আমার বিশ্বাসের চড়াই-উৎরাই দেখলাম। মনে হল যেন আল্লাহ্ আমাকে ইসলামের সঠিক পথ দেখানোর আগেই অন্যান্য মিথ্যা পথগুলো ভালভাবে চিনিয়ে দিলেন।
ইসলামে আসার আগে আমার প্রথম পর্যায়টা ছিল অজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। কোন ধর্মই আমার ছিল না তখন, না খ্রিশ্চিয়ানিটি না ইসলাম। আমি প্রথমে কোনটাই জানতাম না ফলে মানতামও না।
আমার দ্বিতীয় পর্যায়টা ছিল বিদ্রোহপূর্ণ। আপনজন কারোর কথাতেই আমি কর্ণপাত করতাম না। সকলকে ত্যাগ করে মত্ত ছিলাম শয়তানি কর্মকাণ্ডে।
২০০৮ সালটি ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ। চরম ভুগেছি ঐ বছর। নিজের সাথে লড়েছি। জর্জরিত থেকেছি হাজারো সমস্যায়। যেন জীবন গিয়ে সর্বনাশের অতল গহীনে ঠেকেছিল। ঐ বছরই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় আমার সাত বছরের প্রেমিকের সাথে। সবখানেই আঘাত আর আঘাত। ভাল সব বন্ধুরা পর হয়ে যেতে থাকে, এসে জুটে যতসব খারাপের দল। পরিবারের একজন মানুষের সাথেও ভাল ব্যবহার করতে পারছিলাম না। আর ঐ সময়টাতেই আমি ফাতিমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতাম। নিজের কাছেই নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল। আমি চাইনি ফাতিমা আমাকে ঐ অবস্থায় দেখা দুঃখ পাক।
হঠাৎ মনে হল, “এসবের মানে কি? কেন এই অপরাধ বোধ? আমি কেন ফাতিমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি? সে তো আমরা সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু; আমি যা করছি তা ভুল হলে কেন তা করছি?” এমন হাজারো প্রশ্ন মনে উদয় হতে লাগল। আমি তখনও জানতাম আমি যা করছিলাম তা আল্লাহ্ পছন্দ করেন না এবং আমি ওসব কাজ বন্ধ না করলে নির্ঘাত জাহান্নামে যেতে হবে। এসব ভাবতাম এবং লজ্জিত হতাম। ফাতিমার মাধ্যমেই আমার ইসলামের সাথে যোগসূত্র। তার ওসীলায় ইসলামকে সত্য বলে জানার সুযোগ হয়েছে। তাই আমার কাছে মনে হল আমি আসলে ফাতিমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি না বরং আল্লাহ্র কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করছি যা অসম্ভব।
শেষ পর্যায়টা ছিল আমার জন্য অনেকটা সতর্ক সংকেতের মত। শেষবার দেখা হল আরেকজন মুসলিমের সাথে; তার সাথে দেখা হওয়াটাই বলতে গেলে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মত ঘটনা। সে আমাকে অনেকটা জোর করেই খারাপ কাজগুলো থেকে বাধা দিতে শুরু করল। শুনে অবাক লাগতে পারে কিন্তু সত্যি হল আমি ঐ সময়টাতে কারোর কোন কথাই শুনতাম না। আর তাই হয়ত বাধ্য হয়েই সে আমার উপর জোর খাটাতে শুরু করল। আলহামদুলিল্লাহ্, সে সময়মত আমার জীবনে হাজির হয়েছিল। আমি তখন যে মানসিক অবস্থার মধ্যে ছিলাম তাতে মনে হয়না যে কোন খ্রিষ্টান, বা ইহুদী এমনকি কোন নাস্তিক আমার ঐ মানসিক খট্কা দূর করতে পারত।
ফাতিমার দেয়া ডিভিডিগুলো দেখার দিন থেকেই আমি জানতাম আমি ইসলাম গ্রহণ করব। শুধু একটা শেষ ধাক্কা বাকি ছিল। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। তিনি আট বছর আগে আমাকে একটি হিজাব পরা মেয়েকে (যে পরে হল আমার বেস্ট ফ্রেইন্ড) স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে ইসলাম সত্য। তিনি আমাকে দেখিয়েছেন স্রষ্টায় বিশ্বাস না করার কি কষ্ট; তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিষিদ্ধ জীবন যাপন কতটা যন্ত্রণাদায়ক; অবশেষে তিনি আমাকে ইসলাম উপহার দিয়ে দেখিয়েছেন মানব জীবনে প্রকৃত সুখ কোথায়।
অবশেষে আমি ২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারি সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) তাঁর দাস এবং বার্তাবাহক।” এই সাক্ষ্য দেয়ার সময় আমার সত্যিকারের বন্ধু ফাতিমা ও তার বাবা আমার পাশেই ছিলেন।
আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ্ আমাকে মুলসিম হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।
By Karen Bujairami
Freelance writer
Source: OnIslam.net
আমি তখন আমার সাবেক বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকতাম। সেও নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান বলে মনে করত। আমার ভেঙ্গেপড়া দেখে ও আমাকে সান্তনা দিতে লাগল। ও আসলে বোঝাতে চাচ্ছিল যে ফাতিমা ইসলামের ব্যাপারে আমার মগজধোলাই করার চেষ্টা করছে। প্রথমে শুনে আমারও খানিকটা তাই মনে হল।২০০৮ সালটি ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ। চরম ভুগেছি ঐ বছর। নিজের সাথে লড়েছি। জর্জরিত থেকেছি হাজারো সমস্যায়। যেন জীবন গিয়ে সর্বনাশের অতল গহীনে ঠেকেছিল। ঐ বছরই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় আমার সাত বছরের প্রেমিকের সাথে। সবখানেই আঘাত আর আঘাত। ভাল সব বন্ধুরা পর হয়ে যেতে থাকে, এসে জুটে যতসব খারাপের দল।
আমাদের গ্রাম দেশে বলে ঝোঁপ বুঝে কোপ মারা। আপনি দাওয়াতের নিয়তে এই সব লেখাগুলো দিয়ে থাকেন। আমি আগেও আপনার এই জাতীয় লেখা পড়েছি। আল্লাহ আপনার নিয়ত কবুল করুন। এই লেখাগুলো আমাদের জন্য নয় বরং অমুসলিমদের জন্য। সঠিক জিনিস সঠিক জায়গায় ব্যবহার না করলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশী হয়। এইসব লেখা বিদেশী কালচার আমদানী করবে। বয়ফ্রেন্ড বা প্রেমিকের আলোচনা আর ইসলামী আলোচনা একত্রে থাকতে পারে না। একই সাথে আমাদের মহিলাদের ঘরের বাইরে যেতে উৎসাহিত করবে। সবাই এক একজন ফাতিমা হবার নিয়তে মাহরাম ছাড়াই ঘর থেকে বের হবে।
অবশেষে আমি ২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারি সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) তাঁর দাস এবং বার্তাবাহক।” এই সাক্ষ্য দেয়ার সময় আমার সত্যিকারের বন্ধু ফাতিমা ও তার বাবা আমার পাশেই ছিলেন।
ফাতিমার বাবা নিশ্চয়ই এমন বয়সী একজন মহিলার পাশে থাকার জন্য মাহরাম নন যে বয়ফ্রেন্ডের সাথে সাত বছর কটিয়েছে।
আপনার এই লেখায় ইসলামী উৎসাহ নেয়ার জন্য অনেক কিছু আছে। কিন্তু আমরা একটা প্রবন্ধে পড়েছিলাম/পড়িয়েছিলাম স্বাস্থ্য নয় বরং ব্যধিই সংক্রামক।
@guest,
একই সাথে আমাদের মহিলাদের ঘরের বাইরে যেতে উৎসাহিত করবে। সবাই এক একজন ফাতিমা হবার নিয়তে মাহরাম ছাড়াই ঘর থেকে বের হবে।
সোরবাংে বাঠা মলম দইব কোঠা ।
আমাদের মহিলারা কি ঘরের বাইরে যায় না।
মেয়েমারা কি মাহরাম ছাড়াই ঘর থেকে বের হচ্ছেনা ।
আপনি কি নোতুন কি ছুর ভ করতেছেন
@ভাই kawsartex, ফন্টের সমস্যার কারণে কথা গুলো পরিষ্কার না।
ভাই, আমাদের মহিলারা কি ঘরের বাইরে যায় না।
হ্যাঁ বের হয় যেটা অত্যন্ত খারাপ কাজ। দ্বীনের দাওয়াতের মত এত মুবারক আমালের জন্য যেন এই কাজটি না করা হয়। তাহলে বাহ্যিক কিছু ভালায়ী দেখা গেলও প্রকৃত পক্ষে খারাবি বাড়বে বলে আমাদের অনেকের মনে হয়।
ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে পানাহ চাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিদায়াত দান করুন, আমিন।
@kawsartex,আপনি বলতে চেয়েছেন সারা অংগ ব্যথা ঔষধ দিব কোথা। কিন্তু আপনি কি নোতুন কি ছুর ভ করতেছেন বুঝতে পারলাম না।
যাই হোক। মহানবী স. কে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত সারা দুনিয়া মানুষের নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। এরপর কোন নবী আর আসবেন না। কোন নতুন নিয়ম কানুন বা বিধিবিধানও আসবে না। তাই কিয়ামত মানুষের সব সমস্যার সমাধানের জন্য মুহাম্মাদ স. এর দেখানো আমল বা পদ্ধতিই যথেষ্ট। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা মহানবী সা. সম্পর্কে বলেছেন কাফ্ফাতাল্লিন নাস – (কিয়ামত পর্যন্ত সকল) মানুষের জন্য যথেষ্ট।
আমাদের মা বোনরা বেপর্দা হচ্ছেন বা মাহরাম ছাড়া বের হচ্ছেন, এই যুক্তিতে কোন খারাপ কাজকে প্রোমোট করার কোন যুক্তি নেই। খারাপ দিয়ে ভাল প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। প্রসাব দিয়ে পায়খানা পরিষ্কার করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মহানবী স. এর জামানায় অবস্থা আরও খারাপ ছিল। আল্লাহ তায়ালা সর্বাংগের ব্যথা দূর করার জন্যই বিশেষ মলম পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এই মলমের নাম ইসলাম। তাই আপনার সর্বাংগের ব্যথার জন্য মলম এই সব পোস্ট নয় বরং ইসলামের সম্পূর্ণ অনুসরণ যে কোন রোগের মলম।
@guest,
১. আমাদের মা বোনরা বেপর্দা হচ্ছেন বা মাহরাম ছাড়া বের হচ্ছেন, এই যুক্তিতে কোন খারাপ কাজকে প্রোমোট করার কোন যুক্তি নেই।
আমিও খারাপ কাজকে প্রোমোট করার কোন যুক্তি দেইনি। আপনি হয়তো ওভাবে নিচ্ছেন ।
২.কোনো দৃঢ চেতা মুসলিম ইন্টারনেট এর মাধ্যমে নতুন করে ইসলাম শিখবেনা (আপনি যে আশংকা করছেন বলে মনে হচ্ছে) ।
যেমন লিখেছেন:
‘একই সাথে আমাদের মহিলাদের ঘরের বাইরে যেতে উৎসাহিত করবে। সবাই এক একজন ফাতিমা হবার নিয়তে মাহরাম ছাড়াই ঘর থেকে বের হবে।”
একজন পর্দায় অভ্যস্ত কোনো নারী নতুন করে পর্দা শিখবে ইন্টারনেট থেকে । আপনি কি এরকম মনে করেন ।
৩. আমি কি আপনার শত্রু, কখনো কি পরিচয় ছিলো ।
guest নামে আমি আপনাকে কখনো দেখিনি, কিন্তু যেভাবে প্রতি লাইনেই আপনি ভুল দেখছেন এরকম চলতে থাকলে হয়তো আপনি একসময় ক্লান্ত হয়ে ব্লগ ছেড়ে দেবেন ।
যেমন ”আবু তাসনিম” ব্লগারদের ছোট করতে গিয়ে নিজেই ব্লগারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ।
যদি সকলকে বন্ধু মনে করেন তবে নেতিবাচক কমেন্ট কম দিবেন আশা করি। (ব্লগ হিসেবে দিতে পারেন, ব্লগারদের নাম না উল্লেখ করে) বন্ধুত্ব/ভাতৃত্ব তাতে নষ্ট হওয়ার আশংকা কম।
৪. আপনি তো অতিথি(guest), অতিথি বেশি খুতখুতে হলে কি চলে?
অতিথি বেশিদিন থাকতে চাইলে প্রতিবেশী হয়ে যেতে পারেন।
আবারো বলবো ” যদি সকলকে বন্ধু মনে করেন তবে নেতিবাচক কমেন্ট কম দিবেন আশা করি। (ব্লগ হিসেবে দিতে পারেন, ব্লগারদের নাম না উল্লেখ করে) বন্ধুত্ব/ভাতৃত্ব তাতে নষ্ট হওয়ার আশংকা কম।”
পিস ইন ইসলামে লেখার কিছু নতুন নীতিমালাও সংযোজন করে (পরামর্শ হিসেবে) দিতে পারেন ।
সালাম
এটুকু লিখতে আমার সময় লেগেছে দেড় ঘন্টা । তাই নতুন পোস্ট লিখার মতো সুযোগ পাচ্ছি কম । তবে সামনে নিজস্ব মৌলিক পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে । সকলেই দোয়া করবেন ।
@kawsartex,জগতের একটা প্রধান সমস্যা হল নিজের ভুল সংশোধন হোক এটা কেউ চায় না। মক্কার কাফেররাও চায় নি। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারা সত্ত্বেও সংশোধন হতে চায় নি। অথচ মহানবী সা. কে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মানুষের ভুলে সংশোধন করে সঠিক পথের উপরে উঠিয়ে দেয়ার জন্যই পাঠিয়ে ছিলেন। আফসোস মক্কার কাফেরদের এই রোগ আজ মুসলমানদের মাঝেও সংক্রমিত হচ্ছে।
আপনার শুভাকাঙ্খী হিসেবে আপনার ভুলগুলোকে আপনার নজরে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। আপনি এটা শত্রুতা জ্ঞান কেন করলেন বুঝলাম না। আর আপনি যে ভুল গুলো করেছেন তা সংশোধন হওয়াটা বেশী জরুরী কেননা এগুলো ধীরে ধীরে ইসলামের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ক্যানসার সৃষ্টি করবে। আবু তাসনীমের ভুলগুলো প্রকাশ্য। যে কেউ সহজেই বুঝে ফেলবে উনি একজন লা-মাযহাবী। কিন্তু দেখেন জাকির নায়েক! তিনি শুরু করেছিলেন আন্তঃধর্ম বিতর্কের দ্বারা। সবাই ব্যপারটাকে খুব বাহবা দিয়েছে। প্রচুর মানুষ তাঁর ভ্ক্ত হয়েছে। বেশ কিছু মানুষ অন্ধ ভক্তও হয়েছে। এখন তারা জাকির নায়েকের বাইরে কিছু কল্পনাই করতে পারে না। বরং জাকির নায়েকের বিপরীতে যে কোন লেখা বা কথা বা যে কোন লোককে তারা অযোগ্য মনে করে এবং গালাগালি করে। আমি নিজে এর ভুক্তভোগী। আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু আমার দাওয়াতে নামায পড়া শুরু করে, বিভিন্ন মাহফিলে যাওয়া শুরু করে পরে জাকির নায়েকের খপ্পরে পড়ে এখন সে সমস্ত আলেমদের বিরুদ্ধে কথা বলে, প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে জাকির নায়েকের বই সিডি বিতরণ করে। অথচ তর্ক করে ইসলামের দাওয়াত দেয়া কি নবীজি (সা.) বা উনার সংগীরা কখনও করেহেন?
আসল ব্যপার হল মহানবী সা. এর পদ্ধতির বাইরে যে কোন পদ্ধতি বা তরীকা যাই বলেন, যতই হৃদয়গ্রাহী হোক এর মধ্যে ইসলামের জন্য কোন কল্যাণ নেই। আমি মনে করি জগতের যে কোন পরিস্থিতির বিপরীতে মহানবী সা. এর তরিকায় যথেষ্ঠ।
আমার কমেন্টগুলো আবার পড়ুন। আমি কিন্তু আপনার প্রশংসাই করেছি। কিন্তু বলেছি এই লেখা গুলো আমাদের জন্য সুইটেবল নয়। এগুলো কোন অমুসলিমদের জন্য হতে পারে। যদিও এটা মহানবী সা. এর পদ্ধতির বাইরে, তাই দরকার নেই। আমি তো আশা করি না যে কোন অমুসলিম এই ব্লগে ঢুকবে আর এগুলো পড়বে। একই সাথে ইসলামী ব্লগ, ইসলামী বই, ইসলামী গেদারিং এসবে ঐসব লোকেরাই যায় যারা ইসলামী মাইন্ডেড। কোন বেপর্দা মহিলা এসে পর্দার বুঝ পাবে এটার যে সম্ভাবনা তার চেয়ে বেশী সম্ভাবনা কোন পর্দার বুঝ সম্পন্ন মহিলা বা পর্দা করতে চায় এমন মহিলা এসব লেখা পড়ে হাফ-পর্দানশীল হবে। এসব মহিলাদের পরে আর ফুল-পর্দানশীল করতে পারবেন না। তারা আপনার এই লেখার যুক্তি দেখাবে। অথচ ইসলামের মধ্যে কোন হাফ নেই। কোন এক মহিলা বা কোন এক পুরুষ ইসলাম তাকে যে সব অংগ ঢাকতে বলে তা ঢাকল কিন্তু কোন একটি বিশেষ অংগ বাদে আপনার কি মনে হয়, এর সাথে বেপর্দার কোন পার্থক্য আছে কি? আমি অনেক মাহফিলে শুনেছি হিজাব ইসলামী পোষাক নয়। এটা খৃষ্টান নান/সিস্টারদের পোষাক। নিকাবসহ বুরকাই মহিলাদের ইসলামী পোষাক।
আসলে যা খারাপ তাকে খারাপই বলতে হবে। ভালকে ভাল বলতে হবে। আমি একজনের কথা জানি। কোন ইসলামী বই বা ম্যাগাজিন পড়ে দ্বীনের বুঝ আসে। পরে তার বাবা-মা দের কনভিন্স করে পড়াশুনা ছেড়ে দেয় যেহেতু ইসলাম তাকে মাহরাম ছাড়া বাইরে যেতে দেয় না, বিনা প্রয়োজনে বাইরে যেতে দেয় না। পড়ে আহলে হাদিসের একজনের সাথে বিবাহ হয়। যে তাকে আপনার মত এইসব দাওয়াতের যুক্তি দেখিয়ে আবার পড়াশুনা করায়। পরে বিদেশ নিয়ে যায়। এখন সে সবই করছে স্কীনটাইট জিন্স, দামী প্রসাধনী। ইসলামের নিদর্শন শুধু একটি নকশাদার হিজাব। বিভিন্ন যায়গায় ইসলামী লেকচার দিয়ে বেড়ায়।
আসল কথা হল ইসলাম পরিপূর্ণ। এখানে বয়ফ্রেন্ড, কাফের দেশে উচ্চশিক্ষা এসব না পাক জিনিসের সাহায্য দরকার নেই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এসব পোস্ট মূলত সস্তা জনপ্রিয়তা ও সস্তায় ইসলাম প্রচারের মাধ্যম। কোন সাইট থেকে কপি পেস্ট করে ইসলাম প্রচারের এক আত্ম প্রসাদের মাধ্যম। ইসলামের মূল দাওয়াতের পদ্ধতি থেকে দূরে সরানোর জন্য এগুলো যে কাফেরদের কোন ষড়যন্ত্র নয় কিভাবে বলি?
মহানবী স. কত কষ্ট করে এক এক মানুষের কাছে গেছেন, দিনে, রাতে, সকালে, বিকালে, গরমে, শীতে, বর্ষায়, কাছে, দূরে, আত্মীয়র কাছে, অনাত্মীয়ের কাছে, শহরে, গ্রামে, মরুভুমিতে, উদ্যানে, লোকালয়ে, বাজারে, মেলায়, হজে, সবার কাছে। এজন্য কত গালি খেয়েছেন, কত ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করেছেন, কত মনোকষ্ট সহ্য করেছেন, কত থুথু গায়ে মেখেছেন, কত ধুলা বালি পোষাকে মেখেছেন, কত ঘাম ঝরিয়েছেন, কত রক্ত মাটিতে মিশেছে কে তার হিসেব করে আজ!
বিশ্বনবী/মহানবীর কষ্ট মোড়ানো দাওয়াতী কার্যক্রমের নমূনা আজ কোথায়? সবাই আজ ইন্টারনেটে ব্লগ পোস্ট দিয়ে মনে মনে আত্ম তৃপ্তির এক ঢেঁকুর তুলছে। মনে মনে বলছে দাঈ বটে আমি!! ভেবেও দেখছেন না যে ব্লগ পোস্ট দিলাম তার কতটুকু কনটেন্ট ইসলামী।
@guest, দারুনননন!!!! লিখেছেন কোনই সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনার মতিগতির ব্যপারে পুরাপুরি সন্দিহান। কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।
শুকরিয়া,জাযাকাল্লাহ।আরো সুন্দর হতো যদি মেয়েটির আগের ও বতর্মান নাম এবং তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার অবষ্থান তুলে দরতেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সম্ভব হলে দিয়ে দিন মন্তব্যের ঘরে। আর না হলেও অসুবিধা নাই।
@এম এম নুর হোসেন,
নাম তার Karen Bujairami, সংগ্রহ করা হয়েছে
QuranerAlo.com Editor • april 16, 2012 •