আমার দুখের মালা করবো কারে দান
লিখেছেন: ' তুহিন হাসান' @ মঙ্গলবার, মে ১৩, ২০১৪ (১০:৩৩ অপরাহ্ণ)
আসসালামুলাইকুম। লেখাটি শবে বরাত রাতের কিছু খন্ড খন্ড ঘটনার তিক্ত অভিজ্ঞতার লেখা। পবিত্র শবে কদরে যেন এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে না হয়, আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাই করি।
১।গতকাল (১৪ই সাবান, বৃহশ্পতিবার) একটা কাজে এক কাজিনের বাসায় গিয়েছিলাম। কাজিনের ওয়াইফ রোজা রেখেছিলেন। মাগরিবের নামাজ আদায় করে এসে দেখলাম উনি ইফতার করে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বললাম নামাজ পড়েছেন? উত্তরে বললেন সারাদিন রোজা রেখে শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে। এশা থেকে পড়ব।
হায়! সারাদিন না খেয়ে উনি নফল রোজা করলেন আর তিন রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার শক্তি পেলেন না!!
“আল্লাহ জুলুম করেন না মানুষের উপর, বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর জুলুম করে”।
[সূরা ইউনুছ:৪৪]
২।হলে ফেরার পথে গেটে এক হলমেটকে দেখে ভিমরি খাওয়ার যোগার হল। যাকে কোনদিন জুমার নামাজও পড়তে দেখেনি সে কিনা পান্জাবি পাজামা পড়ে পুরোদস্তুর মুসল্লি হয়ে গেছে! বন্ধু আজ নফল ইবাদত করার জন্য গোছল করে পবিত্র হয়েছে। খুব ভাল লাগত যদি এই লেবাস প্রতিদিন গায়ে জড়াত আর আযান হলেই তাকে মসজিদে যেতে দেখতাম….
“আর যারা মন্দ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই তোমার পরওয়ারদেগার তওবার পর অবশ্য ক্ষমাকারী, করুণাময়।”
[আল আরাফ:১৫৩]
৩।রোজা রাখার নিয়্যত করেছি বলে মধ্যরাতে চাঁনখারপুল যাচ্ছিলাম সেহরী খেতে। হঠাত্ টিএসসির দিক হতে আসা কয়েকটি বাইক আমার পাশ দিয়ে সাঁ সাঁ করে চলে গেল। আজ শবে বরাতের রাতে এরা বাইক রেসে নামছে নাকি। সাধারনত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় কোন দলের বিপক্ষে জয়ী হলে এমন আনন্দ উল্লাসের চিত্র দেখা যায়। হতাশায় মন ছেয়ে গেল ইবাদতে মশগুল থাকার বদৌলতে এদের আনন্দযজ্ঞ দেখে। মনে পড়ল আল্লাহর সেই কঠিন বাণী-
“অবশ্যই যেসব লোক আমার সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখেনা এবং পার্থিব জীবন নিয়েই উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করেছে এবং যারা আমার নির্দশন সমূহ সম্পর্কে বেখবর, এমন লোকদের ঠিকানা হল আগুন; সেসবের বদলা হিসাবে যা তারা অর্জন করছিল”।
[সূরা ইউনুছ:০৭-০৮]
৪।রুমমেটকে এসে যখন বললাম ছেলেরা পান্জামি পড়ে বাইক নিয়ে বের হয়েছে শবে বরাতের আনন্দ উদযাপন করতে। সে বলল এ আর এমন কি। কিছুক্ষণ আগে দেখলাম ছেলে আর মেয়ে একসাথে রিকশায় চড়ে ঘুরছে (নাউযুবিল্লাহ)। আজ কি ভ্যালেনটাইনের উত্সব পড়েছে মুসলমানদের মধ্যে?
“অতএব, তারা সামান্য হেসে নিক এবং তারা তাদের কৃতকর্মের বদলাতে অনেক বেশী কাঁদবে।
[আত-তাওবাহ:৮২]
৫।এক ভাইয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে এরকম- “একটু আগে পুরনো ঢাকার মিছিল দেখলাম। আতশ বাজি ফুটছে। হটাত্ মনে হল অনেকদিন বুক ভরে নিশ্বাস নেইনি। তারপরও ওদের আনন্দ দেখে ভালোই লাগছে”।
ভাইয়াকে গিয়ে বলতে চাইলাম ভাই এইটা আনন্দ পাওয়ার ঘটনা না, এইটা মুসলমানদের জন্য বড়ই দু:খের ঘটনা। বলতে পারিনি উনাদের কাছে মৌলবাদি হওয়ার ভয়ে।
৬।ফজরের সালাত শেষে রুমে আসলাম। ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুম আসছেনা ।মাথার ভিতর চিত্রগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে ।ছেলে মেয়েরা আজ থার্টি ফাস্ট নাইটের মত ধর্মীয় দিনগুলিকে সেলিব্রেট করছে। যে নবী উম্মতি উম্মতি করে সারা জীবনটা পার করলেন আমরা তারই অনুসারী হয়ে কিভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে শবে বরাত ও লাইলাতুল কদরের মত মহামান্বিত রজনীগুলোকে উদযাপন করছি। ইসলাম কি এই শিক্ষা দেয়? শয়তানের গলা জড়িয়ে ধরে খন্ড খন্ড আল্লাহর ইবাদত করলে কি মুসলিম উম্মাহর সুদিন ফিরবে?
৭।মানুষ অতিতের ভূল থেকে শিক্ষা নেয়। কিন্তু শিভ খেরার ভাষায় যদিবলি- “জীবনটা এত বড় নয় যে ভূল করতেই থাকব আর শিখতে থাকব। বুদ্ধিমান লোকেরা অন্যের ভূল থেকেও শিক্ষা গ্রহন করে”।
আল্লাহ সুবাহানু তায়ালা আমাদের সমস্ত ভূল শুধরে নিয়ে বিদ’আত মুক্ত জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুক।।
“যারা সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ এবং তারও চেয়ে বেশী। আর তাদের মুখমন্ডলকে আবৃত করবে না মলিনতা কিংবা অপমান। তারাই হল জান্নাতবাসী, এতেই তারা বসবাস করতে থাকবে অনন্তকাল”।
[সূরা ইউনুছ:২৬]