প্রসঙ্গ পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতির ভিন্নতাঃ শায়েখ আলবানীর অসার বক্তব্য
লিখেছেন: ' লুৎফর ফরাজী' @ শনিবার, মার্চ ১০, ২০১২ (৬:০৭ অপরাহ্ণ)
নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন-
১-পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
২-ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
৩-ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
৪-হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।
৫-পুরুষের উপর জুমআ পড়া ফরয, মহিলাদের উপর নয়।
৬-নামাযে সতর্ক করার মত কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষের তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।
৭-ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষই হতে পারে, কোন নারী হতে পারেনা।
৮-আজান শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
৯-পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
১০-সতর। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের সতর হল প্রায় পুরো শারীরই ঢেকে রাখা ফরয।
নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদত সমূহের অন্যতম হল নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদী ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতো বেশি তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলিতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাঃ এর হাদিস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে।
প্রথমে আমরা সহীহ হাদিস, তারপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীদের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করছি।
হাদিস
১
3016 – أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل (سنن الكبرى للبيهقى، كتاب الحيض، باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود، رقم الحديث-3016)
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন-একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন-“যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০)
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন-“উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করায় যোগ্য”।
মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদিসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।
২
وَالآخَرُ حَدِيثُ أَبِى مُطِيعٍ : الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَلْخِىِّ عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا (السنن الكبرى، كتاب الصلاة، باب مَا يُسْتَحَبُّ لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، رقم الحديث-3324)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছন-“মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। (সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪)
এই হাদিসটি হাসান।
৩
حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي قال حدثتني ميمونة بنت عبد الجبار بن وائل بن حجر عن أبيها عبد الجبار عن علقمة عمها عن وائل بن حجر قال : جئت النبي صلى الله عليه و سلم ………….فقال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم : يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها (المعجم الكبير، باب الواو، وائل بن حجر الحضرمي القيل، رقم الحديث-28)
হযরত ওয়াইল বিন হুজর রা. বলেন। আমি নবীজী সা. এর দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন যে, হে ওয়াইল বিন হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২৮)
এই হাদিসটিও হাসান।
উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত ২ নং হাদিসটি দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতরও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপপোযী।
উল্লেখ্য যে, এই সব হাদিসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদিস আছে। পক্ষান্তরে এগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা। যাতে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ের নামাযই এক ও অভিন্ন। একথার পক্ষে একটি হাদীসও নেই।
সাহাবায়ে কিরামের ফতোয়া
১
5072 – عبد الرزاق عن إسرائيل عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها (مصنف عبد الرزاق، كتاب الصلاة، باب تكبير المرأة بيديها وقيام المرأة و ركوعها وسجودها، رقم الحيث-5072)
হযরত আলী রা. বলেছেন-মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২, মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩, সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২)
২
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الأَشَجِّ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ ؟ فَقَالَ : تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2794)
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন-“খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪)
উপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানা মতে কোন হাদীসগন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
রাসূল সা. থেকে সাহাবায়ে কিরাম যে, দ্বীন শিখেছেন তাদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে,”মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হয়।
তাবেয়ীদের ফাতওয়া
১
2486- حدثنا هشيم ، قال : أخبرنا شيخ لنا ، قال : سمعت عطاء ؛ سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة ؟ قال : حذو ثدييها(مصنف ابن ابى شيبه، كتاب الصلاة، باب من كان يتم التكبير ولا ينقصه في كل رفع وخفض،)
হযরত আতা বিন আবী রাবাহ কে জিজ্ঞেস করা হল-“নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?” তিনি বললেন-“বুক বরাবর”। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬)
২
2489- حدثنا محمد بن بكر ، عن ابن جريج ، قال : قلت لعطاء : تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل ؟ قال : لا ترفع بذلك يديها كالرجل ، وأشار فخفض يديه جدا ، وجمعهما إليه جدا ، وقال : إن للمرأة هيئة ليست للرجل ، وإن تركت ذلك فلا حرج.
হযরত ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন-“আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম-“মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?” তিনি বললেন-“মহিলা পুরুষের মত হাত তুলবেনা। এরপর তিনি তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথ খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন-মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস নং-৫০৬৬,৬২৫১)
৩
2796- حدثنا جرير ، عن ليث ، عن مجاهد ؛ أنه كان يكره أن يضع الرجل بطنه على فخذيه إذا سجد كما تصنع المرأة.
হযরত মুজাহিদ বিন জাবর রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬)
৪
2487- حدثنا رواد بن جراح ، عن الأوزاعي ، عن الزهري ، قال : ترفع يديها حذو منكبيها.
হযরত যুহরী রহ. বলেন-“মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭)
৫
5068 – عبد الرزاق عن معمر عن الحسن وقتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم ما استطاعت ولا تتجافى لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)
৬
2795- حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِِ ، عَنْ مُغِيرَةَ ، عَنْ إبْرَاهِيمَ ، قَالَ : إذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَضُمَّ فَخِذَيْهَا ، وَلْتَضَعْ بَطْنَهَا عَلَيْهِمَا.(مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2795)
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন-মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫)
৭
5071 – عبد الرزاق عن معمر والثوري عن منصور عن إبراهيم قال كانت تؤمر المرأة أن تضع ذراعها وبطنها على فخذيها إذا سجدت ولا تتجافى كما يتجافى الرجل لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১)
৮
2799- حَدَّثَنَا إسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ ، عَنْ زُرْعَةَ بْنْ إِبْرَاهِيمَ ، عَن خَالِدِ بْنِ اللَّجْلاَجِ ، قَالَ : كُنَّ النِّسَاءُ يُؤْمَرْنَ أَنْ يَتَرَبَّعْنَ إذَا جَلَسْنَ فِي الصَّلاَةِ ، وَلاَ يَجْلِسْنَ جُلُوسَ الرِّجَالِ عَلَى أَوْرَاكِهِنَّ ، يُتَّقي ذَلِكَ عَلَى الْمَرْأَةِ ، مَخَافَةَ أَنْ يَكُونَ مِنْهَا الشَّيءُ.
হযরত খালেদ বিন লাজ্জাজ রহ. বলেন-“মহিলাদেরকে আদেশ করা হত যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯)
উল্লেখিত বর্ণনাগুলি ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়।
চার ইমামের ফিক্বহের আলোকেঃ
ফিক্বহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। যথা-
১-ফিক্বহে হানাফী
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
৩-ফিক্বহে মালেকী
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
এবার দেখুন এই চার ফিক্বহের ইমামদের মতামত।
১-ফ্বিকহে হানাফী
احب الينا ان تجمع رجليها من جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل، (كتاب الآثار-1/609)
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ রহঃ বলেন-“ আমাদের নিকট পছন্দনীয় হল, মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ-১/৬০৯}
روى امامنا الأعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما أنه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال كن يتربعن أمرن أن يحتفزن،
أخرجه أبو محمد الحارثى والأشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثورى عنه، راجع جامع الماسانيد-1/400، وهذا أقوى واحسن ما روى فى هذا الباب، ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه وأخذ به،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা রঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল-“রাসূল সাঃ এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন-“আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। {জামেউল মাসানিদ-১/৪০০}
উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন। এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন। {কিতাবুল আসার এর টিকা-১/৬০৭}
মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনা হানাফী ফিক্বহের কিতাবে দেখুন-
১-বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬
২-হেদায়া-১/১০০-১১০
৩-আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬
৪-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪
৫-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
( قال الشافعي ) وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسوله صلى الله عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها (كتاب الأم، باب الذكر في السجود)
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন-“আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল সাঃ ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল-সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। {কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮)
৩-ফিক্বহে মালেকী
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মত উল্লেখ করেন-
وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
ইমাম আহমদ রহঃ এর ফাতওয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ এর আল মুগীনী কিতাবে।
فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হল হাত উঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ রহঃ বলেন-“তুলনামূলক কম উঠাবে”।
দ্বিতীয় মত হল-“মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। {আল মুগনী-২/১৩৯}
আলোচনার এই পর্যায়ে হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐক্যমত্যের প্রমাণ পেশ করার পর আমরা দেখব আমাদের যে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের আলেমগণ এ বিষয়ে কি বলেন? তারা কি ফাতওয়া দিয়েছেন?
গায়রে মুকাল্লিদ আলেমগণের ফাতওয়া
মহিলাদের নামাযের পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে যা কিছু উল্লেখ করা হল তথা হাদিস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীনদের ইজমা, এবং চার ইমামের ঐক্যমত্বের আলোকে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছন্ন সূত্র পরম্পরায় যেই পার্থক্যের আমল চলে আসছে, সেটাকে গায়রে মুকাল্লিদদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সেই আলোকে ফাতওয়া দিয়েছেন।
# মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী রঃ এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী রহঃ কে যখন জিজ্ঞেস করা হল-“মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?” জবাবে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন-“এর উপরই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যের মাঝে আমল চলে আসছে”।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লিখেন-“মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বিকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতে মুসলিমার সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ”। (ফাতওয়ায়ে গযনবীয়্যা-২৭-২৮, ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস—৩/১৪৮-১৪৯, মাযমুয়ায়ে রাসায়েল-মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর-১-৩১০-৩১১)
মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ সাহেব “ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস” এ এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল-১/৩০৫)
আলবানী সাহেবের অসার বক্তব্য
আশ্চর্যের কথা হল, উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ এবং উম্মতের মাঝে নববী যুগ থেকে পর্যায়ক্রমে চলে আসা এই সর্বসম্মত আমলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আলবানী সাহেব তাঁর “সিফাতুস সালাতে” ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, “পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক”।
কিন্তু এই দাবির পক্ষে তিনি না কোন আয়াত পেশ করেছেন, না কোন হাদিস। আর কোন সাহাবী বা তাবেয়ীর ফাতওয়া। এহেন বক্তব্যের ভিত্তি তিনি শুধু এটাকেই বানিয়েছেন যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নাই। অথচ তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য উচিত ছিল উপরোল্লিখিত দলিল সমূহ বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তিনি তা না করে কেবল পার্থক্য সম্বলিত একটি হাদীসকে {যা বক্ষ্যমান নিবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে} শুধু এ কথা বলে যয়ীফ বলে আখ্যা দিয়েছেন যে, হাদীসটি ‘মুরসাল’। আর মুরসাল হওয়ায় এটি দুর্বল। এ ছাড়া অন্য কোন আলোচনাই তিনি দলীল সম্পর্কে করেননি।
কিন্তু তার এই কথাটি এক গুয়েমি ছাড়া কিছু নয়। কারণ মুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট হাদিস মুরসাল হলেই তা অগ্রহণীয় হয়ে যায়না। কেননা প্রথমত আয়িম্মায়ে দ্বীনের অধিকাংশের মতে বিশেষত স্বর্ণযুগের ইমামগণের নিকট যদি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী উপস্থিত থাকে। তাহলে মুরসাল হাদিসও সহীহ হাদিসের মত গ্রহণযোগ্য।
দ্বিতীয়ত: যে ইমামগণের নিকট ‘মুরসাল” হাদীসকে সহীহ বলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে তারাও মূলত কিছু শর্তের সাথে মুরসাল হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করার উপযোগী মনে করেন। প্রবন্ধের শুরুতে বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাটিতেও সেসব শর্ত বিদ্যমান রয়েছে। যার কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান “আউনুল বারী”-(১/৫২০ দারুর রাশীদ, হালাব সিরিয়া) তে লিখেছেন-“এই মুরসাল হাদীসটি সকল ইমামের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলীল হওয়ার যোগ্য”। তার পূর্ণ বক্তব্যটি দেখুন আওনুল বারী-২/১৫৯,
পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা খুবই গর্হিত। সেটা হল তিনি ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ নাকি বলেছেন-“মহিলা পুরুষের মতই নামায আদায় করবে”। এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই। আল্লাহই ভাল জানেন তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন!!
অথচ ইতোপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ স্পষ্টই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।
আলবানী সাহেব তার নিজের দাবী প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় আরেকটি কাজ করেছেন। সেটা হল-ইমাম বুখারী রহঃ এর রিজালশাস্ত্রেরে একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি পেশ করেছেন-
عن ام الدرداء انها كانت تجلس فى الصلاة جلسة الرجل-
“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন”।
আলবানী সাহেব খেয়াল করতে পারেননি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়। এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হত, তাহলে “পুরুষের মত বসা” কথাটির কোন অর্থ থাকেনা। তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মত মহিলারা বসতনা। কিন্তু তিনি যেহেতো ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হল। উম্মে দারদা হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী সাহেব দলীল পেশ করলেন। অথচ তিনিই আমাদের বর্ণিত প্রথম হাদিসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করলেন। আশ্চর্য ব্যাপার!!
সুতরাং যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতোপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গেছে। এবং একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। বিশেষ করে যখন যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট একথার ইংগিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
সুতরাং বুঝা গেল নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত। গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের বক্তব্যটির কোন দলিল নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নেবার তৌফিক দান করুন। আমীন।
ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীস সম্পর্কে জানতে চোখ রাখুন এই সাইটে- http://jamiatulasad.com/
উম্মে দারদা (রাঃ) আবু দারদা (রাঃ) স্ত্রী । তাকে এক ধাক্কায় তাবেয়ী বানিয়ে দিলেন ?
@ABU TASNEEM,
উম্মে দারদা দুইজন ছিলেন, একজন আবু দারদার স্ত্রী এবং আর একজন তাবেয়ী।
@হাফিজ , আমি নিশ্চিত হয়েছি উম্মে দারদা রাঃ সাহাবীয়া ছিলেন । আপনি কিভাবে এই হাদীসের রাবী উম্মে দারদা রাঃ কে তাবেঈ বলছেন । প্রমাণ সহ উপস্থাপন করুন ।
@ABU TASNEEM,আমিও নিশ্চিত উম্মে দারদা সাহাবিয়া ছিলেন। কিন্তু এখানে বর্ণিত উম্মে দারদা সাহাবিয়া নন। ইনি তাবেয়ী। সাহাবী হলেও প্রমাণ হয় না যে মহিলাদের নামায পুরুষদের মত হবে। উনার আ’মাল অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিল বলেই আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শারীয়তের কোন ফয়সালাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উল্লখ করা হয় নি। এই হাদীসের প্রেক্ষিতে ইমাম বুখারী রহমাতুল্লহ আ’লাইহির পক্ষ থেকেও কোন ফতোয়া আছে কি?
পার্থক্য সম্বলিত অনেক গুলো হাদিস উপরে বর্ণনা করা হয়েছে।
এর বিপরীতে আলবানী সাহেব যা করেছেন, ১) সহীহ হাদিসকে মুরসাল হিসেবে অযৌক্তিক ভাবে বাদ দিয়েছেন! ২) বানোয়াট দলীল পেশ করেছেন!! ৩) একজন তাবেয়ীর exceptional আ’মালকে example হিসেবে পেশ করেছেন!!!
খুবই সুন্দর এবং দলীলভিত্তিক লেখা। ধন্যবাদ।
সালাম ভাইজান!
আপনাদের সমস্যা কি জানেন? আপনারা আহলে হাদীস ধর্ম গ্রহণ করার পর চোখ অন্ধ হয়ে যান। হয়ে যান বধির। কারো কথা আর কানে ঢুকে না। হয়ে যান আলবানী আর জাকির নায়েকের অন্ধ মুকাল্লিদ। হায়রে আহলে হাদীস! হায়রে অন্ধের দল।
না জেনেই ঝারি দিলেন। হাফিজ ভাইয়ের কমেন্টে পেলেনতো আপনার জবাব? কে তাবেয়ী আর কে সাহাবী সেই জ্ঞানটুকু নাই কিন্তু নিজেই কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা বের করে আমল করেন বলে প্রচার করেন! সেই সাথে অন্যকে দাওয়াত দেন মাযহাব মানার দরকার নাই!! বড়ই অদ্ভুত আপনাদের কর্মকান্ড।
আপনাদের ঈমানতো নবীজী সাঃ এর হাদীসের উপর নয় আপনাদের জোরে দেয়া শর্তের উপর। তাইনা?
কথিত আহলে হাদীসের ঈমান নবীর উপর নাকি শর্তের উপর?
“কাফেররা নবীর উপর বিশ্বাস রাখেনি, রেখেছে তাদের দাবিকৃত বিষয়ের উপর। এমনিভাবে আপনারা মন থেকে এই কথা দূরিভূত করে দিন যে, গায়রে মুকাল্লিদদের ঈমান নবী সাঃ এর উপর। কখনোই নয়। বরং তাদের ঈমান হল ইমামদের শিখানো শর্তের উপর।
যেমন কাফেররা নবী সাঃ কে বলত যে, ‘যা আমরা বলছি, তা আল্লাহ তায়ালা থেকে বলিয়ে নাও। অথবা আল্লাহ তায়ালা থেকে করিয়ে নাও। যদি এমন করতে পার তাহলে তা মানব। নতুবা নয়। এমনিভাবে গায়রে মুকাল্লিদ কথিত আহলে হাদীসরা একটি বিষয় উত্থাপন করে দেয়, আর বলে যে, এর হুবহু শব্দ আল্লাহর নবী সাঃ থেকে বলিয়ে নাও। তাহলে আমরা মানব। নতুবা এর আগে নবীজী সাঃ যা কিছু নিজে বলেছেন তা আমরা মানবনা”।
প্রিয় ভাইয়েরা! একবার খেয়াল করে দেখুন। গায়রে মুকাল্লদদের আপনি যতই সহীহ হাদীস দেখান না কেন। ওদের শর্ত অনুযায়ী না হলে তারা তা মানবে না। বলবে, বুখারীতে দেখাও, মুসলিমে দেখাও। নতুবা সিহাহ সিত্তায় দেখাও। নুতবা মানব না। যদিও হাদীসটি সহীহ হয়।
এর মানে এই দাঁড়ায় যে, ওরা যেন নবীজী সাঃ কে পরামর্শ দিচ্ছে যে, আপনি যদি এরকম শব্দে হাদীস বলেন, আর তা ইমাম বুখারী বা ইমাম মুসলিম বা সিহাহ সিত্তায় স্থান পায় তাহলে আমরা মানব, নতুবা আপনার কথা ডাষ্টবিনে নিক্ষেপ করব” নাউজুবিল্লাহ।
পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা খুবই গর্হিত। সেটা হল তিনি ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ নাকি বলেছেন-“মহিলা পুরুষের মতই নামায আদায় করবে”। এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই। আল্লাহই ভাল জানেন তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন!!
অথচ ইতোপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ স্পষ্টই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।
ালবানী মিথ্যুক? বুখারী রহ এর জামানায় এমন কেউ কিছু করলে তাকে মিথ্যুক বলা হত এবং তার সমস্ত রেয়ায়েত জাল হিসেবে ধরে নেয়া হত।
সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশক্রমে দুই দফায় রাসূল (সঃ) কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে শিখিয়ে গেছেন। এসময় জিবরাঈল (আঃ) নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। রাসূল (সঃ) বহু সাহাবীদের উপস্থিতিতে বাস্তবভাবে রুকু, সাজদাহ ইত্যাদি করে দেখিয়ে সালাত শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় কর”।
যেহেতু আল্লাহ বা রাসূল (সঃ) যে কাজকে নারী পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট করে পার্থক্য করার বর্ণনা বা নির্দেশ দেননি সেহেতু সে কাজ নারী পুরুষ সকলের জন্যই সমান ভাবে অনুসরণ ও অনু করণযোগ্য। সালাতের ব্যপারে এ সত্য পালনীয়। তবে মহিলাদের সালাত আদায়ে যে পার্থক্যগুলি দেখা যায় সেগুলি বাহ্যিক এবং সালাতের বাইরে বিবেচিত। এগুলি নিন্মরূপঃ
১) সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দিবে না।
২) সালাতে মহিলা মাথা ঢেকে রাখবে; কিন্তু পুরুষের না ঢাকলেও সালাত হয়ে যাবে।
৩) মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
৪) কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না; কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে।
৫) জামাআতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে।
৬) পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাঁড়াতে হবে (যদি ওজর না থাকে)। কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামা’আতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৭) স্বরব কির’আত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কির’আত পড়া সুন্নত।
মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)
৮) যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাত তালি দিয়ি বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষেরা উচ্চঃস্বরে সুবহানল্লাহ বলবে।
৯) তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষদের চাদর বা কম্বল ইত্যাদি হতে হাত বের করে কাঁধ বা কান পর্যন্ত উঠাতে হবে (অবশ্য ওজর না থাকলে)। কিন্তু মহিলাদের চাদরের বা ওড়নার ভিতরে হাত রেখেই কাঁধ বা কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে; তাকবীরের সময়ও এভাবে করতে হবে।
১০) মসজিদ হতে মহিলারা সালাত শেষ হলেই বের হয়ে যাবে। আর পুরুষরা পরে বের হবে।
উপরোক্ত বাহ্যিক করনীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ মহিলাদের সালাতে নেই। পুরুষ মহিলাদের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা, হাত বাঁধা, রুকু, সিজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। মহিলাদের সালাত আদায়ে আমাদের দেশে যে পার্থক্য প্রচলিত আছে তা সহীহ হাদীস ভিত্তিক তো নয়ই, দলীল ভিত্তিকও নয় বরং কতকগুলো যঈফ নিতান্ত দুর্বল বাতিল হাদীস এবং অসমর্থিত ও মনগড়া লেখা বই হতে প্রচলিত হয়েছে।
রসূলুল্লাহ (সঃ) এর নামাজ
ইবরাহীম নাখঈ এইমত পোষন করেন, তিনি বলেছেনঃ পুরুষরা নামাযে যা করে মহিলারাও তাই করবে। (ইবনে শায়বাহ- সনদ সহীহ)
বোখারী আত্ তারীখ আস্ সাগীর গ্রন্থের ৯৫ পৃষ্ঠায় সহীহ সনদ সহকারে প্রখ্যাত মহিলা সাহাবী উম্মুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন এবং তিনি ছিলেন ফকীহ্ ।’ অর্থাৎ ফিক্হ সম্পর্কিত জ্ঞনের অধিকারীণী।
আবু দাউদ ‘আল-মারাসীল’ গ্রন্থে ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘সাজদায় পাঁজরের সাথে হাত মিলিয়ে রাখবে এবং এ ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের মত নয়’ এটি মোরসাল হাদীস এবং এটি সহীহ নয়।
*** মুরসাল হাদীসঃ যে হাদীসের সানাদের শেষ ভাগে বর্ণনাকরী বাদ পড়েছে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাবিঈর মাঝে ঘাটতি পড়ে গেছে তাকে মুরসাল বলা হয়।
মুরসাল হাদীসকে প্রত্যাখ্যাত শ্রেণীর মধ্যে উল্লেখ করার কারণ হলো উহা বর্ণনাকারীর অবস্থা সম্পর্কে না জানা। কেননা, উক্ত উহ্য ব্যক্তি সাহাবীও হতে পারেন, তাবিঈও হতে পারেন। দ্বিতীয় অবস্থায় তিনি দুর্বলও হতে পারেন, আবার নির্ভরযোগ্যও হতে পারেন ইত্যাদি।
ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) ও ইমাম মারিক (রঃ) মুরসাল হাদীস সন্দেহাতীতভাবে গ্রহণের মত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (রঃ) তা অগ্রহণযোগ্য বলেছেন। ***(সুনান আবূ দাউদ, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩)
@badru, ভাইজানের কি মাথায় সমস্যা আছে নাকি? কপিপেষ্ট দিয়ে অযথা যায়গা ভরলেন কেন? আর পাগলের মত এই বক্তব্যটি দেবার কি মানে? যে-
“রসূলুল্লাহ (সঃ) এর নামাজ
ইবরাহীম নাখঈ এইমত পোষন করেন, তিনি বলেছেনঃ পুরুষরা নামাযে যা করে মহিলারাও তাই করবে। (ইবনে শায়বাহ- সনদ সহীহ)
বোখারী আত্ তারীখ আস্ সাগীর গ্রন্থের ৯৫ পৃষ্ঠায় সহীহ সনদ সহকারে প্রখ্যাত মহিলা সাহাবী উম্মুদ্ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন এবং তিনি ছিলেন ফকীহ্ ।’ অর্থাৎ ফিক্হ সম্পর্কিত জ্ঞনের অধিকারীণী।”
আপনার চোখ কি অন্ধ নাকি? দেখেননি পোষ্টের মাঝেই আলবানী সাহেবের এই বক্তব্যটি যে চূড়ান্ত পর্যায়ের মিথ্যাচার তা প্রমাণ করা হয়েছে।
আবার দেখুন এই অংশটি-
পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা খুবই গর্হিত। সেটা হল তিনি ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ নাকি বলেছেন-“মহিলা পুরুষের মতই নামায আদায় করবে”। এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই। আল্লাহই ভাল জানেন তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন!!
অথচ ইতোপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ স্পষ্টই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।
আলবানী সাহেব তার নিজের দাবী প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় আরেকটি কাজ করেছেন। সেটা হল-ইমাম বুখারী রহঃ এর রিজালশাস্ত্রেরে একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি পেশ করেছেন-
عن ام الدرداء انها كانت تجلس فى الصلاة جلسة الرجل-
“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন”।
আলবানী সাহেব খেয়াল করতে পারেননি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়। এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হত, তাহলে “পুরুষের মত বসা” কথাটির কোন অর্থ থাকেনা। তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মত মহিলারা বসতনা। কিন্তু তিনি যেহেতো ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হল। উম্মে দারদা হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী সাহেব দলীল পেশ করলেন। অথচ তিনিই আমাদের বর্ণিত প্রথম হাদিসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করলেন। আশ্চর্য ব্যাপার!!
সুতরাং যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতোপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গেছে। এবং একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। বিশেষ করে যখন যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট একথার ইংগিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
সুতরাং বুঝা গেল নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত। গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের বক্তব্যটির কোন দলিল নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নেবার তৌফিক দান করুন। আমীন।
@লুৎফর ফরাজী,এরা একেক জন একেক সময় হাজির হয়। আগে বেশ কিছু নফসপুজারী আহলে মুনকিরে হাদিস দেখতাম এই ব্লগে। এখন আর তাদের দেখি না। কিছু দিন দেখলাম আবু তাসনীম নিকের এক মুনকিরে হাদিস। কয়েক দিন যাবত তার পাত্তা নেই। এখন আবার কোত্থেকে ভুঁইফোঁড় বদ্রু হাজির। এরা কি একই লোক নাকি কোন প্রতিষ্ঠানের বেতনভোগী বিভিন্ন কর্মচারী বুঝা মুশকিল। এরা একই কথা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নমুখে বিভিন্ন জায়গা থেকে বলে। হিটলারের গোয়েন্দা প্রধান ফোয়েবলস এই কাজটিই করত মিথ্যাকে সত্য বানানোর জন্য।