গার্ডেনে তাহমিনা আনামের প্রতিবেদন
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ বৃহস্পতিবার, জুলাই ৭, ২০১১ (৪:২৯ অপরাহ্ণ)
গার্ডেনে তাহমিনা আনামের প্রতিবেদন
ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দি গার্ডেন’ এতে গত ২১.৫.১১ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদক তাহমিনা আনাম। তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়Ñ তিনি বাংলাদেশের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের মেয়ে। মাদরাসা শিক্ষা বিশেষ করে বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে অনেক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে গন্ডমুর্খ কিছু জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবী ও কলাম লেখকরা ।
মাদরাসা শিক্ষা কি আসলেই শিক্ষার্থীদের গোঁড়াÑধর্মান্ধ বা জঙ্গীবাদী বানায়? মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কোন ধরণের মানুষে পরিণত হয়? এটা সরেজমিনে জানতে বাংলাদেশের দু’একটি মাদরাসায় দীর্ঘ সময় কাটান প্রতিবেদক তাহমিনা আনাম। শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তাদের ছোট ছোট সাক্ষাতকার নেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি নাতিদীর্ঘ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। ‘দি গার্ডেনে’ আট পৃষ্ঠার বিশাল কলেবরে তা ছাপা হয়। প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তার অতি সংক্ষিপ্ত সারবক্তব্য এমন :
I did not find the cradle of fundamentalism at the Rehmat Ali Madrasah Perhaps it is precisely because the school is dedicated to the education of girls that, as an institution, its aims are not political, nor even particularly religious, but simply humanitarian. while the threat of radical Islam is still real in Bangladesh, it is overwhelmed by the pressing challenges of poverty. and this, ultimately, is the most dangerous thing about Bangladesh. not the threat of suicide bombers, but the everyday cruelty the very radical, the very extreme cruelty, that its citi“ens have to survive, and bear, and overcome.
বাংলাদেশের ধর্মীয় পরিচিতকে স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্নভাবে বির্তর্কিত করে তোলা হয়েছে। সারা বিশ্বে ইসলাম কয়েক শ বছর প্রধান ধর্ম হিসেবে নেতৃত্ব দিলেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এর ভূমিকা বার বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ মডারেট দেশ হিসেবে পশ্চিমাদের কাছে পরিচিতি পেলেও এর মাত্রা সবসময় এক রকম থাকেনি। জামিয়াতুল মুজাহিদীন নামের একটি সংগঠনকেই মূলত: ইসলাম বহির্ভূত কর্মকান্ড করে ইসলামকে কলংকিত করেছে। আত্মঘাতি বোমা হামলা করে দেশময় আতংক সৃষ্টি করে ২০০৫ সালে। বৃটিশ প্রবাসীর অর্থানয়নে ভোলায় প্রতিষ্টিত রেডক্রিসেন্ট নামে একটি মাদরাসা ২০০৯ সালে (সাজানো ঘটনায়) অস্ত্র পাওয়া গেলে জঙ্গিবাদ নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্বে আলোচিত হয়। বাংলাদেশের ৬০ লাখ মাদরাসা শিক্ষার্থী সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
তাহমিনা আনাম জানান, বাংলাদেশে দুই ধরনের মাদরাসা আছে। ব্যক্তিগত দান ও পৃষ্ঠপোষকতায় কওমী মাদরাসা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আলিয়া। আলিয়া মাদরাসার সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। সাড়ে ছয় হাজার কওমী মাদরাসা। শিক্ষার্থী প্রায় ১৫ লাখ। এসব মাদরাসায় সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাহমিনা জানান, কওমী মাদরাসায় প্রবেশ করতে বেশ কষ্ট পোহাতে হয়েছে। সংরক্ষিত প্রবেবেশাধিকার। তিনি কয়েকটি মাদরাসায় ঢুকেছেন। সেখানকার ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের সাথে কথা বলেছেন। সেখানকার পরিবেশ দেখেছেন। তবে তাহমিনা মূলত: ছাত্রী অর্থাৎ মহিলা মাদরাসার দিকেই নজর দেন। এমন একটা মাদরাসা হলো- তেজগাঁও অবস্থিত রহমত আলী মহিলা মাদরাসা। এর অধ্যক্ষ মাওলানা সালেহ জানান, এখানে ছাত্রী সংখ্যা ৫০০। ছাত্রীদের অধিকাংশ এতিম। সবার মা-বাবা মারা গেছে এমন নয়। অনেকেই পরিত্যক্ত শিশু ছিল। এদেরকে তিন বেলা উপাদেয় খাবার দেয়া হয়। তাদেরকে ধর্মীয় ও জাগতিক বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়। সময় হলে উপযুক্ত পাত্রে বিয়ে দেয়া হয়। সাধারণত: স্বু ছল পরিবারেই তাদের বিয়ে হয়। অনেক ছাত্রী অভিজাত প্রতিষ্ঠানেও লেখাপড়ার সুযোগ পায়।
তাহমিনা আনাম জানান, অধ্যক্ষ ছালেহ হুজুরকে তার কাছে আধুনিক ও সহমর্মী সাহায্যকারী মানুষ বলে মনে হয়েছে। তাহমিনা পুরান ঢাকার আরেকটি মাদরাসায় যান। এ মাদরাসার শিক্ষাদান পদ্ধতি আরো আধুনিক। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে আধুনিক ও জাগতিক বিষয়েও শিক্ষা দেয়া হয়। তাদের লক্ষ্য, ছাত্রীদেরকে আদর্শ ছাত্রী ও আদর্শ শিক্ষক করে গড়ে তোলা।
গার্ডিয়ান প্রতিবেদক তাহমিনা আনাম জানান, মাদরাসাগুলোয় ঘুরে তিনি যে সত্য উদঘাটন করেছেন তা হলো মাদরাসায় আধুনিক জীবনের প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি ধর্মান্ধ তৈরি করা হয় বলে যে অভিযোগ করা হয় তা মোটেও সত্য নয়। এ বর্ণনায় কোনো প্রমাণ তাহমিনা আনাম খোঁজে পাননি। তিনি বলেন, আমি রহত আলী মাদরাসায় মৌলবাদের কোনো কিছু দেখিনি। বাংলাদেশে এখনো চরমপন্থী ইসলামের হুমকির কথা শোনা যায়। তবে এটা মূলত: দারিদ্র্যের কারণে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিপদ এটাই। আত্মঘাতি বোমা হামলার হুমকি নয়। বরং প্রতিদিনের দারিদ্র্যের কষাঘাতে বেঁচে থাকা, টিকে থাকা এবং উতরে যাওয়াটাই সবচে বড় বিষয়।
তাহমিনা আনামের এ প্রতিবেদনের ওপর গার্ডিয়ানের এ কর্ম বিষয়ে ‘রিকমান্ড’ এসেছে। স্বভাবতই সবাই তাহমিনার প্রশংসা করেছে। এ কারণে যে, তাদের এতো দিনের লালিত ধারনাগুলো তাহমিনা ভুল বলে প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের মুসলমান বিশেষত: মাদরাসা সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক ধারণা ইতিবাচকে রূপান্তরিত হয়েছে।
তাহমিনা আনামকে আমরাও আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। তবে তাকে আমরা আমন্ত্রণ জানাবো, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাগুলোতে পরিদর্শন করতে। যেগুলো ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়, সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর, মোমেনশাহী, কিশোরগঞ্জ, ফরিতপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত। সেসব মাদরাসায় ঢুকতে তাহমিনা আনমকে মোটেও ঝোমেলা পোহাতে হবে না। তাকে সাদর সম্ভাষণই জানানো হবে। সেসব মাদরাসায় গেলে তাহমিনার মাদরাসা সম্পর্কে ধারণা আরো ইতিবাচক হয়ে ওঠবে। কারণ, এসব মাদরাসার পরিবেশ ও সুন্দর-ও মনোরম পরিবেশবান্ধব। এখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষা বাংলা, অংক, ইংরেজি, ভূগোল অর্থনীতিও শিক্ষা দেয়া হয়। প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চাও করা হয়। মজার ব্যাপার হলো স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে এসব মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বাংলা হস্তাক্ষর অনেক সুন্দর এবং পরিশিলিত। আর মহিলা মাদরাসাগুলো এখনো আমাদের বিবেচনায় এতোটা মানসম্পন্ন হয়ে ওঠেনি। মহিলা মাদরাসাগুলোকে আরো ঢেলে গড়ে সাজাতে হবেÑ এটা আমাদেরও দাবী। অথচ এসব মাদরাসায় গিয়েই তাহমিনার ধারনা আমূল বদলে গেলো। প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী মাদরাসাগুলোয় গেলে কী হতো? নিশ্চয় তার বদলে যাওয়া ধারণা আরো ঋদ্ধতাপূর্ণ হতো।
রহমানী পয়গাম , জুন ২০১১ সংগৃহীত
শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহ
সত্যের জয় চিরস্থায়ী।