লগইন রেজিস্ট্রেশন

হাটহাজারীর মাদ্রাসা যেন মিনি ক্যান্টনমেন্ট ,অনেক কওমি মাদ্রাসা জঙ্গি তৈরির কারখানা

লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ মঙ্গলবার, অগাষ্ট ২, ২০১১ (১১:০৮ পূর্বাহ্ণ)

জঙ্গি তৎপরতা-২

পারভেজ খান

সরকারের নীতিমালা আর নজরদারির অভাবে দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা কওমি মাদ্রাসার অনেকটিই পরিণত হয়েছে জঙ্গি তৈরির কারখানায়। এসব কারখানায় রয়েছে আধুনিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র। আছেন আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও আরাকানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকও।
জানা গেছে, দেশে রয়েছে ২০ হাজারের মতো কওমি মাদ্রাসা। অধিকাংশ মাদ্রাসাই পার্বত্য ও জঙ্গল এলাকায়। এসব মাদ্রাসায় কারা ছাত্র, তারা কী শিখছে, কারা শেখাচ্ছেন_এর কিছুই জানা নেই সরকারের। দেশে একটি শিক্ষানীতি থাকলেও কওমি মাদ্রাসাগুলো এর ধার ধারছে না। গোয়েন্দাদের মতে, এ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা দেশে একসময় ভয়াবহ জঙ্গি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
সরকারের শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভাগের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বিগত সরকারের সময়ই মূলত এসব প্রতিষ্ঠান মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এরা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করে না। নিজেদের মতো করেই তারা পাঠ্যসূচি তৈরি করছে। তবে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে এদের নিয়ন্ত্রণে আনার।
র‌্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে জঙ্গিদের নিরাপদ আবাসস্থল হচ্ছে দেশের উল্লেযোগ্য কয়েকটি মাদ্রাসা। এগুলোর অধিকাংশই কওমি মাদ্রাসা। চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও লালখানবাজার এলাকার দুটি মাদ্রাসাকে রীতিমতো জঙ্গিদের দুর্গ বলা চলে। হাটহাজারী এলাকার একটি মাদ্রাসার ভেতর রয়েছে একাধিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এমনকি হেলিপ্যাডও আছে সেখানে। এ পর্যন্ত যত জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই এ মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ মাদ্রাসাকে বলা হয়েছে ‘জঙ্গিদের মিনি ক্যান্টনমেন্ট’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ, সিলেট এবং রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ও ডেমরার সাইনবোর্ড এলাকার কয়েকটি মাদ্রাসাও পরিণত হয়েছে জঙ্গিদের আস্তানায়।
এ ব্যাপারে র‌্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘হাটহাজারীর রহস্যঘেরা মাদ্রাসার ভেতর না প্রবেশ করতে না পারলে এর ভয়ংকরতা সম্পর্কে বলে বোঝানো যাবে না। তবে সত্য যে এখানে অভিযান চালালে অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা আছে। বিগত সরকারের সময় নানা আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এর ভিত্তি এতই মজবুত হয়েছে যে এখানে অভিযান চালানো অসম্ভব।’
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর সরকারের বিন্দুমাত্র নিয়ন্ত্রণ নেই। র‌্যাব-পুলিশ কতটা নজর রাখবে? কারা ছাত্র, কারা শিক্ষক, সেখানে কী শেখানো হচ্ছে_এর কোনোটাই সরকার জানে না। এসব মাদ্রাসা চলছে তাদের নিজস্ব মতাদর্শ আর সিলেবাস অনুযায়ী। এরাই একসময় রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।’
ওই কর্মকর্তা জানান, পার্বত্য এলাকা, কঙ্বাজার, সাতক্ষীরা ও সিলেটের বনাঞ্চলে এমন কিছু মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নেই। পুরোটাই চলছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এসব প্রতিষ্ঠানে কী হচ্ছে, তা কেউই জানে না। আর জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর জানা যায়, তাদের অস্ত্র পরিচালনা আর বিস্ফোরক বানানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ওই সব মাদ্রাসাতেই। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান এলাকায় এ ধরনের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় হুজির প্রশিক্ষক আবুল ফারাহ রুম্মানসহ চারজনকে। উদ্ধার করা হয় প্রচুর বিস্ফোরক ও অস্ত্র প্রশিক্ষণের পুস্তিকা। হাটহাজারীর একটি মহিলা ইসলামী একাডেমীতেও একসময় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। শেখানো হতো একে-৪৭ রাইফেল চালনা পর্যন্ত। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, টেকনাফ, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে। হরকাতুল জিহাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করেন মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা সাবি্বর (বর্তমানে গ্রেপ্তার), হাফেজ জাহাঙ্গীর বদর, নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম। এঁরা সবাই আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
এ ব্যাপারে বেফাকুল মাদারেস নামে পরিচিত কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের স্বঘোষিত মহাসচিব মুফতি আবদুল জব্বার গত রবিবার কালের কণ্ঠকে জানান, সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার কওমি মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে তাঁদের বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে আছে সাড়ে তিন হাজার। তাঁদের অনেক ছাত্রকে যে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তাঁরা কোনো ধরনের জঙ্গিবাদকে মদদ দেন না বলে দাবি করেন তিনি।
আবদুল জব্বার বলেন, ‘সরকার উদ্দেশ্যমূলক আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকার আমাদের মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়, কিন্তু আমরা ওই নিয়ন্ত্রণ চাই না। কারণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে গেলে ইসলামী আদর্শগতভাবে নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩০৪ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

৪ টি মন্তব্য

  1. কালের কন্ঠ ০২ আগস্ঠ২০১১ইং এই প্রতিবেদন টি পকাশ করেছে। এ জেনো ইসলাম আর মুসলমানদের বিরুদ্বে আধা- জল খেয়ে নেমেছে।ইসলাম এবং মুসলমানদের উচিত এই জঘন্য কন্ঠ নামের পত্রিকাটি বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।

  2. বলতে পারেন, মাদ্রসায় কতজন মানিক ও পরিমল এর মত ধর্ষণকারী এবং সোনার ছেলেদের মতো গোন্ডা-মাস্তান, চাদাবাজ, সন্ত্রাসী বের হয়েছে? অতএব, মাদ্রসা-মিনি ক্যান্ট: নাকি তথাকথিত উচ্চ শিক্ষা দানকারী প্রতিষ্টানগুলো মিনি ক্যান্ট:????????

  3. দু:খ জনক, এভাবে আর কত দিন চলবে মিথ্যার প্রচার?

  4. কিছুদিন আগে একটি জরিপে দেখলাম, জঙ্গিদের মধ্যে কওমী মাদ্রাসা থেকে ধরা পড়েছে মাত্র ৩.৪০% ।