শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১১ (১০:১২ পূর্বাহ্ণ)
আবু আইয়ুব আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে অতপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা পালন করবে সে যেন যুগভর রোজা রাখল৷ (মুসলিম ১১৬৪)
সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান৷ সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা৷
অপর রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য৷ (যে সত্কাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ৷ সূরা আন’আম) (আহমাদ ৫/২৮০, দারেমি ১৭৫৫)
হাদিস থেকে যা শিখলাম_
এক. শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত জানা গেল যে, যে ব্যক্তি পুরো রমজান সিয়াম পালনের পর এ রোজা ছয়টি করবে সে যেন সারা জীবন রোজা করল৷ এ এক বিরাট আমল এবং বিশাল অর্জন৷
দুই. বান্দার ওপর আল্লাহর কত দয়া যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক বদলা দিবেন৷
তিন. কল্যণকাজে প্রতিযোগিতা স্বরূপ এ ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব৷ যাতে রোজাগুলো ছুটে না যায়৷ কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে৷
চার. এ রোজা করা যাবে মাসের শুরু-শেষ-মাঝামাঝি সব সময়৷ ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই করা হোক না কেন রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবে যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়৷
পাঁচ. যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে সে আগে তার কাজা করবে তারপর শাওয়ালের রোজায় ব্রতী হবে৷ কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে রমজানের রোজা রাখবে অর্থাত্ পুরোপুরি৷ আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে৷(মুগনি ৪/৪৪০) তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে৷
ছয়. মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরজের আগে-পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমন_ ফরজ সালাতের আগে-পরের সুন্নতগুলো এবং রমজানের আগে শাবানের রোজা আর পরে শাওয়ালের রোজা৷
সাত. এই নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে৷ কারণ রোজাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে পারে না যা তার রোজার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়৷[1]
————————————————————————————————————————
শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ রমজানের কাজা রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা একসাথে এক নিয়তে আদায় করা বিষয়ক একটি প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্নটি হল : শাওয়ালের ছয় রোজা ও মাসিকের কারণে কাজা হয়ে-যাওয়া রমজানের রোজা কী এক নিয়তে এক সাথে আদায় করা বৈধ হবে?
উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ ,এরূপ করা শুদ্ধ নয়। কেননা শাওয়ালে ছয় রোজার পর্ব রমজানের রোজা পূর্ণ করার পরই আসে।
শায়খ ইবনে উসাইমিন রোজার ফতোয়ায় (৪৩৮) বলেন:”যে ব্যক্তি আরাফা দিবসে রোজা রাখল অথবা আশুরা দিবসে রোজা রাখল, এমতাবস্থায় যে তার উপর রমজানের কাজা রোজা রয়েছে, তাহলে তার রমজানের কাজা আদায় হয়ে যাবে এবং একই সাথে আরাফা দিবস বা আশুরা দিবসে রোজা রাখার ছাওয়াবও পেয়ে যাবে। এটা হল কেবল সাধারণ নফল রোজার ক্ষেত্রে যার সাথে রমজানের কোনো যুগসূত্র নেই। অবশ্য শাওয়ালের ছয় রোজার বিষয়টি ভিন্ন। শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের সাথে যোগসূত্রে বাঁধা। এ কারণে রমজানের কাজা রোজা থাকলে তা আদায় করার পরই শাওয়ালের ছয় রোজা আদায় করা যাবে। এর প্রমাণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস: ( যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের রোজা রাখল সে যেন পুরা বছরই রোজা রাখল।) আর এটা আমরা জানি যে, যে ব্যক্তির উপর রমজানের কাজা রোজা রয়েছে তাকে রমজানের রোজা আদায়কারী বলা হবে না যতক্ষণ না তার দায়িত্বে থাকা কাজা রোজা সে পূর্ণ করে নেবে।
——————————————————————————————————————————
শাওয়ালের ছয় রোজায় কি ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি?
ফতোয়াটি শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনাজ্জিদ কর্তৃক প্রদত্ত একটি প্রশ্নের উত্তর। প্রশ্নটি হল: রমজানপরবর্তী শাওয়ালের ছয় একসাথে ধারাবাহিকভাবে আদায় করে নেয়া কি জরুরি, ভিন্ন-ভিন্নভাবে আদায় করলে কি হবে না? আমি এ রোজাগুলো তিন দফায় রাখতে চাই। অর্থাৎ সপ্তাহান্তের ছুটির দুই দিনে রোজাগুলো আদায় করতে চাই
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ , শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে একসাথে রাখা জরুরি নয়। একসাথে বা ভিন্ন-ভিন্ন উভয় ভাবেই শাওয়ালের রোজা আদায় করা যায়। শাওয়ালের রোজা যত দ্রুত রাখা যায় ততোই কল্যাণ। ইরশাদ হয়েছে: ( তোমরা কল্যাণকর্মে প্রতিযোগিতা করো) , ( তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাতের প্রতি ) মুসা আলাইহিস সালাম বলেছেন: ( হে আমার রব, আমি তাড়াতাড়ি করে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হন।) আর দেরি করাটা খোদ একটি সমস্যা ও আপদ। শাফেয়ি এবং হাম্বলি মাযহাবের অনুসারীগণ এ অভিমতই ব্যক্ত করেছেন। তবে দ্রুত আদায় না করলেও কোনো সমস্যা নেই। সে হিসেবে যদি মাসের মাঝখানে অথবা শেষে আদায় করে নেয়া যায় তবুও কোনো অসুবিধা হবে না।
ইমাম নববি রা. বলেছেন: আমাদের মাযহাবের আলেমদের বক্ত হল: শাওয়ালের ছয় রোজা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিস তাদের প্রমাণ। তারা আরো বলেছেন: শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে একসাথে মাসের শুরুতেই আদায় করা মুস্তাহাব। যদি ভিন্ন-ভিন্নভাবে রাখা হয় অথবা শাওয়াল চলে যাওয়ার পরে রাখা হয় তবুও তা জায়েয হবে। হাদিসের বক্তব্যে যেহেতু ব্যাপকতা রয়েছে, কাজেই এরূপ ব্যক্তি মূল সুন্নত আদায় করেছে বলে ধরে নেয়া হবে। এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো ইখতিলাফ নেই। ইমাম আহমদ ও দাউদের বক্তব্য এটাই। [ আল মাজমু শারহুল মুহাযযাব]
————
[1]শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত
মূল লেখক : আলী হাসান তৈয়ব