লগইন রেজিস্ট্রেশন

সাহাবায়ে কেরাম রা. এর ইসলাম গ্রহণের কাহিনী

লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ শনিবার, জানুয়ারি ৭, ২০১২ (৩:৫০ অপরাহ্ণ)

১. জনৈক মহিলার ইসলাম গ্রহণ
হযরত আবু বকর র.বর্ণনা করেন, মক্কা থেকে হিযরত করে মদীনা যাওয়ার পথে আমরা একটি গোত্রের বস্তিতে পৌঁছে এক কুটিরে অবতরণ করলাম। তখন সন্ধা হয়ে গিয়েছে। ঐ কুটিরে এক মহিলা অবস্থান করতেন। সন্ধ্যায় তার পুত্র মেষপাল নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসল। তার মা তাকে একটি ছুড়ি দিয়ে বললেন- এই ছুরি ও একটি মেষ নিয়ে পথিক মুছাফিরদের নিকট গিয়ে বল, আপনারা এই মেষটি জবাই করে নিজেদের খওয়ার ব্যবস্থা করুন আর আমাদেরকেও দিন। মহিলার পুত্র ছাগীটি নিয়ে তাদের নিকট পৌঁছলে নবীজি স.ছুরিটি ফেরত দিয়ে বললেন, দুধ দহনের জন্য পাত্র নিয়ে আস। বলক বলল, ছাগীটি কম বয়সের। এখনও পাঠার পালে আসে নাই। (অর্থাৎ দুধ দেয়ার সম্ভাবনা নেই) নবীজি স.বললেন তুমি গিয়ে পাত্র নিয়ে আস। সে গিয়ে পাত্র নিয়ে আসল। নবীজি স.ছাগীটির স্তনে হাত বুলিয়ে দিয়ে দুধ দোহাইতে শুরু করলেন। পাত্রটি দুধে পূর্ণ হয়ে গেলে তা বালকের মায়ের জন্য পাঠিয়ে দিলেন। সে তৃপ্তি সহকারে পান করলে নবীজি স. পূনরায় দুধ দোহাইলেন অতপর সফরসঙ্গী গণ পান করলেন। সব শেষে নবীজি স.পান করলেন। সেখানে কাফেলা দুই রাত অবস্থান করল। কুটির বাসীরা নবীজি স·কে “মোবারক, বরকত ও মঙ্গলময়” হিসেবে আখ্যায়িত করলেন।

ঐ মহিলার মেষপালে বরকত হল এবং সেগুলো বেড়ে অনেক হল। পরবর্তিতে মহিলা তার মেষপালসহ পুত্রকে নিয়ে মদীনায় গেলেন। পুত্র হঠাৎ বলে উঠল-মা! ঐ যে মোবারকময় ব্যক্তির সাথী। মহিলা তৎখনাত হযরত ছিদ্দিকে আকবার রা.এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর বান্দা! আপনার সঙ্গী সেই মাহাপুরুষ কে ছিলেন? হযরত আবু বকর রা.বললেন, তিনি আল্লাহর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ স.। মহিলা বললেন, আমাকে তাঁর নিকট নিয়ে যান। আবু বকর রা.তাদেরকে নবীজি স.এর নিকট নিয়ে গেলেন। তাঁরা নবীজি স.কে কিছু পনির ও গ্রাম্য উপহার সামগ্রী হাদিয়া দিলেন এবং সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করলেন। নবীজিও স.তাঁদেরকে দাওয়াত খাওয়ালেন এবং পরিধেয় ইত্যাদি উপহার দিলেন।

(বোখারী শরীফ, খঃ ৫ম,পৃঃ ২১৬, অনুবাদ-হামিদিয়া লাইব্রেরী। বিদায়া ওয়ান নেহায়া-৩/পৃঃ১৯২)

২. দ্বীনের পথে ওয়াহশী ইবনে হরব রা.

কে এই লোক, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছেন; যখন তিনি রাসূলের চাচা হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে উহুদের দিবসে হত্যা করেছেন ?!

তারপর মুসলমানদের হৃদয়কে বেদনামুক্ত করেছেন; যখন তিনি ইয়ামামার দিবসে মুসাইলামাতুল কায্‌যাবকে হত্যা করেছেন।

তিনি হলেন ওয়াহশী ইবনে হর্‌ব রা·যাঁর উপনাম আবু দাসমা।

তাঁর কঠিন বেদনাময় রক্তাক্ত কাহিনী রয়েছে।

ওয়াহশী রা·বলেন, আমি কুরাইশের এক সরদার জুবাইর ইবনে মুত‘আমের এক অল্প বয়সী দাস ছিলাম।

ওয়াহশী রা· এর চাচা তুয়াইমা বদরের দিবসে হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের হাতে নিহত হয়েছিল। তাই সে তার মৃত্যুতে অত্যন্ত শোকাহত হল । এবং লাত ও উজ্জার শপথ করে বলল, অবশ্যই সে তার চাচার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবে এবং তার হত্যাকারীকে হত্যা করবে…………এরপর থেকে সে হামযাকে হত্যার সুযোগ খঁজতে লাগল।

* * *

এরপর বেশী দিন যায়নি। ইতোমধ্যে কুরাইশরা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহকে স. ধ্বংস করার জন্য এবং বদরে নিহতদের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উহুদে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করল। তারা তাদের বাহিনীকে সজ্জিত করল। তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কবীলাদের একত্রিত করল। যুদ্ধ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করল। তারপর তাদের পক্ষ থেকে এযুদ্ধের নেতৃত্ব আবু সুফিয়ান ইবনে হরবের হাতে অর্পণ করল।

আবু সুফিয়ান বাহিনীর সাথে কুরাইশের একদল সম্মানিত নারীকেও সাথে নেয়ার চিন্তা করল। যাদের পিতা, পুত্র, ভাই বা আত্নীয় স্বজনের কেউ বদর যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারা যোদ্ধাদেরকে যুদ্ধে উৎসাহিত করবে। পলায়নে বাধা প্রদান করবে। সুতরাং যেসব নারীরা তার সাথে বেরিয়েছিল তাদের সর্বাগ্রে ছিলেন তার স্ত্রী হিন্দ বিনতে উৎবা।

তার পিতা, চাচা, ভাই সকলে বদরে নিহত হয়েছিল।

বাহিনী যখন যাত্রার উপক্রম হল, তখন জুবাইর ইবনে মুতআম আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হে আবু দাসমা! তোমার কি আগ্রহ আছে যে তুমি তোমাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করবে ?

আমি বললাম, তা কী করে সম্ভব?

তিনি বললেন, আমি তার ব্যবস্থা করব।

আমি বললাম, তা কিভাবে?

তিনি বললেন, যদি তুমি আমার চাচা তুয়াইমা ইবনে আদী এর মুকাবিলায় মুহাম্মাদের চাচা হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে হত্যা করতে পার, তাহলে তুমি স্বাধীন মুক্ত।

আমি বললাম, সে প্রতিশ্রুতি পূরণে কে আমাকে নিশ্চয়তা প্রদান করবে?

তিনি বললেন, কাকে চাও, সে ব্যাপারে আমি সবাইকে সাক্ষ্য বানাতে চাই।

আমি বললাম, আমি তা করব। আমি তা করতে সক্ষম।

ওয়াহশী রা·বলেন, আমি একজন হাবসী ছিলাম। হাবসার অধিবাসীদের মতই বর্শা নিক্ষেপ করতে পারতাম। সুতরাং যা লক্ষ্য করে বর্শা ছুড়তাম তা বিদ্ধ করতে ভুল করতাম না।

তাই আমি আমার বর্শা নিয়ে বাহিনীর সাথে রওনা হলাম । আমি বাহিনীর পশ্চাতে নারীদের নিকটে চলতে লাগলাম। কারণ যুদ্ধের প্রতি আমার কোন আগ্রহ ছিল না।

আমি যখনই আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দের পাশ দিয়ে গিয়েছি বা সে আমার পাশ দিয়ে গেছে আর সূর্যের আলোয় আমার হাতে বর্শাটি চকমক করতে দেখেছে তখনই সে বলেছে, হে আবু দাসমা! আমাদের হৃদয়ের জ্বালাকে তুমি প্রশমিত কর।

তারপর আমরা যখন উহুদে পৌঁছলাম আর উভয় বাহিনী মুখোমুখী হল আমি হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে তালাশ করতে লাগলাম। আমি তাকে আগে থেকেই চিনতাম। হামযা রা. কারো কাছেই অজানা থাকত না। কারণ তিনি তাঁর মাথায় নুয়ামা পাখির পর স্থাপন করতেন। ফলে প্রতিপক্ষের যোদ্ধারা তাঁকে ভালো করেই চিনতে পারত । আরবের বীর যোদ্ধারা সাধারণত এমনই করত।

অল্প কিছুক্ষণ পরই আমি হামযাকে দেখতে পেলাম, সে সমেবেত যোদ্ধাদের মাঝে বজ্রনির্ঘোষ আওয়াজে চিৎকার করছে । যেন সে নিজেই একজন ধূষর রঙের উষ্ট্র। সে তার তরবারী দ্বারা লোকদের শাসাচ্ছে। কেউ তার অভিমুখী হচ্ছে না । কেউ তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারছে না।

আমি যখন তাকে হত্যা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এবং কোন পাথর বা গাছের পশ্চাতে থেকে তার থেকে আত্নরক্ষা করে সে আমার নিকটবর্তী হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম, ঠিক তখনই কুরাইশের এক অশ্বারোহী তার দিকে এগিয়ে গেল । তাকে সিবা ইবনে আব্দুল উজ্জা নামে ডাকা হয়। সে বলছে, হে হামযা ! আমার সাথে যুদ্ধে এগিয়ে এসো ····আমার সাথে যুদ্ধে এগিয়ে এসে·····

হামযা তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, হে মুশরিকের বাচ্চা! এগিয়ে আয় ··· এগিয়ে আয়····

তারপর হামযা দ্রুত তার দিকে ছুটে গিয়ে তার তরবারী দ্বারা আঘাত করল। তারপর সে তার সামনে লুটিয়ে পরে রক্তের মাঝে ছটফট করতে লাগল।

ঠিক তখন আমি হামযার অদূরে আমার মনের মত স্থানে দাড়াতে পারলাম। আমি আমার বর্শাকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে তাক করতে লাগলাম । তারপর নিশ্চিত হলে তার দিকে ছঁড়ে মারলাম। বর্শাটি বিদ্যুতের বেগে ছুটে গিয়ে ঠিক তার পেটের নিচে বিদ্ধ হল এবং সামনে দিকে বেরিয়ে গেল।

এরপর ভারাক্রান্ত অবস্থায় সে আমার দিকে দু‘কদম এগিয়ে এসে বর্শাটিসহ লুটিয়ে পড়ল। আমি তাকে সে আবস্থায় ছেড়ে দিলাম । অবশেষে নিশ্চিত হলাম যে, সে মৃত্যেুবরণ করেছে। তখন আমি তার নিকট এগিয়ে গিয়ে বর্শাটি তুলে নিয়ে তাবুতে ফিরে এলাম এবং সেখানেই বসে রইলাম। কারণ তাকে হত্যা করা ছাড়া আমার আর কোন প্রয়োজন ছিল না। আমিতো তাকে কেবল আমার মুক্তির জন্য হত্যা করেছি।

* * *

যুদ্ধের শিখা ভয়াবহ আকার ধারণ করল। সম্মুখাগ্রসর আর পশ্চাদ্ধাবন অনেক হল। তবে দ্রুতই মুহাম্মাদের স. সাথীদের উপর পরাজয়ের বিপর্যয় ঘুরে এল এবং তাদের অনেকেই শহীদ হলেন।

তখন হিন্দ বিনতে উৎবা নিহত মুসলমানদের নিকট ছুটে গেল। আর তার পশ্চাতে পশ্চাতে গেল একদল নারী। তারা তাদের বিকৃত করতে লাগল। তাদের পেট চিরতে লাগল, চোখ ফুঁড়ে দিল । নাক আর কান কেটে ফেলতে লাগল।

হিন্দা হযরত হামজার রা. নাক আর কান দিয়ে মালা বানিয়ে তা দ্বারা নিজে সজ্জিত হল আর তার মালা ও স্বর্ণের দুল দুটি আমাকে দিয়ে বলল, হে আবু দাসমা! এ দু‘টি তোমার………….এ দু‘টি তোমার……….

এ দু‘টি হেফাজত কর, কেননা তা মূল্যবান। উহুদ যুদ্ধ শেষ হলে আমি মক্কায় ফিরে এলাম। আর জুবাইর ইবনে মুত‘আম তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করল। আমাকে আযাদ করে দিল। আমি মুক্ত স্বাধীন হয়ে গেলাম।

* * *

কিন্তু মুহাম্মাদের স. ধর্ম মত দিনের পর দিন বাড়তে লাগল এবং ক্ষণে ক্ষণে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে লাগল। তাই মুহাম্মাদের স. ধর্ম মত যতই বাড়তে লাগল বিপদ আর সঙ্কট আমার তেমনি বেড়ে চলল। ভয়-ভীতি আর আতঙ্ক আমাকে পেয়ে বসল।

এমনি অবস্থা চলতে চলতে একদিন মুহাম্মাদ স. এক বিশাল বাহিনী নিয়ে বিজয় বেশে মক্কায় প্রবেশ করল। তখন আমি নিরাপত্তার তালাশে তায়েফে পালিয়ে গেলাম।

কিন্তু তায়েফের অধিবাসীরা কিছুদিনের মধ্যেই ইসলামের ব্যাপারে নরম হয়ে গেল। তারা মুহাম্মাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য এবং তার ধর্মে প্রবেশের ঘোষণা দেয়ার জন্য একটি প্রতিনিধি দল প্রস্তুত করল।

তখন আমার অনুশোচনা তীব্র আকার ধারন করল এবং সমস্ত দুনিয়া আমার জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল। আমার সামনে সব পথ বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমি বললাম,

শামে অথবা ইয়ামেনে অথবা দূরবর্তী কোন দেশে আমি চলে যাব।

আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যখন আমার এই দুশ্চিন্তায় পেরেশান তখন এক কল্যাণকামী আমার ব্যাপারে কোমল হল। বলল, ছিঃ হে ওয়াহশী! আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যদি কেউ তার ধর্মে প্রবেশ করে আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহাম্মাদের স. রিসালাতের সাক্ষ্য দেয় তাহলে তিনি তাকে হত্যা করেন না।

আমি তার কথা শুনে মুহাম্মাদের তালাশে ইয়াসরাবের দিকে রওনা হয়ে গেলাম। যখন আমি সেখানে পৌঁছলাম এবং তাকে তালাশ করলাম, জানতে পারলাম, তিনি মসজিদে অবস্থান করছেন।

ক্ষীপ্রতা ও সতর্কতার সাথে আমি তার নিকট প্রবেশ করলাম ও তার দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি তার মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিলাম

لا إلـهَ إلا الله محمدٌ رسولُ الله

- আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই , মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।

তিনি আমার সাক্ষ্য প্রদানের আওয়াজ শুনে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন। আমাকে চিনেই আমার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। বললেন, হে ওয়াহশী ! তোর মরণ হোক !! তোমার চেহারা আমার থেকে দূরে সরিয়ে নাও । আজকের পর যেন আর কখনো তোমাকে না দেখি। ····

তাই সেই দিন থেকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টি যেন আমার উপর না পরে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতাম। সাহাবায়ে কেরাম তাঁর সামনে বসলে আমি তাঁর পশ্চাতে গিয়ে বসতাম।

এমনি অবস্থায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইনতেকাল করলেন।

* * *

তারপর ওয়াহশী রা·বলতে লাগলেন, আমি জানতাম, ইসলাম গ্রহণ করলে পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে আমি যা করেছি তার নির্মমতা অনুভব করতাম। ইসলাম ও মুসলমানদের উপর আমি যে মসিবত চাপিয়ে দিয়েছি তার ভয়াবহতা অনুধাবন করতাম। আমি মুসলমানদের দূরদিনে তাঁদের এক বীর সিপাহসালার কে শহীদ করেছি, যিনি ছিলেন রাসূল স. এর একান্ত আপনজন, তাঁর চাচা। কাজেই আমি এমন সুযোগের সন্ধানে ছিলাম, যা দ্বারা আমি বিগত দিনের পাপ মোচন করব।

* * *

তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর মুসলমানদের খেলাফতের দায়িত্ব আবু বকর রা·এর নিকট এল। এ সময় কিছু সুবিধাবাদী লোকেদের মাঝ ইসলাম ত্যাগের হিরিক লক্ষ করা গেল। মুসাইলামাতুল কায্‌যাব ও বনু হানীফার কিছু লোকেরা মুরতাদ হয়ে গেল। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল মুসাইলামাতুল কায্‌যাব। এ নাজুক পরিস্থিতিতে খলীফা হযরত আবু বকর রা. উপায়ান্তর না দেখে মুসাইলামা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। উদ্দেশ্য ছিল তাকে না পারলে অন্তত তার গোত্র বনু হানীফাকে যেন আল্লাহ দীনে ফিরিয়ে আনা যায়।

তখন আমি মনে মনে বললাম, হে ওয়াহশী! আল্লাহর শপথ করে বলছি, এটা তোমার জন্য উত্তম সুযোগ। সুতরাং তুমি তা লুফে নাও। তোমার হাত থেকে এ সুযোগকে ফসকে যেতে দিও না।

তারপর আমি মুসলমানদের বাহিনীর সাথে বেরিয়ে পড়লাম এবং আমি আমার সাথে আমার ঐ বর্শাটি নিয়ে নিলাম যা দ্বারা আমি হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালেবকে শহীদ করেছি। আমি শপথ করলাম, হয় তা দ্বারা মুসাইলামকে হত্যা করব, না হয় আমি শাহাদাত বরণের মাধ্যমে সফলতা অরজনের প্রয়াস চালাব।

তারপর যখন মুসলমান ও মুসাইলামা এবং তার বাহিনীর মাঝে হাদীকাতুল মওত নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ শুরু হল, তখন আমি মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার মুসাইলামাকে খুজঁতে লাগলাম । আমি তাকে দেখলাম সে তরবারী হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আমি এক আনসারীকে দেখলাম, সেও আমার মত তাকে খুঁজছে । আমরা উভয়ে তাকে জাহান্নামে পাঠাতে চাচ্ছিলাম।

আমি আমার পছন্দমত স্থানে দাঁড়িয়ে বর্শাটি নাড়াচ্ছিলাম। অবশেষে তা আমার হাতে সোজা হয়ে গেলে আমি তা তার দিকে ছুঁড়ে মারলাম। সাথে সাথে সেটি সোজা গিয়ে আল্লাহ ও তাঁর দুশমনের উপর পড়ল।

আমি যে মুহূর্তে আমার বর্শাটি মুসাইলামার উপর ছুঁড়ে মারছি ঠিক তখন আনসারী সাহাবী তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তরবারীর এক আঘাতে তাকে দ্বীখন্ডিত করে ফেলল।

সুতরাং এখন আামার রবই ভাল জানেন, আমাদের মাঝে কে তাকে হত্যা করেছে।

যদি আমিই তাকে হত্যা করে থাকি তাহলে আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে (হযরত হামজা রা.) হত্যা করেছি ····· এবং সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকেও (মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদার মুসাইলামাকে) হত্যা করেছি। ঐতিহাসিকগণতাইতো বলেছেন:

قَتَلَ خَيْرَ النَّاسِ بَعْدَ مُحَمَّدٍ …. وَ قَتَلَ شَرَّ النَّاسِ أَيْضًا

তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন এবং সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকেও হত্যা করেছেন।

http://www.islamandlife.org/cms.php?menu_id=88

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
১,১১৯ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৩.০০)