আমি আপনাকে আমার নিজের প্রানের, পরিবারের এবং সন্তানদের থেকেও বেশী ভালবাসি।
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১২ (৫:৪৯ অপরাহ্ণ)
আশেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আশেক সাহাবী। আজকে মন খুবই খারাপ। রহমাতুল্লিল আলামিন,ইমামুল মুরসালিরে দরবারে নিজের ভিতর রাখা হৃদয় ভরা ভালবাসার প্রকাশ করলেন।সে একজন যুবক সাহাবী। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলো এবং বল্লো, “ও আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনাকে আমার নিজের প্রানের, পরিবারের এবং সন্তানদের থেকেও বেশী ভালবাসি। যখন আমি ঘরে থাকি আর মাঝে মাঝে যখন আপনার কথা মনে পড়ে তখন আপনার নিকট এসে আপনাকে না দেখা পর্যন্ত আমার অন্তর শান্তি পায় নাহ। যখন আমি আমার ও আপনার মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে ভাবি তখন আমার এই ধারনা হয় যে, আপনি জান্নাতে থাকবেন নবীদের সাথে আর আমার তাই ভয় হয়, আমি যদি জান্নাতে প্রবেশ করি তাহলে হয়ত আপনাকে দেখতে পাবো নাহ।”
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রতিউত্তর করলেন না, নিরব থাকলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ্ ঐ যুবককে উদ্দেশ্য করে একটি আয়াত নাজিল করেন।
“আর যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তবে তারা ঐ ব্যক্তিদের সংগী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবীগণ, সত্য সাধকগণ, শহীদ্গণ ও সৎকর্মশীলগণ এবং এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী”। সূরা আন-নিসা, আয়াতঃ ৬৯।
সুবহানাল্লাহ, সেই যুবক কতইনা সৌভাগ্যবান যে স্বয়ং আল্লাহ সাত আসমানের উপর থেকে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর মাধ্যমে!! সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেছিলো, সে তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ভালবেসেছিলো আল্লাহ এর সন্তুষ্টি ও করুনা প্রাপ্তির আশায় যাতে করে সে পরকালে জান্নাত লাভ করতে পারে আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সান্নিধ্য পরকালেও যেন লাভ করতে পারে। তার চিন্তা চেতনার অধিকাংশই পরকালের প্রাপ্তির কথা বিরাজ করছিলো!
কিন্তু আজ আমাদের কি হয়েছে? আমরা অবিশ্বাসীদের রীতি-নীতি আর সংস্কার রপ্ত করার পিছনে মত্ত হয়ে পড়েছি!! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে ভালবেসে তাঁর সুন্নাহ এর অনুসরন করার কথা আমাদের চিন্তা চেতনা থেকে কি করে লোপ পেয়ে গেলো! আমরা মুসলমানরা আজ আল্লাহ এর আদেশ এর প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করছি আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহকে হাত থেকে ছেড়ে দিয়েছি। এভাবে চলতে থাকলে শেষ নিঃশ্বাস এর সাথে সাথে সব কিছুই ব্যার্থ পর্যবসিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। আল্লাহ এর বিভিন্ন সতর্কতা মূলক আভাস সম্পর্কে ও বিভিন্ন রকম নিদর্শন সম্পর্কে পড়ছি, জানছি ও প্রত্যক্ষ করছি, অথচ তা থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করছি না, অথবা সেসব আলামত গুলিকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করছি। কয়েক বছর পূর্বে গাজা উপত্তকায় ইহুদী কর্তীক মুসলমান গণ-হত্যার ঘটনা এবং ইসরায়লের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের উপর অমানবিক অত্যাচার নিপীড়ন, সারা বিশ্বের সকল জীবিত মুসলিমদের জন্য যেন ছিলো একটা চপেটাঘাতের মতন। যেন আল্লাহ আমাদেরকে ধারাবাহিকভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যেন আমরা আমাদের শিকড়ে ফিরে যেতে পারি। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা সকল সতর্কতার বানীই ভুলে যাই।
দুঃখজনকভাবে, আজকে আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা সত্যি অবাক। আমাদের পারিবারিক ,সমাজিক ,অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও আর্ন্তজাতিক মহল পযর্ন্ত সর্বস্তরে ইহুদী-খৃষ্টানদার কালচার অনুসরন করি।আমাদের গোটা জীবন ব্যাস্থার মধ্যে আল্লাহ তার রাসূলের সা. আদর্শতো নেই বরং আরো কত নিন্দনীয় করে রেখছি।কাফেরদের গোলাপী ও লাল টেডি বিয়ারগুলিই হয় আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু, তাদেরই রীতি-নীতি ও সংস্কৃতির পদাঙ্ক অনুসরন করার মাধ্যমে যারা মানবতা বিরোধী ও বিশ্বের অপর প্রান্তে আমাদের মুসলমান ভাইদের হত্যাকারী। এই দুঃখজনক চিত্র বুঝা বড় দায়, কি করে আমরা এর পরেও তাদেরকে অনুসরনের মাধ্যমে আনন্দ পেতে পারি?
আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে অনুকরন করে (অন্য ধর্মালম্বীদের) সে তাদেরই একজন।” (আহমাদ, ২/৫০; আবু দাঊদ, নাম্বারঃ ৪০২১) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন, “তোমরা অবশ্যই তাদেরকে অনুকরন করবে যারা তোমাদের পূর্বেই এসিছিলো (ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে) এমনকি যদি তারা একটা টিকটিকির গর্তেও প্রবেশ করতো, তাহলেও তোমরা তাদেরকে অনুকরন করতে।” তখন সাহাবারা বল্লেন, “ও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম), আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদের কথা বলছেন?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বল্লেন, “তবে আর কার কথা বলছি?” (আল বুখারী)
এটাই কি ঘটছে না আজকের দিনে? আমরা শুধু অন্ধের মত তাদের অনুকরনই করছি না বরং এর জন্য গর্বও করে থাকি। আমাদের ঘুম থেকে উঠে যাওয়ার সময় এখনই। আমাদের অবশ্যই পূর্ণরূপে, হৃদয় দিয়ে আল্লাহ এর ইচ্ছার কাছে আত্নসমর্পন করতে হবে ও তাঁর আদেশ নিষেধ মান্য করতে হবে। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ, সাহাবাদের ও সততার সাধকদের অনুসরন করা আমাদের এখন একান্ত দরকার। কেবল এবং কেবল মাত্র তখনই আমরা সত্যিকার সাফল্য, আনন্দ ও শান্তি লাভ করতে পারবো।
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম।” সূরা নূর, আয়াত ৫২।
মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, “একজন ব্যাক্তি দুনিয়ার পরের জীবনে তাদের সাথেই অবস্থান করবে যাদের সে দুনিয়াতে ভালবাসে।” (আল-বুখারী)
আল্লাহ যেন আমাদের হৃদয়ে তাদের জন্য ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন যারা পরকালে হবেন জান্নাতী। আমীন