তাফহিমুল কোরআনের ব্ক্তব্যকে গ্রহণ করলে বুখারী ও মুসলিমের অবস্থান কোথায়?
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ বৃহস্পতিবার, মে ২৪, ২০১২ (৯:১১ অপরাহ্ণ)
উপরোক্ত তাফসিরগ্রন্থের মধ্য থেকে শুধুমাত্র তাফসিরে তাবারী ও খাযেন ব্যাতিত সবকটি তাফসির গ্রন্থেই সূরা সোয়াদের ৩৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত উপরোক্ত হাদিসটির উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ নবী সুলাইমান আঃ কে মহান আল্লাহ তায়ালা যে পরীক্ষাটি করেছিলেন তা হচ্ছে: একটি নিস্প্রাণ দেহ তাঁর সিংহাসনে রেখে দিয়েছিলেন। সেই নিস্প্রাণ দেহটি কি ছিল? কি সুলাইমান আঃ এর এক স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয়া অসমাপ্ত-অপরিপক্ক সন্তানটিই সেই নিস্প্রাণ দেহ? আসুন! দেখা যাক মুফাস্সিরীনে কিরাম কি বলেন?
মুফস্সিরীনে কেরাম এর কেউ কেউ বলেন: যে নিস্প্রাণ দেহটি নবী সুলাইমান আঃ এর সিংহাসনে রেখে দেয়া হয়েছিল সেটা হচ্ছে ঐ অসমাপ্ত ও অপরিপক্ক সন্তান যা নবী সুলাইমান আঃ এর একজনমাত্র স্ত্রীর গর্ভে জন্মলাভ করেছিল।
তবে মুফাস্সিরগণের কেহই উক্ত হাদিসে বর্ণিত অসমাপ্ত ও অপরিপক্ক সন্তানের সাথে এই পরীক্ষার সম্পর্ক রয়েছে, এমন কথা দৃঢ়তার সাথে বলেননি। বরং সকলেই অনুমান ভিত্তিক, সম্ভাবনার কথা বলেছেন। আবার কেহ হাদিসের উদ্বৃতি টেনেছেন এবং নাকচও করে দিয়েছেন যে, উক্ত পরীক্ষার সাথে এই হাদিসের কোনই সম্পর্ক নেই। তাছাড়া ইমাম বুখারী রাহঃ স্বীয় গ্রন্থ বুখারী শরীফে কিতাবুল জিহাদ, কিতাবুল আম্বিয়া, কিতাবুল আইমানে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি নিজেও কিতাবুত তাফসিরে সূরা সোয়াদের উক্ত আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে এর উল্লেখ করেননি। এতেই প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং ইমাম বুখারী রাহঃ নিজেও এই হাদিসটিকে উক্ত আয়াতের তাফসির হিসাবে সমর্থন করেন না।
তবে একটি কথা যা প্রণিধানযোগ্য (এবং যা আমার আলোচ্য বিষয়ও বটে) তা হচ্ছে: সূরা সোয়াদের ব্যাখ্যায় যদিও বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত উক্ত হাদিসটি অনেক মুফাস্সিরই উল্লেখ করেছেন কিন্তু এই হাদিস নিয়ে কেন মুফাস্সিরই কোন প্রকারের বিরূপ মন্তব্য করেননি বা উক্ত হাদিসের বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোন রকমের প্রশ্নও তুলেননি।
তবে যখন তাফহিমুল কোরআন পড়লাম তখন রীতিমত হতবম্ভ হয়ে পড়ি। তাফহিমুল কোরআনের বিজ্ঞ লিখক মরহুম মাওলানা মওদুদী সাহেবও উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন মতামতের উল্লেখ প্রসঙ্গে বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হাদিসটির উল্লেখ করেছেন। এবং সাথে সাথে উক্ত হাদিস নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্যও করেছেন। তাই আমি তাফহিমুল কোরআনের মন্তব্যটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
তবে এর পূর্বে আমার দুটি কথা না বললেই নয়।
প্রথমতঃ আমি জানি যে, মাওলানা মওদুদী সাহেবের অসংখ্য-অগণিত ভক্ত রয়েছেন। যাদের কাছে হয়ত আমার লেখাটি পছন্দ না-ও হতে পারে। তথাপি দ্বীনের খাতিরে, সত্য উদঘাটনের জন্যই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। কাউকে ঘায়েল করা বা কারো মনে দুঃখ দেয়ার উদ্দেশ্যে অবশ্যই নয়।
দ্বিতীয়তঃ এ বিষয়টিতে বিশ্ব মুসলিমের গৌরব, বিশুদ্ধ গ্রন্থদ্বয় বুখারী-মুসলিম শরীফের সাথে সাথে ইসলামের ইতিহাসে সবচে বেশী হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবুহুরাইরাহ রাযিঃ এর মর্যাদা জড়িত। অতএব, স্পর্শকাতর এ বিষয়টিতে ভাবাবেগের পূর্বে সত্যকেই প্রধান্য দিতে হবে।
স্মর্তব্য যে, বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত এই হাদিসটি নিয়ে ইসলামের দুশমনেরা, হাদিস অস্বীকারকারীরা অহেতুক অনেক প্রশ্নই উত্থাপন করেছে। ওরা প্রকৃত পক্ষে মুসলিম উম্মাহর নিকট সমাধৃত ও গ্রহণযোগ্য গ্রন্থদ্বয় বুখারী ও মুসলিমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সাথে সাথে ইসলামের ইতিহাসে সবচে বেশী হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবুহুরাইরাহ রাঃ কে ক্ষত-বিক্ষত করার লক্ষ্যেই মিথ্যা প্রপাগাণ্ডার আশ্রয় নিয়েছে।
তাহলে আসুন! প্রথমেই হাদিস অস্বীকারকারীরা উক্ত হাদিস নিয়ে কি কি বলেছে তা দেখে নিই। ওরা মূলত: তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
প্রথম প্রশ্নঃ হাদিসে হযরত আবু হুরাইরাহ রাযিঃ বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর নবী হযরত সুলাইমান আঃ একই রাতে ১০০ জন স্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে: এটা কি কোন মানবের পক্ষে সম্ভব যে, একই রাতে ১০০ জন স্ত্রীর সাথে মিলিত হবে? হোক না সে যতই শক্তিধর? তাছাড়া দিন-রাত তো তখনও ২৪ ঘন্টার বেশী দীর্ঘ ছিল না? তাহলে এমন উদ্ভট কথা একজন নবীর শানে হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরাহ রাযিঃ কি করে বলতে পারলেন? আর বুখারী- মুসলিমে কিভাবে স্থান পেল?
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে: উক্ত হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নবী সুলাইমান আঃ ইনশাআল্লাহ বলেননি। অতঃপর ফেরেশ্তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরও নবী ইনশাআল্লাহ বলা থেকে বিরত ছিলেন। এটা কি কোন মুসলমান বিশ্বাস করতে পারে যে, একজন আল্লাহর নবী আল্লাহর উপর ভরসা না করে কথা বলতে পারেন? এটা কি প্রকৃত পক্ষে একজন নিস্পাপ নবীর উপর মিথ্যারোপ নয়?
তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে: হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী স্বয়ং নিজেই সন্দিহানে ভুগছেন যে, নবী সুলাইমান আঃ কত জন স্ত্রীর কাছে একই রাতে গমন করেছেন। কখনো বলছেন: ১০০ জন আবার কখনো বলছেন ৯০ জন আবার কখনো বলছেন ৭০ জন আবার কখনো ৬০ জন বলছেন? তাহলে উক্ত হাদিসের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু হতে পারে? আরো আশ্চর্য্যের বিষয় হলঃ বুখারী ও মুসলিম শরীফকে পবিত্র কোরআনের পর বিশুদ্ধ কিতাবদ্বয় দাবী করা হয়ে থাকে, অথচ বুখারী ও মুসলিম শরীফে এমন উদ্ভট কথা কি করে স্থান পায়? এটা কি মিথ্যা বর্ণনা নয়?
প্রশ্ন সমূহের জবাব আমি আমার পূর্বের পোস্টে বিস্তারিত ভাবেই দিয়েছি। যার লিংক ব্ক্ষমান নিবন্ধের শুরুতেই দেয়া রয়েছে। কাজেই বিস্তারিতভাবে দ্বিতীয়বার জবাব প্রদানের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
এবার আসুন! উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফহিমুল কোরআনে মাওলানা মওদুদী সাহেব কি বলছেন তা দেখা যাক।
তিনি বলেন: নবী সুলাইমান আঃ যে ফিতনা বা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেটি কেমন পরীক্ষা ছিল? এর জবাবে মুফস্সিরগণ চারটি ভিন্ন ভিন্ন মত অবলম্বন করেছেন। প্রতিটি মতের উল্লেখ করে এর নির্ভযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সাথে সাথে তিনি তাঁর নিজস্ব মতামতও বর্ণনা করেছেন। তিন নং মতামতের উল্লেখ করেন এভাবে:
তৃতীয় দলটি বলেন: একদিন হযরত সুলাইমান কসম খান, আজ রাতে আমি সত্তরজন স্ত্রীর কাছে যাব এবং প্রত্যেকের গর্ভে একজন করে আল্লাহর পথের মুজাহিদ জন্ম দেব। কিন্তু একথা বলতে গিয়ে তিনি ইনশাআল্লাহ বলেননি। এর ফলে মাত্র একজন স্ত্রী গর্ভবতী হয় এবং তাঁর গর্ভেও একটি অসমাপ্ত ও অপরিপক্ক শিশুর জন্ম হয়। দাই শিশুটিকে এনে হযরত সুলাইমানের আসনের উপর ফেলে দেয়। এ হাদিসটি হযরত আবু হুরাইরাহ (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। বুখারী মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন রাবীর মাধ্যমে এটি উদ্ধৃত করেছেন। বুখারী শরীফেই এ হাদিসটি যে সব রাবীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তার কোনটিতে স্ত্রীর সংখ্যা বলা হয়েছে ৬০, কোনটিতে ৭০ কোনটিতে ৯০ কোনটিতে ৯৯ আবার কোনটিতে ১০০ও বলা হয়েছে।
প্রিয় পাঠক! এবার উক্ত হাদিস নিয়ে মাওলানা মওদুদী সাহেবের মন্তব্য দেখুন।
তিনি লিখেন:
সনদের দিক দিয়ে এর মধ্য থেকে অধিকাংশই শক্তিশালী এবং রেওয়ায়াত হিসাবে এগুলোর নির্ভূলতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা যেতে পারে না। কিন্তু এ হদিসের বিষয়বস্তু সুস্পষ্টভাবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির বিরোধী। এর ভাষা বলছে, একথা নবী সাঃ কখনো এভাবে বলেননি যেভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। বরং তিনি সম্ভবত ইহুদীদের মিথ্যা ও অপবাদমূলক কিচ্ছা-কাহিনীর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে কোন পর্যায়ে একে এভাবে উদাহরণসরূপ বর্ণনা করে থাকবেন এবং শ্রোতার মনে ভূল ধারণা সৃষ্টি হয়ে থাকবে যে, নবী সাঃ নিজেই এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এ ধরণের রেওয়ায়াতকে নিছক জোরে লোকদের হজম করাবার চেষ্টা করানো দ্বীনকে হাস্যস্পদ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রত্যেক ব্যাক্তি নিজেই হিসেব কষে দেখতে পারেন, শীতের দীর্ঘতম রাতও এশা থেকে নিয়ে ফজর পর্যন্ত দশ এগার ঘন্টার বেশী সময় হয় না। যদি স্ত্রীদের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০ জন বলে মেনে নেয়া যায়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়, সেই রাতে হযরত সুলাইমান আঃ কোন প্রকার বিশ্রাম না নিয়েই অবিরাম ১০ বা ১১ ঘন্টা ধরে প্রতি ঘন্টায় ৬ জন স্ত্রীর সাথে করতে থেকেছেন। কার্যত এটা কি সম্ভব? আর একথাও কি আশা করা যেতে পারে যে, নবী করীম সাঃ বাস্তব ঘটনা হিসাবে একথাটি বর্ণনা করে থাকবেন?
বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত উল্লেখিত হাদিসটি নিয়ে হাদিস অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন উপরে উল্লেখ করেছি। আশ্চর্য্য হলেও সত্য যে, হাদিস অস্বীকারকারীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে একই ভঙ্গিমায় বরং এর চেয়েও জঘন্য পন্থায় উক্ত হাদিসের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাওলানা মওদুদী সাহেব স্বীয় তাফসির তাফহিমুল কোরআনে।
প্রিয় পাঠক,লক্ষ্য করুন!
একদিকে মাওলানা মওদুদী সাহেব উক্ত হাদিসের সূত্রের নির্ভেজাল ও নির্ভূলতা স্বীকার করেন। অন্যদিকে কিন্তু বলে শুরু করেন হাদিস নিয়ে হাদিস অস্বীকারকারীদের মত বিষোদগার।
প্রথমতঃ তিনি বলেন যে, কিন্তু এ হদিসের বিষয়বস্তু সুস্পষ্টভাবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির বিরোধী।
একজন মুসলমান কিভাবে একটা বিশুদ্ধ হাদিসকে বিবেক-বুদ্ধি বিরোধী বলতে পারে? বিশেষ করে যে হাদিসটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিকট সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, বিশ্বস্থ গ্রন্থদ্বয় বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ তিনি বলছেন: এর ভাষা বলছে, একথা নবী সাঃ কখনো এভাবে বলেননি যেভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। বরং তিনি সম্ভবত ইহুদীদের মিথ্যা ও অপবাদমূলক কিচ্ছা-কাহিনীর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে কোন পর্যায়ে একে এভাবে উদাহরণসরূপ বর্ণনা করে থাকবেন এবং শ্রোতার মনে ভূল ধারণা সৃষ্টি হয়ে থাকবে যে, নবী সাঃ নিজেই এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
এখানে শ্রুতা বলতে উনি কাকে বুঝাতে চেয়েছেন তা কারো নিকট অস্পষ্ট নয়। তিনি হচ্ছেন মুসলিম উম্মাহর নিকট সবচে বেশী হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবুহুরাইরাহ রাযিঃ। রাসুল সাঃ এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরাইরাহ রাযিঃ সম্পর্কে এমন মন্তব্য শুধুমাত্র হাদিস অস্বীকারকারীরাই করতে পারে, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদায় বিশ্বাসী কোন ব্যাক্তিই এমন মন্তব্য করতে পারে না।
তৃতীয়তঃ তিনি বলেন: এ ধরণের রেওয়ায়াতকে নিছক জোরে লোকদের হজম করাবার চেষ্টা করানো দ্বীনকে হাস্যস্পদ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
হাদিস যখন ছহীহ প্রমাণিত হবে, এর সূত্র গ্রহণযোগ্য হবে, তখন কোন মুসলমানকেই তা জোর করে হজম করানোর প্রয়োজন পড়ে না। তা-ই যদি হবে, তাহলে নবী সাঃ এর ইসরা ও মেরাজের ঘটনা কি এর চেয়েও জঠিল নয়? এর পরও কি কোন মুসলমান এতে সন্দেহ করেছে? প্রশ্নই আসে না। স্বয়ং মাওলানা মওদুদী সাহেবও আমার ধারণা মতে রাসুল সাঃ এর ইসরা ও মেরাজের ঘটনায় প্রশ্ন তুলেননি। তাহলে নবী সুলাইমান আঃ এর উক্ত ঘটনায় প্রশ্ন উঠবে কেন? তাছাড়া যে হাদিস পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের বিশুদ্ধ মাধ্যম, সেই বিশুদ্ধ হাদিস হাস্যস্পদ হয় কি করে? তাছাড়া বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহঃ, বদরুদ্দীন আইনী রাহঃ, মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রাহঃ এর মত যুগশ্রেষ্ট হাদিস বিশারদগণও উক্ত হাদিসের বিরোদ্ধে একটি শব্দও বলেননি বরং প্রশ্ন কারীদের কঠোর ভাষায় জবাবই প্রদান করেছেন।
চতুর্থতঃ তিনি বলেন: প্রত্যেক ব্যাক্তি নিজেই হিসেব কষে দেখতে পারেন, শীতের দীর্ঘতম রাতও এশা থেকে নিয়ে ফজর পর্যন্ত দশ এগার ঘন্টার বেশী সময় হয় না। যদি স্ত্রীদের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০ জন বলে মেনে নেয়া যায়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়, সেই রাতে হযরত সুলাইমান আঃ কোন প্রকার বিশ্রাম না নিয়েই অবিরাম ১০ বা ১১ ঘন্টা ধরে প্রতি ঘন্টায় ৬ জন স্ত্রীর সাথে করতে থেকেছেন। কার্যত এটা কি সম্ভব?
কেন সম্ভব নয়? রাতের একটি অংশে যদি আমাদের নবী সাঃ মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, অতঃপর সেখান থেকে আসমান, অতঃপর সপ্তাকাশ সহ জান্নাত, জাহান্নাম ভ্রমন করে আবার ফিরে আসতে পারেন, নবী মুসা আঃ যদি পায়ে হেটে সাগর পাড়ি দিতে পারেন, নবী ঈসা আঃ যদি মৃতকে জীবিত করতে পারেন, তাহলে আল্লাহর নবী সুলাইমান আঃ এর ক্ষেত্রে একই রাতে ১০০ জন স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়া অসম্ভব হয় কি করে? যদি ইসরা ও মেরাজের ঘটনায়, মুসা ও ঈসা আঃ এর ঘটনায় হিসাব না কষে থাকেন, তাহলে নবী সুলাইমান আঃ এর ঘটনায় সময়ের হিসাব কষতে হবে কেন? তিনি কি আল্লাহর নবী ছিলেন না? নবী-রাসুলদের ঘটনায় যদি হিসাব কষতে হয়, তাহলে তো মুজেজা নামক কোন জিনিষের অস্তিত্বই বাকী থাকে না। অথচ নবী-রাসুলগণের মুজেজার উপর ঈমান রাখা আমাদের উপর ফরজ। আর নবী-রাসুলগণের মুজেজার অসংখ্য ঘটনা পবিত্র কোরআনে আর রাসুল সাঃ এর হাদিসে ভরপুর। তাহলে কি প্রত্যেকটি ঘটনাতেই হিসাব কষেই অতঃপর আমাদেরকে ঈমান আনতে হবে?
প্রিয় পাঠক! আমি পূর্বেই বলেছি যে, উক্ত আয়াতের তাফসির দেখতে গিয়ে আমি তাফসিরে ইবনে কাসির, মাআরেফুল কোরআন, তাফহিমুল কোরআন, বয়ানুল কোরআন বা তাফসিরে আশরাফী, তাবারী, মাআলিমুত তানযিল বাগভী, রুহুল মাআনী, ফি যিলালীল কোরআন, বায়যাবী, কাশ্শাফ, খাযেন প্রমুখ তাফসির দেখেছি। কোন কোন তাফসিরগ্রন্থে যদিও বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হাদিসটি উল্লেখ করেছেন কিন্তু কোন তাফসিরকারকই বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণিত বুখারী মুসলিমের হাদিস এর বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেননি। কিন্তু আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন মাওলানা মওদুদী সাহেব স্বীয় তাফসির তাফহিমুল কোরআনে উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হুরাইরাহ রাযিঃ, হাদিসের ভাষ্য এবং উম্মতে মুসলিমার নিকট গ্রহনযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য-বিশুদ্ধ গ্রন্থদ্বয় বুখারী মুসলিমের উপর কিভাবে আক্রমন করেছেন।
অথচ বুখারী শরীফ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী রাহঃ বলেন: পবিত্র কোরআনের পর ইসলামী গ্রন্থ সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ হচ্ছে ছহীহুল বুখারী। (ইরশাদুস ছারী: ১-২৯)
ইমাম নববী বলেন: পবিত্র কোরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ হচ্ছে বুখারী ও মুসলিম। তবে বুখারী হচ্ছে বিশুদ্ধতায় ও উপকারীতায় মুসলিমের থেকেও শ্রেষ্ট। যদিও কেউ কেউ মুসলিমকেই সর্বাধিক বিশুদ্ধ বলেছেন তবে আমার দৃষ্টিতে বুখারীই শ্রেষ্ট।
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহঃ বলেন: উম্মতের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে বুখারী ও মুসলিম হচ্ছে পবিত্র কোরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ। (আসসাওয়াইকুল মুহরিকাহ: ৯)
ইমাম শওকানী রাহঃ বলেন: জেনে রাখ! যা কিছু বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে অথবা যে কোন একটিতে বর্ণিত হয়েছে, কোন যাচাই-বাছাই ব্যাতিতই এর দ্বারা দলীল পেশ করা বৈধ। কেননা, তারা বিশুদ্ধতাকে দৃঢ়তার সাথে আকড়ে ধরেছেন এবং মুসলিম উম্মাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। (নাইলুল আওতার: ১-২২)
আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির রাহঃ বলেন: ছহীহ বুখারীর গ্রহণযোগ্যতায় উলামায়ে কিরাম ঐক্যমত্য হয়েছেন। শুধু তা-ই নয় বরং গোটা মুসলিম জাতিই এতে একমত। (বেদায়া ওয়ান নেহায়াহ)
প্রিয় পাঠক! আসল কথা হচ্ছে: ইসলামে দুশমনেরা রাসুল সাঃ এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরাইরাহ রাযিঃ কে, তাঁর চরিত্রকে, তার আদালাত বা বিশ্বস্থতাকে ক্ষত-বিক্ষত করতেই এমন কিছু হাদিসকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করতে চাচ্ছে। কেননা, হযরত আবু হুরাইরাহ রাযিঃ ই হচ্ছেন, ইসলামের ইতিহাসে সবচে বেশী হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী। যেহেতু উনি দিবা-রাত্র রাসুল সাঃ সমীপে উপস্থিত থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন। কাজেই উনার পবিত্রতাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে পারলে অতি সহজে ইসলামের অতি জরুরী অনেক বিষয়াবলীকেই অস্বিকার করা সম্ভব হবে।
অতএব, ঈমানের দাবী হল: বিশুদ্ধ সানাদে (সূত্রে) বর্ণিত রাসুল সাঃ এর যে কোন হাদিসই আমাদের সামনে আসবে, আমরা তা বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করব। কেননা, হাদিসে সন্দেহ সৃষ্টি করাতে পারলেই পবিত্র কোনআনের তাফসিরে সন্দেহের সৃষ্টি হবে, ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্যে সন্দেহের সৃষ্টি হবে। আর একথা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, উম্মতে মুসলিমার নিকট পবিত্র কোরআনের পর বিশুদ্ধ গ্রন্থই হচ্ছে: সহীহ বুখারী ও মুসলীম শরীফ। ইসলামের দুশমনদের টার্গেটই হচ্ছে যে, এই কিতাবদ্বয়কে বিতর্কিত করে উম্মতে মুসলিমার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলা। কিন্তু তারা জানে না যে, উম্মতে মুসলিমার মধ্যে একটি দল সর্বদাই হক্বের উপর প্রতিষ্টিত থাকবে। কোন চক্রান্তকারীর কোন চক্রান্তই তাদেরকে হক্বে ও সত্য পথ থেকে বিরত রাখতে পারবেনা।
অবশেষে পাঠকদের বলব: প্রিয় পাঠক! মানুষ ভূলের উর্ধে নয়। মানুষ মাত্রই সে ভূল করতে পারে। তাফহিমুল কোরআন যেমন মানব রচিত গ্রন্থেরই একটি গ্রন্থ তেমনি মাওলানা মওদুদী সাহেবও ভূলের উর্ধে কোন ব্যাক্তি নন। অতএব আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে,
প্রথমতঃ যারাই ইসলাম ও মুসলমানদের তথা দ্বীনের খেদমতে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের জন্য খালেছ অন্তরে দোয়া করা, আল্লাহ যেন তাদের অনেক অনেক ভাল কাজের প্রতিদান হিসাবে সামান্য ভূল ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেন।
দ্বিতীয়তঃ ভূলকে ভূল স্বীকার করে তা গ্রহণ না করা, আমলে না নেয়া।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ দ্বীন বুঝার এবং দ্বীনের উপর চলার তৌফিক দান করুন। আমিন
ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
………….. বুখারী ও মুসলিমের অবস্থান কোথায়?………………… হেদায়া …………. বেহেস্তী জেওর এগুলোর নিচে । কি ? ভুল বললাম ?
আমি তাফহীমুল কুরানের ভক্ত নয় , মাআরেফুল কোরানেরও ভক্ত নয় । এই টি দেখুন তো সৌদিরা মাআরেফূল কোরআন পুড়িয়ে দিয়েছে । তার ভূলের কারণে । আপনাদের মুখে তো মাআরেফুর কোরানের ভুল নিয়ে কখনও আলোচনা করতে শুনিনি ।
@ABU TASNEEM, সৌদিরা কি পুড়ালো, কি করল, কোন জিনিস কে ভুল বলল তাতে কি আসে যায়? সৌদিরা কি নবী না রসুল? ওদের কথা বা কাজ কিভাবে দলীল হতে পারে বুঝলাম না?
@guest,বুঝলেন না, আহলে হদসদের নবী রসুল হচ্ছে সৌদী আরব। এরা কোনোদিন দেখবেন না “রাজতন্ত্রের” বিরুদ্ধে কথা বলে।
@ম্যালকম এক্স,আমি চরমোনাইয়ের ভক্ত নই, একই ভাবে আহলে হাদিসও ফিৎনা বলে জানি। কিন্তু গালাগালি ইসলামের স্বীকৃত/অনুমোদিত কোন পদ্ধতি নয়। বরং পরিহার করা উচিত।
@ABU TASNEEM, জনাব, রাজতন্ত্র কি ইসলাম সাপোর্ট করে?
@ম্যালকম এক্স, একবারেই বাস্তব কথা। একই ভাবে প্রচলিত গনতন্ত্রও ইসলাম সাপোর্ট করে না।