একজন মুহাম্মাদ বিন কাসিমের জন্য!!!
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ মঙ্গলবার, জুন ১২, ২০১২ (৯:১৬ অপরাহ্ণ)
পিতামাতা সন্তানের অতি আপনজন। সন্তানের প্রতি তাদের কল্যাণকামিতায় কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা তো মানবীয় দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে নন। তাদের ভুল হতে পারে, তারা বিভ্রান্তও হতে পারেন। এই ভুল ও ভ্রান্তি যদি সন্তানের সাথে সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে তা সন্তানের জন্য অকল্যাণকরও হতে পারে। সুতরাং পিতামাতা সন্তানের অকল্যাণ চান না, কিন্তু তাদের ভুল সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু ভুল আছে, যা মার্জনীয় এবং এর কারণে যে ক্ষতি হয় তা পূরণীয়। আর কিছু ভুল অমার্জনীয় এবং এর ক্ষতি অপূরণীয়।
সন্তানের বিষয়ে পিতামাতার যে ভূল অমার্জনীয় তা হচ্ছে সন্তানের দ্বীন ও ঈমানের বিষয়ে ভূল। পিতামাতার এই ভূল সন্তানকে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। সন্তানের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য পিতামাতার কর্তব্য, আল্লাহ রাববুল আলামীনের নাযিলকৃত শিক্ষা ও বিধানের অনুসরণ করা এবং আল্লাহ রাববুল আলামীনের কাছে সন্তানের কল্যাণ ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করা। আর এটা শুধু সন্তানের সাথে পিতামাতার সম্বন্ধের জাগতিক দাবির কারণেই নয়, আল্লাহ রাববুল আলামীনের বিধানের কারণেও। এই কর্তব্য পালন না করলে পিতামাতাকে আল্লাহর দরবারে অপরাধী হতে হবে। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর। যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তা-ই করে।-সূরা তাহরীম (৬৬) : ৬
জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হচ্ছে সন্তানের অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করা। আল্লাহর প্রতি ঈমান, আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান, আল্লাহর কিতাবের উপর ঈমান, আখিরাতের উপর ঈমান-এভাবে ঈমানের সকল বিষয়ের সাথে শিশুর হৃদয় ও মস্তিষ্ককে পরিচিত করে তুলতে হবে। প্রতিটি শিশুর অন্তর ঈমান ও বিশ্বাসের উৎকৃষ্ট বীজতলা। বিশ্বাসের চাষাবাদের উপযুক্ত করেই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন প্রতিটি মানব হৃদয়কে।এরপর পিতামাতা ও পরিবেশ হয়তো এই স্বভাব-যোগ্যতাকে বিকশিত করে কিংবা বিলুপ্ত করে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি শিশু ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার বাবা মা তাকে ইহুদী বানায় বা নাসরানী বানায় কিংবা অগ্নিপূজক বানায়।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এই কোমল কিশলয়টিকে শক্তিশালী করে তোলা। নিয়মিত ও বিভিন্ন উপলক্ষে চাই দ্বীনী ও ঈমানী মোযাকারার জলসিঞ্চন। চাই সমাজে প্রচলিত সকল ঈমান বিধ্বংসী মত ও মতবাদ সম্পর্কে তাকে সচেতন ও বিদ্রোহী করে তোলা। ঈমান ও ইসলামের মর্যাদা ও অপরিহার্যতা এবং শিরক ও কুফরের অসারতা ও বর্জনীয়তা সম্পর্কে তাকে সচেতন করতে হবে। অন্যান্য ধর্ম ও ইসলামের পার্থক্য, ইসলামের সৌন্দর্য ও যথার্থতা সম্পর্কে তাকে প্রত্যয়ী করে তুলতে হবে। নাস্তিকতা ও ভোগবাদ সম্পর্কেও তাকে সচেতন করতে হবে এবং কপটতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রতিবাদী করে তুলতে হবে। প্রাচীন ও আধুনিক জাহেলিয়াত, ইসলামবিরোধী সাম্প্রদায়িকতা এবং ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী আগ্রাসন সম্পর্কে তাকে সাবধান করতে হবে। এককথায়, সর্বাত্মক চেষ্টা হতে হবে, আমাদের সন্তানরা যেন ঈমানী পরিচয়কেই তাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় মনে করে এবং সকল মনস্তাত্বিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেন শীর উঁচু করে নিজের মুসলিম পরিচয় ঘোষণা করতে পারে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে যে পর্যায়ের ঈমানের প্রতি উৎসাহিত করেছেন ঐ পর্যায়ের ঈমান ও বিশ্বাসে বলীয়ান হওয়া ছাড়া এ যুগে অবিশ্বাসের আগ্রাসন মোকাবেলা করা কঠিন। আ
ল্লাহর রাসূল বলেছেন, ঈমানের স্বাদ ঐ ব্যক্তি আস্বাদন করেছে, যে আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে রাসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে। আরো বলেছেন, তিনটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে থাকবে সে এর দ্বারা ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে : যার কাছে আল্লাহ ও তার রাসূল সবকিছু থেকে প্রিয় হবে, যে কোনো বান্দাকে ভালবাসলে শুধু আল্লাহর জন্যই ভালবাসবে। আর যে কুফরে ফিরে যাওয়াকে, আল্লাহ তাকে তা থেকে মুক্ত করার পর, অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো ভয়াবহ মনে করে।
আজ মুসলিম দেশগুলোতে, এমনকি আমাদের এই পশ্চাৎপদ দেশেও একটি ধর্মহীন নাস্তিক প্রজন্ম তৈরির যে চক্রান্ত অনেক দূর এগিয়ে গেছে তা থেকে নিজের সন্তানকে রক্ষার জন্য এবং ইসলাম ও কুফরের ভবিষ্যত রণাঙ্গনের সিপাহী ও সিপাহসালার তৈরি করার জন্য এই ঈমানী তারবিয়াতের কোনো বিকল্প নেই
। আল্লাহ না করুন, নাস্তিক্যবাদ, ধর্মহীনতা ও পৌত্তলিকতার চলমান আগ্রাসন যদি অব্যাহত থাকে এবং মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে হাল আমলের রাজা দাহিররা, তাহলে নিশ্চয়ই শক্ত হাতে রুখে দাঁড়াতে হবে মুহাম্মদ বিন কাসিমদেরও। প্রশ্ন এই যে, কারা হবেন সেই ভবিষ্যত সিপাহসালার মুহাম্মদ বিন কাসিমের গর্বিত পিতামাতা?
আল্লাহ না করুন, নাস্তিক্যবাদ, ধর্মহীনতা ও পৌত্তলিকতার চলমান আগ্রাসন যদি অব্যাহত থাকে এবং মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে হাল আমলের রাজা দাহিররা, তাহলে নিশ্চয়ই শক্ত হাতে রুখে দাঁড়াতে হবে মুহাম্মদ বিন কাসিমদেরও। প্রশ্ন এই যে, কারা হবেন সেই ভবিষ্যত সিপাহসালার মুহাম্মদ বিন কাসিমের গর্বিত পিতামাতা?
অনেক ধন্যবাদ।