রাখাইন সম্প্রদায় কর্তৃক মুসলিম অধিবাসীদের গণহত্যা, ধর্ষণ ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতাদের ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পীর সাহেব চরমোনাই
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ বুধবার, জুন ১৩, ২০১২ (৯:১৯ অপরাহ্ণ)
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রাখাইন সম্প্রদায় কর্তৃক মুসলিম অধিবাসীদের গণহত্যা, ধর্ষণ ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতাদের ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সাহেব মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত্ মিয়ানমার সামরিক সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে উগ্রপন্থী রাখাইন সন্ত্রাসীরা নীরিহ রোহিঙ্গা মুসলিম নারী-পুরুষ-শিশুর ওপর যে অমানবিক অত্যাচার চালাচ্ছে তা সম্প্রতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ মুহূর্তেই যদি জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা মুসলমানদের উদ্ধারে এগিয়ে না আসে তাহলে আরাকানে গণহত্যা ব্যাপক আকার ধারণ করবে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথাযথভাবে তুলে ধরুণ। পাশা পাশি মানবিকদিক বিবেচনাকরে তাদেরকে সাময়িক ভাবে হলোো আশ্রেয়র ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান। রোহিঙ্গারা আমাদের প্রতিবেশী ভাই, তাদের দুর্দিনে আমরা প্রতিবেশী হিসাবে চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
>শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার; বাংলাদেশের দায়িত্ব
মিয়ানামারের রোহিঙ্গারা আমাদের ভাই। ধর্মের কথা বাদ দিন। ওরা বাংলায় কথা বলে, দেখতে বাংলাদেশিদের মতো বলে তারা মিয়ানমারে বর্ণবৈষম্যের শিকার। রাখাইন প্রদেশে দাঙ্গার শিকার এই রোহিঙ্গারা আজ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হতে চাইছে তারা। কিন্তু বাদ সেধেছে বাংলাদেশ সরকার। পুশ ব্যাক করা হচ্ছে তাদের।
নিজ দেশে পরবাসী এই অসহায় বনি আদমরা পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তাটুকু পাচ্ছে না। অথচ নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক আইনের দিক বিবেচনায় এসব অসহায় মানুষকে উদ্বাস্তু বা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামরিক কিংবা অন্য কোনো কারণে নির্যাতিত হয়ে যারা নিজ দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় চায়, তারাই রিফিউজি।
এদের ব্যাপারে জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক হয়রানি থেকে রেহাই পেতে প্রত্যেকের অধিকার আছে অন্য কোনো রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার।
রিফিউজি বা উদ্বাস্তু সম্পর্কিত বিশেষ আন্তর্জাতিক আইনটির নাম ‘কনভেনশন রিলেটিং টু দ্য স্ট্যাটাস অব রিফিউজি ১৯৫১’। এই আইনের ৩৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো দেশ রিফিউজিদের এমন কোনো পার্শ্ববর্তী দেশে বহিষ্কার কিংবা ফেরত পাঠাতে পারে না, যেখানে তাদের ধর্ম, বর্ণ, কিংবা কোনো দলের সদস্য হওয়ার কারণে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
একই আইনের ৩১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে কোনো রিফিউজিকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
শুধু তাই নয়। একই আইনের ১২ থেকে ৩০ নং অনুচ্ছেদে রিফিউজিদের অধিকারের কথা বলা হয়েছে, যেখানে আশ্রয়প্রদানকারী দেশের নাগরিকদের মতোই বেশ কিছু ক্ষেত্রে অধিকার পাবার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইলে বাংলাদেশ সরকার এদের পুশব্যাক এবং ক্ষেত্রবিশেষে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে; যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান রেখেছে যে, দেশটি যেন এসব শরণার্থীকে পুশ ব্যাক না করে। তাসত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সেদিকে কর্ণপাত করছে না।
মানবিক বিপর্যয়ের এই কঠিন মুহূর্তে এসব নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিপক্ষে বাংলাদেশ সরকার কোন যুক্তি খাড়া করছে, সেটা বোধগম্য নয়।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদিদের আঁকা বর্ডার, আরাকানে মুসলিম নির্যাতনঃ আমাদের করণীয়
আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না অসহায়-দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ওলী (বন্ধু) নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও”। [সুরা নিসাঃ ৭৫]
এই আয়াত অনুযায়ী, আরাকানের মুসলিমদের উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করা আমাদের উপর ফরজ।
কিন্তু আমরা কিভাবে তা করবো? আমাদের কাছে অস্ত্র নেই। কারণ আমাদের এসব তথাকথিত রাস্ট্রযন্ত্র শুধু নিজের পোষাবাহিনী ছাড়া সবার কাছে অস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ রেখেছে। সেটা সমস্যা হতো না, যদি রাস্ট্র সেই পোষা বাহিনীকে আরাকানের মুসলিমদের উদ্ধারের জন্য পাঠাতো।(!!)
কিন্তু, নির্মম পরিহাসের উদাহরণ হলো, তা না করে এই জালিম শাসকরা আরাকানের মুসলিমদের সাহায্যের করার বদলে তাদের পালিয়ে আসার পথও বন্ধ করে রেখেছে। এখানে যেন জালিম নাসাকা বাহিনীর আরেক সাহায্যকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে আমাদের গর্বের বিডিআর, কোষ্টগার্ড এবং সেনাবাহিনীর পার্বত্য জেলার ইউনিটগুলি।
এসব নরপশু বাহিনী, যারা দুই টাকার বেতনের জন্য নিজের বুদ্ধি-বিবেক সব কিছু শঁপে দিয়েছে ‘সরকারী আদেশ’ নামক ‘দেবতার’ পায়ে, তাদেরকে বলিঃ যদি কোন গ্রামে তোমাদের মা-বোনদেরকে আটকে রেখে কোন ডাকাত দল বলাৎকার করতে থাকে, আর হাসিনা-দীপু মণিরা তোমাদেরকে বলে, তোমরা এদেরকে এই গ্রামের বাইরে আসতে দিবে না। হে নরপশুর দল, তখনও কি তোমরা সরকারী আদেশ আছে – এই কথা বলে নিজের মা-বোনদের ডাকাত দল থেকে পালিয়ে আসতে দিবে না। বরং পালিয়ে আসলে তাদেরকে ফিরত দিবে।
আল্লাহ তো এসব বর্ডার তৈরী করেন নি। আমাদের বর্ডার তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদিদের আঁকা। এই বিটিশ-কাফিরদের আঁকা বর্ডারকে কিভাবে আমরা নিজের মা-বোন-বাবা-সন্তানের জীবনের চেয়ে বেশী মূল্যবান মনে করতে পারি ?
আর শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া – এরা তো তাদের বাবার আর স্বামীর মৃত্যুর জন্য পারলে পুরো বাংলাদেশকে শাস্তি দিবে কিন্তু আরাকানে শত শত মুসলিম মারা গেলেও ভারতীয়-কাফির মনমোহন সিং এর ইশারা ছাড়া তারা কোন কথা বলবে না।
এই জঞ্জালগুলিই এদেশের মুসলিমদেরকে তাদের উপর ফরজ দায়িত্ব আদায় করতে দিচ্ছে না।
তাই সবার আগে এসব জঞ্জালের অপসারণ জরুরী।
তারপর আসে আরেকটি কথাঃ কোন ফরজ কাজে কোন বাঁধা থাকলে সেটা দূর করাও ফরজ হয়ে যায়। তাই বাংলাদেশের কোন পেট-পুজারী সরকারী বাহিনী যদি আরাকানের মুসলিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে বাঁধা দেয়, তবে এসব পেটপূজারী, স্বার্থপর বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আমরা সবাই জানি, কোন অন্যায় কাজ দেখলে প্রথমে হাতের দ্বারা সেটা দূর করা উচিত। সেটা না পারলে মুখে আর শেষ পর্যায় হলোঃ অন্তরে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা, সেই কাজকে ঘৃণা করা।
বাংলাদেশে যাদের সামর্থ আছে, যাদের কাছে অস্ত্র আছে, তাদের সবার উচিত জালিম নাসাকা বাহিনীর হাত থেকে আরাকানের মুসলিমদের উদ্ধারের জন্য সেদিকে যাত্রা করা।
পথিমধ্যে কোন পেট-পুজারী, নরপশু দায়িত্বের দুহাই দিয়ে সেই যাত্রায় ব্যাঘাত করলে, সেই নর-পশুদেরকে শায়েস্তা করা।
আর যাদের অস্ত্র নেই, তাদের উচিত অন্ততঃ মুখে এটার প্রতিবাদ জানানো। বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম একটু মারামারি হলে এদেশের পত্রিকাগুলি পাগল হয়ে যায়। এখন দ্বিমুখী চরিত্রের ঐ সব মুনাফিক পত্রিকা কি করছে?
কোথায় আমাদের শান্তি-নিরাপত্তার সবক দেয়া বিদেশী কাফির রাস্ট্রদূত গুলি?
কোথায় জাতিসংঘ কিংবা অন্যান্য মানবতাবাদি সংগঠনগুলো?
কোথায় আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে কাজ করে যাওয়া মানবতাবাদি এনজিও গুলো?
আসলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সব কাফির একজোট। এটাই মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন। এতাই সত্য, এটা কখনো মিথ্যা হতে পারে না।
তাই আমাদের উচিত এদেশের বার্মার সকল স্থাপণা ঘেরাও করা, বার্মার সকল পণ্য বর্জন করা, বার্মিজদেরকে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। এটা হলো চোখের বদলে চোখ, প্রাণের বদলে প্রাণের হিসাব।
কোথাও আমাদের আন্দোলনকারী ইসলাম পন্থী ভাই-বোনরা?
কোথায় আমাদের খিলাফাহ কামনাকারী ভাই বোনরা?
কোথায় আমাদের বিভিন্ন মুসলিম সংস্থা, সংগঠনগুলো??
তাই, জণগণকে এজন্য রাস্তায় নেমে আসতে হবে। প্রতিবাদ জানাতে হবে।
আর যাদের সেই কাজেরও সামর্থ নেই, তাদের উচিত ঐ জালিমদেরকে আর ঐ জালিমদের সাহায্যকারী, বর্ডার বন্ধকারী ছাগলদেরকে অন্তর দিতে ঘৃণা করা, এদেরকে পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পণা করা, এদের বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ করে তোলা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমাদের করণীয় কাজসমূহ করার তৌফিক দিন।
@abdullah al Mamun, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথাযথভাবে তুলে ধরুণ। পাশা পাশি মানবিকদিক বিবেচনাকরে তাদেরকে সাময়িক ভাবে হলোো আশ্রেয়র ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান। রোহিঙ্গারা আমাদের প্রতিবেশী ভাই, তাদের দুর্দিনে আমরা প্রতিবেশী হিসাবে চুপ করে বসে থাকতে পারি না।
@জাহিদ, সহমত।