ডক্টর বা ডাক্তার দ্বীন প্রচার !!! বিপাকে আম জনতা
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১৫, ২০১৩ (৬:৩৯ অপরাহ্ণ)
তালহা। একবোরে শান্তশিস্ট ছেলে। দেখতে যেমন সুন্দর ,আমল আখলাকও চমৎকার।সবার সাথে সব সময় হাসি মূখে কথা বলে।অহংকারের লেশ মাত্র নেই তার আচরনে।এ বয়সে তা মেধা ও জ্ঞান-গরিমার প্রশংসা সবার মুখে মুখে।
রায়হান। কিছুটা চন্ঞল প্রকৃতির।এলাকার সরকারি কলেজের ইন্টারমিডিয়েটে ফার্ষ্ট ইয়ারে পরে।অত্যান্ত মিশুক স্বভাবের সে।ছাত্র হিসাবেও সে ভাল ছেলে।কলেজে পড়লেও ইসলামের প্রতি তার গভীর অনুরাগ।সে নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করে এবং নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করে।বিভিন্ন ইসলামী বই-পুস্তক পড়ার প্রতি রয়েছে তার যথেস্ট আগ্রহ।
একদিন মসজিদে দেখা হয় তালহার সাথে রায়হানের।প্রথম দেখাতেই একে অপরের সাথে বন্ধু বনে যায়।এরপর ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হয়ে যায়।অবসর পেলে দু’জন এক সাথে কাটায়।দ্বীনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।রায়হান ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে জেনে নেয় তালহার কাছ থেকে।এভাবে ইসলাম সম্পর্কে যতই জানে ততই মুগ্দ হয় রায়হান।মাঝে মাঝে সাদীর মনে হয় কলেজে না পড়ে যদি মাদ্রাসা পড়তো পারতো তাহলে কত ভাল হতো!
তালহাদের এলাকা মসজিদটি খুব সুন্দর। চারদিকে গাছ দিয়ে ঘেরা।মসজিদের সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ।একদিন আসরের নামাজের পর তালহা ও রায়হান মসজিদের মাঠে গিয়ে বসলো। কথার প্রসঙ্গে তালহা রায়হানের কাছে তার ইসলামী আক্বিদা সম্পর্কে জানতে চাইলো।
রায়হান ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার দৃস্টিভঙ্গি একের পর এক বলে যাচেছ ।তালহা রায়হানের কথা মনোযোগ সহকারে শুনছে। রায়হান আরো বললো সে নিয়মিত টিভিতে একজন ডাক্তার সাহেবের ইসলাম বিষয়ক লেকচার শুনে। ওই ডাক্তারকে তার খুব পছন্দ।ডাক্তার সাহেব খুব গুছিয়ে কথা বলেন।অর্নগল কুরআন-হাদিস থেকে রেফারেন্স দেন।অন্যান্য ধর্ম গ্রন্হ সর্ম্পকে রয়েছে তার অগাধ জ্ঞান। তাছাড়া ডাক্তার সাহেব ইসলাম সম্পর্কে বেশ আধুনিক মনোভাব পোষন করেন।
তালহা : আধুনিক মানে? ইসলামের আবার সনাতন মনোভাব আছে নাকি?
রায়হান : বুঝতে পারছোনা ? আচ্ছা শোন – ডাক্তার সাহেব বলে থাকেন, “এখন হচ্ছে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক যুগ । সুতারং ইসলামকেও আধুনিক হতে হবে।ধর্ম নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা যেমন-সুন্নাতের পাবন্দি করা, মাযহাব মান ঠিক হবে না।কুরআন শরিফ ওযু ছাড়াই স্পর্শ করা যায়,অর্থ ছাড়া কুরআন তেলোয়াত করলে গুনাহ হবে, কোরআন ব্যাখ্যার জন্য আলেম হওয়ার প্রয়োজন নাই,যে কেউ ফতোয়া দিতে পারবে,আল্লাহ কে ঈশ্বর ,ভগবান,গড যে নামে ডাকুন তিনি শুনেন” (নাউযুবিল্লাহ) ইত্যাদি ইত্যাদি। তাছাড়া ওই ডাক্তার সাহেবের দাড়ি,টুপি থাকলেও তিনি সবসময় শার্ট-প্যান্ট-টাই পড়েন।একবোরে আধুনিক যাকে বলে।অথচ আলেমদের কাছে যাও তারা দেখবে কড়াকড়ি কিছু নিয়ম কানুন শেখাবে।যা আজকাল আধুনিক যুগে মানা অসম্ভব।(এক পযার্য়ে রায়হান বর্তমান ও পূর্বসুরী যুগের আলেমদের ব্যাপারেও অনেক আপত্তিকর কথা বললো। )
তালহা : তুমি তো দেখছি হক্কানী ওলামা-মাশায়েখদের নিয়েও আপত্তি করছো ? অথচ ইসলাম সম্পর্কে তাদের ব্যাখা অনুযায়ী আমরা জীবন যাপন করি।তাহলে আমরা ইসলাম সম্পর্কে জানবো কাদের কাছ থেকে?
রায়হান : ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য আলেমদের কাছে যাওয়ার কি প্রয়োজন? বর্তমান তো ডাক্তার সাহেব নিয়মিত টিভিতে প্রোগ্রমা করছেন।ইসলামের আধুনিক ব্যাখা দিচ্ছেন।বই লিখছেন।টিভিতে আরো কত ডাক্তার/ডক্টরেরা প্রোগ্রাম করছে।মানুষ সহজে ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারছে।
তালহা : তোমার কথা ঠিক আছে।কিন্তু ওই ডাক্তারের তো ইসলাম সর্ম্পকে প্রাতিষ্ঠনিক জ্ঞান নেই।তাই তিনি কুরআন-হাদিস সঠিক ভাবে না বুঝে ভুল ব্যাখা করছেন ।সমাজে নতুন নতুন ফিৎনা-ফাসাদ সৃস্টি করেছেন।সাধারন মুসলমানেরা বিভ্রান্ত হচ্ছে।তাছাড়া ডাক্তারের কাজ তো চিকিৎসা করা।তার তো কুরআন-হাদিসের সঠিক জ্ঞান ছাড়া ইসলামের সব বিষয় নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই।
রায়হান : কেন অধিকার থাকবেনা? শুধু আলেমেরাই ইসলামের ব্যাখা দিতে পারবে,আর ডাক্তারেরা এত জ্ঞানি মানুষ হয়ে ইসলামের ব্যাখা দিতে পারবেনা তার কারন কি?
তালহা : আচ্ছা রায়হান,আমার একটা প্রশ্নের জবাব দাও। ধর তোমার মা খুব অসুস্থ। এখন কি তুমি তোমার মায়ের চিকিৎসার জন্য তোমার কলেজের ইংরেজী শিক্ষকের কাছে নিয়ে যাবে?
রায়হান : বোকার মত কথা বলছো কেন ? ইংরেজী সারের কাছে তো ইংরেজী শিখতে যাই।চিকিৎসার জন্য তার কাছে যাবো কেন?
তালহা : কেন তিনিতো অনেক জ্ঞানী !
রায়হান : জ্ঞানী হতে পারেন। কিন্ত তিনি তো চিকিৎসা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন!
তালহা : আচ্ছা, মনে কর তোমাদের বিরুদ্ব্যে কোউমামলা করছে ।এখন তুমি কোন ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চলবে?
রায়হান : তালহা,তুমিতো দেখছি ভারি বোকা! মাদ্রাসা পড়ে তোমার মাথা একদম বিগরে গেছে।রোগের জন্য ডাক্তার আর আইনি বিষয়ে পরামর্শের জন্য উকিল-এসব সাধারন বিষয়েও তুমি বুঝো না?
তালহা : (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে….)আমিতো ঠিকই বুঝি! কিন্তু তুমিতো বুঝতে পারছো না।
রায়হান : (অবাক দৃস্টিতে তালহার দিকে তাকিয়ে বলে) তার মানে ? কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
তালহা : তুমিই বলছো প্রত্যেক বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ রয়েছে। যেমন- ইংরেজী শিক্ষার জন্য ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক,চিকিৎসার জন্য ডাক্তার,আইনি বিষয়ের জন্য উকিল।
রায়হান : হ্যা, ঠিকই তো বলেছি।
তালহা : রায়হান! মনযোগ দিয়ে শোন।দুনিয়ার সামন্য বিষয়ে যদি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশোষজ্ঞের প্রয়োজন হয়, তাহলে ইসলামের মত এত বিশাল জ্ঞান সমুদ্র তথা কুরআন ও হাদিসের অগাধ জ্ঞানভান্ডারের সঠিক ব্যাখা – বিশ্লেষনের জন্য কি কোন বিশেষজ্ঞর প্রয়োজন নাই? একজন ডাক্তার সারা জীবন ডাক্তারি করে ইসলাম সর্ম্পকিত নূন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছাড়া শুধু কিছু বই-পুস্তক পড়লেই কি তিনি ইসলামী চিন্তাবিদ(!) হয়ে যাবেন? মুজতাহিদ (!)হয়ে যাবেন?
রায়হান : কিন্তু ডাক্তার সাহেব তো ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সর্ম্পকে চমৎকার ব্যাখা করেন।অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, যুক্তি উপস্থাপন করেন।
তালহা : আসলে ইসলাম সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি।এজন্য এসব ডাক্তার সাহেবদের ইসলাম সর্ম্পকে ভূল ব্যাখা আমাদের কাচে ধরা পড়ে না। কিন্তু হক্কানি ওলামায়েকরাম যারা কুরআন- হাদিসের বিশেষজ্ঞ তারা ঠিকই তাদের ভুল-ভ্রান্তি ধরতে পারেন এবং সেসব সর্ম্পকে সাধারন মুসলমানদেরকে সতর্ক করে থাকেন।
রায়হান : তাহলে কোন ধরনের লোকদের ইসলাম র্সর্ম্পকিত ব্যাখা আমরা গ্রহন করবো?
তালহা : হ্যা রায়হান। এখানে আমাদের সমস্যা।আমরা হুজুগে মুসলমান। এসকল বিষয় নিয়ে আমরা ভাবিনা সাধারনত।আমাদের মনে রাখতে হবে যে,ইসলাম তথা দ্বীন অত্যান্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়।কারন দ্বীনের সাথে আমাদের ইহকালের মুক্তি ও পরকালের নাজাতের সম্পর্ক। তাই শুধু নতুন নতুন ব্যাখা, আর্কষণীয় যুক্তি, ত্বরিত জবাব,রেফারেন্সের আধিক্য দেখেই কারো কথার উপর আমল করা উচিত নয়।বরং চিন্তা করা জরুরি যে, সে ব্যাক্তি দ্বীনি ইলেমের কতটুকু যোগ্যতা সম্পন্ন।দ্বীনী বিষয়ে তার কেনা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা রয়েছে কি-না? কোন কোন আলেম থেকে সে ইলেম অর্জন করেছে।তার পোষাক-পরিচ্ছাদ ,বাহ্যিক অবস্থা অন্যান্য ওলামায়েকরামের সাথে সাদৃশ্য আছে কি-না? তা ছাড়া সমসাময়িক গ্রহনযোগ্য ওলামায়েকরাম-মাশায়েখ গন তার ব্যাপরে কি অভিমত পোষন করেন?কারন, নবী-রাসুলের পর ইসলাম এসেছে পরস্পর আলেমদের মাধ্যমে।আলেমেরাই নবীদের উত্তরসূরী।
মোটকথা এসব বিষয়ে বিশ্লেষন করার পর যদি উক্ত ব্যাক্তির দ্বীনি যোগ্যতা সর্ম্পকে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে কেবল তার কথা গ্রহন যোগ্য হবে।অন্যথায় ঈমানের নিরাপত্তার জন্য তার কাছ থেকে দুরত্ব অবলম্বন করা আবশ্যক।
রায়হান : তালহা ……।একদম ঠিক কথা বলছো। এসব তো কখনও আমি চিন্তা কারিনাই।তুমি আমার অনেক বড় উপকার করলে। আমি তো আল্লাহর রাজি-খুশিরি জন্যই ইবাদাত করি। তাহলে কেন আমি চিন্তা-ভাবনা,যাচাই-বাছাই করবোনা।তুমি আমাকে নিশ্চিত পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করলে। ডাক্তারের কাজ যেমন উকিলগিরি করা নয়,তেমনি উকিলের কাজও ডাক্তারি করা নয়।ইহা নির্ঘাত আত্বঘাতি।যার কাজ তাকেই মানায়। আমার বুঝে আসছে।আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
তালহা : দোয়া করো,আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করেন।
রায়হান : আমিন [-O