নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি না দিলে গণরোষ ঠেকানো যাবে না : মতিঝিলের জনসমুদ্রে পীরসাহেব চরমোনাই * www.islamiandolanbd.org
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০১৩ (৩:১১ অপরাহ্ণ)
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করুন
স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার করে বিচারসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোঃ রেজাউল করিম। এ দাবিতে ১৯ থেকে ২১ এপ্রিল ঢাকা থেকে কুয়াকাটা অভিমুখে, ১৩ থেকে ১৫ মে ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়া অভিমুখে এবং ২ ও ৩ জুন ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে রোড মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ৫ এপ্রিলের মধ্যে নবী (সা.)-কে কটূক্তিকারীদের বিচারের মুখোমুখি না করলে ৬ এপ্রিলের লংমার্চে পূর্ণ সমর্থনের ঘোষণা দেয়া হয়।
জনসমুদ্রে চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.) এবং ইসলাম অবমাননাকারী নাস্তিকদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদান করতেই হবে। ইসলাম ধর্মের প্রতি অবমাননার বন্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে। যদি ইসলামী জনতার এ দাবি মানা না হয় তাহলে ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। গতকাল শুক্রবার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ছয় দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন এবং দলের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ইসলাম নিয়ে কটূক্তিকারীদের ঠাঁই বাংলাদেশে নেই। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সংসদে দ্রুত আইন পাস করতে হবে। জনগণের এ দাবি উপেক্ষা করলে যে গণবিস্ফোরণ হবে তা ঠেকানোর সাধ্য সরকারের থাকবে না। এ জনসমুদ্র এদেশ থেকে ইসলাম বিদ্বেষী, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নৈরাজ্য এবং হিংসার রাজনীতি নির্মূল করে ইনসাফের রাজনীতি চালুর রায় দিয়েছে।
পীর ছাহেব চরমোনাই ঘোষিত কর্মসূচি :
১. ৫ এপ্রিলের মধ্যে নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার ও শাস্তির উদ্যোগ না নিলে ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচি সমর্থন
২. নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার এবং জাতীয় সংসদে ইসলাম অবমাননাকারীদের শাস্তির আইন পাসের দাবীতে ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও।
৩. মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবীতে ৪ এপ্রিল ঢাকাস্থ জাতিসংঘ দূতাবাসে স্মারকলিপি।
৪. মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবি এবং মসজিদ, মাদরাসা ও মুসলমানদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ৮ ও ৯ মে মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ
৫. ৫ দফা দাবি আদায়ে জনমত সৃষ্টিতে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে সারা দেশে রোডমার্চ কর্মসূচি।
সংবিধান থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়া, ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন এবং নাস্তিক মুরতাদ ও কিছু ব্লগারের আল্লাহ রাসূল (স.) ও ইসলামের অবমাননায় ক্ষুব্ধ ইসলামী জনতার উপস্থিতি গতকাল শাপলা চত্বরে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশকে মহানজনসমুদ্রে পরিণত করে।
পশ্চিমে দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড় ও প্রেসক্লাব, পূর্বে মঞ্চের পেছনে সেনা কল্যাণ ভবন, ইডেন মসজিদ ও ওয়াপদা পেট্রল পাম্প, সমগ্র মতিঝিল এলাকাসহ স্টেডিয়ামের পূর্বগেট হতে দৈনিক বাংলা মোড়, হয়ে ফরিকরাপুল পানিরট্যাঙ্ক পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল জনসমুদ্রের সামনে ইসলামী আন্দোলনের আমীর পীর ছাহেব মুফতী সৈয়দ মো. রেজাউল করীম চরমোনাই বলেছেন, গত ৪২ বছরে শাসন পরিচালনায় ব্যর্থ সরকারসমূহ দেশে সন্ত্রাস নৈরাজ্য হিংসা ও বিভক্তির রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই এদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর দাবী হচ্ছে দেশ ও গণবিরোধী শাসনের পরিবর্তে মানবতার মুক্তি, কল্যাণময় শান্তিকামী ও সমৃদ্ধশালী একটি দেশ প্রতিষ্ঠায় ইসলামকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামী শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। ইসলামী আন্দোলন এ লক্ষ্যেই কাজ করছে। পীর ছাহেব আরো বলেন, দেশে একটি সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দিতে হবে।
জাতীয় মহাসমাবেশের মাধ্যমে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে পীর ছাহেব বলেন, অবিলম্বে সরকার যদি নাস্তিকদের বিচার ও আল্লাহ-রাসূল (সা.) ও ইসলাম-এর অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাস না করে, তাহলে আমরা ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করব। যদি ৫ এপ্রিলের মধ্যে এ দাবি মেনে নেয়া না হয় তাহলে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আল্লামা আহমদ শফী ছাহেব দামাত বারকাতুহুম ৬ এপ্রিল তারিখ যে লংমার্চের আহ্বান করেছেন আমরা এর প্রতিও সমর্থন ঘোষণা করছি।
জাতীয় মহাসমাবেশে ঘোষিত কর্মসূচী হচ্ছে :
৫ এপ্রিলের মধ্যে রাসূলের (সা.) দুশমন নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার ও শাস্তির উদ্যোগ না নিলে এ দাবীতে হাটহাজারীর মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফী সাহেবের আহ্বানে আগামী ৬ এপ্রিলের লংমার্চ কর্মসূচী পূর্ণ সমর্থন।
আল্লাহ-রাসূল (সা.) ও ইসলামের কটূক্তিকারী নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার এবং জাতীয় সংসদে ইসলাম অবমাননাকারীদের শাস্তির আইন পাসের দাবীতে আগামী ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও।
মায়ানমারে মুসলিম গণ-হত্যা বন্ধের দাবীতে আগামী ৪ এপ্রিল ঢাকাস্থ জাতিসংঘ দূতাবাসে স্মারকলিপি পেশ।
মায়ানমারে মুসলিম গণ-হত্যা বন্ধের দাবী এবং মসজিদ, মাদরাসা ও মুসলমানদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ৮ ও ৯ মে মায়ানমার অভিমুখে লংমার্চ।
উল্লিখিত পাঁচ দফা দাবী বাস্তবায়ন ও জনমত তৈরীর লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মসূচি হচ্ছে : ১৯, ২০, ২১ এপ্রিল, ঢাকা থেকে কুয়াকাটা রোডমার্চ। ১৩, ১৪, ও ১৫ মে, ঢাকা হতে তেতুলিয়া রোডমার্চ। ২ ও ৩ জুন, ঢাকা হতে সিলেট রোডমার্চ এবং ১ মে ঢাকায় শ্রমিক জনতা সমাবেশ।
মহাসমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে পীর ছাহেব বলেন, অবিলম্বে সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করুন। আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর দুশমন নাস্তিক-মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন সংসদে পাস করুন।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং অবিলম্বে আলেম-ওলামা ও ইসলামী জনতার উপর হয়রানী বন্ধ করুন। মিথ্যা মামলা-হামলা নির্যাতন বন্ধ করুন। গ্রেফতারকৃত আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দিন।
মহাসমাবেশ থেকে সচেতন দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে পীর ছাহেব বলেন, সুশাসন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস-দুর্নীতির মূলোৎপাটন, দেশের স্থায়ী শান্তি মানবতার সার্বিক মুক্তি সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন ও ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর পতাকাতলে সমবেত হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলুন। সেই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন।
গতকাল বাদ জুমা ঢাকার শাপলা চত্বরে সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনস্থাপন, আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর দুশমন নাস্তিক মুরতাদদের শাস্তির আইন পাস, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সুশাসন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস-দুর্নীতির মূলোৎপাটন, দেশের স্থায়ী শান্তি মানবতার সার্বিক মুক্তি ও সমৃদ্ধশালী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের নিমিত্তে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ” কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের আমীর মুফতী মোঃ সৈয়দ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা নেছার উদ্দিন, কে এম আতিকুর রহমান ও মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরীর পরিচালনায় মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মুফতী সৈয়দ মোঃ ফয়জুল করীম, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, শাইখুল হাদীস আল্লামা মোস্তফা আল হোসাইনী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুমতাজুল করীম বাবা হুজুর, অধ্যাপক আশ্রাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, চরমোনাই ইউপি চেয়ারম্যান সাহেবজাদা মুফতী সৈয়দ মোঃ আবুল খায়ের, মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা আব্দুল কাদের, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, আলহাজ্ব হারুনুর রশিদ, এড. আব্দুল মতিন, মাওলানা মকবুল হোসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াদুদ, আবু সাঈদ সিদ্দিকী, এড. লুৎফর রহমান, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মুফতী হেমায়েতুল্লাহ, এড. এ কে এম এরফান খান, ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
আমন্ত্রিত ওলামায়ে কেরামের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ওলামা মাশায়েখ আইম্মাহ পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সাদেক আহমাদ সিদ্দীকি, দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামের সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা জসিম উদ্দিন নদভী, হাফেজ্জী হুজুরের জামাতা মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমূখ।
মহাসমাবেশে পীর ছাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীনতার পর বিগত সরকারগুলো দেশকে তলাবিহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের সকল সেক্টরকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় আইনশৃ্খংলা বাহিনীকেও অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক হীনস্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। মানবসেবার খাতগুলোতে দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে।
সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, দুর্নীতি ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় সংসদের স্পিকার বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছরে যে দুর্নীতি হয়, তাতে একটি করে পদ্মা সেতু হয়। তিনি আরও বলেন, এ দুর্নীতির ধারা ৩০-৩৫ বছর ধরে চলে আসছে। টিআইবি রিপোর্টে এসেছে শতকরা ৯৭ ভাগ সংসদ সদস্য দুর্নীতির সাথে জড়িত। শেয়ার বাজার, হলমার্ক, পদ্মাসেতু কেলেঙ্কারী আমাদের অর্থনীতির মেরুদ- ভেঙ্গে দিয়েছে। বিদেশীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের বিনিয়োগ গুটিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এবং দেশব্যাপী চরম নৈরাজ্য প্রমাণ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে প্রচলিত রাজনীতি কলুষিত, নোংরা এবং বিষাক্ত। এই কলুষিত এবং নোংরা রাজনীতির মূলোৎপাটন করতে না পারলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ভয়াবহ দুরবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বিরোধী জিহাদে অংশগ্রহণ করতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই আল্লাহর দরবারে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ প্রতিদান কামনা করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৪২ বছরে এদেশবাসী বারবার বঞ্চিত হয়েছে। অথচ আমাদের রয়েছে উর্বর ভূমি, গ্যাস ও কয়লার মত খনিজ সম্পদ, আরও রয়েছে এক বিশাল কর্মক্ষম জনশক্তি। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান মিলেমিশে আমরা স্থাপন করেছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির। এ দেশের অধিকাংশ মানুষই সহজ-সরল, ধর্মপ্রাণ, অল্পেতুষ্ট ও সহিষ্ণু। এতকিছুর পরও বিশ্বে আজ আমরা একটি দরিদ্র, দুর্নীতিগ্রস্থ, মিসকিন ও প্রাণ-স্পন্দনহীন পশ্চাদপদ জাতি হিসেবে পরিচিত। আমরা আজ দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত। অথচ ক্ষমতাসীন দলগুলো দেশ-বিদেশ থেকে চার (৪) লক্ষ কোটি টাকা ঋণ আনল। প্রতিটি মানুষ গড়ে ২৮ হাজার টাকা ঋণে আবদ্ধ হল। ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে একটি দায়বদ্ধ দেশে পরিণত করল।
দেশের বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটায়। বেকারত্ব আজ প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নামে ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে এবং মানুষ হত্যা করছে। ছাত্রাবাসগুলো মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলগুলোই এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এছাড়াও চলছে ভর্তি বাণিজ্য। এক কথায় শিক্ষার সর্বত্র চলছে চরম নৈরাজ্য। কোমলমতি শিক্ষার্থিদের পাঠ্যপুস্তকে ইসলামকে বিকৃতিরূপে উপস্থাপন করা হচ্ছে। নৈতিক শিক্ষার নামে তাদেরকে অবাধ যৌনাচারের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকারের নীরবতার সুযোগে অনেক শিক্ষক আজ শ্রেণীকক্ষে ইসলাম, রাসূল (সা.) কে নিয়ে কটাক্ষ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ কথা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট, ক্ষমতাসীন দলগুলো শুধু ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করে। দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করে না। তারা যদি দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করত; তাহলে এত দুর্নীতি, সন্ত্রাস, খুন-হত্যা, নৈরাজ্য, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করত না। তারা তাদের দলে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিত না। দুর্নীতিবাজ, খুনী ও সন্ত্রাসীদেরকে রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে মুক্তি দিত না।
পীর ছাহেব চরমোনাই উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনাদের প্রতি আমার বিনীত আরজ, ভোট একটি পবিত্র আমানত। এই আমানতের খেয়ানত করলে কাল কেয়ামতে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। অতএব, খারাপ মানুষকে ভোট দিবেন না। সৎ ও ভাল মানুষকে ভোট দিবেন। তিনি ইসলামের পক্ষে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদেরকে হাতপাখা মার্কায় ভোট দিয়ে মূল্যবান ভোটের আমানত হেফাজত করার আহ্বান জানান।
পীর ছাহেব চরমোনাই দেশের ভবিষ্যত ও প্রাণশক্তি ছাত্র-যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তিগুলো ক্ষমতার স্বার্থে অতীতে আপনাদেরকে বারবার ব্যবহার করেছে। একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং গণ-মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অতীতে আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-আন্দোলন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রতিটি স্বৈরাচার ও দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলনে আপনাদের রয়েছে এক ঐতিহাসিক বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। অতএব, জাতির প্রয়োজনে দেশের চরম সন্ধিক্ষণে মহান রব্বুল আলামীনের প্রতি পূর্ণ ভরাসা রেখে আমি আপনাদের প্রতি আশাবাদী যে, আপনারা এই জাহেলী সমাজ ও গুণেধরা রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য ইসলামী আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেবেন।
প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করুন। নাস্তিক ব্লগারদের অবিলম্বে বাংলার জমিনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, বিগত ৪২ বছরে এদেশের শাসকরা সন্ত্রাস, খুন আর লুন্ঠন উপহার দিয়েছে। হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার কেলেংকারীর ঘটনায় জাতি দিশেহারা। সরকার সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে পারেনি। শাহবাগের নাস্তিক ব্লগাররা এদেশ থেকে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়। ওদের যেনে রাখা উচিত এদেশে মসজিদ-মাদ্রাসা ও ইসলাম থাকবে বরং নাস্তিক ব্লগাররাই চিরতরে উৎখাত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, নাস্তিক মুরতাদদের মৃত্যুর পর জানাযার নামাজ পড়া যাবে না।
মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, সারা বিশ্বে ইসলামী বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। এই জমিনে আগামীতে ইসলামী হুকুমত কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, নাস্তিক মার্কা মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাস্তিক ব্লগার রাজিব হায়দারের লাশ দেখতে তার বাসায় যেতে পারেন আর বিশ্বজিতের লাশ দেখার সময় পান না।
মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ’৭১-এ এদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আজ রক্ত দিয়ে হলেও ইসলাম, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবো। কৃষক, শ্রমিক মেহনতী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। তিনি বলেন, শাহবাগে যুবক-যুবতীদের একত্রে রাত যাপন কোন মুসলমানের সংস্কৃতি নয়। শাহবাগে নব-মুক্তিযোদ্ধারা লিভ টুগেদার করার জন্য মঞ্চ তৈরি করেছে। উন্মুক্ত পতিতালয় খোলা হয়েছিল শাহবাগ এলাকায়।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, কোলকাতার ব্লগাররা কেন এতো মায়া কান্না নিয়ে শাহবাগের গণমঞ্চের প্রতি কেন সমর্থন জানায়। হঠাৎ জাতীয় পতাকা নিয়ে এতো দৌড়াদৌড়ি কেন? এদেশের স্বাধীনতা ও পতাকার দিকে কারো বাঁকা চোখ পড়লে তা উপড়ে ফেলা হবে। এদেশের মুসলমানরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। আমরা ঈমানী হুংকার দিতে পারলে দিল্লির মসনদ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, ২০১২ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্ট ৮৮৬ নং মামলার রায়ে ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার এসব নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ কটূক্তি করলে সাথে সাথে গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া হয়। কিন্ত রাসূল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি করা হলে জনগণের অর্থে পরিচালিত সিআইডিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অপদার্থের ন্যায় বসে থাকে। তিনি বলেন, নাস্তিক ব্লগারদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে এদেশের মুসলমানদের শান্তিতে থাকতে দিন। অন্যথায় ইসলাম, দেশ ও মেহনতী মানুষের অধিকার রক্ষায় জীবন দিবো, রক্ত দিবো। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে হাতপাখা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
মাওলানা মুমতাজুল করীম বাবা হুজুর বলেন, আমরা গদি দখলের জন্য রাজ পথে নামিনি। ঈমানের তাগিদেই রাজপথে নেমেছি। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার বলে দুই নেত্রী ২০ বছর এদেশের মানুষকে জ্বালাইয়াছেন। আপনারা জাতিকে আর কত জ্বালাইবেন। তিনি বলেন, দুই নেত্রীর চুলাচুলিতে জাতি অতিষ্ঠ। বাবা হুজুর বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টেরও ঈমান না থাকলে জাহান্নামে যেতে হবে। এটা সকলেরই স্মরণ রাখতে হবে।
মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাছে আমরা বিয়ে বসিনি। এই সরকার নাস্তিক ব্লগারদের সরকার। তিনি বলেন, প্রথম আলো পত্রিকা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রথম আলোর সাংবাদিক আনিসুল হক পবিত্র কোরআনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে মুসলমানদের হ্রদয়ে আঘাত হেনেছে। ইসলামবিদ্বেষী আনিসুল হককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। [/b
মাওলানা মুফতী সৈয়দ এছাহাক মোঃ আবুল খায়ের বলেন, [b]বিএনপি বিগত সময়ে যমুনা গ্রুপকে মদের লাইসেন্স দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরুদ্ধে কোন আইন করা হবে না বলে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, হক্কানী আলেমদের মৌলবাদী গাল দিয়ে সরকার শাহবাগি ব্লগারদের উত্থান চায়। অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের উৎখাতে বিপ্লব ঘটাতে হবে। মানবতার মুক্তি এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিকে মুক্তি দিতে হলে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা হিংসা হানাহানির রাজনীতি চাই না।
অধ্যাপক আশ্রাফ আলী আকন বলেন, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশকে ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে কারা? রাজনীতির নামে সিন্ডিকেট চক্র গোটা দেশকে জিম্মি করে রেখেছে। এক প্রধানমন্ত্রী আরেক প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলে উপহাস করেন। এরা হচ্ছে সমাজের নিকৃষ্টতম চোর। নিকৃষ্টতম চোরদের হাত থেকে দেশ জাতিকে বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, বারবার জাতীয় চোরদের ক্ষমতার মসনদে বসালে জাতির মুক্তি আসবে না। আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী বলেন, দেশকে চোরমুক্ত করতে হলে শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ছেলের নাম রেখেছেন জয় আর মেয়ের নাম রেখেছেন পুতুল। এ থেকেই বোঝা যায় তিনি কতটুকু ইসলামপ্রিয়। তিনি বলেন, মুসলমানদের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। মাওলানা মোস্তফা আল-হোসাইনী বলেন, হুজুর পাক (সা.)-এর সুন্নাত ও সাহাবায়ে কেরামগণের আদর্শ নিয়েই আমাদের রাজনীতি। তিনি বলেন, বিগত ৪ বছরে সরকার ইসলাম বিরুদ্ধে শক্তি হিসেবে পরিচয় লাভ করেছে। নাস্তিক ব্লগারদের সরকারকে আর মোনাফেকি না করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসলাম যা পছন্দ করে ইসলামী আন্দোলন তা’ই পছন্দ করে। আমরা কেন বড় বড় জোটে যেতে চাই না। ১৪ দলে গেলে নাস্তিক ব্লগারদের সাথে সুর মেলাতে হতো। ইসলাম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের পক্ষে কাজ করতে হতো। তিনি বলেন, ১৮ দলে শরীক হলে হরতালের নামে ধ্বংসাত্মিক কার্যকলাপ, অগ্নিসংযোগ ও সম্পদ ধ্বংসের অপরাধের অংশীদার হতে হতো। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির আমাদের প্রতি বেশি অখুশি। আমরা জামায়াত-শিবিরকে বার বার মওদুদী’র ভ্রান্ত মতবাদ পরিহার করার আহবান জানিয়েছি। তাদের ভাংঙচুরের অপরাধের জন্য আমরাও দায়ী হতাম এ জন্য কোন দলে আমরা ঐক্য করিনি। তিনি বলেন, আমরা মানুষের সম্পদ নষ্ট করার রাজনীতি করতে পারি না। মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, এদেশের মানুষ ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায়। এই সরকার নিজেই নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী। জাতীয় সংসদে মঈনুদ্দিন খান বাদল এমপি রাসূল (সা.)-কে ধর্মনিরপক্ষ বলে ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে।
হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর বড় জামাতা মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের উস্কিয়ে দিয়ে দুর্নীতি ঢাকতে পারবেন না। ওরা (সরকার) নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের পৃষ্ঠপোষক। ওদের দ্বারা নাস্তিক ব্লগারদের বিচার আশা করা যায় না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেই নাস্তিক ব্লগারদের বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ তৃতীয় শক্তি (ইসলামী শক্তির) জন্য অপেক্ষা করছে।
পীরসাহেব চরমোনাই হুশিয়ারি উচ্ছারন করে বলেন- সিংহের সাথে লড়াই করার চেষ্টা করবেন না। মুসলমান যদি সিংগের মত গর্জে ওঠে আপনি পালাবার স্থান পাবেন না।
@এম এম নুর হোসেন, http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=99960&& page_id=
http://www.dailyinqilab.com/details_news.php?id=99959&& page_id= 5