সাহাবীদের বিপ্লবী জীবন
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ বৃহস্পতিবার, মে ১৯, ২০১১ (৬:২৬ অপরাহ্ণ)
অভাব-অনটনের মাধ্যমে জীবন যাপন করাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিরল দৃষ্টান্তে সাহাবী হযরত সায়ীদ বিন আমের আল জুমাহী (রা:) :-
১ম ঘটনা: হযরত উমর (রা:) এর খেলাফত কালে তিনি (উমর) হযরত যয়ীদ বিন আমের আল জুমাহী (রা:) কে হিমসের গভর্নর করে পাঠালেন। কিছুদিন পর হিমসের একটি প্রতিনিধি দল ওমর (রাঃ) এর সাথে সাাৎ করে অভাবী লোকদের একটি তাল…িকা দিলেন। সেই তালিকায় সায়ীদ বিন আমের নাম দেখে ওমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ
“কে এই সায়ীদ বিন আমের?
উত্তরে তারা বললেন ঃ
“তিনি আমাদের গভর্নর।”
একথা শুনে হযরত ওমর (রাঃ) আশ্চার্যান্বিত হলেন এবং আবার প্রশ্ন করলেনঃ
“আমাদের গভর্নর কি অভাবী?”
তারা বললেনঃ “নিশ্চয়ই। আলাহর শপথ! আমরা স্যা দিচ্ছি যে, আমাদের গভর্নরের পরিবারে দীর্ঘ সময় এমনও অতিবাহিত হয় যখন তাদের রান্না করার কিছুই থাকেনা এবং চুলায় আগুন জ্বলে না।”
এ কথা শুনে ওমর (রাঃ) এর চোখের পানিতে দাঁড়ি মোবারক ভিজে গেল।
তিনি সায়ীদের জন্য এক হাজার স্বর্ণমাদ্রার একটি থলি পাঠালে, সায়ীদ তা গরীবদের মাঝে বিতরন করে দিলেন।
দ্বিতীয় ঘটনাঃ কিছুদিন পর হিমসের সার্বক অবস্থা পর্যবেণের জন্য হযরত ওমর (রাঃ) হিমসে গেলেন। সেখানকার জনগণ ওমর (রাঃ) এর নিকট ৪টি অভিযোগ দিলেন সায়ীদ (রাঃ) এর ব্যাপারে।
১ম অভিযোগঃ“সায়ীদ (রাঃ) প্রত্যেহ অফিসে বিলম্বে আসে।”
এ অভিযোগের উত্তর সায়ীদ (রাঃ) এর কাছে ওমর (রাঃ) জানতে চাইলে তিনি বলেনঃ
“আমার বিলম্বে অফিসে আসার কারন হলো- আমার ঘরে কোন চাকরাণী নেই। তাই আমাকে রুটি তৈরী করে, গোসল সেরে অফিসে আসতে সামান্য দেরি হয়।”
দ্বিতীয় অভিযোগঃ “রাতের বেলা কোন প্রয়োজনে গভর্নরকে ডাকলেন তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দেন না,।”
এ অভিযোগের জবাবে সায়ীদ (রাঃ) বললেনঃ “আমি দিনকে রাষ্ট্রীয় কার্য ও জনসাধারণের খেদমতের জন্য এবং রাতকে ইবাদাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছি। তাই রাত্রি বেলা কেউ আসলে তাদের ডাকে সাড়া দিতে পারি না বলে আমি দুঃখিত।
তৃতীয় অভিযোগঃ “সায়ীদ (রাঃ) মাসে এক দিন তার কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন।”
হযরত সায়ীদ (রা:) এই অভিযোগের জবাবে বললেন: “আমীরূল মুমেনীন আমার কোন কাজের লোক না থাকায় মাসে একবার আমাকে বাজার করতে হয়। এছাড়া পড়নের এই পোশাক ছাড়া আমার আর কোন পোশাক নেই, যা ঐদিনই বাজার শেষে পরিস্কার করতে হয়। কাপড় শুকাতে দেরি হওয়ার ফলে আর অফিসে আসার সুযোগ থাকে না।”
চতুর্থ অভিযোগ: “মাঝে মাঝে সায়ীদ বেহুশ ও অজ্ঞান হয়ে যান। ফলে তার পাশের লোকদের চিনতে পারেন না।”
এর উত্তরে তিনি বলেন: মুশরিক থাকা অবস্থায় মক্কার জনসমুদ্রের মাঝে হযরত খুবাইব (রা:) কে মক্কায় কাফিররা টুকরো টুকরো করছিল এবং বলছিল- হে খুবাইব তুমি কি রাজী আছ ? তোমাকে ছেড়ে মুহাম্মদ (সা:) কে হত্যা করি। তার সেই শাহাদাতের নির্মম দৃশ্য মনে পড়লে আমি বেহুশ হয়ে যাই। আর কাউকে চিনতে পারি না।
শাহাদাতের ঘটনা: মক্কার কাফিররা হযরত খুবাইব ইবনে আদী (রা:) কে বললেন ইসলাম ত্যাগ না করলে তোমাকে নি:শেষ করে দেওয়া হবে। এরপর শুরু হলো অত্যাচার ও নির্যাতন। কাফিররা বলল- তোমাকে ছেরে দিয়ে আমরা মুহাম্মদ (সা:) কে হত্যা করি।
খুবাইব (রা:) বললেন- আমার পরিবার পরিজন নিরাপদে থাকবে, আর মুহাম্মদ (সা:) এর গায়ে একটি কাটার আঁচড় লাগবে এটা হতে পারে না। পরিশেষে কাফিররা তাকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে গেলে তিনি বলেন, আমাকে দুরাকাত নামায পড়তে দিন। নামায শেষে খুবাইব (রা:) বললেন, তোমরা এই মনে না কর যে আমি ফাঁসির জন্য নামায দীর্ঘায়িত করছি। তাহলে আমি আরো দীর্ঘায়িত করতাম।
এরপর ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলন্ত খুবাইবের উপর ছুড়ে মারে তীর, বর্ষা ও খঞ্জর। ফলে হযরত খুবাইব (রা:) কালেমা শাহাদাত পড়তে পড়তে শাহাদাতের অমীয় পেয়ালা পান করলেন।
সাহাবীদের বিপবী জীবন (২য় খণ্ড)
আবু উবাইদা (রা:) এর ত্যাগ-তিতিাঃ বদর প্রান্তরে তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে আবু উবাইদা (রা:) মৃত্যুর পরোয়া না করে প্রচণ্ড আক্রমণে শত্র“বাহিনীর দুর্ভেদ্য বূহ্যকে ছত্রভঙ্গ করতে সমর্থ হন। এতে মুশরিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়ে যায়। এরই ফাঁকে শত্র“বাহিনীর বূহ্য থেকে এক ব্যক্তি আবু উবইদা (রা:) কে বার বার চ্যালেঞ্জ করছিল। তিনি তার চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার এ সুযোগে আবু উবাইদা (রা:) এর উপর প্রচণ্ড আঘাত হেনে বসলো। তিনি পাশ কাটিয়ে অল্পের জন্য রা পেলেন। সে বার বার তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শত্র“ নিধনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ধৈর্য্যহীনতার চরম পর্যায়ে আবু উবাইদা (রা:) তরবারীর প্রচণ্ড আঘাতে তার শির দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভূসিমতে লুটিয়ে পড়লো। ভূলুণ্ঠিত ব্যক্তি আর কেউ নয় আব্দুলাহ বিন জাররাহ।
আমানতদারিতা আব্দুলাহ বিন মাসউদ(রাঃ) ঃ-
একদিন কিশোর আব্দুলাহ বিন মাসউদ দেখতে পেলেন দুই জন লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে তাদের চোখে মুখে প্রচন্ড কান্তির ছাপ বিদ্যমান। তারা আব্দুলাহ বিন মাসউদ এর কাছে এসে বলল আমরা পিপাসার্ত তুমি তোমার বকরি থেকে একটি বকরী দাও যা দোহন করে আমরা আমাদের পিপাসা দূর করতে পারি। বালক আব্দুলাহ বিন মাসউদ উত্তর দিলেন আমি বকরির মালিক নই আমি এর রক ও আমানতদার মাত্র। বালকের আমানতদারিতায় তারা মুগ্ধ হয়ে গেল। আর দুজন ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ)।
নিজের উপর অপর দ্বীনি ভাইকে প্রাধান্য দেয়ার লোমহর্ষক ঘটনা ঃ
ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলমান বাহিনী বিজয় লাভের পর দেখা গেল তিনজন মুসলমান বীর ভীষনভাবে আহত হয়ে পানির জন্য ছটপট করছে। এরা হলেন -
১. হযরত হারেস বিন হিশাম (রাঃ)
২. হযরত আইয়াশ বিন আবি রাবিয়া (রাঃ)
৩. হযরত ইকরামা বিন আবু জাহেল (রাঃ)
যখন হারেস বিন হিশাম এর কাছে পানি পৌছানো হলো তখন তিনি দেখতে পেলেন তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইকরামা (রাঃ) কাতরাচ্ছে, তাদেখে তিনি বললেন “ আমার আগে ইকরামাকে পানি দাও ”। দৌড়ে যখন ইকরামার নিকট পানি আনা হল তখন ইকরামা দেখতে পেলেন আইয়াশ (রাঃ) তার দিকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তাকাচ্ছে। ইকরামা বললেন “আগে আইয়াশকে পানি পান করাও ”। আইয়াশ (রাঃ) এর কাছে পানি আনা হলে দেখা গেল তিনি আলাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। এরপর ইকরামা এর কাছে আনা হলে দেখা গেল তিনিও আলাহর কাছে চলে গেছেন। এরপর হারেস এর কাছে পানি আনাহলে দেখা গেল আলাহ তাকেও নিজের কাছে নিয়ে গেছেন।
ইকরামা (রাঃ) এর জীবন বাজি রেখে জিহাদ করার প্রতিশ্র“তি ঃ
একদিন রাসূল (সঃ) ইকরামার জন্য দোয়া করেছেন দেখে ইকরামা বলে উঠলেনঃ“হে আলাহর রাসূল আলাহর শপথ এতদিন আলাহর দ্বীনের প্রতিবন্ধকতায় যত ধন সম্পদ ব্যয় করেছি, এখন থেকে তার দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে তার দ্বিগুন খরচ করবো। দ্বীনের বিজয়কে ঠেকানোর জন্য যত যুদ্ধ করেছি এখন থেকে দ্বীনের বিজয়ের জন্য তার চাইতে দ্বিগুন জিহাদ করবো। ”
ইসলামের সর্বপ্রথম সালাম প্রদানকারী ঃ
আবু যার গিফারী (রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূল (সঃ) সর্বপ্রথম সালাম দেন এবং তখন থেকেই ইসলামের এই সালাম প্রথা মুসলমানদের মধ্যে প্রচার ও প্রসার লাভ করে।
হযরত আব্দুলাহ বিন মাসুদ (রাঃ) একমাত্র মুসলিম যিনি রাসূল(সঃ) এর পরেই পৃথিবীতে প্রকাশ্যে করআন পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। ঘটনাটি ছিল এরকম ঃ একদিন মক্কার মুসলমান একত্রিত হয়ে বলতে লাগলেন, মক্কার কুরইশদেরকে প্রকাশ্যে পাঠ করে শুনানো সম্ভব হলোনা। এমন কে আছে যে তাদের কে সুউচ্চস্বরে কুরআন শুনাতে পারে? আব্দুলাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বললেন ঃ আমি তাদেরকে কুরআন শুনাব। পরদিন সকালেই তিনি মাকামে ইব্রাহিমের পাশে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত আরম্ভ করলেন। তিনি তেলাওয়াত করে চলছেন তার এ কাজ কুরাইশদের দৃষ্টি আকর্ষন করল। তারা একযোগে সবাই তার দিকে ছুটে এলো এবং তার মুখমন্ডলেন উপর বেদম প্রহার করতে লাগলো। আর তিনি সেদিকে খেয়াল না করেই একমনে তেলাওয়াত করেই চলেছেন।
দারিদ্রতা ও অভাবমুক্ত থাকার সর্বোত্তম পন্থা ঃ
রাসূল (সঃ) বলেছেন, যে প্রত্যেক রাতে সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ পাঠ করবে দারিদ্র ও অভাব তাকে স্পর্শ করবে না।
আবুজার (রা) এর ঘরের আসবাব পত্র ঃ
হযরত আবুজার (রাঃ) দুনিয়া ত্যাগী এবং পরকালমুখী জীবন যাপন করতেন। একবার এক ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে তার ঘরের ভিতরে দৃষ্টি দিয়ে কোন আসবাবপত্র ও সাজ সরঞ্জাম দেখতে পেলেন না। তিনি আবুজান (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু যার আপনার ঘরের আসবাবপত্র কোথায় তিনি উত্তরে বললেন, সেখানে অর্থাৎ আখেরাতে যেখানে আমাদের আর একটি বাড়ি আছে ভাল ভাল ফার্নিচার ও জিনিস গুলো আমরা সেখানে পাঠিয়ে দেই।
ধন্যবাদ লেখার জন্য । সাহাবীদের জীবন আমাদের আদর্শ হওয়া উচিত ।
আপনাকে ধন্যবাদ আশা করি আরো লিখবেন সাহাবাদের জীবনী সম্পর্কে।
জাযা কাল্লাহ।
ধন্যবাদ