মুসলিম উম্মাহ্’র বর্তমান অবস্থানঃ উত্তরণের পথ
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ সোমবার, মে ২৩, ২০১১ (১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
মূলঃ বিচারপতি আল্লামা তাকী উসমানী
অনুবাদঃ রায়হান মুহাম্মাদ ইবরাহীম
মুসলিম উম্মাহ্’র বর্তমান অবস্থান কোথায়
মুসলিম উম্মাহ্’র বর্তমান অবস্থান কোথায়- এটা একটা বিশাল বিস্তৃত প্রশ্ন। এর উদরে অসংখ্য ছোট ছোট প্রশ্ন বিদ্যমান। যেমন রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রশ্নে মুসলিম উম্মাহ’র অবস্থান কোন্ পর্যায়ে? চারিত্রিক পরাকাষ্ঠার প্রশ্নে অবস্থান কোন্ পর্যায়ে? অর্থাৎ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখপূর্বক এ প্রশ্নের বিশালতাকে বিভাজন করা যায় এবং প্রতিটি প্রসঙ্গই বিস্তর আলোচনার দাবী রাখে। আমি বিপুল বিস্তৃত এই প্রশ্নের একটি মাত্র দিক নিয়ে আলোচনায় অগ্রসর হচ্ছি। আর সেটা হচ্ছে, ‘চিন্তা চেতনার দিক দিয়ে এ উম্মাহ’র অবস্থান কোথায়?’ আজ যদি আমরা পুরো মিল্লাতের উপর পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব এ মিল্লাতের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা এবং বোধ ও বিশ্বাসে পরষ্পরবিরোধী দু’টি অনুভূতি ক্রিয়াশীল।
একঃ ‘মুসলিম উম্মাহ আজ অধঃপতনের শিকার’। যেখানেই যাওয়া যাক না কেন, সেখানেই এ কথাটা ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হতে শোনা যাবে।
দুইঃ ‘বিশ্বজুড়ে একটা ইসলামী পুনর্জাগরণ শুরু হতে চলেছে’। এ কথাটাও মুসলিমবিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রেই ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হতে চলেছে।
প্রথম অনুভূতির প্রেক্ষিতে যেমন মিল্লাতের মাথায় দুর্বলতা ও নৈরাশ্যের আঁধারের ঘন ছায়াপাত নজরে পড়ছে, তেমনি দ্বিতীয় অনুভূতির ফলে অসম্্ভব আত্মবিশ্বাস ও মারাত্মক উচ্চাশা পোষণ করতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সত্য এতদুভয়ের মাঝখানে
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের অভিমত হলো, সত্য এ উভয় অনুভূতির মাঝখানে। অর্থাৎ এটা যেমন চরম বাস্তবতা- উম্মাহ্ হিসেবে আমরা এক ভয়াবহ অধঃপতনের শিকার, তেমনি এটাও অবাস্তব নয় যে, এই অধঃপতনের বেলাভূমে জাগরণের ঢেউ লক্ষ্য করা যাচ্ছে গোটা ইসলামী জগতে।
অতএব আমাদেরকে যেমন এতটা নিরাশ হলে চলবে না- যা আমাদেরকে একেবারে হতোদ্যম ও দুর্বল করে দেয়, তেমনি জাগৃতির অনুভূতির উপর এমন মারাত্মক ধরনের আস্থাশীল হলেও চলবে না- যা নিজেদেরকে সংশোধন করা থেকে উদাসীন করে তোলে। কেননা বাস্তবতা এই দুই প্রান্তিক অনুভূতির ঠিক মধ্যখানে অবস্থিত। আর একারণেই উল্লিখিত বিষয়বস্তুটি অত্যন্ত গুরুত্বের দাবী রাখে। তবে এ জটিল প্রশ্নটি তার জঠরে আরো যে দু’টি অপরিহার্য প্রশ্নকে শামিল রাখে, তার একটি হলো ‘উম্মতে মুসলিমার গন্তব্য কোথায়?’ অপরটি ‘গন্তব্যে পৌঁছার পন্থাটা কী?’
অতএব আলোচ্য বিষয়ের উপরে আলোচনা করতে গিয়ে প্রান্তীয় দু’টি ধারণা থেকে কিঞ্চিত সরে মাঝামাঝি পর্যায়ে থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আলহামদুলিল্লাহ! জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধ্বংস ও অধঃপতনের শিকার- এ ধারণার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রে এ ধারণাও মাত্রা পাচ্ছে যে, এখন আমাদেরকে শেকড়ের সন্ধান করতে হবে, মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, ইসলামকে বিশ্ব নেতৃত্বের মঞ্চে অধিষ্ঠিত করতে হবে। এ ধারণাটিকেই আজকাল ‘ইসলামী পুনর্জাগরণ’ নামে স্মরণ করা হচ্ছে। -
ইসলামের পরশ থেকে দূরে থাকার একটি উদাহরণ
এটাও আল্লাহ্ তা’আলার অপার কুদরতের একটা কারিশমা যে, মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতার বাগডোর যাদের হাতে ন্যস্ত তাদের প্রতি তাকালে মনে হবে, এখনো আমরা ইসলামের পরশ থেকে শত শত যোজন দূরে অবস্থিত। এ ব্যাপারে আমার নিজের একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। যদি ঘটনাটা খোদ আমার বেলায় প্রকাশ না পেত, তাহলে এমন একটা ঘটনা হয়ত আমি বিশ্বাসই করতে পারতাম না।
একবার একটি প্রতিনিধি দলের সাথে আমাকে প্রখ্যাত একটা মুসলিম রাষ্ট্রে সফর করতে হয়েছিল। আমাদের প্রতিনিধি দলের মধ্যে এটা সাব্যস্ত হয়েছিল যে, রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাতের সময় তাঁকে এক কপি কুরআন মাজীদ হাদিয়া পেশ করা হবে।
যেহেতু রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সাক্ষাত করতে এবং তাঁকে কিছু দিতে প্রটোকলের ঝামেলা পোহাতে হয়, সেহেতু আমরা প্রটোকল রক্ষাকারী অফিসারদের কাছে কথাটা পেশ করলাম। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, দীর্ঘ একদিন পর আমাদেরকে বলা হলো, “আপনারা কুরআন মাজীদ হাদিয়া দিতে পারবেন না। কেননা রাষ্ট্রপ্রধান এ হাদিয়া গ্রহণ করলে দেশের সংখ্যালঘু জনগণের মনে রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হবার অবকাশ রয়েছে। অতএব আপনারা না হয় অন্য কোন হাদিয়া পেশ করুন।” ভেবে দেখুন! আমাদের প্রশাসনিক স্তরে ইসলামের সাথে সম্পর্ক কতখানি।
ইসলামী পুনর্জাগরণের একটি উদাহরণ
এই দুঃখজনক জবাবের আঘাতে যখন অন্তরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল তখন ঐদিন সন্ধ্যায় একটা মসজিদে সালাত আদায় করতে যেয়ে যে প্রাণকাড়া দৃশ্য অবলোকন করলাম, তা ঐ আঘাত উপশমের কাজ করল। দেখলাম মসজিদটি মুসল্লীদের দ্বারা কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বয়ষ্ড়্গদের তুলনায় তরুণদের সংখ্যাই ছিল বেশি। এছাড়াও দেখতে পেলাম সালাত শেষে এই যুবশ্রেণী নিজেদের মধ্যে ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে পরস্পরে আলোচনা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, এটা এদের দৈনন্দিন রুটিন। সালাতের পর তারা পরষ্পরের মাসআলা মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি ধর্মীয় কিতাবাদীও পাঠ করে থাকেন। আলাপ করে আরো জানতে পারলাম এই মুবারক কাজটা শুধু এই মসজিদেই সীমিত নয় বরং দেশের প্রতিটি মসজিদেই এ কাজ চলছে। সর্বোপরি এটা তারা নিজেদের আন্তরিক স্পৃহা থেকেই করে যাচ্ছেন। এটা যেমন কারো নির্দেশে হচ্ছে না, তেমনি নিয়মতান্ত্রিক কোন সংগঠনের আওতাধীন হয়েও নয়।
মুসলিমবিশ্বের সামগ্রিক অবস্থা
এই ক্ষুদ্র দু’টি ঘটনার মাধ্যমেই আপনারা অনুমান করতে পারছেন যে, আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের সাথে দূরত্ব কত বিস্তর এবং নতুন প্রজন্মের অন্তরে ইসলামের প্রতি ভালোবাসার মাত্রা কত গভীর। মোটকথা সামগ্রিকভাবে আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের অবস্থা পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব যে, রাজনৈতিক পর্যায়ে ইসলামের সাথে আমাদের সম্পর্ক মারাত্মক ধরনের ক্ষীণ। অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলার জন্যও আমাদের এক শ্রেণী উদগ্রীব। অপর দিকে জনসাধারণ- বিশেষ করে যুবশ্রেণীর অন্তরে ইসলামের জাগরণী ঢেউ খেলে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে ইসলামকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর করার একটা মুবারক আন্দোলন চলছে।
ইসলামের নামে আত্মত্যাগ
এ কথাও বাস্তব সত্য যে, এই গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দিতে যে আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তারও কোন অভাব পড়ছে না। বিভিন্ন দেশে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন চলছে এবং এ আন্দোলন চালাতে গিয়ে অনেকে অকাতরে নিজেদের জানমাল কুরবানী দিচ্ছেন। সত্যি বলতে কি এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। বিভিন্ন মুসলিম দেশের এমনকি খোদ আমাদের দেশেও (পাকিস্তানে) ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনেকেই স্ব-স্ব জানমাল কুরবানী দিচ্ছেন। এটা এমনই এক দৃষ্টান্ত, যার উপর মুসলিম উম্মাহ নির্দ্বিধায় গর্ব করতে পারে। আর এটা এ কথারই প্রমাণ বহন করে যে, আল্লাহর ফযল ও করমে এখনো মানুষের অন্তরে ঈমানের নূর প্রজ্জ্বলিত রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনগুলোর বিফল হবার কারণ
কিন্তু এত আত্মত্যাগ, এত প্রাণপণ প্রচেষ্টার পরও বিস্ময়কর বাস্তবতা এই যে, এ যাবৎ বিশ্বের কোন ইসলামী আন্দোলনই সফলতার শেষ প্রান্তে উপনীত হতে পারেনি। দেখা যাচ্ছে সম্্ভাবনাময়ী আন্দোলনগুলো মাঝ পথে গিয়ে থিতিয়ে পড়েছে, অথবা এগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, অথবা আরো কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে পরাজয় বরণ করেছে। যার ফলে এই মুবারক আন্দোলনগুলো কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করতে পারছে না। এখন প্রশ্ন হল, পরিস্থিতি এমন হবার মৌলিক কারণটা কী? এত জাগরণ, এত ত্যাগ-তিতীক্ষা, এত জান-মাল কুরবানীর পরও কেন আমরা সফলতার নাগাল পাচ্ছি না? আমাদের প্রত্যেককে এ দিকটির উপর গভীর মনোনিবেশ করতে হবে। আমি নগণ্য একজন তালিবে ইলম হিসেবে এ ব্যাপারে যেটুকু ভেবেছি তাই সুধীবৃন্দের উদ্দেশ্যে পেশ করতে চাই যে, এই সমস্যার মৌলিক কারণ কী এবং উত্তরণের পথ কী?
এপর্যায়ে আমি যে কথাটা বলতে চাই, তা খুবই নাজুক। আমার আশঙ্কা যদি এই নাজুক কথাটা বলতে আমি একটুখানি এদিক সেদিক করি, তাহলে এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এই আশঙ্কা মাথায় নিয়েই আমি সেই দু’টি জিনিস আপনাদের সামনে পেশ করতে চাই। আমার ক্ষুদ্র বিবেচনায় যেগুলো হচ্ছে আমাদের নিস্ফল হওয়ার মৌলিক কারণ। আমার ধারণা- এ দু’টো জিনিস এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলোর উপর খোলা মনে এবং ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন।
অমুসলিমদের চক্রান্ত
ইসলামী আন্দোলনসমূহের নিস্ফলতার জন্য একটি কারণ- যা কারো কাছে অবিদিত নয়, সেটি হলো অমুসলিমদের চক্রান্ত। এ কারণটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। কেননা প্রতিটি মুসলমানই এ ব্যাপারে সচেতন। যদিও এটা আপন জায়গায় অনেকখানি সঠিক, তবে এটাই যে আমাদের আন্দোলনসমূহের বিফলতার জন্য একমাত্র কারণ- আমি সেটা ব্যক্তিগতভাবে কখনো বিশ্বাস করি না। কারণ মুসলিম উম্মাহ্’র অভ্যন্তরে যদি কোন ত্রুটি না থাকে, তাহলে কস্মিন কালেও অমুসলিম জাতির চক্রান্ত মুসলমানদের ক্ষতি করতে পারে না। বাইরের চক্রান্ত কেবল তখনই ধ্বংস ডেকে আনতে সক্ষম হয়, যদি খোদ মুসলিম উম্মাহ’র মধ্যে থেকে থাকে কোন দুর্বলতা। নতুবা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর থেকে আজ অবধি কোন কালই তো বাইরের ষড়যন্ত্রমুক্ত ছিল না।
“সেদিন থেকে আজ অবধি আছেই লেগে লড়াই মার
মুস্তফাভী (সাঃ) চেরাগ সাথে বু-লাহাবী শত্রুতার।”
অতএব, বলা যেতে পারে শত্রুতার এ ধারা কখনো খতম হবার নয়। আল্লাহ তা’আলা তো আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পূর্বলগ্নেই ইবলিসকে সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। অতএব, বাইরের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত বন্ধ হবার আশা করা নিছক আত্মপ্রতারণা বৈ কিছু নয়।
চক্রান্তগুলো যে কারণে সফল হয়
এবার আমাদের ভেবে দেখতে হবে সেই দুর্বলতা ও ত্রুটি কোথায়? কোথায় আমাদের মধ্যকার সেই ভয়ঙ্কর ব্যাধি, যার ফলে শত্রুর চক্রান্তগুলো একের পর এক সফল হয়ে চলছে? সাথে সাথে এ ব্যাপারেও একটুখানি ভাবতে হবে যে, আমরা যেভাবে অধঃপতনের দায়ভার বহিঃশত্রুর উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায়মুক্তের মত বসে আছি এবং এটা অমুকের শত্রুতার ফলে, ওটা তমুকের শত্রুতার ফলে বলেই নিজেদের যিম্মাদারী শেষ করছি, এটা কতখানি সঠিক? এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় কী? আসলে আমাদের কিন্তু অন্যদের দোষারোপ করার পূর্বে নিজেদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা উচিৎ ছিল। আমি এ ব্যাপারে দু’টি বিষয়ের প্রতি আপনাদের মনযোগ আকৃষ্ট করতে চাই। আমার বিবেচনায় এগুলোই বহিঃশত্রুর চক্রান্ত সফল হওয়ার পিছনে বিরাট ভূমিকা রাখছে।
ব্যক্তিগঠনে উদাসীনতা
প্রথমটি হচ্ছে ব্যক্তি গঠনের ব্যাপারে আমাদের অন্তহীন উদাসীনতা। এ কথা দ্বারা আমি যা বুঝাতে চাই, তা হলো- প্রতিটি শিক্ষিত মুসলমানেরই এটা ভালো করে জানা আছে যে, ইসলামী শিক্ষা জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। এর মধ্যে অনেক বিধিবিধান যেমন সমষ্টিগত পর্যায়ের, তেমনি অনেকগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ের। সোজা কথায় ইসলামী বিধিবিধানে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে একটা ভারসাম্য বিদ্যমান।
এই ভারসাম্যতা বজায় থাকলেই কেবল ইসলামের শিক্ষার উপর সুষ্ঠুভাবে আমল করা সম্্ভব। অন্যথায় যদি কোন একটিকে অর্থহীন মনে করে ফেলে রাখা হয় কিংবা কোন একটি দিকের প্রতি প্রয়োজন অপেক্ষা বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়, তাহলে ইসলামের সঠিক ও কল্যাণময়ী রূপ সামনে আসবে না। সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে ভারসাম্য বজায়
ভেবে দেখুন! আমাদের প্রশাসনিক স্তরে ইসলামের সাথে সম্পর্ক কতখানি।
এই ক্ষুদ্র দু’টি ঘটনার মাধ্যমেই আপনারা অনুমান করতে পারছেন যে, আমাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের সাথে দূরত্ব কত বিস্তর এবং নতুন প্রজন্মের অন্তরে ইসলামের প্রতি ভালোবাসার মাত্রা কত গভীর। মোটকথা সামগ্রিকভাবে আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের অবস্থা পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব যে, রাজনৈতিক পর্যায়ে ইসলামের সাথে আমাদের সম্পর্ক মারাত্মক ধরনের ক্ষীণ। অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলার জন্যও আমাদের এক শ্রেণী উদগ্রীব। অপর দিকে জনসাধারণ- বিশেষ করে যুবশ্রেণীর অন্তরে ইসলামের জাগরণী ঢেউ খেলে যাচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে ইসলামকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর করার একটা মুবারক আন্দোলন চলছে।
জাযাকাল্লাহ।