অপরাধ ও দুর্নীতি দমনে যে ব্যবস্থার বিকল্প নেই – মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন
লিখেছেন: ' এম এম নুর হোসেন' @ শনিবার, মে ২৮, ২০১১ (৩:০০ অপরাহ্ণ)
আজ আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপরাধ, দুর্নীতি, অনিয়ম বলতে গেলে যারপর নাই ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সকলেরই জানা- অপরাধ, দুর্নীতি, অনিয়ম শুধু শেকড় গাড়া নয়, রীতিমত ডালপালা বিস্তার করে জেঁকে বসেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দুর্নীতি ও অনিয়মই এখন ঘোষিত বিধিবদ্ধ নীতি-নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর প্রতিকারের জন্য কর্তৃপক্ষের চিন্তা-ভাবনা এবং পদক্ষেপ গ্রহণেও খুব কমতি আছে বলা যায় না। এই সব চিন্তা-ভাবনা ও পদক্ষেপের আওতায় দুর্নীতি দমন সংস্থা গঠনের পরেও সম্প্রতি চিতা, কোবরা, র্যাব ইত্যাদি অনেক কিছুই গঠন করা হয়েছে ও হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে এবং হচ্ছে বিভিন্ন রকম আইনকানুন। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন রকম জেল-জরিমানা ও শাস্তি বিধানের। এসব সংস্থা, আইনকানুন ও জেল-জরিমানা অহেতুক নয়; তবে অপরাধ ও দুর্নীতি দমনে অপূর্ণাঙ্গ নিঃসন্দেহে। এসব ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছে না।
আমাদের সমাজে গঠিত দুর্নীতি দমন সংস্থার দ্বারা দুর্নীতি ও অপরাধ কতটুকু হ্রাস পেয়েছে, তা কারও অজানা নেই। এই দুর্নীতি দমন সংস্থার মধ্যেও দুর্নীতি দেখা যায়। সরিষায় ভূত থাকলে তা দিয়ে কী আর আশা করা যায়! আমরা দেখেছি আমাদের সমাজে একটা অন্যায়, দুর্নীতি বা অপরাধ ঘটলে সেটাকে তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটির মধ্যে আবার দুর্নীতি দেখা দেয়। সেটাকে তদন্ত করার জন্য আরেকটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এভাবে কমিটির পর কমিটি গঠন করা হচ্ছে, আইনের পর আইন প্রণয়ণ করা হচ্ছে, কিন্তু অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। দুর্নীতি ও অপরাধ কাঙ্ক্ষিতভাবে হ্রাস পাচ্ছে না। মানুষের শান্তি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মাত্রা দিন দিন হ্রাস নয় বরং বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
এক সময় সমগ্র পৃথিবীর দুর্নীতি ও অপরাধ দমন করার জন্য ‘ইন্টারপোল’ গঠন করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন সংস্থা হিসাবে এই ইন্টারপোল গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এটা গঠন করার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপরাধের মাত্রা কমেনি বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষে ব্যতিক্রম যে নেই তা বলছি না। সামগ্রিক দৃষ্টিতে কথা এই দাঁড়াল যে, দুর্নীতি দমন ও অপরাধ দূরীভূত করার জন্য আমাদের গৃহীত প্রচলিত ব্যবস্থাদি দ্ব্যর্থহীন ও পূর্ণাঙ্গ নয়।
অপরাধ ও দুর্নীতি দমনের জন্য শাস্তি হিসেবে আমাদের সমাজে বিভিন্ন মেয়াদে জেলে আবদ্ধ রাখার আইন রয়েছে। ইসলামে ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি কেছাছ-এরপর চুরি, কোন সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি যেনার অপবাদ আরোপ, মদ্যপান ও যেনা এই চারটি অপরাধের শাস্তিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, যাকে ইসলামী আইনের ভাষায় ‘হুদুদ’ বলা হয়। এছাড়া অন্যান্য অপরাধের শাস্তি এভাবে নির্ধারিত করে দেয়া হয়নি বরং সেসব ক্ষেত্রে শাসনকর্তা অথবা বিচারক অপরাধীর অথবা অপরাধের অবস্থা, গুণাগুণ, পরিবেশ ও পরিস্থিতি ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে যে পরিমাণ শাস্তিকে সংশ্লিষ্ট অপরাধ দমনের জন্য যথেষ্ট মনে করবেন সে পরিমাণ শাস্তির রায় দিবেন।
এ ধরনের শাস্তিকে ইসলামী আইনের পরিভাষায় ‘তা‘যীরাত’ বা দণ্ড বলা হয়। এই তা‘যীরাতের মধ্যে ক্ষেত্র বিশেষে জেল-শাস্তিও সঙ্গত বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব অপরাধের জন্য জেল সাজা প্রদান সমর্থন করে না এবং তা অপরাধ দমনের অনুকূলে মনোবিজ্ঞান সম্মত পন্থাও নয়। সাহচর্যের ফলে মনোভাবের সংক্রমণ সংক্রান্ত মনস্তাত্ত্বিক নীতি ও অভিজ্ঞতার আলোকেও তাই দেখা যায়। চোর, ডাকাত, বদমাশ প্রভৃতি অপরাধীদের জেলখানায় সহাবস্থানের ফলে তাদের অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পায় না বরং বহুমুখী অপরাধীদের সহাবস্থনের ফলে জেল-আসামীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার সংক্রমণ ও বিস্তৃতি ঘটে এবং জেল-সাজা থেকে নিস্ড়্গৃতি পাওয়ার পর তারা পূর্বের চেয়ে অধিকহারে অপরাধ ঘটাতে থাকে। তাহলে এই জেল-জরিমানা অপরাধকে হ্রাস করতে পারল কই? এজন্য ইসলাম অপরাধীকে অপরাধ প্রবণতা থেকে মুক্ত করার জন্য জেল-জরিমানাকে স্থায়ী ব্যবস্থা নয় বরং এ উদ্দেশ্যে তাদেরকে ভাল লোকদের সংস্রবে যাওয়ার শিক্ষা দিয়েছে।
মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ডে সৎ লোকের সাহচর্য গ্রহণকারীকে মেশক বহনকারীর সাথে আর অসৎ লোকের সাহচর্য গ্রহণকারীকে হাপরে বাতাস প্রদানকারী কামারের সাথে উপমা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, মেশক বহনকারীদের নিকট গমনকারী যেমন মেশক ক্রয় না করলেও অন্ততঃ তার সুগন্ধি সে লাভ করতে পারবে, তদ্রুপ সৎলোকের সাহচর্য গ্রহণকারীর কিছু না কিছু উপকার হবেই। আর কর্মকারের নিকট গমন করলে হয়ত তার কাপড়ে আগুন লেগে জ্বলে যাবে, নতুবা অন্ততঃ উৎকট দুর্গন্ধ অবশ্যই তাকে পেতে হবে। তদ্রুপ অসৎ লোকের সাহচর্য কিছু না কিছু ক্ষতি সাধন করবেই। এ হাদীসে সাহচর্যের অনস্বীকার্য প্রভাব বর্ণিত হয়েছে এবং ভাল হওয়ার জন্য ভাল লোকদের সংস্রব গ্রহণের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
অতএব, অপরাধীকে সংশোধনের অন্যতম কার্যকরী পন্থা হল অপরাধমুক্ত সৎলোকের সাহচর্যে প্রেরণ ও তাদের সহাবস্থানে রাখার ব্যবস্থা করা। মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ডে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা·) কর্তৃক বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে জনৈক অপরাধীর সংশোধনের উপরোক্ত পন্থা বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসে বর্ণিত কাহিনীর সার সংক্ষেপ হল-পূর্বের যুগে জনৈক ব্যক্তি একশটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর তৎকালীন যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম-জ্ঞানীর নিকট তার সংশোধনের পন্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তাকে পরামর্শ দেন যে, যে অঞ্চলে থেকে এবং যাদের সংস্পর্শে থেকে অপরাধে অভ্যস্ত হয়েছে, তা ত্যাগপূর্বক সৎ ও আবেদ (ইবাদতকারী) লোক অধুøষিত অমুক অঞ্চলে গমন কর···।
কুরআনে কারীমেও ভাল হওয়ার জন্য ভাল লোকদের সাহচর্য গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছেঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর (অর্থাৎ, পরহেজগার তথা ভাল লোক হয়ে যাও) এবং সত্যপন্থীদের সাহচর্যে থাক। (সূরা তাওবাঃ ১১৯)
অতএব ঢালাওভাবে অপরাধীদেরকে জেল ব্যবস্থা প্রদানও অপরাধ প্রবণতা দমনে দ্ব্যর্থহীন অনুকূল ব্যবস্থা নয়।
দুষ্টের দমন ও অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের জন্য অনন্যোপায় অবস্থায় অপরাধ বিষয়ক আইন প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ জন্য ইসলামেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তবে ইসলাম প্রয়োগের চেয়ে ঈমানী চেতনা তথা তাকওয়া (খোদাভীতি) ও পরকালীন চিন্তা-চেতনাভিত্তিক মানসিকতা গঠনের মাধ্যমে ব্যক্তির মূল থেকে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতাকেই অবদমিত করে দেয়ার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। বস্তুতঃ আইন-কানুন দিয়ে মানুষকে শোধরানো যতটা সম্্ভব, তার চেয়ে খোদাভীতি ও পরকালীন চিন্তা-চেতনা দিয়ে অধিকতর সম্্ভব। বরং শাসনের ডাণ্ডা এবং আইনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে গোপনে নিভৃতে পর্দার অন্তরালে মানুষ অপরাধ সংঘটিত করতে পারে, কিন্তু পরকালীন চিন্তা-চেতনা সর্বাবস্থায় তাকে নিরাপদ থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। একই কারণে ইসলাম নৈতিক গুণে ভূষিত হওয়ার প্রতি বেশি উৎসাহিত করেছে। নৈতিক গুণের সহজাত প্রভাবে অপরাধের চেতনা হ্রাস পাবে বৈকি। এই খোদাভীতি ও তাকওয়া তথা পরকারীন চিন্তা-চেতনা ভিত্তিক মানসিকতা গঠন ও নৈতিক মানোন্নয়ন এমন এক পন্থা; দুর্নীতি ও অপরাধ দমনে যার কোন বিকল্প নেই।
প্রশ্ন হতে পারে, ঈমান, তাকওয়া ও পরকালীন চিন্তা-চেতনা দ্বারা অপরাধ ও দুর্নীতি দমন হয় কী ভাবে? তাহলে শুনুন- একজন মানুষ যখন ঈমান আনে এবং তার ভেতরে আল্লাহর ভয় আসে, পরকালের ভয় আসে, তখন সে চুরি ডাকাতি করতে পারে না, রাহাজানি করতে পারে না, মানুষের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলা করতে পারে না। কারণ তার মধ্যে আযাবের ভয় থাকে। এই ভয়ের তাড়া খেয়ে সর্বদা সে অপরাধ ও অন্যায় থেকে দূরে সরে যায়। এভাবে ঈমান মানুষকে সমস্ত অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। ঈমান ও খোদাভীতি এসে গেলে যে মানুষ এ সমস্ত অপকর্ম করতে পারে না- তা বয়ান করে রাসূল সা· বলেছেন- “একজন মানুষ যার মধ্যে ঈমান আছে, সে জেনা করতে পারে না, একজন মানুষ যার মধ্যে ঈমান আছে, সে চুরি করতে পারে না, একজন মানুষ যার মধ্যে ঈমান আছে, সে শরাব পান করতে পারে না, একজন মানুষ যার মধ্যে ঈমান আছে, সে ছিনতাই করতে পারে না, ডাকাতি লুটতরাজ করতে পারে না।
এ হাদীস থেকে বোঝা গেল, ঈমানী চেতনা তথা তাকওয়া বা পরকালীন ভয়ই মানুষকে এ সমস্ত অপরাধ থেকে বিরত রাখে। এ জন্যই অন্য এক হাদীসে তাকওয়া বা খোদাভীতিকে ধর্মীয় মূল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছেঃ ‘খোদাভীতি সমস্ত ধর্মীয় তত্ত্বকথার মূল।’
অন্য এক হাদীসে রাসূল সা· ইরশাদ করেছেন-‘তাকওয়া বা খোদাভীতি হল সমস্ত বিষয়ের মূল।’
একথা ধ্রুব সত্য যে, একমাত্র তাকওয়া বনাম ঈমানের চেতনাই মানুষকে অপরাধ ও যাবতীয় দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে পারে। দুনিয়ার অন্য কোন শক্তি মানুষকে অপরাধ ও দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে পারে না। যতই কড়া আইন প্রণয়ণ করা হোক না কেন, যত কঠোর শাস্তির বিধান তৈরী করা হোক না কেন, যতই কঠোর শাসন ব্যবস্থা চালু করা হোক না কেন, তা মানুষকে পুরোপুরিভাবে কখনোই অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারে না। আইনের রক্তচক্ষু সব অপরাধ দেখতে পারে না। অপরাধকারীরা আইনের চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে পর্দার অন্তরালে গিয়ে অন্যায় করতে পারে, যেখানে শাসনের দৃষ্টি পৌঁছতে সক্ষম হয় না। কিন্তু যার মধ্যে তাকওয়া তথা আল্লাহর আযাবের ভয় থাকবে, সে লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়েও, গোপনে গিয়েও কোন অন্যায় করতে পারবে না। কারণ সেই গোপনে গিয়েও তার এই বিশ্বাস জাগ্রত থাকবে যে, দুনিয়ার কোন চক্ষু আমাকে না দেখলেও আল্লাহর থেকে আমি লুকাতে পারছি না। তাই গোপনে গিয়েও, পর্দার অন্তরালে গিয়েও সে অন্যায় অপরাধ করতে পারবে না।
এভাবে ঈমানী চেতনাই একমাত্র পুরোপুরিভাবে সমাজের মানুষকে অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত রাখতে সক্ষম। তাই দেখা গেছে যখন সত্যিকারভাবে মানুষের ভেতরে ঈমানী চেতনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অর্থাৎ, রাসূল সা· এর জামানায় সাহাবায়ে কেরামের জামানায়, তখন মানুষের মাঝে বলতে গেলে অন্যায় অপরাধ ছিল না। মানুষ তখন শান্তি-নিরাপত্তায় বসবাস করত। একজন মহিলা ইয়েমেন থেকে সুদূর শাম দেশ পর্যন্ত চলে যেত। সে তার জান-মাল, ইজ্জত-আব্রুর ব্যাপারে কোন রকম আশংকা বোধ করত না। সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে নির্বিঘ্নে একা একাই সে এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যেত। ঈমানের বদৌলতে তখন সমাজে এরকম শান্তি, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঈমানের দ্বারা সমাজে এরকম শান্তি ও জান-মালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বর্ণনা প্রদান করে কুরআনে কারীমে ঘোষণা দেয়া হয়েছেঃ- ‘তোমরা ঈমান আনলে, আমল করলে তোমাদের জীবনে যে নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে, সেটার পরিবর্তন ঘটিয়ে তিনি (আল্লাহ) নিরাপত্তা দান করবেন।’
বোঝা গেল ঈমান আমল দ্বারা জীবনের নিরাপত্তা অর্জিত হয়। আর বলা বাহুল্য অন্যায় অপরাধ প্রবণতা বন্ধ না হলে জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাকওয়া বা খোদাভীতি থাকলে মানুষ কীভাবে অপরাধ থেকে মুক্ত থাকে- তার একটা ঘটনা উল্লেখ করছি।
একবার হযরত ওমর রা· সফরে বের হয়েছিলেন। সফরের একস্থানে তাঁর ক্ষুধা পেল। তিনি দেখলেন একজন রাখাল বকরী চরাচ্ছে। তিনি রাখালকে বললেন- আমাকে এক পেয়ালা দুধ পান করাবে কি? রাখালটি বলল, আপনাকে দুধ পান করাতে পারলেতো আমার ভালো লাগতো, কিন্তু এই বকরীগুলোর মালিক আমি নই। কাউকে দুধ পান করানোর জন্য মালিক আমাকে অনুমতি দেয়নি।
হযরত ওমর রা· এর অভ্যাস ছিল তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষের আমানতদারী, ঈমান আমলের অবস্থা পরীক্ষা করতেন। তিনি উক্ত রাখালকে আমানতদারী পরীক্ষা করার জন্য বললেন, আচ্ছা এমন যদি করা হয়- আমি তোমাকে কিছু অর্থকড়ি দিলাম, তুমি আমাকে বকরীটা দিয়ে দিলে, তাহলে আমি দুধও পান করতে পারব আবার প্রয়োজনে এটার গোশতও খেতে পারব। আবার তোমারও কিছু অর্থকড়ি হল। আর মালিক তোমাকে জিজ্ঞাসা করলে তুমি বলবে একটা হিংস্র প্রাণী সেটাকে খেয়ে ফেলেছে। তখন রাখালটি বলল- ‘হে আল্লাহর বান্দা, তাহলে আল্লাহ কোথায়? তিনিতো দেখবেন।’ হযরত উমর রা· তখন বললেন, তোমার মত মানুষ যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, ততদিন দুনিয়ার কোন অকল্যাণ হবে না। বস্তুতঃ এরূপ তাকওয়া বা খোদাভীতির চেতনা থাকলে মানুষ অপরাধ করতে পারে না।
ঈমানী চেতনা তথা তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ই মানুষকে খাঁটি মানুষ বানাতে পারে এবং একমাত্র আল্লাহর আযাবের ভয়ই মানুষকে খাঁটি বানাতে পারে। দুনিয়ার কোন আইন মানুষকে খাঁটি মানুষ বানাতে পারে না। কারণ দুনিয়ার আইনে ফাঁকফোঁকর বের করা যায়, কিন্তু আল্লাহর আইনে ফাঁকফোঁকর বের করা যায় না। দুনিয়ার আইনের চক্ষুকে ফাঁকি দেয়া যায়, কিন্তু আল্লাহর আইনের চক্ষুকে ফাঁকি দেয়া যায় না। দুনিয়ার ডাণ্ডাকে নিবৃত্ত কর।
একথা ধ্রুব সত্য যে, একমাত্র তাকওয়া বনাম ঈমানের চেতনাই মানুষকে অপরাধ ও যাবতীয় দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে পারে। দুনিয়ার অন্য কোন শক্তি মানুষকে অপরাধ ও দুর্নীতি থেকে বিরত রাখতে পারে না। অনেক অমুসলিম রাষ্ট্রে দুর্নীতি প্রায় শূন্যের কোঠায় এটা কিভাবে সম্ভব?
যেদিন থেকে মুসলমান গণ পুণরায় কুরআন হাদীসকে আকড়ে ধরবে সেদিন থেকেই মুসলিম বিশ্বে দুর্নীতি সমুলে ধ্বংস হবে।