আলবানী বিদ্বেষী সাক্বাফ সাহেব আর ইমাম আলবানির শিক্ষাজীবন
লিখেছেন: ' Mahir' @ শুক্রবার, মে ৫, ২০১৭ (১:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
‘আরব আলেমদের দৃষ্টিতে শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী কেমন ছিলেন?’ নামক প্রবন্ধে মুফতী রফীকুল ইসলাম মাদানী বেশ গৌরবের সাথে হাসসান স্ককাফ সাহেবের নাম উল্লেখ করেছেন। গত পর্ব থেকে আমরা সেই সাক্বাফ নামের ব্যক্তির নাড়ি নক্ষত্র জানার চেষ্টা করছি। আজকেও সেই আলোচনার শেষ অংশ লিখছি।
উস্তাদ সাক্বাফ
আলবানী বিদ্বেষী সাক্বাফ সাহেবের মূর্খতার উপর রচিত বই
. আল কাশশাফ আন দলালাত হাসসান আস সাক্বাফ
. আল ক্বওল আল মুবীন ফী ইসবাত আস-সূরা লী রব্ব আল আলামীন
. ইত্তিহাফ আহল আল-ফাদল ওয়া আল ইনসাফ বি নাক্বদ কিতাব দাফ শুবাহ আত-তাশবীহ ওয়া তালীক্বাত আআস-সাক্বাফ
. আল আনওয়ার আল কাশিফাহ লি তানাক্বদাত আল-খাসসাফ আয-যঈফাহ
. আল-ঈক্বফ আলা আবাতীল ক্বমুস শাতা’ইম আস সাক্বাফ
. আল ইত্তিহাফ বি আক্বিদাহ শাইখ উল ইসলাম ওয়া আত-তাহযীর মিন জাহমিয়া আস সাক্বাফ – লিখেছেন শাইখ আদুল করিম আল হুমাইদ
. ইফতিরা’আফ আস-সাক্বাফ আল-আসীম * আলা আল আলবানী শাইখ আল মুহাদ্দিসীন- লিখেছেন শাইখ খালিদ আল ইনবারী
. রাদ আলা আত-তানদীদ বি মান আদাদা আত-তাহাবী- লিখেছেন শাইখ মুহসিন আল আব্বাদ
. আস-সাওয়া * ইক ওয়াস আস-শুহুব আল-মারমিয়া*আলা দলালাত ওয়া আল ইনহিরাফাত আস-সাক্বাফ আল-বিসতিয়া- লিখেছেন শাইখ আবু ওয়াদা আল-আসারী
-
কাজেই, মুসলিমদের নিকট আবেদন, যারা এই রাফেজীর বই ব্যবহার করে সুন্নাতকে দূর করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন হোন।
-
সাক্কাফ সাহেবের বই ‘তানাক্বুদাত আল-আলবানী’-এর কথাগুলোকে [যা ইমাম আলবানীর বিরুদ্ধে লেখা], বিখ্যাত আলিম শাইখ আলী হাসসান আল-হাম্বলী [রাহঃ] কঠোরভাবে ধিক্কার জানিয়েছেন। দেখুন- http://islaam.net/main/keyword_search.php
কেউ বলছে না, শাইখ আলবানী ভুলের ঊর্ধ্বে। আর তাঁর ভুলের পরিমাণ খুবই সামান্য। বিদআতিদের মুখোশ সামনে উন্মোচিত হবে ইনশাল্লাহ।
এবার সাক্বাফ সাহেবের বই নিয়ে আলোচনা করা যাক-
-
১. আলবানী ১০০০ মতবিরোধে লিপ্ত? [আমি বলব, আপনি তো সাক্বাফ সাহেবের মুরিদ। আগে সাক্বাফ সাহেবের ভুল ধরে তাকে ধিক্কার দিন। এরপর শাইখ আলবানীর দিকে চোখ তোলার সাহস দেখান। যদি নিজেকে সৎ বলে দাবি করে থাকেন।]
২. সাক্বাফ সাহেব পুরো বই ফিকহী ও আকিদার আলোচনা দিয়ে বোঝাই করেছেন। কোন নির্দিষ্ট পয়েন্টে স্থির থাকেন নি।
৩. ইমাম আলবানী যে শব্দ ব্যবহার করেছেন, সাক্বাফ তার বদলে অন্য শব্দ উল্লেখ করেছেন। যেন কথার অর্থ পাল্টে যায়।
৪. সাক্বাফ সাহেব সহিহাইনের হাদিসকে যঈফ বলেছেন।
৫. সে ইমাম আলবানীকে নাসিবি বলেছেন, কারন ইমাম আলবানী মুওয়াবিয়া [রাঃ] এর মহত্বের হাদিসকে সহিহ বলেছেন।
আর শাইখ আলবানী সত্য বলতে ভয় পান না।
শাইখ আলবানী বলেনঃ
“Also, I personally am in need of those who will point
out mistakes or errors that may emanate from me, [things]
which no human can escape from. So when my opinion is
spread, the people of knowledge are able to examine it and to
become acquainted with what may be an error in it, and thus
clarify that either through writing or verbally, and so [then] I
can thank them for their jealousy [for the Truth] and can ask
Allaah to reward them with good …”
Al-Ajwibah an-Naafi’ah, p. 11.
ভাবানুবাদঃ তাছাড়া আমার নিজেরও এমন কিছু লোকদের দরকার যারা আমার এমন ভুল সনাক্ত করবে, যা কোন মানুষ এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই যখন আমার মতামত ছড়িয়ে পড়ে, জ্ঞানীরা তা পরীক্ষা করে আর আমার কি ভুল হয় তা জানতে পারে, এবং লিখে বা মৌখিকভাবে তা পরিষ্কার করে বলে, এবং তাহলে আমি তাদের হিংসাকে ধন্যবাদ জানাতে পারি আর আল্লাহর কাছে তাদের জন্য পুরষ্কার প্রার্থনা করতে পারি… [আল-আজুইবাহ আন-নাফি’আহ, পৃ. ১১]
‘তানাক্বুদাত আল-আলবানী’ বইটি লিখা হয়েছিল, কারন ইমাম আলবানী তাঁর কিছু মত প্রত্যাহার করেছিলেন। তাহলে একই ভাবে ‘তানাক্বুদাত আশ-শাফেয়ী’ আর ‘তানাক্বুদাত আবু হানিফাহ’ বই তিনি কেন লিখলেন না? ইমাম শাফেয়ী আর ইমাম আবু হানিফাও তো তাদের শত শত মত প্রত্যাহার করেছিলেন।
কিন্তু বিদয়াতিরা সাক্বাফ সাহেবকে এই নামে কোন বই লিখতে দিবেন কি? উত্তর হল, তারা দিবে না। কারন যদি তারা এর অনুমোদন দেয়, তবে তারা এই নব্য-রাফেজীর সাথে বন্ধুত্ব করতে পারবেন না।
সাক্বাফ সাহেবের কিছু জালিয়াতির উত্তর দেওয়া হল-
সাক্বাফ একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন তাঁর বইয়ের ৪৬-৪৭ পাতায় যে, “তাওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তির মত”
সাক্বাফ বলেছেন যে, ইমাম আলবানী হাদিসটি ‘আয-যঈফাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে যঈফ বলেছেন, কিন্তু আলিবানী ‘সহীহ ইবনে মাজাহ’তে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন।
যাই হোক, ইমাম আলবানী ‘আয-যঈফাহ’এর ৬১৫ নং হাদিসের আলোচনায় লিখেন,
সম্পূর্ণ হাদিসঃ
“তাওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তির মত, আর যদি আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ভালবাসেন, তবে কোন পাপ তার ক্ষতি করতে পারবে না”
সনদের আলোচনার শেষে শাইখ আলবানী লিখেন,
“হাদিসের প্রথম অর্ধেকের সাক্ষ্য দিয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ ও আবু সাঈদ আনসারী…”
এবং উপসংহারে তিনি বলেন,
“উল্লেখিত হাদিসটি এই সকল শব্দের জন্য যঈফ, কিন্তু হাদিসের প্রথম অর্ধেক হাসান…”
সাক্বাফ সাহেবের জালিয়াতির প্রমাণ দেখুন, ইমাম আলবানী ‘সহিহ ইবন মাজাহ’ [নং ৩৪৬৭] এর টীকায় লিখেন, হাদিসটি হাসান আর বিস্তারিত ‘আয-যঈফাহ’এর ৬১৫।
সাক্বাফ সাহেবের কিছু জালিয়াতি
সাক্কাফ তাঁর বইয়ের ৫৫ পৃষ্ঠাতে বলেন,
“রাসূলুল্লাহ [সাঃ] শনি ও রবিবারে বেশি সিয়াম পালন করতেন”
সাক্কাফ বলেন যে, আলবানী তাঁর ‘ইবন খুজাইমাহ’তে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু হাদিসটি তিনি ‘আয-যঈফাহ’তে উল্লেখ করেছেন। ইমাম আলবানী এর উত্তর ‘আয-যঈফাহ’র শেষ দুই লাইনে নিজেই দিয়েছেন,
“…এবং আমি ‘সহীহ ইবন খুজাইমা’র টীকায় হাদিসটির দুর্বলতা খেয়াল করি নি, তাই এখন আমি হাদিসটিকে হাসান বলছি, আর আমি এখন যা বলছি তাই সঠিক। আল্লাহ অধিক জানেন”
সাক্বাফ সাহেবের কিছু জালিয়াতি
পৃ. ৫৬-৫৭ তে লেখা আছেঃ
“নাবী [সাঃ] কুরবানীর দিন ২ টি শিংযুক্ত রামছাগল কুরবানী করেন”।
সাক্কাফ বলেন যে, ইমাম আলবানী ‘মিশকাতে’ হাদিসটিকে য’ঈফ বলেন, কিন্তু ‘ইরয়াউল গালীল’এর [৪/৩৫১] তে হাসান বলেছেন।
সাক্কাফ আর আমাদের দেশের বিদআতিরা যে কত বড় মিথ্যুক দেখুন। মিশকাত আর ইরওয়াউল গালীলে উল্লেখিত হাদিসদ্বয়ের সনদ ও শব্দ দুটোই আলাদা।প্রথম হাদিসটি লম্বা আর তা জাফর থেকে আবু আইয়াশ বর্ণনা করেন। কিন্তু ২য় হাদিসটি মাত্র ২ লাইনের আর তা আব্দুর রহমান ইবন জাবির তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন।
এটা ছিল সাক্কাফের কিছু জালিয়াতির নমুনা। বিস্তারিত জানতে উল্লেখিত বইটি পড়ুন।
শাইখ আলবানীর কি কোন শাইখ নেই?
এর আগে এ নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। আজ আবার করছি।
. ইমাম আলবানীর প্রথম শিক্ষক তাঁর পিতা; যে কিনা বিখ্যাত হানাফী আলিম; ‘আলহাজ্ব নূহ নাজ্জাতী’; যে কিনা ‘মুহাদ্দিস শাইখ শুয়াইব আল আরনাউত্ব- মুসনাদে আহমাদের ব্যাখ্যাকার’ এর ছাত্র। [আমরা ইমাম আলবানীকে নিয়ে শুয়াইব আল-আরনাউত্বের মন্তব্যও উল্লেখ
করেছিলাম। আর সেই মন্তব্যের ইউটিউবের লিঙ্ক দেয়েছিলাম] ইমাম আলবানী তাঁর পিতার কাছে কুরআন, তাজবীদ, হানাফী ফিকহ [যেমন-কুদুরী] শিক্ষাগ্রহণ করেন।
. ইমাম আলবানী শাইখ সাঈদ আল-বুরহানীর নিকট ‘মারাক্বি আল-ফালাহ’, ‘শুযুর আল-যাহাব’ এবং বালাগাহ এর উপর পড়াশুনা করেন।
. সে শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ ও শাইখ তাওফিক আল বারযাহ-এর লেকচারে অংশ নিতেন।
. সে দামাস্কাসের আল-মাজমা আল ইলমি-এর কিছু আলিমের সাথে আল্লামা মুহাম্মাদ বাহজাত আল-আসার-এর লেকচারে ইজ্জ আল দীন আল-তানৌখি [রাহঃ]-এর সাথে আবু তাম্মাম-এর ‘আল-হামাসাহ’ পড়তেন।
. ইমাম আলবানী শাইখ মুহাম্মাদ রাগিব আল-তাবাখ-এর সাথে হাদিস গবেষণা করতেন আর রাগিব আল-তাবাখ তাকে ইজাযাহ প্রদান করেন। ইমাম আলবানীর আগ্রহ দেখে রাগিব আল-তাবাখ তাকে ‘আল আনওয়ার আল গালিয়া ফী মুখতাসার আল আসবাত আল-হাম্বলী’ দেন। শাইখ রাগিব এই ইজাযাহ প্রদানের সত্যতা তাঁর ‘মুখতাসার আল-উলু’ [পৃ.৭২] এবং ‘তাহদির আস-সাজিদ’ [পৃ. ৬৩] তে উল্লেখ করেছেন।
. তিনি মিশরের শাইখ রশীদ রাজা-এর ছাত্র ছিলেন।
. এছাড়া আলবানী শাইখ বাহজাতুল বাইতা-এর কাছ থেকে ইজাযাহ পান [হায়াত আল আলবানী- লেখক মুহাম্মাদ আশ-শাহাইবানি]। আর ইজাযার একটি কপি তাঁর ছাত্র আলি হাসসান হাম্বলীর নিকট সংরক্ষিত আছে।
ইমাম আলবানীর যদি একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষক নাও থাকত, তবুও তাকে মূর্খ বলে যেত না। কারন আপনি দেখবেন যে, একজন হাদিসের রাবী খুব বেশি হলে ২-৩ জন শাইখের হাদিস বর্ণনা করে।কেউ কেউ তো মাত্র একজন শাইখ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছে, তাই বলে হাদিসের ইমামগণ তাদের হাদিস বাতিল করে দেন নি।
উদাহরণ, আবু উমার আহমাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মাদ আল-লাখমি, সে আসবিলিয়াদের কাছে ইবন বাগি নামেও পরিচিত [মৃত্যু-৪০০ হিজরী]। সে তাঁর যুগের সবচেয়ে বড় আলিম। আর ফিকাহ ও হাদিসের অসীম জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু তাঁর উস্তাদের সংখ্যা অনেক কম।