লগইন রেজিস্ট্রেশন

ইমাম আলবানি সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসকে যঈফ বলেছেন?

লিখেছেন: ' Mahir' @ শনিবার, মে ৬, ২০১৭ (১২:১৭ পূর্বাহ্ণ)

মুরসাল হাদীছ বাতিল

১১. ইমাম ইয়াহিয়া বিন সা’ঈদ [রাহঃ] কখনও ইমাম যুহরি ও ক্বাতাদাহ এর মুরসাল হাদিস গ্রহণ করতেন না। তিনি বলতেনঃ

“এগুলো বাতাসের মত”। {ইবনে আবী হাতিমের আল- মারাসিল; পৃ. ৩}

১২.

ইমাম ইয়াহিয়া বিন মাঈন [রাহঃ] বলেনঃ
” ইমাম যুহরির মুরসাল বর্ণনা কিছুই না”। {ইবনে আবী হাতিমের আল- মারাসিল; পৃ. ৩}

১৩.

ইবন হিব্বান বলেনঃ
“একটা যঈফ হাদিস আর সেই হাদিস যার অস্তিত্ব নেই, উভয়ের ক্ষেত্রে একই বিধান”। [ কিতাব আল মাজরুহীন ৩২৮/১]

১৪. ইমাম আবু হাতিম আর-রাযী ও ইমাম আবু যুর’আহ আর-রাযী একবার বিতরের সালাতে হাত উঠানো নিয়ে কথা বলছিলেন। ইমাম আবু হাতিম হাত তোলার পক্ষে একটা হাদিস উল্লেখ করলেন, কিন্তু ইমাম আবু যুর’আহ সেখানে উল্লেখিত রাবী লাইছ বিন আবী সালীম-এর সমালোচনা করলেন। ইমাম আবু হাতিম ২য় হাদিস উল্লেখ করলেন, কিন্তু ইমাম আবু যুর’আহ সেখানে উল্লেখিত রাবী ইবন লাহি’আহ-এর সমালোচনা করলেন। ইমাম আবু হাতিম৩য় হাদিস উল্লেখ করলেন, কিন্তু ইমাম আবু যুর’আহ সেখানে উল্লেখিত রাবী আওফ-এর সমালোচনা করলেন। এবার ইমাম আবু হাতিম হাত না তোলার দলিল চাইলেন। তাই আবু যুর’আহ এবার আনাস [রাঃ] থেকে বর্ণনা করলেন যে, রাসুল [সাঃ] ইস্তিস্কা-এর দু’আ ছাড়া হাত তুলতেন না। আর হাদিসটি সহিহ। তাই আবু হাতিম চুপ হয়ে গেলেন। [তারিখ বাগদাদ, ২য় খন্ড, পৃ. ৭৬]
বুঝা গেল, ইমাম আবু হাতিম আর-রাযী ও ইমাম আবু যুর’আহ আর-রাযী যঈফ হাদিস গ্রহণ করতেন না।

বিস্তারিত পড়ুন, আবু ইয়াসার আশরাফ বিন সা’ঈদ আল মিশরি রচিত ‘হুকম আল-আমাল বিল হাদিস আল যঈফ ফী ফাযাইল আ’মাল’। এছাড়া পড়ুন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া এর ‘ফাতওয়া শাইখুল ইসলাম’ [৬৫/১৮]।

যদি পরবর্তী আলিমদের শায রায়গুলোর কথাও [যঈফ হাদিসের আমলের ব্যাপারে] বলা হয়, তারাও যঈফ হাদীসের উপর শর্তারোপ করেছেন। আর হানাফিদের জানা উচিত তারা সেই সব শর্ত মানে না।

হানাফিরা নিজেরাই নীতি তৈরি করে নিয়েছে যে, আমাদের পূর্বসূরিদের কেউ যে আমল করে গেছে, তা যদি যঈফ হাদিসের উপরেও হয়, তবু তা আমলযোগ্য। আর অনেক বিখ্যাত হানাফী আলিম এই মত পোষণ করে। উদাহরণ নাইবা দিলাম।

    ইমাম আলবানি সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসকে যঈফ বলেছেন?


পৃথিবীর কোন আলিম ভুলের উর্দ্ধে নয়। আমরা বিশ্বাস করি, একমাত্র আল্লাহ ভুল করেন না। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আমর বিন আস থেকে বর্ণিত হয়েছে, মহানাবী (ﷺ) বলেন:
إِذَا حَكَمَ الحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ

বিচারক যদি কোন ফায়সালা করতে গিয়ে প্রচেষ্টা করে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে তার জন্য দু‘টি নেকী রয়েছে। আর প্রচেষ্ট করার পর ভুল হলে একটি নেকী রয়েছে।[সহীহ: বুখারী ৭৩৫২ ও মুসলিম ১৭১৬।]

সুতরাং এ থেকে বুঝা গেল যে, মুজতাহিদ ভুল করলে তার একটি প্রতিদান রয়েছে। আর এটা তার ইজতিহাদের কারণে। আর যে ভুলটা হয়েছে তার জন্য সে ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। কেননা শরীয়াতের সমস্ত বিধানের ক্ষেত্রে ওযর প্রাপ্ত হওয়ার কারণে কিংবা কঠিন হওয়ার কারণেও সাওয়াব পাওয়া যায়।
আল্লাহ্‌ বলেন:
﴿وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ﴾
দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি (সূরা: হাজ্জ-৭৮)।
আল্লাহ্‌ আরও বলেন:
﴿يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
আল্লাহ্‌ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না (সূরা: বাকারাহ-১৮৫)।

বুঝা গেল, শাইখ আলবানি তাঁর ভুলের জন্যও নেকী পাবেন।
যারা বলে শুধু ইমাম আলবানি একাই বুখারী ও মুসলিমের হাদিসকে যঈফ বলেছেন, আমি মনে করি তাদের অন্তরে নিফাক আছে।
অন্যান্য যেসব আলিম বুখারী ও মুসলিমের কিছু হাদিসকে যঈফ মনে করতেন-
- ইমাম আবু যুর’আহ
- ইমাম ইবন আবী হাতিম
- ইমাম দারাকুতনী
- হাফিয ইবন হাযম
- শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়া ও অন্যান্য

তাদের ক্ষেত্রে কেউ তো এইকথা বলে নি যে, তারা বুখারী-মুসলিমের হাদিসকে যঈফ বলেছেন, তাই তাদের তাহকীক বাতিল। আর দেওবন্দীদের অনেকে বুখারী মুসলিমের হাদিস যঈফ মনে করতেন।
যেসব দেওবন্দী আলিম বুখারী ও মুসলিমের কিছু হাদিসকে যঈফ মনে করতেন-
- আল কাওসারী
- হাসসান আল সাক্কাফ
- নূহ হা মিন কেল্লার
- আল গুমারি

হানাফীরা এই সব আলিমদের ত্যাগ করে না কেন? তাঁর উপর এইসব আলিমদের অনেকে বুখারী ও মুসলিমের একই সনদে বর্ণিত হাদিস [মানে, মুত্তাফাকুন আলাইহি-এর হাদিস] যঈফ বলেছেন। কেউ কেউ তো মাউযু বা জাল পর্যন্ত বলেছে।

জামেয়া বায়তূন নূর, যাত্রাবাড়ি থেকে প্রকাশিত একটি বইতে শাইখ মুহাম্মাদ সা’ঈদ আল মামদূহ সাহেবের বই ‘তানবীহ উল মুসলিম ইলা তা’আদ্দিল আলবানি আলা সহিহ মুসলিম’ [সাবধান মুসলিম, আলবানির হাতে সহিহ মুসলিম]-এর অনেক গুণকীর্তন করা হয়েছে। তারা জানেই না, এই মামদূহ কে?

    কে এই শাইখ মুহাম্মাদ সা’ঈদ আল মামদূহ?


একজন নব্য রাফেজী, যে লোকদের ধোঁকা দিচ্ছে। [তাতে কি রাফেজীরা তো হানাফী, তাই না? সামনে প্রমাণ দিব ইনশাল্লাহ।]

শাইখ আলবানি নিজেই মামদূহ সাহেবের সব যুক্তির জবাব দিয়েছেন। শাইখ আলবানির বইটির নাম- আদাব আয-যফাফ ফী আস-সুন্নাহ আল-মুতাহহারাহ। [পড়ুন- মুকাদ্দিমা; পৃ. ৪৯-৭১]

বইটি ডাউনলোডের লিঙ্ক।
http://www.waqfeya.com/book.php?bid=3814

শাইখ তারিক বিন আওয়াযাল্লাহ নিজেও মামদূহ সাহেবের প্রতারণার উত্তর দিয়েছেন তাঁর রচিত- ‘রিদ আল-জানি আল-মুতা’আদ্দি ‘আলা আল-আলবানি’।

বইটি ডাউনলোডের লিঙ্ক।
http://www.waqfeya.com/book.php?bid=2385

মামদূহ সাহেব বলেছেন যে, ইমাম আলবানি অনেক হাদিসকে যঈফ বলেছেন। শাইখ তারিক্ব প্রমাণ করেছেন যে, ইমাম আলবানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু ইসনাদ যঈফ বলেছে, কিন্তু হাদিসকে সহিহ বলেছেন।

সততা অবলম্বন করলে আপনি বুঝবেন যে, শাইখ আলবানি অতীতের আলিমদের রায়ের ভিত্তিতে মাত্র ১০ টি হাদিসের সমালোচনা করেছেন। অথচ মামদূহ সাহেব জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ৫০ টি হাদিসের কথা উল্লেখ করেছেন।
সিলসিলা সহিহাহ আর সিলসিলা যঈফাহ-তে ১০০০ মতবিরোধ আছে। একই হাদিস একবার সহিহ, আরেকবার যঈফ বলেছেন। আবার একই রাবীকে একবার সহিহ, আরেকবার যঈফ বলেছেন।

এই অভিযোগ প্রথম উত্থাপন করেছে সাক্বাফ সাহেব।

    কে এই শাইখ সাক্বাফ?


একজন নব্য রাফেজী, যে লোকদের ধোঁকা দিচ্ছে। [তাতে কি রাফেজীরা তো হানাফী, তাই না? সামনে প্রমাণ দিব ইনশাল্লাহ।] তাঁর কাজই হল মানুষের সমালোচনা করা। আর তিনি সাহাবীদের সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেন নি। যারা সাক্বাফ সাহেবের বই দ্বারা ইমাম আলবানিকে আক্রমণ করে, আল্লাহ ভাল জানে তাদের আকিদার কি অবস্থা।
সাক্বাফ সাহেব মুওয়াবিয়া [রাঃ] এর সমালোচনা করেছেন, আর তাঁর অনুসারীরাই তাকে মিথ্যুক বলে। [এখানে আমার কি বলার আছে,বলুন?]

সাক্বাফ সাহেব তাঁর ‘দাফ শুবাহ’ এর ২৩৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন যে, মুওয়াবিয়া [রাঃ] অনেক সাহাবীকে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য হত্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, খুনী জাহান্নামী তাই মুওয়াবিয়া [রাঃ] জাহান্নামী [নাউযুবিল্লাহ]।
সাক্বাফ সাহেবকে আরও জানতে পড়ুন- http://islam.net/main/display.php?id=331&category=107
সাক্বাফ সাহেব ইমাম ইবন তাইমিয়াকে তাকফির করেছেন।তিনি নিজেও বুখারীর ১০ টি হাদিসকে যঈফ বলেছেন, কিন্তু হানাফীরা সেটা চোখে দেখে না। এছাড়া মুসলিমের ৩ টি হাদিসকে জাল বলেছেন। [চলবে]

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৭৩০ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৪.০০)