শাইখ আলবানী [রাহঃ] এর নামে অপবাদ
লিখেছেন: ' Mahir' @ শনিবার, মে ৬, ২০১৭ (১:১৩ পূর্বাহ্ণ)
আমার আগের আলোচনাগুলোতে আপনি বুঝেছেন যে, এদেশে যেসব বিদআতি সহিহ হাদিসের চর্চা করে বলে দাবি করে, তারা আসলে আবু গুদ্দাহ সাহেবের মুরিদ।
যারা বলে, শুধু ইমাম আলবানী একমাত্র লোক যে সহিহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিস একচেটিয়া যঈফ বলেছেন, তারা মামদূহ সাহেবের মুরিদ।
অথচ, কেবল শায়খ আলবানী নন, প্রথম যুগের বেশ কিছু
মুহাদ্দিছ এ বিষয়ে ছহীহ বুখারীর কতিপয় হাদীছ সম্পর্কে
সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বাধিক ইমাম
দারাকুৎনী (৩০৬-৩৮৫ হিঃ) ছহীহ বুখারীর ৭৮টি এবং বুখারী ও
মুসলিমের মিলিতভাবে ৩২টি হাদীছের উপর সমালোচনা
করেছেন।
শায়খ আলবানীও উছূলে হাদীছের আলোকে ছহীহ
বুখারীর ১৫টি হাদীছের সমালোচনা করেছেন তাঁর ‘সিলসিলা
যঈফাহ’ গ্রন্থে। উক্ত সমালোচনা হাদীছবিরোধী বা
হাদীছে সন্দেহবাদীদের মত নয়। বরং একজন
সূক্ষ্মদর্শী মুহাদ্দিছ বিদ্বান হিসাবে। যেমন ইতিপূর্বে
অনেক মুহাদ্দিছ করেছেন। যদি এতে তিনি ভুল করে থাকেন
তাহ’লেও নেকী পাবেন। আর ঠিক করে থাকলে দ্বিগুণ
নেকী পাবেন। তবে তিনি যেসব হাদীছকে যঈফ
বলেছেন, সেব্যাপারে ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর সিদ্ধান্তই
চূড়ান্ত। কেননা দুর্বল রাবীদের বর্ণনা গ্রহণ করার ব্যাপারে
তাঁর কতগুলি স্পষ্ট নীতি ছিল। যেমন :
(১) দুর্বল রাবীদের
সকল বর্ণনাই দুর্বল নয়।
(২) উক্ত বিষয়ে অন্য কোন
হাদীছ না পাওয়া এবং হাদীছটি বিধানগত ও আক্বীদা বিষয়ক না
হওয়া। বরং হৃদয় গলানো ও ফযীলত বিষয়ে হওয়া।
(৩) সনদে
বা মতনের কোন ত্রুটি দূর করার জন্য বা কোন বক্তব্যের
অধিক ব্যাখ্যা দানের জন্য কিংবা শ্রুত বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য
সহযোগী হিসাবে ( ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﺎﺑﻌﺎﺕ ) কোন হাদীছ আনা’ (ড.
মুহাম্মাদ হামদী আবু আবদাহ, জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ে শরী‘আ
অনুষদ কর্তৃক আয়োজিত সম্মেলনে পেশকৃত
গবেষণাপত্র, ৩৪ পৃঃ)
আর যারা বলে, ইমাম আলবানী একই হাদিস একবার সহিহ আরেকবার যঈফ, আর একই রাবীকে একবার সহিহ আরেকবার যঈফ বলেছেন, তারা নব্য রাফেজী সাক্কাফ সাহেবের মুরিদ।
আর আপনি জানতে পেরেছেন যে, মামদূহ এবং সাক্বাফ কতবড় ধোঁকাবাজ ছিল। সাধারণ মানুষ, যাদের উসুলে হাদিসের জ্ঞান নেই, তাদের ধোঁকা দিচ্ছে।
ইন্টারনেটে এইসব মুরিদগণ বিভিন্ন হাদিস উল্লেখ করে, আর বলে, “দেখুন, এই হল আলবানীর আসল চেহারা। আলবানী একই হাদিস একবার সহিহ আরেকবার যঈফ, আর একই রাবীকে একবার সহিহ আরেকবার যঈফ বলেছেন”।
যাই হোক, আমার পক্ষে এইসব লোকের সকল হাদিস ধরে ধরে বিশ্লেষণ করার সময় নেই। আর এটা সম্ভবও না। তবে আমি তাদের পীর সাহেবদের আসল চেহারা নিয়ে ধারণা দিয়েছি। এবার বুঝে নিন, মুরিদদের কি অবস্থা। শাইখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সম্প্রতি ইমাম আলবানীকে নিয়ে একটা বই বের করেছেন। সেখানে তিনি অনেক হাদিসের উদাহরণ টেনে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আগ্রহী পাঠকরা সেই বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।
যারা বলে ইমাম আলবানীর কোন শিক্ষক নেই তারা, নূহ হামীম কেল্লার সাহেবের মুরিদ। এই ব্যক্তি প্রথম অভিযোগ আনেন যে, ইমাম আলবানীর শাইখ নেই। বিদয়াতিরা তার লেখা বইয়ের উদ্ধৃতি দেয়। তারা ফাসিকের সাক্ষ্য মুমিনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। দেখুন নূহ হামীম সাহেবকে নিয়ে জর্ডানের হস ব্রোথেলের যৌন কেলেঙ্কারি।
http://www.blogistan.co.uk/blog/mt.php/2009/04/30/the_need_fo
r_constructive_discussion_on_tariqa_problems
ভদ্রলোক কেন জানি তার অন্তর্বাস নিলামে তুলেছিলেন।
http://forums.islamicawakening.com/f15/nuh-keller-auctionsused-items-for-baraka-25148/
http://www.islamicaweb.com/forums/topic/28062-nuh-keller-hasnarcissistic-personality-disorderhis-mureeds-are-lunatics/
আমরা ইমাম আলবানীর শিক্ষকদের তালিকা দিয়েছিলাম। আর বলেছিলাম যে, ইজাযার সার্টিফিকেট কার কাছে সংরক্ষিত আছে।
এখন শেষ কিছু কথা বলি, মানুষের উচিত এই ইজাযা সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা। এই শব্দের মাধ্যমে বিদয়াতিরা মানুষের চোখে পর্দা দিয়ে রেখেছে।
আজকাল ইজাযা পাওয়া মোটেই কঠিন না। আর কেউ ইজাযা পেলেই সে ভাল হয়ে যায় না। ইজাযা অর্জনকারীরা এই দেশে কুরআন খতম আর মিলাদ পড়িয়ে বেড়ায়। ইজাযা তাদের হিদায়াত দেয় নি।
আল্লাহ বলেন,
“বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই হিদায়াত’। [সূরা বাকারাহ ১২০]
রাসূল কি আমাদের এই কথা বলেছেন যে, আলিম সেই ব্যক্তি যে ইজাযা পেয়েছে?
عن سفيان ان عمر رضى الله تعالى عنه قال لكعب رضى الله تعالى عنه من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بـما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الطمع
অর্থ : “(আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কা’ব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইল্মের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
অর্থাৎ যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হাক্কানী-রাব্বানী আলিম।
মহান আল্লাহ পাক বলেন,
انـما يـخشى الله من عباده العلماء
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
উল্লিখিত পবিত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এ উল্লেখ করেন,
عن ابن مسعود رضى الله تعالى انه قال ليس العلم عن كثرة الـحديث ولكن العلم عن كثرة الـخشية وقال احـمد بن صالـح الـمصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانـما العلم نور يـجعله الله تعالى فى القلب
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর হযরত আহমদ বিন ছালেহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অধিক রিওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলত ইলম হচ্ছে নূর বা জ্যোতি স্বরূপ। মহান আল্লাহ পাক তিনি তা মানুষের অন্ত:করণে দান করেন।”
আমাদের দেশের বড় বড় খত্বীব-মাওলানা অনেকবার বুখারী পড়েছেন, কিন্তু তারা রুকুতে যাবার আগে হাত তুলে না। অনেকবার মুসলিম পড়েছেন, কিন্তু তারা চার হাতে মুসাফাহা করে।
যাই হোক, খাটি আলিমের আরও অনেক গুণ থাকা দরকার, এখানে এত আলোচনার দরকার নেই।
আমাদের দেশের সমস্যা হল, কিছু লোক এসে হিসাব দেয় যে, আমার অমুক অমুক দেশে শাইখ আছে, আমার অমুক শাইখ অমুক দেশের আর তমুক শাইখ তমুক দেশের। আর এভাবে মানুষকে ধোঁকা দেয়।
বিদআতি আলিমরা অনেক অনেক শাইখের ইজাযা পেলেও তারা বিদআতি। আর এটাই তাদের পরিচয়। তাদের এত এত সার্টিফিকেট তাদেরকে জাল হাদিস বর্ণনা থেকে রোধ করতে পারে না।
এমন অনেক লোক আছে, যাদের চার মাজহাবের উপর ইজাযা আছে। কিন্তু এগুলোর মূলনীতি সে জানে না।
হানাফী মাজহাবে মুফতি হুসাইন কাদদিয়া বলেনঃ
“যখন আমরা ইমাম আলবানীকে, তার মানহাজকে আর তার অনেক রায়কে অপছন্দ করি, তবু এটা অস্বীকার করা যায় না যে, সে মুহাদ্দিস। একজন মুহাদ্দিসকে হাদিসের কিতাব মুখস্থ করতে হয় না। আর কারো কাছ থেকে ইজাযা নিতেও হয় না। আসল শর্ত হল, তার হাদিসের জ্ঞান থাকতে হয়। এটা উরফের উপর নির্ভর করে, আর আজকের উরফ অনুযায়ী, সে একজন মুহাদ্দিস”।তিনি আরও বলেনঃ
“সকল হাদিসের উপর ইজাযা থাকার দরকার নেই। আপনাকে শুধু হাদিস মুখস্থ করতে হবে, আর এর উপর পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হবে। আজকের ইজাযা তাবাররুকের জন্য। হ্যাঁ, উস্তাদের কাছে পড়াশুনা করার দরকার আছে। যেহেতু সে পথ দেখাবে। তবে তার কাছে সব হাদিস পড়ার দরকার নেই। আর না সকল হাদিসের উপর ইজাযা থাকার দরকার আছে”।
ইমাম আলবানীর প্রতিপক্ষরাও এই কথা বলে নিজেদের মিথ্যুক প্রমাণ করতে চান না যে, তিনি মুহাদ্দিস ছিলেন না।
আর শাইখ আলবানী হলেন শাইখ রাগিব তাব্বাখ এবং শাইখ বাহজাতুল বাইতার-এর ছাত্র [যাদের শাইখের সনদ ইমাম হাম্বল আর সেখান থেকে রাসূল [সাঃ] পর্যন্ত পৌছায়।]
বিস্তারিত দেখুন মুহাম্মাদ আশ-শায়বানীর ‘হায়াত আল-আলবানী’ বইতে। মুখতাসার আল-উলু আর তাহযীর আস-সাজিদ বইতে ইমাম আলবানী তার শাইখদের নিয়ে লিখেছেন।
যঈফ আর মাউযু হাদিস কি একই?
কিছু কথা জানিয়ে রাখি।
. যঈফ জিদ্দান বা খুবই দুর্বল হাদিস- এটার হুকুম জাল হাদিসের মত। আর এটা বাতিল।
সামান্য দুর্বল হাদিস বাতিল কিনা, তা নিয়ে মতভেদ আছে।
. শাইখ আলবানী যঈফ হাদিসকে মাউযু মনে করতেন না। তিনি বলেন যে, যদি যঈফ হাদিসকে শক্তিশালী করার মত শাহিদ পাওয়া না যায়, এটা বাদ দিতে হবে কারন অনেক আলিম তা করেছেন।
শাইখ আলবানী এটা স্বীকার করেন যে, যঈফ হাদিসের উপর আমল করতে হলে, কিছু পূর্বশর্ত আছে। কিন্তু লোকেরা সেই শর্ত পূরণ করে না।
কোন মুহাদ্দিস নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না যে, একটা দুর্বল হাদিস অদৌ রাসূল [সাঃ] এর বর্ণিত কিনা।
যঈফ হাদিসের উপর আমল করার কিছু পূর্বশর্তঃ
. এই হাদিসের সনদ বা অর্থ সহিহ হাদিস বিরোধী হতে পারবে না।
. এটা ধর্মে বিদআত নিয়ে আসবে না।
. অতিশয় দুর্বল হতে পারবে না।
. এটা শরীয়াহ-এর নতুন আসল তৈরি করতে পারবে না। বরং, তা শরীয়ার পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের অধীন হবে।
. এটাকে সুন্নাত মনে করা যাবে না।
. হাদিস বর্ণনাকারীকে হাদিসের দুর্বলতা শ্রোতাকে জানাবে।
. দুর্বল হাদিসের বিষয়বস্তু নিয়ে অগ্রসর হবে না।
রাসুল ﷺ এর নামে মিথ্যা বলা মহাপাপ।
নবী করীম ﷺ বলেন,
-‘যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে, তার থাকার জায়গা জাহান্নাম।’ [বুখারী, হা/১১০, মুসলিম মুকাদ্দামা, ১/৭]
অন্যত্র রাসূল ﷺ বলেন,
-‘যে ব্যক্তি আমার উপর (নামে) এমন কথা বলল যা আমি বলিনি, সে তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।’ [ইবনু হিব্বান, হাসান সহীহ]
সবশেষে শাইখ আলবানীর কিছু বক্তব্য দেইঃ
এটা খুবই দুঃখজনক যে, কিছু আলিম ও সাধারণ লোকেরা শর্ত পূরণের ব্যাপারে শিথিলতা দেখায়। তারা দুর্বল থেকে সবল হাদীছ বাছাই না করেই আমল করে। এবং যখন তারা এর দুর্বলতা জানতে পারে, তারা অনুধাবন করতে চায় না তা কতটুকু দুর্বল। তারপর তারা এর উপর আমল চালিয়ে যায় যেন এটি সহিহ হাদীছ। ইবাদাতের দুর্বল কাজের প্রচলন হয় যা মুসলিমদের শক্ত সনদের বর্ণনার উপর আমল করা থেকে দূরে রাখে।[ ১৮২منتهى الأماني، ص]পূর্বশর্ত স্থাপন করা খুবই ভাল-আল্লাহ তাদের পুরষ্কৃত করুক-যদিও তা বাস্তবায়ন করা আলিমদের জন্যই কঠিন। সাধারণ মানুষ আর ইলমের অধিকারীরা কিছু মনে করবেন না। انظر منتهى الأماني، صـ (181 – 188]
ইমাম আলবানীকে মদীনা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল?
বিদয়াতিরা বলে যে, ইমাম আলবানীকে মদীনা থেকে বের করে দেওয়া হয়, কারন-
-তিনি বলেছেন নিক্বাব ফরজ না।
-রাসূলের কবর মসজিদে থাকা উচিত না।
-ইমাম আলবানী রাসূলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে নিয়ে মজা করতেন। তাই লোকেরা বাদশাহ ফয়সালের কাছে অভিযোগ দেয়।
১ম মিথ্যা
শাইখ আলবানী বলেছেন, নিক্বাব পরা [মুখ ঢাকা] মুস্তাহাব।
আর এটা ইখতিলাফী বিষয়। এরকম ছোট একটা ফাতয়াকে কেন্দ্র করে মদীনা থেকে বের করে দেবার প্রশ্নই উঠে না।
২য় মিথ্যা
শাইখ আলবানী ভাল করেই জানেন যে, রাসূল [সাঃ] এর কবর মসজিদে নয়, বরং আয়িশা [রাঃ] এর ঘরে, যা পরে মসজিদের বর্ধনের জন্য ভিতরে চলে এসেছে।
আর আমরা জানি, নবীদের কবরকে মসজিদে রূপান্তর করা ইহুদীদের কাজ।
শাইখ আলবানী বলেনঃ
“মসজিদে নববীকে এর আগের আকৃতিতে ফিরিয়ে নেওয়া উচিত, মানে নবীর কবর আর মসজিদের মাঝে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর লম্বা দেয়াল থাকা উচিত, যা কবরকে মসজদ থেকে আলাদা করবে যাতে মসজিদে প্রবেশকারীর কাছে কোন শরীয়াহর খিলাফ প্রকাশ না পায়…” [কবরকে মসজিদে রূপান্তর, পৃ. ৭২-৭৬]
ইমাম আলবানী মসজিদে নববীর গঠনে পরিবর্তন আনতে বলেছেন। তিনি বলেন নি, রাসূলের কবর তুলে নিয়ে যাও।
৩য় মিথ্যা
বাদশাহ ফয়সাল ১৯৭৫ সালে খুন হয়, আর ইমাম আলবানী ১৯৮৩ সালে মদীনা ত্যাগ করেন। লোকেরা কি বাদশাহ ফয়সালের আত্মার কাছে অভিযোগ দিয়েছে?
ইমাম আলবানী কেন মদীনা ত্যাগ করেন?
শাইখ আলবানীর জীবনীতে, ঈদ আব্বাসি ও আলি খাশান বলেন যে, “…আল্লাহ তাঁকে সঠিক জ্ঞান দান করেছেন।…আহলে ইলমের অনেকেই সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, যা ইমাম আলবানী অনুসরণ করেছেন,…বিশেষ করে ইমাম ইবন তাইমিয়া ও তার ছাত্ররা।
…মুহাম্মাদ ইবন ইব্রাহিম আলী শাইখ যিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল ছিলেন, তিনি ইমাম আলবানীকে হাদিস বিভাগে নিযুক্ত করেন। ইমাম আলবানী খুবই আন্তরিক আর পরিশ্রমী ছিলেন। বিরতির সময় তিনি তার ছাত্রদের নিয়ে বালির উপর বসে থাকতেন।।..
আর তার এই নিয়ামানুবর্তিতা অনেককে হিংসুক করে তুলল, যাদের মধ্যে অনেক জ্ঞানীও ছিল, কারন ইমাম আলবানী তার ছাত্রদের ভালবাসা পেয়েছিলেন। আর তার প্রতি তার ছাত্রদের নিয়মিত আনাগোনা থাকত বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যখন কোন বনভোজনে যাওয়া হত তখনও।…
ইমাম আলবানী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময় আমি আমার কোন ছাত্রকে রাস্তায় পেলে সে যেই হোক না কেন, আমি তাঁকে আমার গাড়িতে তুলে নিতাম”।
…একবার ইমাম আলবানী ক্লাস শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে যান। আর কাজ শেষে তিনি উস্তাদ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহাব আল-বান্নাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। শাইখ আল-বান্না ইমাম আলবানীর গাড়িতে করে শহরে যেতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তারা এসে দেখলেন ইমাম আলবানীর গাড়িতে একগাদা ছাত্র বসে আছে। আর বসার মত সিট নেই। তাই বাধ্য হয়ে এক ছাত্রকে গাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হল।
সকালে যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন, তখন তার গাড়ি দেখা কঠিন হয়ে যেত, কারন তাকে এত ছাত্র ঘিরে ধরত যে, পিছনে কি আছে দেখা যেত না।
বিদ্বেষীদের পরিকল্পনা
এইসব ঘটনা অন্য শিক্ষকদের হিংসুক করে তোলে। তারা একের পর এক মিথ্যা সাক্ষী আর মিথ্যা অভিযোগ করা শুরু করে।
শাইখ আলবানী তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ শুনে বিরক্ত হয়ে বললেন, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি উত্তম কার্যনির্বাহী”।
শাইখ বিন বায সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, “আপনি যেখানেই থাকুন না কেন আল্লাহর হুকুম মানতে আপনি বাধ্য, সেখানেও কোন তফাৎ নেই [মানে, সিরিয়াতে থাকুন বা মদীনায় থাকুন]”।
তখন বুঝতে পারছিলাম, কেন ইমাম আলবানী আবু বকর সিদ্দিক [রাঃ] এর কথাগুলো বলতেন, “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে তাদের কথার পাকড়াও করবেন না। এবং তারা যা ভাবে তার চেয়ে আমাকে উত্তম করুন, আর তারা যা ভাবে না তার জন্য আমাকে মাফ করুন”।
উৎসঃ- আল-ইমাম আল-আলবানী, হায়াতুহু, দা’ওয়াতুহু, জুহুদুহু ফী খিদমাতিস সুন্নাহ, লেখক মুহাম্মাদ বাইয়ুম, পৃ. ১১৫-১১৭।
http://shaikhalbaani.wordpress.com/2011/04/14/shaikh-alalbaanis-life-questions-and-answers-12/
শাইখ আলবানী বলেন, “…সেই দিনের কথা আমার আজও মনে আছে,উসুল আল-ফিকহ এর শিক্ষক মু’আজ ইবন জাবাল [রাঃ] এর হাদিস পাঠ করলেন, “হে জাবাল, তুমি কি দিয়ে বিচার করবে…” তিনি এই হাদিসটিকে কিয়াস প্রমাণের জন্য ছাত্রদের সামনে পড়েন, ঘটনাটা ৩য় বর্ষের ছাত্র ভাই আব্দুর রহমান আব্দুল খালিক্ব-এর পাঠদান নিয়ে হয়েছিল, সে বলল, “শাইখ, এই হাদিস কি সহিহ”? সে বলল, “হ্যাঁ”। ছাত্ররা বলল, “আমরা শাইখ আলবানীকে বলতে শুনেছি যে, হাদিসটি মুনকার”।আমি জানি না তিনি কি উত্তর দিয়েছিলেন, তবে তিনি রাগ করেছিলেন বলে মনে হয়।
কিছু দিন পর তিনি আমার বাড়িতে এসে বললেন, “এটা কি সত্য যে, আপনি বলেছেন হাদিসটি মুনকার”? আমি বললাম, “হ্যা”। তিনি বললেন, “আপনি কি হাদিসটি নিয়ে কিছু লিখেছেন”? আমি বললাম, “হ্যা। ‘সিলসিলা যঈফাহ’-এর ২য় খন্ডে”। কিন্তু তা আমি তখনও ছাপাই নি। সে বলল, “আমি কি তা দেখতে পারি”? আর আমি তাঁকে তা দেখালাম, হাদিসটির সকল বর্ণনা আর এর ভিত্তিহীন ভুলগুলো।
তারপর অন্য এক ক্লাসে তিনি ছাত্রদের বললেন যে, হাদিসটি সহিহ। আর শাইখ আলবানী নিজেই রাবীদের অন্য সূত্র উল্লেখ করেছেন যা হাদিসটিকে শক্তিশালী করেছে- পক্ষান্তরে অন্য সূত্রগুলো আসলে দুর্বলকে আরও দুর্বল করছিল।
আর এই পরিস্থিতি যে, ছাত্ররা আমার চারপাশে ঘিরে থাকত তা অন্যদের ক্রোধে আলোড়ন তুলল। তারা দল তৈরি করে মুফতি বা বাদশাহর কাছে চিঠি পাঠাল। আর আমি এই ভয়ই করছিলাম।
৩য় বছরের শেষে আমি গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে দামাস্কাসে যাই। এর ১-২ সপ্তাহ পর আমার কাছে বিন বায-এর চিঠি আসে যে, এই বছরে আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি নবায়ন করা হবে না। তখন বিন বায, আল্লাহ তাঁকে পুরষ্কৃত করুক, ভাইস-প্রিন্সিপাল ছিলেন।
বিন বায বলেছিলেন, “আপনার মত যারা আছে, তারা যে পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন, তার উপর যা বাধ্যতামূলক তা পালন করেন”।
উৎসঃ- আল-ইমাম আল-আলবানী, হায়াতুহু, দা’ওয়াতুহু, জুহুদুহু ফী খিদমাতিস সুন্নাহ, লেখক মুহাম্মাদ বাইয়ুম, পৃ. ৩০-৩৩।
http://shaikhalbaani.wordpress.com/2011/04/14/shaikh-alalbaanis-life-questions-and-answers-12/
সবশেষে মাজহাবীদের কিছু উদ্ধৃতি দেই-
“প্রত্যেক আয়াত যা আমাদের ফুকাহার বিপক্ষে যাবে, আমরা তা মানসুখ বলব বা আমাদের পক্ষে ব্যাখ্যা করব। এবং এটা আরও ভাল যদি আয়াতের তা’বীল করা হয়, যেন সঙ্গতি রক্ষিত হয়”। (اصول الکرخی ص )۸
“একইভাবে প্রত্যেক হাদীছ যা আমাদের ফুকাহার বিপক্ষে যাবে, আমরা তা মানসুখ বলব বা বলব যে এটা অনুরুপ আরেকটি হাদীছের বিপরীত”। (اصول الکرخی ص۹۲
কাজেই মাজহাবীদের অনুসরণ না করে, মুহাদ্দিসদের অনুসরণ করা অনেক ভাল। এতে রাসূলের অনুসরণ হয়।
ইমাম মুসলিম তার সহিহ মুসলিমের মুকাদ্দিমায় লিখেন, “আর আমরা হাদীস ও হাদীস বর্ণনাকারীদের কয়েকটি মূলনীতির ব্যাখ্যা দিলাম, যাতে যিনি মুহাদ্দিসগণের পথ অনুসরণ করার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং আল্লাহ তা’আলা যাকে এ পথে চলার তাওফীক দান করেন, তিনি এ দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে পারেন।“
যারা বলে যে, শুধু মুহাদ্দিসরা হল আহলে হাদিস। তাদের উদ্দেশ্য উত্তর এটা। ইমাম মুসলিম মুহাদ্দিসদের পথ অনুসরণ করতে বলেছেন।
৫ম হিজরী শতকে মৃত্যুবরণকারী আবু মানছূর আব্দুল ক্বাহের বিন ত্বাহের আত-তামীমী আল-বাগদাদী (মৃঃ ৪২৯ হিঃ) স্বীয় গ্রন্থে বলেছেন,
فِيْ ثُغُوْرِ الرُّوْمِ وَالْجَزِيْرَةِ وَثُغُوْرِ الشَّامِ وَثُغُوْرِ آذَرْبَيْجَانَ وَبَابِ الْأَبْوَابِ كُلُّهُمْ عَلَى مَذْهَبِ أَهْلِ الْحَدِيْثِ مِنْ أَهْلِ السُّنَّةِ
‘রোম সীমান্ত, আলজেরিয়া, সিরিয়া, আযারবাইজান এবং বাবুল আবওয়াব (মধ্য তুর্কিস্তান) প্রভৃতি এলাকার সকল মুসলিম অধিবাসী আহলে সুন্নাতের মধ্য থেকে আহলেহাদীছ মাযহাবের উপরে ছিলেন’। [উছূলুদ দ্বীন, পৃঃ ৩১৭।]