খায়বার যুদ্ধ নাকি খায়বার ডাকাতি
লিখেছেন: ' Mahir' @ সোমবার, অগাষ্ট ১৪, ২০১৭ (৮:৩১ অপরাহ্ণ)
নাস্তিকরা আজকাল ইতিহাস বিকৃত করে প্রচার করছে। তাই এই পোস্ট না দিয়ে আর পারলাম না। খায়বারের যুদ্ধ নিয়ে নাস্তিকরা ৩ টি অভিযোগ এনেছে।
১] রাসূলুল্লাহ [সাঃ] অযথাই তাদের আক্রমণ করেছেন। মানে, খায়বারবাসী ধোয়া তুলসী পাতা।
২] রাসূলুল্লাহ [সাঃ] নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মানে, খায়বারবাসী জানতই না যে, তাদের আক্রমণ করা হবে।
৩] ঘুমন্ত মানুষের উপর আক্রমণ কেন করল?
১] খায়বারবাসীর অপরাধ কি?
খায়বার ছিল মদীনার উত্তরে আশি (৮০) কিংবা ষাট মাইল দূরত্বে অবস্থিত একটি বড় শহর। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন সেখানে একটি দূর্গ ছিল এবং চাষাবাদেরও ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে সেটি একটি জন বসতি এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখানকার আবহাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য তেমন উপযোগী নয়।
হুদায়বিয়াহর সন্ধির ফলে রাসূলে কারীম (সাঃ) যখন আহযাব যুদ্ধের তিনটি শক্তির মধ্যে সব চাইতে শক্তিশালী দল কুরাইশদের শত্রুতা থেকে মুসলিমগণকে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত মনে করলেন, তখন অন্য দু’টি শক্তি ইহুদী ও নাজদ গোত্রসমূহের সঙ্গেও একটি সমঝোতায় আসার চিন্তাভাবনা করতে থাকলেন। উদ্দেশ্য ছিল এ সকল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শত্রুতা ও বৈরীভাব পরিহারের মাধ্যমে মুসলিমগণের শান্তি ও স্বস্তিপূর্ণ নিরাপদ জীবন যাপন এবং ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে অধিক পরিমাণে আত্মনিয়োগ।
যেহেতু খায়বার ছিল বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারী ও কোন্দলকারীদের আড্ডা, সৈনিক মহড়ার কেন্দ্র এবং প্ররোচনা, প্রবঞ্চনা ও যুদ্ধের দাবানল সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু সেহেতু এ স্থানটি সর্বাগ্রে মুসলিমগণের মনোযোগদানের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। এ প্রসঙ্গে এখন একটি প্রশ্ন উঠতে পারে যে, খায়বার সম্পর্কে মুসলিমগণের যে ধারণা তা যথার্থ ছিল কি না, এ ব্যাপারে মুসলিমগণের ধারণা যে যথার্থ ছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
-
কারণ, এ খায়বারবাসী খন্দক যুদ্ধে মুশরিক শক্তিগুলোকে সংগঠিত করে মুসলিমগণের বিরুদ্ধে লিপ্ত হতে সাহায্য এবং উৎসাহিত করেছিল। তাছাড়া, মুসলিমগণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্য এরাই বনু কুরাইযাহকে সর্বতোভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল। অধিকন্তু, এরাই তো ইসলামী সমাজের পঞ্চম বাহিনীভুক্ত মুনাফিক্বদের সঙ্গে, আহযাব যুদ্ধের তৃতীয় শক্তি বনু গাত্বাফান এবং বেদুঈনদের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ রেখে চলছিল এবং নিজেরাও যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। তাঁরা তাদের এ সমস্ত কার্যকলাপের মাধ্যমে মুসলিমগণের একটা চরম অস্বস্তিকর অবস্থা ও অগ্নি পরীক্ষার মধ্যে নিপতিত করেছিল। এমন কি নাবী কারীম (সাঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র তারা করেছিল। এ সমস্ত অস্বস্তিকর অবস্থার প্রেক্ষাপটে অন্যন্যোপায় হয়ে মুসলিমগণ বার বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছিলেন। এ সকল যুদ্ধের মাধ্যমে কোন্দল সৃষ্টিকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের নেতা ও পরিচালক সালামাহ বিন আবিল হুকাইক এবং আসির বিন যারেমকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। অথচ শত্রুমনোভাবাপন্ন ইহুদীদের শায়েস্তা করার ব্যাপারটি মুসলিমগণের জন্য ততোধিক প্রয়োজনীয় ছিল।
রাষ্ট্রের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার জন্য আজকের আধুনিক আইন মৃত্যুদন্ড দিত।
Any person who—
(1) aids, or attempts to aid, the enemy with arms, ammunition, supplies, money, or other things; or
(2) without proper authority, knowingly harbors or protects or gives intelligence to, or communicates or corresponds with or holds any intercourse with the enemy, either directly or indirectly;
shall suffer death or such other punishment as a court-martial or military commission may direct. This section does not apply to a military commission established under chapter 47A of this title.
(Aug. 10, 1956, ch. 1041, 70A Stat. 70; Pub. L. 109–366, § 4(a)(2), Oct. 17, 2006, 120 Stat. 2631.)
কিন্তু এ ব্যাপারে যথাযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণে মুসলিমগণ যে কারণে বিলম্ব করেছিলেন তা হচ্ছে, কুরাইশ মুশরিকগণ ইহুদীদের তুলনায় অনেক বেশী শক্তিশালী যুদ্ধভিজ্ঞ ও উদ্ধত ছিল এবং শক্তি সামর্থ্যে মুসলিমগণের সমকক্ষ ছিল। কাজেই কুরাইশদের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ার পূর্বে ইহুদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে শক্তি ও সম্পদ ক্ষয় করাকে নাবী কারীম (সাঃ) সঙ্গত মনে করেন নি। কিন্তু কুরাইশদের সঙ্গে যখন একটা সমঝোতায় আসা সম্ভব হল তখনই ইহুদীদের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার অবকাশ তিনি লাভ করলেন এবং তাদের হিসাব গ্রহণের জন্য ময়দান পরিস্কার হয়ে গেল।
২] খায়বারবাসী কি নিরস্ত্র ছিল?
প্রথমত, খায়বারবাসী অপরাধী। তারা এমনিতেও শাস্তির যোগ্য। কাজেই তারা নিরস্ত্র ছিল নাকি সশস্ত্র ছিল, এমন প্রশ্ন আসবে কেন?
দ্বিতীয়ত, খায়বারবাসী জানত যে, তাদের উপর আক্রমণ হবে। ইসলাম কখনো শত্রুকে যুদ্ধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না করে যুদ্ধের অনুমতি দেয় না। এখন খায়বারে দূত পাঠানোর কোন প্রয়োজন নেই। কারন, তারাই লেজে পাড়া দিয়ে যুদ্ধ বাধাতে চেয়েছে। [যা উপরে লেখা হয়েছে] সুতরাং, দূত পাঠিয়ে জানানোর কি দরকার?
খায়বারবাসী সবকিছুই জানত তার প্রমাণঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খায়বার অভিযানের প্রাক্কালে মুনাফিক্বগণ ইহুদীদের সাহায্যার্থে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মুনাফিক্ব নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই খায়বারের ইহুদীগণের নিকট এ মর্মে সংবাদ প্রেরণ করে যে, ‘এখন মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছেন। অতএব, তোমরা হুশিয়ার হয়ে যাও এবং উত্তম প্রস্তুতি গ্রহণ কর। দেখ, তোমরা ভুল কর না যেন। উত্তম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাক, ভয়ের কিছুই নেই। কারণ, এক দিকে তোমাদের যেমন সংখ্যাধিক্য রয়েছে, অন্যদিকে তেমনি অস্ত্রশস্ত্র এবং মাল সামানও অধিক রয়েছে। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জনবল যেমন সামান্য, অন্যদিকে তেমনি তিনি প্রায় রিক্তহস্ত তাঁর অস্ত্রশস্ত্র খুব সামান্যই আছে।’
খায়বারবাসী যখন এ সংবাদ অবগত হল তখন বনু গাতফানের সাহায্য লাভের জন্য তারা কেননা বিন আবিল হুক্বাইক্ব এবং হাওয়া বিন ক্বায়সকে সেখানে প্রেরণ করল। কারণ, বনু গাত্বাফান ছিল খায়বারবাসীগণের মিত্র এবং মুসলিমগণের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্যকারী। বনু গাতফানের নিকটে তারা এ প্রস্তাবও পাঠাল যে, যদি তারা মুসলিমগণের বিরুদ্ধে জয়লাভে সক্ষম হয় তাহলে খায়বারের উৎপন্ন দ্রব্যের অর্ধেক তাদের দিয়ে দেয়া হবে।
৩] তারা কি ঘুমন্ত ছিল?
আসলে তারা ঘুমিয়ে ছিল না।
যে প্রভাতে খায়বার যুদ্ধ আরম্ভ হয় মুসলিম সৈন্যদল তার পূর্ব রাত্রি খায়বারের সন্নিকটে অতিবাহিত করেন। কিন্তু ইহুদীগণ এ ব্যাপারে কোন খবর পায় নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিয়ম ছিল, কোন সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ পরিচালনা করতে চাইলে সেখানে গিয়ে রাত্রি যাপন করতেন এবং সকাল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ পরিচালনা করতেন না। এ প্রেক্ষিতে রাত যখন শেষ হওয়ার উপক্রম হল তখন অন্ধকার থাকা অবস্থায় তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর ঘোড়সওয়ার মুসলিম সৈন্যগণ খায়বার অভিমুখে অগ্রসর হলেন। এদিকে খায়বারবাসীগণ তাদের প্রাত্যহিক কাজের ন্যায় আজও চাষাবাদের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু অগ্রসরমান মুসলিম সৈন্যদের হঠাৎ দেখতে পেয়ে তারা শহরের দিকে দৌড় দিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে বলতে থাকল যে, ‘আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর সৈন্য সহকারে এসে গেছেন। নাবী কারীম (সাঃ) এ দৃশ্য দেখে বললেন, (اللهُ أَكْبَرُ، خَرِبَتْ خَيْبَرَ، اللهُ أَكْبَرُ، خَرِبَتْ خَيْبَرَ، إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِيْنَ) ‘আল্লাহ আকবর, খায়বার ধ্বংস হল, আল্লাহ আকবর খায়বার ধ্বংস হল। যখন কোন সম্প্রদায়ের ময়দানে অবতরণ করি যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয় তাদের সকাল মন্দ হয়ে যায়। [সহীহুল বুখারী খায়বার যুদ্ধ অধ্যায় ২য় খন্ড ৬০৩-৬০৪ পৃঃ।]
আর তারা ঘুমিয়ে থাকলেও এটা তাদের দোষ। যুদ্ধ অনিবার্য জেনেও তারা নিশ্চিন্ত থাকবে কেন? আর রাসূল [সাঃ] তো একজন দক্ষ সমরবিদ। সে এমন সময়েই আক্রমণ করবে, যে সময়ে কেউ মুসলিমদের উপস্থিতি আশা করবে না। এটাই তো বুদ্ধিমত্তা। কিন্তু আমাদের নাস্তিক ভাইয়েরা কাফিরদের প্রতি কোমল কিনা! কাফিরদের বোকামি তাদের হৃদয়ে বেদনার সঞ্চালন করে।
[সকল তথ্য আর-রাহীকুল মাখতূম থেকে নেয়া হয়েছে]
আরও পড়ুনঃ মুসলমানদের খায়বার আক্রমণ ছিল অমানবিক?
লিখে যান…..