দাহাহা ছাড়াও পৃথিবী গোল:একটু ইজতিহাদ
লিখেছেন: ' Mahir' @ বুধবার, নভেম্বর ২৯, ২০১৭ (১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
সূচনা
চেম্বারে বসে অলস সময় পার করছিলাম। এরকম অবস্থায় আমি সাধারণত ঝিমানো শুরু করি।বিশেষ করে,যেদিন ৬ ঘন্টার কম ঘুমাই,দুপুর গড়িয়ে আসলে আমার ঝিমানো শুরু হয়।সেদিনও মাত্র ঝিমানো শুরু করেছিলাম, কিন্তু একটা কাজ জুটে গেল।
“আব্দুল মুকসিত সাহেব আছেন কি?”,পাশের কক্ষে আমার সেক্রেটারিকে কেউ জিজ্ঞেস করল।
-”হ্যা,আছেন।আপনি?”
-”আমি রানা রোজারিও।উনার সাথে দেখা করতে চাই।”
-”কি বিষয়ক কেস?”
রানা সাহেব বললেন, “আমার বন্ধু শাবাব পীড়াপীড়ি করছিল উনার সাথে দেখা করার জন্য।কোন কেস নিয়ে নয়।কিছু ব্যক্তিগত কথা।”
আমি বললাম, “আসুন,আমি ভেতরেই আছি।”
ভদ্রলোক এসে বসলেন। ২ কাপ কফি আনতে বলে জিজ্ঞাসা করলাম,”তো কি করতে পারি আপনার জন্য?”
-”আপনি কিছু মনে করবেন কিনা জানি না,আসলে আমি কিছু ধর্মীয় ব্যাপারে কথা বলতে চাই।”
আমি বললাম, “দেখুন,আমি তো সবজান্তা নই।তবে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করব।আপনি বলতে পারেন।”
মূল অংশ
রানা বললেন, “আপনি কি মনে করেন পৃথিবী গোল নাকি সমতল? ”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “আমি মনে করি,গোল।কেন?”
উনি বললেন, “অনেক মুসলিম মনে করে সমতল। ”
-করতে পারে।কেন?
-কুরয়ান কি বলে?
-সরাসরি কিছু বলা নেই।আবার বলা আছেও,কিন্তু সেটা আপনি হয়তো মানবেন না।
-দাহা-এর কথা বলছেন? দাহা মানে ঊটপাখির ডিম নয়। [সুরা নাযি'আত-এর ৩০ নাম্বার আয়াত]
আমি বললাম, “হতে পারে।তবে আরব ও মিশরের অনেককের সাথে আমি অনলাইনে কথা বলেছি,তারা কিন্তু দাহা মানে ডিম্বাকৃতি বলেছে। যাই হোক,আপনি কি মনে করেন? আর পৃথিবীকে ডিম বললেও কি সমস্যা? এর বিভিন্ন স্থানে উচ্চ মাত্রার বক্রতা আছে।”
রানা সাহেব বললেন,”আমার মনে হওয়া না হওয়া বিষয় না।হাদিস পড়লেই বুঝা যায় যে,পৃথিবী সমতল। উদাহরণস্বরূপ -
আবূ যার (রাঃ) একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কি জান, এ সূর্য কোথায় যায়? সহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) ‘আর্শের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং ‘আর্শের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথারীতি ‘আর্শের নীচে তার অবস্থানে যাবে। তাকে বলা হবে, উঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (কুরআনের বাণী) “কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জান? সেদিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি”-(সূরাহ আল-আন’আম ৬ : ১৫৮)। [৬৬] (ই.ফা. ২৯৬; ই.সে. ৩০৭)(সহিহ মুসলিম)
“তো এই হাদিস থেকে আপনি কি বুঝলেন? “,আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
সে উত্তর দিল,”এর মানে পৃথিবী সমতল।মানুষ এর উপরের পৃষ্ঠে থাকে আর রাতে সূর্য পৃথিবীর নিচে থাকে।”
আমি বললাম,”আপনি কি একটা ছবি একে দেখাতে পারেন যে,এই হাদিসের মতে সৌরজগৎ কেমন?”
সে ছবি আঁকতে আঁকতে কফি চলে আসল।তারপর কফি খেতে খেতে আমি তার হাদিসবিদ্যা অনুসারে পৃথিবীর ডিজাইন দেখলাম। ছবিটা হল এই-
আমি বললাম, “আসলে একটা ভুল সাধারণত অধিকাংশ লোক করে।ভুলটা হল,একটা হাদিস পড়েই সিদ্ধান্ত প্রদান করা,আর বাদবাকি সকল দলিলাদি উপেক্ষা করা।কুরয়ানে বলা হয়েছে সূর্য প্রতিদিন একাধিক বার উদিত হয়।কিন্তু আপনার ছবি অনুসারে একাধিক বার উদিত হওয়া সম্ভব নয়”।(তিনি দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিমের রব।-সূরা আর রাহমান ১৭)
সে বলল,”ঠিক আছে,তাহলেও সমস্যা নেই।ঐ আয়াতে গোল প্রমাণিত হলেও, গোলক প্রমাণ হয় বলে মনে করি না। আরেকটা ছবি দেখুন-
আমি বললাম, “এখানে তো আকাশকে গম্বুজের মতো লাগছে।আল্লাহ বলেছেন যে,তিনি খুটিবিহীন আকাশ সৃষ্টি করেছেন,আর এর মাঝে রয়েছে নিদর্শন। যদি আকাশ গম্বুজের মতই হয়,তাহলে খুটির কি দরকার? আর সেক্ষেত্রে খুটি ছাড়া আকাশ সৃষ্টি কি করে নিদর্শন হয়?আপনি তো আকাশের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিলেন। “(আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তোমরা তা দেখছ।… তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন-সূরা রাদ ২)
সে বলল,”আমার কাছে এসব ফালতু যুক্তির কোন দাম নেই।”
আমি বললাম, “আটকে গেলে লোকেরা সাধারণত এটাই বলে।”
সে বলল,”আচ্ছা,তাই নাকি?ঠিক আছে,আমি এবার বুঝলাম যে-ইসলামি সৌরজগৎ আসলে এরকম-
আমি ছবিটা দেখে বললাম যে,”একবার ভেবে দেখুন তো,১৪০০ বছর আগে কেউ এরকম মডেলের প্রস্তাবনা করেছিল কিনা?তখন কারো পক্ষে এধরনের চিন্তা করা সম্ভব ছিল কিনা?শূণ্যে ভাসমান পৃথিবীর কথা তখনকার লোকে কল্পনা করে নি।”
রানা সাহেব বললেন, “তা তো জানি না।তবে আমি যদি বলি কুরয়ানের মতে সৌরজগৎ এরকম,then how will you prove me wrong? ”
আমি বললাম,”খুব সহজ,আপনি যে ছবি দেখাচ্ছেন তা সঠিক হলে,যুলকারনাইনের নিকট কখনওই সূর্য পানিতে ডুবছে বলে মনে হত না।আপনার ছবি অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোন বিন্দু থেকে সূর্য পর্যন্ত সরলরেখা আকা সম্ভব, আর সেক্ষেত্রে সূর্য কখনওই দিগন্তের নিচে যেত না,আর যুলকারনাইনের নিকট সূর্য পানিতে ডুবছে বলে মনে হতো না। [সূরা কাহাফ - ৮৬]
মনে হয়,যুলকারনাইনের আয়াত যা পৃথিবী সমতল প্রমাণের জন্য কেউ কেউ ব্যবহার করতে চায়,সেই আয়াতই এখন পৃথিবীকে গোলক প্রমাণ করল।একে বলে-আমার বিলাই আমারে কয় ম্যাও।
রানা বললেন, “সব অপব্যাখ্যা”।
আমি বললাম, “কেন?এটা আমার ইজতিহাদ।আর এতে কোন ফাক নেই। আগেই প্রমাণ করেছি পৃথিবী গোল, আর মাত্র গোলকও প্রমাণ করে দিলাম।”
-এখানে গোলক প্রমাণ হয় নি।
- সূরা আর রাহমান ও সূরা কাহাফের মধ্যে সমতা আনতে গেলে গোলক ছাড়া অন্য কোন মডেল খাপ খায় না।
রানা বললেন, “আপনার চেয়ে বড় বড় মুজতাহিদ পৃথিবী সমতল বলে গেছেন। ”
-তারা ভুল বলেছেন।কুরয়ান পৃথিবীকে সমতল বলে নি। অনেক মুফাসসির গোলক বলেছেন।
-তাহলে যারা সমতল বলেছেন, তারা তো কুরয়ানের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার দলে, মানে কাফির হয়ে গেছেন, তাই না?”
-না,তাওয়ীলের ভিন্নতার জন্য তাকফীর করা যায় না। আচ্ছা একটু ভাবুন, মিরাজের রাতে রাসূল [সাঃ] বুরাকের পিঠে চড়ে প্রথমে আল-আক্বসা মসজিদে গেলেন, পরে সরাসরি উপরের দিকে যাত্রা করলেন কেন? সেদিন রাতে আল্লাহ রাসূলকে নিদর্শন দেখানোর জন্য নিয়েছিলেন।
কোরআন ১৭ঃ১ “পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।”
কাজেই সমতল পৃথিবীর মডেল অনুযায়ী, রাসূল [সাঃ] বুরাকের পিঠে চড়ে একটু উঁচু দিয়েই ভূমি বরাবর উড়ে যেতে পারতেন। সমতল পৃথিবীর মডেল অনুযায়ী, সোজা উপরে গেলেও যে সময় লাগত, ভূমি বরাবর উড়ে গেলেও একই দূরত্ব অতিক্রম করতে হত। মধ্য থেকে লাভ যা হত সেটা হল, মহাবিশ্ব তো ভ্রমণ হতই, সেই সাথে সারা পৃথিবীও ভ্রমণ হত। কিন্তু গোলক পৃথিবীর কারনে তিনি [সাঃ] সারা পৃথিবী একবার চক্কর দিতে যান নি, বরং সরাসরি উপরের দিকে উঠে গেলেন।
যান বাদ দিন, অন্তত একটা বিষয় তো খুব সহজেই বুঝা যায়,আল্লাহ হাশরের দিন পৃথিবীকে সমতল করবেন। পৃথিবী যদি সমতলই হয়,তবে একে আবার সমতল করবেন কেন বলবেন? (সূরা ইনশিক্বাক, ৩)
-যথেষ্ট হয়েছে ধাপ্পাবাজি। কফির জন্য ধন্যবাদ।
-একটা কথা জানেন?আপনি যদি অন্তরকে বক্র করেন তো বক্রতা আরও বাড়বে, আর কুরয়ানকে ভুলই মনে হবে।সহজভাবে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।আল্লাহ সহজ করে দিবেন,আশা করি।
অবশ্যই পড়ুনঃ দাহাহা ছাড়াও পৃথিবী গোলঃ আরেকটি ইজতিহাদ