বনু নাযীরের পাপের ফর্দ
লিখেছেন: ' Mahir' @ মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৫, ২০১৭ (১০:৪৭ অপরাহ্ণ)
নাস্তিকদের হিরো বনু নাযীরের সততা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় এসে অন্যদের ন্যায় তাদের সাথেও শান্তি চুক্তি করেন। তাতে বলা ছিল যে, কেউ কারু বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না।কুরাইশ ও তাদের সহায়তাকারীদের আশ্রয় দেয়া চলবে না।[ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৫০৩-৫০৪ পৃঃ] শত্রুকে সাহায্য করবে না। রক্তমূল্য আদায়ের সময় পরস্পরকে সাহায্য করবে। সকলে রাসূলকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে মদীনাকে রক্ষা করবে।
২য় হিজরীর ৫ই যিলহাজ্জ রবিবার। বদর যুদ্ধে লজ্জাকর পরাজয়ে কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ান শপথ করেছিলেন যে, মুহাম্মাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত তার মস্তক নাপাকীর গোসলের পানি স্পর্শ করবে না। সেই প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য তিনি ২০০ উষ্ট্রারোহী নিয়ে রাতের বেলায় গোপনে মদীনায় এসে ইহূদী গোত্র বনু নাযীর নেতা ও তাদের কোষাধ্যক্ষ সাল্লাম বিন মিশকামের সঙ্গে শলা পরামর্শ শেষে রাতেই মক্কায় রওয়ানা হয়ে যান। কিন্তু যাওয়ার আগে একটি দল পাঠিয়ে দেন। যারা মদীনার উপকণ্ঠে ‘উরাইয’ (العُرَيض) নামক স্থানে একটি খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেয় এবং সেখানে দায়িত্বরত একজন আনছার ও তার এক মিত্রকে হত্যা করে ফিরে যায়।[ইবনু সা‘দ ২/২২-২৩; ইবনু হিশাম ২/৪৪-৪৫; যাদুল মা‘আদ ৩/১৬৯-৭০; আর-রাহীক্ব ২৪০ পৃঃ।]
ইসলাম এবং মুসলিমগণের নামে ‘ইহুদীগণ জ্বলে পুড়ে’ যেতে থাকে। কিন্তু যেহেতু তারা ছিল ভীরু ও কারপুরুষ এবং যুদ্ধের ময়দানে পেরে ওঠার ক্ষমতা তাদের ছিল না, সেহেতু তারা শঠতা ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করত। যুদ্ধের পরিবর্তে তারা ষড়যন্ত্র ও হীন কূটকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে নানাভাবে দুঃখ-কষ্ট দেয়ার কাজে লিপ্ত থাকত। অবশ্য বনু ক্বায়নুক্বার দেশত্যাগ করার ফলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে এবং তাদের চক্রান্তমূলক কাজকর্মে কিছুটা ভাটা পড়ে যায়। কিন্তু উহুদের যুদ্ধের পর তাদের পূর্বের আচরণ ধারায় আবার তারা ফিরে আসে, অর্থাৎ চক্রান্তমূলক ক্রিয়াকর্ম পুনরায় শুরু করে দেয়। তারা প্রকাশ্যে শত্রুতা আরম্ভ করে, অঙ্গীকার ভঙ্গ এবং মদীনার মুনাফিক্ব ও মক্কার মুশরিকদের সাহায্য করতে থাকে।[সুনানে আবূ দাউদ শারাহ আওনূল মা’বূদ সহ ৩য় খন্ড ১১৬-১১৭ পৃঃ, ‘খবরে নাযীর’ অধ্যায়ের বর্ণনা হতে এ কথা গৃহীত হয়েছে। দ্র: সুনানে আবূ দাউদ।]
মুনাফিকদের সাহায্য ও কুরাইশদের সাথে যোগাযোগের অপরাধের জন্য তাদের হত্যা করা যেত। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা:) তাদের সুযোগ দিচ্ছিলেন।
Any person who–
(1) aids, or attempts to aid, the enemy with arms, ammunition, supplies, money, or other things; or
(2) without proper authority, knowingly harbors or [protects or gives intelligence to or communicates or corresponds with or holds any intercourse with the enemy, either directly or indirectly;
shall suffer death or such other punishment as a court-martial or military commission may direct. (দেখুন)
বনু নাযীরের নেতারাও ছিল ইসলামের ঘোরতর শত্রু যেমন-কা‘ব বিন আশরাফ। বনু কুরাইযাহর ন্যায় বনু নাযীর গোত্রের নিকৃষ্ট শয়তান ও আহযাব যুদ্ধের বড় অপরাধী হুয়াই বিন আখতাব। এছাড়া সালাম বিন আবুল হুক্বাইক্ব, সালাম ইবনু মুশকিম প্রমুখ ছিল এদের নেতা। অর্থ-বিত্তে ও অস্ত্র-শস্ত্রে সমৃদ্ধ হ’লেও তারা কখনো সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হ’ত না। ভীরু ও কাপুরুষ হওয়ার কারণে সর্বদা শঠতা-প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের কুট-কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকতো।
নাস্তিকদের দাবি বনু নাযীরের উপর নাকি অযথাই মিথ্যা অভিযোগ এনে আক্রমণ করা হয়েছে।
অবশ্যই পড়ুনঃ বনু নাযীর যুদ্ধের প্রকৃত কারণ
নাস্তিকরা বলে থাকে যে, গাছ কেন পোড়ানো হয়েছিল?
জবাব খুব সহজ। ইহুদীরা গাছের আড়ালে থেকে যুদ্ধ করছিল। এতে তাদের আক্রমণ করা কঠিন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে একজন সেনা নায়ক কি করবেন? নিজের যোদ্ধাদের মরতে দিবেন? নাকি শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য গাছ কেটে দিবেন? কোনটা বুদ্ধিমানের কাজ?
একটি দুর্বল বর্ণনা
ফিরে এলো বনু নাযীর
নাস্তিকরা বরাবরের মতই ইহুদীদের নিষ্পাপ বানাতে ইচ্ছুক। দেখা যাক, ইহুদীরা কতটা নিষ্পাপ। রাসূল [সাঃ] তাদের ছেড়ে দিলেও তারা আবার ফিরে এলো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাবার জন্য।
খন্দকের যুদ্ধ
বনু নাযীর গোত্রের ২০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মক্কার কুরাইশগণের নিকট উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকে এবং যুদ্ধে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্যও নিশ্চয়তা প্রদান করে। সেহেতু উহুদ যুদ্ধের দিন কুরাইশরা পুনরায় মুসলিমগণের সঙ্গে বদরে মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন করতে ব্যর্থ হয় এবং এর ফলে যোদ্ধা হিসেবে তাদের যে সুখ্যাতির হানি হয় তা পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যেই বনু নাযীরের প্রস্তাব তাদের উৎসাহিত করে এবং তারা তা মেনে নেয়।[আর রাহীকুল মাখতূম ,অধ্যায়-গাযওয়ায়ে আহযাব (খন্দক বা পরিখার যুদ্ধ)]
হত্যার চেষ্টা
৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খায়বর বিজয়কালে ইহুদী বনু নাযীর নেতা সাল্লাম বিন মিশকামের স্ত্রী যয়নব বিনতুল হারেছ তাঁকে দাওয়াত দিয়ে বকরীর ভুনা রানের বিষমিশ্রিত গোশত খেতে দেয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই গোশত মুখে দিয়ে চিবানোর পর না গিলে ফেলে দেন (فَلَمْ يُسِغْهَا، وَلَفَظَهَا) এবং বলেন, এই হাড্ডি আমাকে বলছে যে এতে বিষ মিশানো আছে’।[সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৩৩৭-৩৮; আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ ৩৪৭ পৃঃ।]
পড়ুনঃ – বনু নাযীর: মায়াকান্নার সমাপ্তি!