পৃথিবী গতিশীল হওয়ার প্রমাণ
লিখেছেন: ' Mahir' @ বুধবার, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭ (২:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
ইবনে আল-শাতির[১৩৭৫]-এর বুধ গ্রহের আবির্ভাব বিষয়ক মডেল, এখানে তুসি-যুগল ব্যবহার করে এপিসাইকেল দেখানো হয়েছে, ফলে টলেমির ভূকেন্দ্রিক মডেলকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ডেভিড কিং-এর মতে, ইসলামের উত্থানের পর, কিবলা এবং নামাজের সময় নির্ধারণ করার বাধ্যকতা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অগ্রগতিতে অনুপ্রাণিত করে।
King, David A. (২০০৫-০৬-৩০)। In Synchrony with the Heavens, Studies in Astronomical Timekeeping and Instrumentation in Medieval Islamic Civilization: The Call of the Muezzin 1। Brill Academic Pub। পৃ: xvii। ISBN 90-04-14188-X। “And it so happens that the particular intellectual activity that inspired these materials is related to the religious obligation to pray at specific times. The material presented here makes nonsense of the popular modern notion that religion inevitably impedes scientific progress, for in this case, the requirements of the former actually inspired the progress of the latter for centuries.
আল্লাহ তা’আলা সরাসরি কুরআন মাজীদে পৃথিবীকে গতিশীল বলেন নি। কারন, আমাদের পিতৃপুরুষরা যেহেতু পৃথিবীকে স্থির ভাবত, সেহেতু হঠাত করেই পৃথিবীকে গতিশীল বলে দিলে আমাদের পিতৃপুরুষরা হয়তো শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ইসলাম ত্যাগ করত, আর আমরা শান্তির ধর্মে জন্ম নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারতাম না। তাই আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন কিছু কৌশল গ্রহণ করেছেন। তিনি কিছু ইঙ্গিতের দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, পৃথিবী গতিশীল। কুরআনের অনেক কথাই উপযুক্ত সময়ের আগে অনুধাবন করা যায় না। বিশেষ করে কিয়ামাতের আয়াতগুলো সঠিক সময়ের আগে সঠিকভাবে অনুধাবন করা প্রায় অসম্ভব। একইভাবে, আধুনিক যুগ আসার আগেই পৃথিবীর গতি নিয়ে কুরআনের ইঙ্গিতগুলো অনুধাবন করা সম্ভব হয় নি। সূর্য ও পৃথিবী উভয়টাই ঘুরে। কুরআনে কারীম বলছে-
১. وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। [সূরা আম্বিয়া : ৩৩]
২. لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُون
“সূর্য নাগাল পেতে পারেনা চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলতে পারে না দিনের। সবাই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। [সূরা ইয়াসীন : ৩৮-৪০]
আয়াতে কুল্লুন [كُلٌّ] মানে ‘সবাই’।
সরাসরি পৃথিবীর কথা উল্লেখ না থাকলেও পৃথিবীকে আকাশে অবস্থিত বলেই উলামা মনে করতেন।
ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ আকাশের সকল বস্তুই গোল- যেহেতু সকল জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদরা এটাই বলেন। আবুল হুসাইন ইবনে আল-মুনাদি [রাহঃ], আবু মুহাম্মাদ ইবনে হাযম [রাহঃ], আবুল ফারাজ ইবনে আল জাওযীর মতো মুসলিম মনীষীদের মতামত হলঃ মুসলিম উলামা এব্যাপারে সহমত। বস্তুত, আল্লাহ তা’আলা বলেন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই ফালাকে বিচরণ করে। [ সূরা ২১ আয়াত ৩৩] ইবনে আব্বাস [রাঃ] বলেন, ফালাক মানে চড়কা [সাইকেলের চাকার মত]
ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ ফালাক মানে গোল। [মাজমু আল-ফাতওয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৫৬৬-৫৬৭]
তিনি [মাজমু আল-ফাতওয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃঃ ৫৬৫-৫৬৬]-তে বলেন যে,
যেহেতু পৃথিবীর অপর পার্শ্ব পানি দ্বারা বেষ্টিত [তখনও আমেরিকা আবিষ্কৃত হয় নি, কাজেই আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে কোন ভূখন্ড নেই বলেই তখনকার লোকেরা মনে করত] আর সেখানে কোন মানুষ বা এরকম কিছুই নেই। এমনকি যদিও আমরা ধরে নিই যে অপর পার্শ্বে মানুষ আছে, এরকম ক্ষেত্রেও তারা পৃথিবীর পৃষ্ঠেই আছে। অপর পার্শ্বের লোকেরা এই অংশের মানুষদের নিচে নয়, আবার এই অংশের লোকেরা অপর পাশের মানুষেরও নিচে নয়। কারন প্রত্যেক গোলকীয় বস্তু একটি বিন্দুকে [মারকাজ] ঘিরে থাকে [বুঝা গেল, তিনি গোলক কি সেটা সাধারণ মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন] গোলকীয় বস্তুর কোন পাশ অপর পাশের নিচে হতে পারে না, এভাবে উত্তর মেরুও দক্ষিণ মেরুর নিচে হতে পারে না। [মুসলিমরা যখন প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেছিল; তখন উত্তর মেরু নিচে ও দক্ষিণ মেরু উপরে এঁকেছিল, তিনি সেটাই বুঝাচ্ছেন।]
উপরের আলোচনা থেকে বুঝাই যাচ্ছে যে, তিনি বলতে চাচ্ছেন পৃথিবী গোলক। আর গোলক পৃথিবী থেকে দৃশ্যমাণ নক্ষত্র, চাঁদ, সূর্যকে দ্বিমাত্রিক হবে এমন ভাবাও অযৌক্তিক। বিশেষ করে, যখন এরা সকলে গতিশীল আর প্রচন্ড তাপ প্রদানকারী বস্তু সূর্যকে দ্বিমাত্রিক বলা বোকামি। আদিম মানুষেরাও এরকম ভাবত কিনা সন্দেহ। অর্থাৎ আকাশের বস্তুগুলো গোলকের ন্যায়। এবং পৃথিবী নিজেও গোলক, যার মানে হল- খুব সম্ভবত, উলামা পৃথিবীকে আকাশে [মহাশূণ্যে] অবস্থিত বলেই মনে করতেন। আর সামনের আলোচনায় সেটা আরও স্পষ্ট করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিশ্বখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন, বিজ্ঞানী আল্লামা ত্বানত্ববী আল জাওহারী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার ৩৩নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে,
উক্ত আয়াতটি ব্যাপক অর্থ সম্বলিত। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও পৃথিবী, মোটকথা প্রত্যেকটি নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। [আল জাওয়াহিরু ফী তাফসীরিল কুরআনিল কারীম : ১০/১৯৯]
প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা আহমদ মোস্তফা মারাগী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা ইয়াসীনের ৪০নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে,
প্রত্যেকটি গ্রহ-নক্ষত্র অর্থাৎ পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে (ঘুরছে)। যেভাবে মাছ পানিতে সাঁতার কাটে। সূর্য ঘুরছে নিজ কক্ষপথে। ‘সূর্য’কে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে একদিন ও একরাত। পক্ষান্তরে “পৃথিবী”-কে একবার প্রদক্ষিণ করতে চন্দ্রের সময় লাগে একমাস। [আত তাফসীরুল মারাগী : ২৩/১০]
বিশ্বনন্দিত মুফাস্সীরে কুরআন আল্লামা মাহমুদ হিজাযী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার ৩৩নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে,
আল্লাহ পাক পৃথিবীর বুকে পাহাড়সমূহের বোঝা রেখে দিয়েছেন; যাতে করে পৃথিবী মানব মণ্ডলীকে নিয়ে ঝুঁকে না পড়ে। পৃথিবী নিজ কক্ষে ঘুরে এবং সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে। (আল্লাহ্) সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন যেন প্রত্যেকটি নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরে। [আত তাফসীরুল ওয়াজেহ : ১৭/৫২৮]
উক্ত আলোচনার সারাংশ এই দাড়ালো যে, চন্দ্র ঘুরে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে; পক্ষান্তরে পৃথিবী ঘুরে সূর্যকে কেন্দ্র করে। সূর্য ঘুরে নিজ কক্ষপথে। এরপর আরশের নিচে আল্লাহকে সিজদা করে অনুমতিক্রমে পূণরায় পূর্বে গিয়ে উদিত হয়।
যেদিন তাকে (সূর্য) পূর্বদিকে উদয়ের অনুমতি দেয়া হবে না সেদিনই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।
আল্লাহ অধিক জানেন।
বি.দ্র. : এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে নিম্নে প্রদত্ত তাফসীরগ্রন্থদ্বয় অধ্যয়ন করুন।
১.তাফসীরে ছানায়ী। [লেখক : আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী রহ.। খন্ড- ৮ম : পৃষ্ঠা-১৯২]
২. তাফসীরে আনওয়ারুল বয়ান। [লেখক : আল্লামা আশেক এলাহী বুলন্দশহরী রহ.। খন্ড : ৭ম : পৃষ্ঠা-৩৮১]
সংকলনে : হাফেজ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, অধ্যয়নরত : তাফসীরুল কুরআন বিভাগ, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা