জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী যে কারনে আলেম সমাজের নিকট প্রত্যাখ্যাত হলেন (১ম পর্ব): নবী-রাসুলগণের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি-১
লিখেছেন: ' ইবনে হাবীব(মাহমুদ)' @ শনিবার, এপ্রিল ২৪, ২০১০ (১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ)
(কৈফিয়ত: আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরিনি। আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে। উত্তম খাবারের সাথে যেমন সুক্ষ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন।
‘তাফহিমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য এগুলো তুলে ধরা আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।)
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।
প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ ১৯৯১ইং]
হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
“মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]
চলবে…………ইনশাআল্লাহ
আগামী পর্বে থাকছে নবী-রাসুলগণের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি-২
যে উদাহরণগুলো দিলেন তা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে নিঃসন্দেহে ভয়ানক অবস্হা। আল্লাহ তায়ালাই সর্বজ্ঞ।
একবার এক শিবিরের ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিল। আমি জানতে চাইলাম আপনারা সাহাবাদেরকে এমন সমালোচনা করেন কেন? সে বলল সব সাহাবাদের সমালোচনা করি না, তাছাড়া কোন মানুষই ভুলের উর্ধে নয়। নবী-রাসূলগন এবং সাহাবাগন তারাও মানুষ, তারা যে সব ভুল গুলো করেছেন তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্যই তাদের সমালোচনা করা হয়।
তাদের ভাল কাজেগুলো মনে হয় ওদের চোখে পড়ে না। তাই সমালোচনার মাধ্যমে শিক্ষা নিতে হবে!!!
*** জামাত-শিবির যদি মাওলানা মওদুদির ভুলগুলোকে শুধরে নিতে চায় বা উনার কাছে থেকে আলাদা ভাবতে চায় তাহলে আমার মনে হয় মাওলানা সাহেবের দোষে জামাতকে দোষী করা উচিত হবেনা।
*** মাওলানা মওদুদীর বিভিন্ন ভূল নিয়ে কয়েকটি বই পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। গতকয়েকদিন আগে বাংলা বাজারে গিয়ে দেখেছিলাম। গীবত হতে পারে ভেবে কিনতে গিয়েও কিনিনি।
@দ্য মুসলিম, জ্বী আমরাও চাই তারা শুধরে নিক এবং ভুলগুলোর ব্যাপারে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে দিক।
“গীবত হতে পারে ভেবে কিনতে গিয়েও কিনিনি।” – এটি মনে হয় নেক সুরতে শয়তানের ধোকা। প্রসিদ্ধ আলিমদের লেখা বই পড়তে পারেন। যেমন:
১. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -জাস্টিস তাকী উসমানী (রশীদ কল্যান ট্রাস্ট)
২. মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচার্যের ইতিবৃত্ত – মাওলানা মনজুর নোমানী (রহঃ) (ঐ)
৩. মওদূদী সাহেব ও ইসলাম -মুফতি রশীদ আহমাদ লুধীয়ানভী (রঃ) (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৪. মওদূদীর চিন্তাধারা ও মওদূদী মতবাদ -ইজহারে হক ফাউন্ডেশান; প্রাপ্তিস্থানঃ (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৫. ফিতনায়ে মওদুদীয়াত – মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)
৬. ভুল সংশোধন -মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
৭. সতর্কবাণী -মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)
৮. হক্ব বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব- আল্লামা আহমাদ শফী, হাটহাজারী।
৯. ঈমান ও আক্বীদা -ইসলামিক রিসার্স সেন্টার, বসুন্ধরা।
১০. ফতোয়ায়ে দারুল উলূম (আংশিক)
@মাহমুদ,
বইয়ের সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ। সময় পেলে কিনে পড়ার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
আপনার সাথে সহমত ।
আমরা চাইবো তারা মওদুদীর এইসব ভ্রান্ত আকীদা থেকে সরে আসুক । বিশেষ করে “খেলাফত ওয়া মুলুকিয়াত” গ্রন্হে সে যেভাবে সাহাবীদের সমালোচনা করেছে সেটা খুবই ভয়াবহ ব্যাপার ।
@হাফিজ, জ্বী আসলেই ভয়াবহ ব্যাপার ।
@মাহমুদ ভাই , আর একটি জিনিস হয়ত খেয়াল করে থাকবেন , আহলে হাদিস সংক্রান্ত বিষয়গুলো জামায়াতে ইসলাম প্রমোট করে । তাদের সমস্ত বই কাটাবনে পাওয়া যায় ।
@হাফিজ, হ্যা আমিও সেটা খেয়াল করেছি। আহলে হাদিস ও জামায়াতে ইসলাম সংক্রান্ত বইসমূহ কাটাবনেই বেশি পাওয়া যায়।
আপনি তাফহীমুল কোরআনের বাংলা না উর্দুর রেফারেন্স দিয়ছেন ?
@হাফিজ,
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং]
এই উদ্বৃত্তিটি ছাড়া অন্যগুলো উর্দুর পূর্বের সংস্করনগুলো থেকে দেওয়া। আলেমদের চাপে পড়ে হোক বা যে কোন কারনে হোক বর্তমানে উর্দু এবং বিশেষ করে বাংলা সংস্করনগুলোতে কিছু কাটছাট করা হয়েছে।
@মাহমুদ, জ্বী আমিও তাই জানতাম । বাংলা সংস্করনগুলোতে খুজে আমিও অনেক অভিযোগগুলো পাইনি । পরে জানতে পারলাম তারা কিছু কিছু বাদ দিয়ে অনুবাদ করেছে ।
@হাফিজ,
বাংলা অনুবাদে যদি বাদ দিয়েই থাকে তখন এটাকে তো বাতিল বলা যায় না, তাই না? আমার কথা হলো মাওলানা মওদুদী একজন আলেম ছিলেন যিনি কোরআনের তাফসীর করার মতো সাহস করেছেন এবং সেই যোগ্যতা উনার ছিলো। মন একথা মানতে চায় না যে, তিনি ইসলামের শত্রু ছিলেন। প্রশ্ন হলো একজন আলিম হওয়া সত্ত্বেয় তিনি এধরণের আক্বীদা পোষন করতেন কেন এবং তিনি কি ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছেন? তিনি কি শিয়া মতাবলম্বী ছিলেন? তার কয়েকটি বই আমার পড়া হয়েছিলো, সেগুলো পড়ে আমার মনে হয়নি যে তিনি ইসলামে মধ্যে কোন বাতিল কিছু ঢুকাতে চাইছেন।
তাফহীমুল কুরআন এর বিষয়টি নিয়ে আমি আজো কোন সমাধানে আসতে পারিনি।