শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসূল সাল্লাল্লাহ (আঃ) এর ভূমিকা
লিখেছেন: ' mahmudul' @ শনিবার, জুন ১১, ২০১১ (১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
আয়োমে জাহিলিয়্যত। গাঢ় তমসায় ভীষণ অজ্ঞতায় নিমজ্জিত যখন মানব জাতি, অন্যায়, অনাচারের বিষপাষ্পে বিষাক্ত যখন ধরিত্রি, যে যুগে এমন কোন অপরাধ নেই যা মানুষ জানত না, এমন কোন পাপ নেই যা মানুষ করত না, সমগ্র আরব পরিণত হয়েছিল অসভ্যতার লীলাক্ষেত্র, ব্যাপকভাবে সর্বত্র চুরি ডাকাতি, ধর্ষন রক্তপাত চলত অপ্রতিকৃতভাবে মানব হৃদয়ের কোমলবৃত্তিগুলো হয়েছিল অপসৃত, মানবতার কারুণ গোঙানী তাকে বিচলিত করতে পারে নি। মানবতা যখন এভাবে অবজ্ঞার আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত ঠিক তখনই আশন্তির এ তমসাকে দূরীভূত করে শান্তির শুভ্র সমুজ্জল আলোকবর্তিকা নিয়ে উদয় ঘঠল হেদায়েত বাধার, উদয় হলো যে সূর্য্যের যার স্বর্ণ কিরণে পৃথিবী ঝলমল করে উঠল, কিংবা বলো যে চাঁদের উদয় হলো যার স্নিগ্ধ আলোয় জগতের অশান্তির অাঁধার বিদুরীত হলে (সায়্যিদ সুলাইমান নদভী (রা:) সীরাতুন্নবী (সা:) খ: ৪পৃ:- ১৪৬ সীরাতে ইবনে হিশাম (রা:) খ: ১ পৃ:- ৩৩৬) প্রিয় পাঠ! বক্ষমান প্রবন্ধে অশান্তির আঁধার দূরীকরেণ যে হেদায়েত রবী রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান্তি মিশন সম্পর্কে আলোচনা করব, যে মিশন অশান্তির কালো মেঘ দূরীভূত করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিল।
একটি অবক্ষয়মুক্ত শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার জন্য ৩টি বিষয় আবশ্যক। ১. অপরাধ দমন ও জানমালের নিরাপত্তা বিধান। ২. মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন। ৩. শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়বিধান।
আমরা ধারাবাহিকভাবে এ বিষয় গুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তি ব্যবস্থায় রাসূল (সা:)’র ভুমিকা তুলে ধরছি।
অপরাধ দমনে রাসূল (সা:)’র ভূমিকা:- অপরাধ দমনে ৪টি কাজ আবশ্যক:-
১. মানুষের অন্তরজগতের সংস্কার:- তথা “মানুষের হৃদয়ের বীজতলাকে সৎকাজের উপযোগী করে তোলার জন্য সেখানে আল্লাহভীতির চাষ দেয়া” কেননা অপরাঘের উৎসস্থল হচ্ছে মাসুষের “বিপথগামী মন”। আর তাই মনস্তাত্তিক সংশোধন ব্যতিত সকল আইন কাংখিত সুফল সৃষ্টিরন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে বাধ্য। আর এ সংমোধনের ভিত্তি হলো “আলালহভীতি”। এজন্যই রাসূল (সা:) এরশাদ করেন, “{আল্লাহর এরশাদ} “হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যকজ্ঞাত” { হাশর-১৮} এরশাদ করেন “আমার প্রতিপালক আমাকে ৯টি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, তন্মধ্যে একটি হলো গোপনে ও প্রকাশ্যে আল্লাহ কে ভয় করা। {রাযীন}
২. হৃদয়ের বীজতলা যেন উর্বর হয়, এজন্য বেশী বেশী মৃত্যূ ও পরকালের স্বরণ সৃষ্টি করা। এজণ্যই রাসূল (সা:) এরশাদ করেন “তোমরা ভোগ-বিলা-সের প্রমত্ততায় বাধাদানকারী বিষয় অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশী বেশী স্বরণ কর। কেননা কেউ যদি সংকটের সময় মৃত্যুর কথা স্বরণ করে, তবে তা তার সম্পদের প্রাচুর্যজনিত লাগামহীন উচ্ছৃংখলা ও প্রমত্ততাকে সংকুচিত করে। {সুনানে তিরমিজী}
৩. মানব হৃদয়ের বীজতলাকে আল্লাহ’র ভীতির কর্ষন এবং মৃত্যু ওপর কালের সার প্রয়োগ করে নেক আমলের জন্য উপযোগী করে তোলার পর সৎওসততা কল্যাণ ও সফলতার চাড়া লাগানো এবং যেন পাপাচারের আগাছা জালাতে না পারে, এজন্য কঠোর পরিচর্যা করা। রাসূলে কারীম (সা:) আল্লাহ’র ভীতিতে মানুষের অন্তরগুলোকে কর্ষণ করে এবং মুত্যু ও পরকালেরর স্বরণ ছারা সেগুলোতে সার প্রয়োগ করতঃ যেমনিভাবে তাতে সততাও সফল তার চড়া লাগিয়েছেন। তেমনি কঠোর পরিচর্যরও ব্যবস্থার করেছেন। এরশাদ করেনঃ “যে আমার জন্য তার দু’চোয়ালের মর্ধবর্তী স্থান তথা জিহ্বা এবং তার বানছয়ের মধ্যবর্তি স্থান তথা লজ্জাস্থানের যামেন হবে, ামি তার জন্য জান্নাতরে যামেন হব।” {বুখারী}
সন্তাশের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চরণ করেন, {আল্লাহ’র এরশাদ}:-
“খুনি ও লুটেরা ডাকাতকে শুলিয়ে চড়িয়ে হত্যা, শুরুখুনি ডাকাতের জন্য মৃত্যুদন্ড, লুটেরার বিপরীত দিক তেকে হাত পা কর্তন এবং ভীতি পদর্শণকারীর দেশান্তরের দন্ত ইসলামের বিধান।” {মায়িদা: ৩৩}
ব্যভিচার- যা শত অপরাধের জন্মদাতা- এর রোধকলেপ যেমনিভাবে আল্লাহ’র ঘোষণা শুনিয়েছেন, “{অবিবাহিত বা বিবাহিত কিন্তু হয় নি এমন} ব্যভিচারিনী নারী এবং ব্যভিচারী পুরূষকে একমত দোররা লাগাও”। {নূর:- ২}
এবং এ বিধান বাস্তবায়ন ও করেন, তেমনি বেপর্দা’র- যা যেনার সুত্রপাত ঘটায- বিরুদ্ধে আল্লাহর ঘোষানা শোনান, “মুসলমান নারীরা যেন স্বীয় দৃষ্টি ন্মিনমূখী রাখে এবং নিজ নিজ লজ্জাস্থানসমূহের হেফাযত করে এবং স্বীয় সৌীন্দর্য্য প্রকাশ না করে, তবে যা সাধারনত খোলা থাকে, আর যেনো স্বীয় চাদর বক্ষের উপর জরাইয়া রাখে…….”।{নূর: ৩১)
অত্মহত্যার বিরুদ্ধে হুশিয়ার করেন, “যে ব্যাক্তি কোন অস্ত্র ছারা আত্মহত্যা করবে সে {জাহান্নামে} চিরস্থায়ীভাবে নিজ পেট খোঁচাতে থাকবে” {বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী}
এছাড়াও সুশৃংখল সম্জ কায়েমের নিমিত্তে পারিবারিক বন্ধনে সুদৃঢ় করার মানসে ব্যবস্থা গ্রহন করে এরশাদ করেন, “বিবাহ আমার সুন্নাত।।” “যে আমার সুন্নত থেকে বিমুখ হয় সে আমার উম্মত নয়” {বুখারী}
২. মানুষের অধিকার বানস্তবায়নে রাসূলের (সা:) ভূমিকা:-
একটি পরিবার, একটি সমাজ বা রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ তখনই হবে, যখন প্রত্যেক ব্যাক্তি তার যাবতীয় অধিকার প্রাপ্ত হবে। এজন্যই নবী কারীম (সা:) শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘোষনা করেন {প্রতিবেশীর হক্ক সম্পর্কে}:- ঐ ব্যাক্তি পূর্ণ ঈমানদার নয়, যে পরিতৃপ্ত অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত।” {মুস্তাদরাকে হাকীম} আত্মীয়-স্বজন ও পিতামাতার হক্ক সম্বন্ধ্য বলেন:- পিতামাতার অবাদ্যতা এবং আত্মীয়তা ছেদনের মত শিঘ্রই শান্তিযোগ্য পাপ আর কিছুই নাই। পরকালের নির্ধারিত শান্তি তো আছেই”। {আল আদাবুল মুফরাদ}
একজন পুরুষের যেমন পিতা হিসাবে অধিকার রয়েছে স্বামী হিসাবে সন্তান হিসাবে, তেমনি একজন নারীরও রয়েছে বহুমূখী অধিকার। আর তাই রাসূল (সা:) এরশাদ করেন, (আল্লাহ’র ঘোষনা) দয়াদ্রতার সহিত পিতামাতার নিমিত্ত বিনয় ও নম্রতার ডানা সম্প্রসারিত করে দাও”
ঘোষনা করেন “আর নারীদের ও {পুরুষদের উপর} তদ্রুপ অধিকার রয়েছে, যেমন {অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর} তদ্রুপ অধিকার রয়েছে, যেমন {অধিকার রয়েছে পুরুষদে;র জন্য} নারীদের উপর।’ [বাক্কারাহ: ২২৮] এমনকি একজন গোলামের অধিকার সম্পর্কেও হাদিসে ঘোষনা করা হয়, “যে কেহ নির্যাতনরূপ গোলামকে প্রহার করবে, তাকেই কেয়ামতের দিন শৃংখলে আবদ্ধ করা হবে” {আল আদাবুল মুফরাদ}
এভাবে বৈষম্যতা দূরীকরণে রাসূল (সা:) এরশাদ শোনান “(জন্মগতভাবে/বংশগতভাবে কেউ কারো চেয়ে বড় নয়, বরং) তোমাদের সর্বোত্তম সেই, যে আল্লহকে বেশী ভয় করে।” {হুজুরাত: ১৩} শুধু ঘোষনা করেই ক্ষান্ত হলেন না, বরং নিজ কন্যা হযরত যয়নবকে কৃতদাস যায়েদ ইবনে হারিসার সহিত বিয়েও দিলেন। {সীরাতে ইবনে হিশাম}
৩. শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়বিধানে রাসূল (সা:)’র ভূমিকা:-
যে কোন নিয়মনীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাংখিত লক্ষ্যে পৌছা তখনই সম্ভব, যখন উপযোগী ক্ষেত্র তৈরী করে উক্ত নিয়মাবলীর যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়বিধান করা হবে। নবী করীম (সা:) তাই জাহিলী যুগকে সোনালী যুগে পরিবর্তন করীর লক্ষ্যে, অশান্তির কালো আধার বিদূরীত করে শান্তি আলো আনায়নের উদ্দেশ্যে, প্রথমত মানুষের অন্তরজগতের সংস্কার করে ক্ষেত্র তৈরী করেন। অত:পর গৃহিত নীতিমালাগুলোকে শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়বিধানের মাধ্যমে যথার্থরুপে প্রয়োগ করেন। একবার চুরির দায়ে কুরাইশ বংশের এক মহিলার হাত কাটার রায় প্রদান করা হলো, অন্য শান্তির ব্যাপারে সুফারিশ করা হলে রাসূল (সা:) অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বলেলেন, “স্বয়ং আমার মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করত তবে তারও হাত কাটা হত।”
রাসূল (সা:)’র শান্তি মিশনের ফলাফল:-
রাসূল (সা:) স্বল্প সময়ে যে বিষ্ময়কর বিপ্লব সাধন করছিলেন। তার গতি ও ব্যাপকতা দেখে ঐ সকল লোক ও বিষ্ময়াভুত না হয়ে পারে নি, যারা তার “শান্তি মিশনের” ঘোর বিরোধ ছিল। যে মিশন মূলত শুরু হয়েছিল শৈশব থেকেই দুধ মাতার একটি স্তন থেকে পান করে আরেকটি “দুদ ভাই” আব্দুল্লাহর জন্য রেখে দিতেন(১)। নবুয়তের পূর্বেই গঠন করেছিলেন “হিলফুল ফুযুল।”(২)। আর যখন নবুয়ত পেলেন, তখন জাহিলী যুগকে পরিবর্তন করলেন সোনারী যুগে, কাল পর্যন্ত যেখানে হত্যা ও প্রতিহিংসার অগ্নি প্রজ্জলিত ছিল, সেখানে প্রস্ফুটিত কররেন শান্তি ও রিাপত্তার ফুল। যারা ছিল একে অন্যের খুন পিয়াসী তাদেরকে বানালেন একে অন্যের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী। যারা ছিল নির্লজ্জ, মৃতজীব ভক্ষণকারী ও ব্যাভিচারী,(৬)। তাদেরকে পরিণত করলেন সর্বকালের সকল ম্রেণীর মানুষের আদর্শরূপে, কুরআনের ভাষায় ঈমানের কষ্টিপাথরে(৩)। ইতিহাস সাক্ষী, তাদের পায়ে লুটোপুটি খেয়েছিল দুনিয়ার মান্তি(৭), আর আখেরাতে তাঁরা হবে নি:সন্দেহে জান্নাতী(৪)।
উপসংহার:-
রাসূল (সা:)’র াগমন এ বসুন্দরার বুকে ছিল আগত অনাগত সকরের জন্য রহমত স্বরূপ(৫)। আর তাঁর শান্তি মিশনও ছিল বিশ্বব্যাপী। আর তাই অশান্তির অ৭াধারে ছেয়ে যাওয়া আমাদের বর্তমান শান্তিকামী সমাজ-ব্যবস্থায়ও যদি রাষূল (সা:)’র আলোচিত সফল শান্তি মিশনের গৃহিত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করা হয়- যা জাহেলী যুগের অবসান করে অবতারনা করেছিল সোনালী যুগের- তবে আমরাও পেতে পারি একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা আর ভালবাসাপূর্ণ সহাবস্থান, যা দুনিয়ার বুকে হবে জান্নাতের বাগান। সাদা কাগজের বুকে কালির সামান্য এ অাঁচরের অভিগ্রায় এটাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
প্রবন্ধকারঃ মুহাঃ মাহমূদুল হাসান (ফরিদপুরী)
ঠিকানাঃ জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, আলী এন্ড নূর রিয়েল এষ্টেট, মুহাম্মদপুর, ঢাকা।
শ্রেণীঃ শরহে বেকায়া
ফোন- ০১৭১৬৫৯৫৪৯০
খুব ভাল হয়েছে। তবে বানানে অনেক ভুল আছে।