লগইন রেজিস্ট্রেশন

শবেবরাত সঠিক আমল না বেদ’আতী আমল?

লিখেছেন: ' মামুন' @ শনিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০০৯ (৯:১৮ অপরাহ্ণ)

‘দুই দিনের যোগী ভাতকে বলে অন্ন’ ঘটনাটা আমার এলাকার এক বড় ভাইকে নিয়ে। সাকিব ভাই, ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি। একই মহল্লায় আমাদের বসবাস এবং সেই সুবাদে খুব ভাল সম্পর্ক। এক সাথে খেলাধুলা করতাম, আড্ডা মারতাম বিশেষ করে শবে বরাতের নামাজে সারা রাত ধরে আমরা একত্রে নামাজ পড়তাম। উনিই আমাকে উৎসাহ দিতেন শবে বরাতের নামাজ পড়ার জন্য। আমি যেতে চাইতাম না, উনিই জোর করে নিয়ে যেতেন। হুজুরদের মুখে এই নামাজের ফযিলত শুনাতেন। এর পর থেকে আর শবে বরাতের নামাজ ছাড়ি নাই। এখনো পড়ি এবং মনে প্রানে বিশ্বাস করি এই রাতেই আমাদের ভাগ্য লিখা হয়। আমাদের বাড়ির সবাই এই দিনে রুটি বানিয়ে গরিবদের মাঝে বিলায় এবং রাতের বেলা সবাই নামাজ পড়ি।

হঠাৎ করে বড় ভাই মালয়েশিয়া চলে গেলেন। তিন বছর থাকার পর দুবাই চাকরী নিলেন।ওখানে দু’বছর ছিলেন এর পর সৌদিআরব চলে গেলেন। প্রায় ১০ বছর সৌদি আরব কাটালেন। এই পনের বছরে তিনি মাত্র দুইবার দেশে এসেছেন। বেশ কয়েকদিন আগে তিনি একেবারেই চলে এসেছেন দেশে। মুখে ইয়া বড় লম্বা দাড়ি! অনেক পরিবর্তন এসেছে ওনার কথার মাঝে। এসেছিলেন রমজানের দু মাস আগে এবং এসেই প্রচার করতে লাগলেন শবে বরাত না-কি ভুয়া। এতদিন উনি যে সব দেশে থেকে এসেছেন সেখানে নাকি এ নাম কেউ শোনেনাই পালন কারাতো দুরে থাক। নাউযুবিল্লাহ মিন জালেক! শবে বরাত নাকি ভুয়া! ভাবছিলাম বড় ভাই আমার পাগল হয়ে আসেনি তো! যদি ভুয়া হতো তাহলে টিভিতে হুজুররা প্রচার করত না। বাইতুল মোকাররমের হুজুরও পালন করতে নিষেধ করত। ওনারা কি কম জানেন? বড় ভাইয়ের সাথে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়লাম।

মসজিদের হুজুরের কাছেও সাকিব ভাই একই কথা বললেন। হুজুর ওনাকে বোঝালেন শবে বরাতের হাদীস আছে। বড় ভাইয়াও হাদীস দেখতে চাইলেন। হুজুর আচ্ছা বলে সময় নিলেন। সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো শবে বরাত পালন করা সোয়াবতো না’ই উল্টে নাকি বিদআত! আমার পিত্তি জ্বলতে শুরু করল সাকিব ভাইয়ের কথা শুনে। আমি ওনার কাছে দলিল দেখতে চাইলাম। প্রথমে উনি বুঝালেন যে, ছোট ভাই, আল্লাহর এত বড় রহমতের কথা কি শুধু বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য? অন্য কোন দেশের মুসলিমদের জন্য নয়? বিশেষ করে নবীর জন্ম যে দেশে সেই দেশের বড় বড় হুজুররা কি অন্ধ? যেহেতু আমি সৌদি যাইনি তাই রণে ভঙ্গ দিয়ে আমাদের মসজিদের হুজুরের দিকে চেয়ে রইলাম।

বড় ভাইয়া একটা বই আমাকে দিলেন। ভালভাবে পড়লাম এবং চরম বিভ্রান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করতে লাগলাম। যাহা হুবাহু আপনাদের খাতিরে পেশ করছিঃ আপনার পড়ে বলুন বিষয়টি কিভাবে নেওয়া যায়? এটা কি আমল যোগ্য না-কি সবারই ছেড়ে দেওয়া উচিত? যাই মন্তব্য করুন না কেন জোরালো যুক্তি এবং দলিল সহকারে লিখবেন। তা-না হলে বড় ভাইয়ের সামনে মুখ দেখাতে পারব না। ব্যাটা হুজুরতো গা ঢাকা দিয়েছে। মনে হয় ওনার কাছে তেমন সহীহ হাদীস নাই। হুজুরদের অবস্থা যেখানে এ’ই সেখানে আমরা তো কিছুই না! যেভাবে বইটাতে শবে বরাতকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীণ বলে প্রমান করা হয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

বইটার নাম হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা, লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম.এ.(রিয়াদ), এম.এম (ঢাকা), সহযোগী অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

প্রথমত, সহীহ হাদীসের আলোকে শাবান মাসঃ

পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, সফর থেকে রজব পর্যন্ত ৬ মাসের কোন বিশেষ ফযীলত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। শা’বান মাস তদ্রুপ নয়। সহীহ হাদীসে শাবান মাসের নিম্নলিখিত ফযীলতগুলি প্রমাণিতঃ
০১) এই মাসে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বেশি বেশি সিয়াম পালন করতে ভালবাসতেন। তিনি সাধারণত এই মাসের অধিকাংশ দিন একটানা সিয়াম পালন করতেন বলে বুখারী ও মুসলিম সংকলিত সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এমনকি বুখারী ও মুসলিমের কোন কোন হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি শা’বান মাস পুরোটাই নফল সিয়ামে কাটাতেন। তিনি এই মাসে কিছু সিয়াম পালন করতে সাহাবীগণকে উৎসাহ প্রদান করতেন। (বুখারী আস-সহীহ ২/৬৯৫, ৭০০; মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮১০-৮১১,৮২০।

০২) আহমদ, নাসাঈ প্রমুখ মুহাদ্দিস সংকলিত মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বা হাসান পর্যায়ের হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই শা’বান মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়; এজন্য এই মাসে বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করা উচিত। (নাসাঈ, আস-সুনান ৪/২০১; আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/২০১)

০৩) শা’বান মাসের মধ্যম রজনী বা ১৫ই শা’বানের রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বন্দাদেরকে মাজর্না করেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

এ সকল সহীহ ও হাসান হাদীসের পাশাপাশি এই মাসের ফযীলত ও ইবাদতের বিষয়ে অনেক জাল হাদীস প্রচলিত রয়েছে। এই জাল হাদীসগুলিকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করতে পারিঃ ১) সাধারণভাবে শাবান মাস বিষয়ক ও ২) শা’বান মাসের মধ্যম রজনী বা ‘শবে বরাত’ বিষয়ক। আমাদের দেশে দ্বিতীয় বিষয়টিই প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। এজন্য প্রথম বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করে আমরা দ্বিতীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, ইনশাআল্লহ।

দ্বিতীয়ত, শাবান মাস বিষয়ক জাল ও ভিত্তিহীন কথাবার্তাঃ

‘বার চান্দের ফযীলত’ জাতীয় কোন কোন পুস্তকে শা’বান মাসের প্রথম রজনীতে বিশেষ সূরা বা আয়াত দিয়ে কয়েক রাক’আত সালাত আদায়ের কথা, হযরত ফাতিমার (রাঃ) জন্য বখশিশ করার কথা, শা’বান মাসে নির্ধারিত পরিমাণ দরূদ শরীফ পাঠের বিশেষ ফযীলতের কথা, শাবান মাসের যে কোন জুমুআর দিবসে বিশেষ সূরা দ্বারা বিশেষ পদ্ধতিতে কয়েক রাক’আত সালাত আদায়ের কথা এবং সেগুলির কাল্পনিক সাওয়াবের কথা লিখা হয়েছে। (মুফতী হাবীব ছামদানী, বারচান্দের ফযীলত, পৃ. ১৮-১৯)
এগুলি সবই ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা। শা’বান মাসে নফল সিয়াম পালন ব্যতীত অন্য কোন প্রকারের বিশেষ ইবাদতের কথা কোন হাদীসে বলা হয় নি।

তৃতীয়ত, শবে বরাত বিষয়ক সহীহ, যয়ীফ ও জাল হাদীসঃ

‘শাবান মাসের মধ্যর রজনী’ বা ‘শবে বারাত’ মুসলিম সমাজে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। এ বিষয়ক সকল সহীহ, যয়ীফ ও জাল হাদীস সনদ সহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শবে বরাত’ ফযীলত ও আমল’ নামক গ্রন্থে। এখানে আমি এই বিষয়ক জাল হাদীসগুলি আলোচনা করতে চাই। তবে প্রসঙ্গত এ বিষয়ক সহীহ ও যয়ীফ হাদীসগুলির বিষয়েও কিছু আলোকপাত করতে চাই।

১. মধ্য শাবানের রাত্রির বিশেষ মাগফিরাতঃ

এই বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে: ‘আল্লাহ তা’আলা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং অংশীবাদী (মুশরিক) ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যতীত সকলকে মা করে দেন।’

এই অর্থের হাদীস কাছাকাছি শব্দে ৮ জন সাহাবী: আবূ মূসা আশআরী, আউফ ইবনূ মালিক, আব্দল্লাহ ইবনু আমর, মুয়ায ইবনূ জাবাল, আবু সা’লাবা আল-খুশানী, আবূ হুরাইরা, আয়েশা ও আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে।
(ইবনু মাজাহ, আস-সূনান ১/৪৪৫, বাযযার, আল-মুসনাদ ১/১৫৭, ২০৭, ৭/১৮৬; আহমদ ইবনু হাম্বল, আল-মুসনাদ ২/১৭৬; ইবনু আবি আসিম, আস-সুন্নাহ, পৃ. ২২৩-২২৪; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ১২/৪৮১; তাবরানী, আল-মুজাম আল-কাবীর, ৩/৩৮১; ইবনু খযায়মা, কিতাবুততাওহীদ ১/৩২৫-৩২৬)
এ সকল হাদীসের সনদ বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা উপর্যুক্ত গ্রন্থে করেছি। এগুলির মধ্যে কিছু সনদ দুর্বল ও কিছু সনদ ‘হাসান’ পর্যায়ের। সামগ্রিক বিচারে হাদীসটি সহীহ। শাইখ আলবানী বলেন, ‘হাদীসটি সহীহ’ তা অনেক সাহাবী থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে, যা একটি অন্যটিকে শক্তিশালী হতে সহায়তা করে। (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীস আসসাহীহা ৩/১৩৫)

এই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, এই রাত্রিটি একটি বরকতময় রাত এবং এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে মা করেন। কিন্তু এই মা অর্জনের জন্য শিরক ও বিদ্বেষ বর্জন ব্যতীত অন্য কোন আমল করার প্রয়োজন আছে কি না তা এই হাদীসে উল্লেক নাই।

২. মধ্য শাবানের রাত্রিতে ভাগ্য লিখনঃ

কিছু কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের পন্য হায়াত-মওত ও রিযক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। হাদীসটির সনদ বিস্তারিত আলোচনা করেছি উপর্যুক্ত পুস্তকটিতে। এখানে সংক্ষপে বলা যায় যে, এই অর্থে বণিত হাদীসগুলি অত্যন্ত দুর্বল অথবা বানোয়াট। এই অর্থে কোন সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয়নি।
এখানে উল্লেখ্য যে, কুরআন কারীমে এরশাদ করা হয়েছে: ‘আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ (সূরা: ৮৮-দুখান: আয়াত ৩-৪) এই বানীর ব্যাখ্যায় তাবিয়ী ইকরিমাহ, বলেন, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘মধ্য শা’বানের রাতকে’ বুঝানো হয়েছে। ইকরিমাহ বলেন, এই রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফয়সালা করা হয়। (তবারী, তাফসীর ২৫/১০৭-১০৯)
মুফাসইসরগণ ইকরিমার এই মত গ্রহণ করেন নি। ইমাম তাবারী বিভিন্ন সনদে ইকরিমার এই ব্যাখ্যা উদ্বৃত করার পরে তার প্রতিবাদ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ইকরিমার এই মত ভিত্তিহীন। তিনি বলেন যে, সঠিক মত হলো, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘লাইলাতুল ক্বাদর’-কে বুঝানো হয়েছে। মাহন আল্লাহ যে রাত্রিতে কুরআন কারীম অবতীর্ণ করেছেন সেই রাত্রিকে এক স্থানে লাইলাতুল ক্বাদর বা ‘মহিমাম্বিত রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। (সূরা: ৯৭ ক্বাদ্র: আয়াত ১)
অন্যত্র এই রাত্রিকেই ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। এবং এই রাত্রিটি নিঃসন্দেহে রামাদান কাসের মধ্যে; কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষনা করেছেন যে, তিনি রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন। (সূরা: ১ বাকারা: আঃ ১৮৫)
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুবারক রজনী রামাদান মাসে, শাবান মাসে নয়। (তাবারী, তাফসীর ২৫/১০৭-১০৯)
পরবর্তীতে মুফাসইসরগণ ইমাম তাবারীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তাঁরা বলেছেন যে, ‘মুবারক রজনী’ বলতে এখনে ‘মহিমাম্বিত রজনী’ বা লাইলাতুল ক্বাদর’ বুঝানো হয়েছে। তাঁদের মতে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ এবং ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ একই রাতের দুটি উপাধি। দুটি কারনে মুফাসইসরগণ ইকরিমার তাফসীরকে বাতীল ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন:
প্রথমত, ইকরিমার এই মতটি কুরআনের স্পষ্ট বাণীর সাথে সাংঘার্ষিক। কারণ কুরআন কারীমে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন। অন্যত্র এরশাদ করা হয়েছে যে, একটি মুবারক রাত্রিতে ও একটি মহিমাম্বিত রাত্রিতে তিনি কুরআন নাযিল করেছেন। এ সকল আয়াতের সমন্বিত স্পষ্ট অর্থ হলো, আল্লাহ রামাদান মাসের এক রাত্রিতে কুরআন নাযিল করেছেন এবং সেই রাতটি বরকতময় ও মহিমাম্বিত। মুবারক রজনীর ব্যাখ্যায় মধ্য শাবানের রজনীর উল্লেখ করার অর্থ হলো এই আয়াতগুলর স্পষ্ট অর্থ বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও ঘোর প্যাঁচের মাধ্যমে বাতিল করা।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সাহাবী ও তাবিয়ী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরা ‘মুবারক রজনী’র ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এই রাতটি হলো ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ বা ‘মহিমাম্বিত রজনী’। সাহাবীগণের মধ্য থেকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামী (৭৪ হি), মুজাহিদ বিন জাবর (১০২ হি), হাসান বসরী (১১০ হি), ক্বাতাদ ইবনু দি’আমা (১১৭ হি) ও আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম মাদানী (১৮২ হি) বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা সকলেই বলেছেন যে, লাইলাতুম মুবারাকাহ অর্থ লাইলাতুল ক্বাদর। (নাহহাস, মা’আনিল কুরআন ৬/৩৯৫; যামাখশরী, আল-কাশশাফ ৩/৪২৯; ইবনুল আরাবী, আহকামূল কুরআন ৪/১৬৯০; ইবনু আতিয়্যাহ, আল-মুহাররার আল ওয়াজীয ৫/৬৮-৬৯; কুরতুবী, তাফসীর ১৬/১২৬; আবু হাইয়্যান, আল-বাহর আল-মুহীত ৮/৩২-৩৩; ইবনু কাছীর, তাফসীর ৪/১৪০; সুয়ূতী, আদদুররুল মানছূর ৫/৭৩৮-৭৪২; আবুস সু’উদ, তাফসীর-ই-আবিস সু’উদ ৮/৫৮; শাওকানী, ফাতহুল ক্বাদীর ৪/৫৭০-৫৭২; মুফতী শফী, মা’আরেফ আল-কুরআন ৭/৮৩৫-৮৩৬)

৩. মধ্য-শাবানের রাত্রিতে দোয়া-মুনাজাতঃ
মধ্য শাবানের রজনীর ফযীলত বিষয়ে বর্ণিত তৃতীয় প্রকারের হাদীসগুলিতে এই রাত্রিতে সাধারণভাবে দোয়া করার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ রাতে দোয়া করা, আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আকুতি জানানো এবং জীবিত ও মৃতদের পাপরাশি মালাভের জন্য প্রার্থনার উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থে কোন সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস নেই। এই অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলির মধ্যে কিছু হাদীস দুর্বল এবং কিছু হাদীস জাল।

৪. অনির্ধারিত সালাত ও দোয়াঃ
মধ্য শাবানের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণিত কিছু হদীসে এই রাত্রিতে সালাত আদায় ও দোয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ সকল হাদীস এই রাত্রির সালাতের জন্য কোন নির্ধারিত রাক’আত, নির্ধারিত সুরা বা নির্ধারিত পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র সাধারণভাবে এই রাত্রিতে তাহাজ্জুদ আদায় ও দোয়া করার বিষয়টি এ সকল হাদীস থেকে জানা যায়। এই অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলি প্রায় সবই বানোয়াট পর্যায়ের। দুই একটি হাদীস বানোয়াট না বলে যয়ীফ বা দুর্বল বলে গণ্য করা যায়।

৫. নির্ধারিত রাক’আত, সূরা ও পদ্ধতিতে সালাতঃ
শবে বরাত বিষয়ক অন্য কিছু হাদীসে এ রাত্রিতে বিশেষ পদ্ধতিতে, বিশেষ সুরা পাঠের মাধ্যমে, নির্দ্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত সালাত আদায়ের বিশেষ ফযীলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী এই অর্থে বর্ণিত সকল হাদীস বানোয়াট। হিজরী চতুর্থ শতকের পরে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নামে বানিয়ে এগুলি প্রচার করা হয়েছে। এখানে এই জাতীয় কয়েকটি জাল ও বানোয়াট হাদীস উল্লেখ করছি।

১. ৩০০ রাক’আত, প্রতি রাক’আতে ৩০ কার সূরা ইখলাসঃ
‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে প্রত্যেক রাকাতে ৩০বার সুরা ইখলাস পাঠের মাধ্যমে ৩০০ রাকাত সালাত আদায় করবে জাহান্নামের আগুন অবধারিত এমন ১০ ব্যক্তির ব্যাপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ হাদীসটি আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়্যিম বাতিল বা ভিত্তিহীন হাদীস সমূহের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। (ইবনুল ক্বাইয়্যেম নাক্বদুল মানকুল ১/৮৫)

২. ১০০ রাক’আত, প্রতি রাক’আতে ১০ বার সুরা ইখলাসঃ
মধ্য শাবানের রজনীতে এই পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন হিজরী চতুর্থ শতকের পরে মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, ৪৪৮ হি. সনে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রথম এই রাত্রিতে এই পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু হয়। (মোল্লা ‘আলী ক্বারী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৩/৩৮৮)
এ সময় বিভিন্ন মিথ্যাবাদী গল্পকারে ওয়ায়েয এই অর্থে কিছু হাদীস বানিয়ে বলেন। এই অর্থে ৪টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যার প্রত্যেকটিই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

এর প্রথমটি হযরত আলী ইবনু আবি তালেব (রাঃ) এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নামে প্রচারিত: যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকাত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকতে সুরা ফাতিহা ও ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে সে উক্ত রাতে যত প্রয়োজনের কথা বলবে আল্লাহ তা’য়ালা তার সকল প্রয়োজ পূরণ করবেন। লাওহে মাহফুযে তাকে দুর্ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরিবর্তন করে সৌভাগ্যবান হিসেবে তার নিয়তি নির্ধারণ করা হবে, আল্লাহ তা’য়ালা তার কাছে ৭০ হাজার ফিরিশতা প্রেরণ করবেন যারা তার পাপ রাশি মুছে দেবে, বছরের শেষ পর্য্ত তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন রাখবে, এছাড়াও আল্লাহ তা’য়ালা ‘আদন’ জান্নাতে ৭০ হাজার বা ৭ ল ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা বেহেশতের মধ্যে তার জন্য শহর ও প্রসাদ নির্মাণ করবে এবং তার জন্য বৃরাজি রোপন করবে…..। যে ব্যক্তি এ নামায আদায় করবে এবং পরকালের শান্তি কামনা করবে আল্লাত তা’য়ালা তার জন্য তার অংশ প্রদান করবেন।
হাদীসটি সর্বসম্মতভাবে বানোয়াট ও জাল। এর বর্ণনাকারীগণ কেউ অজ্ঞাত পরিচয় এবং কেউ মিথ্যবাদী জালিয়াত হিসেবে পরিচিত।
(ইবনুল জাওযী, আল-মাওদু’আত ২/৪৯-৫০; সুয়ুতী, আল-লাআলী, ২/৫৭-৫৮; ইবনু ইরাক, তানযীহ, ২/৯২-৯৩; মোল্লা ক্বারী, আল-আসরার, পৃ-৩৩০-৩৩১; আল মাসনু, পৃ-২০৮-২০৯; শাওকানী, আল ফাওয়ায়েদ ১/৭৫-৭৬)

এ বিষয়ক দ্বিতীয় জাল হাদীসনিতে বানোয়াটকারী রাবীগণ ইবনু উমার (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নামে বর্ণনা করেছে: ‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে এক শত রাকাত সালাতে এক হাজার বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তা’য়ালা তার কাছে ১০০ জন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন, তন্মধ্যে ত্রিশজন তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিবে, ত্রিশজন তাকে দোযখের আগুন থেকে নিরাপত্তার সুসংবাদ দিবে, ত্রিশজন তাকে ভুলের মধ্যে নিপতিত হওয়া থেকে রা করবে এবং দশজন তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে।’
এই হাদীসটিও বানোয়াট। সনদের অধিকাংশ রাবী অজ্ঞাতপরিচয়। বাকীরা মিথ্যাবাদী হিসাবে সুপরিচিত। (ইবনূল জাওযী, আল-মাউদূ’আত, ২/৫০-৫১; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ৫/২৭১;সুয়ূতী, আল লাআলী, ২/৫৯; আল-ফাকেহানী, মুহাম্মদ বিন ইসহাক্ক, আখবারু মাক্কাহ ৩/৮৬-৮৭)

এ বিষয়ক তৃতীয় জাল হাদীসটিতে মিথ্যাবাদীগণ বিশিষ্ট তাবেয়ী ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ আল বাকের (১১৫ হি) থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর বরাতে বর্ণনা করেছেন: ‘যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ১০০ রাকাত সালাতে ১০০০ বার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে তার মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা’য়ালা তার কাছে ১০০ ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। ৩০ জন তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিবে, ৩০ জন তাকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দিবে, ৩০ জন তার ভুল সংশোধন করবে এবং ১০ জন তার শত্রুদের নাম লিপিবদ্ধ করবে।’
এ হাদীসটিও বানোয়াট। সনদের কিছু রাবী অজ্ঞাতপরিচয় এবং কিছু রাবী মিথ্যাবাদী হিসাবে সুপরিচিত। (ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ আত, ২/৫১; সুয়ূতী, আল-লাআলী, ২/৫৯)
১০০ রাকত সংক্রান্ত এ বিশেষ পদ্ধতিটি হিজরী চতুর্থ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন গল্পকারে ওয়ায়েযীনদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ লাভ করে এবং যুগে যুগে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে ভারতীয় ওয়ায়েযগণ এই সালাতের পদ্ধতির মধ্যে প্রত্যেক দুই রাকাতের পরে ‘তাসবীহুত তারাবীহ’র প্রচলন করেন এবং ১০০ রাকাত পূর্ণ হওয়ার পর কতিপয় সাজদা, সাজদার ভিতরে ও বাহিরে কতিপয় দোয়া সংযুক্ত করেছেন।
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (১৩০৬ হি) বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হাদীস সমুহের মধ্যে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। যার সারমর্ম হলো, মধ্য শাবানের রাতে পঞ্চাশ সালামে ১০০ রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহার পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। প্রত্যেক দুই রাকাত পর তাসবীহুত তারাবীহ পাঠ করবে, এর পর সাজদা করবে। সাজদার মধ্যে কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর সাজদা থেকে মাথা তুলবে এবং নবী (সঃ) এর উপর দুরূদ পাঠ করবে ও কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। অতঃপর দ্বিতীয় সাজদা করবে এবং তাতে কিছু নির্ধারিত বানোয়াট দোয়া পাঠ করবে। (আব্দুল হাই লাখনৌবি, আল-আসার আল-মারফুআ, পৃ- ১১৩-১১৪)

৩. ৩০ রাক’আতঃ
ইমাম যাহাবী এ হাদীসটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট হাদীস হিসেবে হাদীসটির বর্ণনাকারী অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মদ বিন সাঈদ আলমীলী আত তাবারীর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। উক্ত মুহাম্মাদ বিন সাঈদ এ হাদীসটি তার মতই অজ্ঞাত রাবী মুহাম্মাদ বিন আমর আল বাজালী এর সনদে হযরত আনাস (রাঃ) থেকে মারফু হিসেবে বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি মধ্য শাবানের রাতে ৫০ রাকাত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা’য়ালার কাছে যত প্রকার প্রয়োজনের কথা বলবে তার সবটুকুই পূরণ করে দেয়া হবে। এমনকি লাওহে মাহফুযে তাকে দুর্ভাগ্যবান হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হলেও তা পরিবর্তন করে তাকে সৌভাগ্যবান করা হবে। এবং আল্লাহ তা’য়ালা তার কাছে ৭ ল ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার নেকী লিপিবদ্ধ করবে, অপর ৭ ল ফেরেশতা প্রেরণ করবেন যারা তার জন্য বেহেশতে প্রাসাদ নির্মাণ করবে…..এবং ৭০ হাজার একত্ববাদীর জন্য তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে………….। ইমাম যাহাবী এই মিথ্যা হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, যে ব্যক্তি এ হাদীসটি বানোয়াট করেছে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে লাঞ্চিত করুন। (যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল, ৬/১৬৮-১৬৯)

৪. ১৪ রাকা’আতঃ
ইমাম বায়হাক্বী তাঁর সনদে হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে মধ্য শাবানের রাতে ১৪ রাকাত সালাত আদায় করতে দেখেছি। সালাত শেষে বসে তিনি ১৪ বার সূরা ফাতিহা, ১৪ বার সূরা ইখলাছ, ১৪ বার সুরা ফালাক, ১৪ বার সূরা নাস, ১ বার আয়তালকুরসী এবং সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করেছেন, এ সক কাজের সমাপ্তির পর আমি তাঁকে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলাম। তিনি (সঃ) বললেন: তুমি আমাকে যে ভাবে করতে দেখেছ এভাবে যে করবে তার আমল নামায় ২০টি ক্ববুল হজ্বের সাওয়াব লিখা হবে এবং ২০ বছরের ক্ববুল সিয়ামের সাওয়াব লিখা হবে। পরদিন যদি সে সিয়াম পালন করে তবে দুই বছরের সিয়ামের সাওয়াব তার আমল নামায় লিখা হবে।
হাদীসটি উল্লেখ করার পর ইমাম বায়হাক্বী বলেন: ইমাম আহমদ বলেছেন যে, এই হাদীসটি আপত্তিকর, পত্যিক্ত, জাল ও বানোয়াট বলে প্রতীয়মান হয়। হাদীসটির সনদে অজ্ঞাত পরিচয় বর্ণনাকারীগণ রয়েছে। (বায়হাক্বী, শুআব আল-ঈমান, ৩/৩৮৬-৩৮৭, হাঃ নং- ৩৮৪১)
অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে জাল বলে গণ্য করার বিষয়ে ইমাম বাইহাকীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আল্লাম ইবনুল জাওযী ও ইমাম সুয়ূতী বলেন: হাদীসটি বানোয়াট, এর সনদ অন্ধকারাচ্ছন্ন।….সনদের মধ্যে মুহাম্মদ বিন মুহাজির রয়েছেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেন: মুহাম্মদ বিন মুহাজির হাদীস বানোয়াট কারী। (ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূআত, ২/৫২; সুয়ূতী, আল-লাআলী, ২/৫৯-৬০)

৫. ১২ রাকা’আত, প্রত্যেক রাক’আতে ৩০ বার সুরা ইখলাসঃ
জালিয়াতিগণ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) পর্যন্ত একটি জাল সনদ তৈরী করে তাঁর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন: ‘যে ব্যক্তি মধ্য শা’বানের রাতে ১২ রাকাত সালাত আদায় করবে, প্রত্যেক রাকাতে ৩০ বার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, সালাত শেষ হওয়ার পূর্বেই বেহেশতের মধ্যে তার অবস্থান সে অবলোকন করবে। এবং তার পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত হয়েছে এমন দশ ব্যক্তির ব্যপারে তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’
এ হাদীসের সনদের অধিকাংশ বর্ণনাকারীই অজ্ঞাত। এছাড়াও সনদের মধ্যে কতিপয় দুর্বল ও পরিত্যাজ্য বর্ণনাকারী রয়েছে। (ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূআত, ২/৫২; সুয়ূতী, আল-লাআলী, ২/৫৯)

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, মধ্য শা’বানের রাতে নির্দ্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দ্দিষ্ট সূরার মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট রাকাত সালাত আদায় সংক্রান্ত হাদীস সমূহ বানোয়াট ভিত্তিহীণ। মুহাদ্দিসগণ এ ব্যপারে সকলেই একমত। কিন্তু কতিপয় নেককার ও সরলপ্রাণ ফকীহ ও মুফাসইসর তাঁদের রচনাবলিতে এগুলির জালিয়াতি ও অসারতা উল্লেখ ব্যতীতই এসকল ভিত্তিহীন হাদীস স্থান দিয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ এগুলোর উপর ভিত্তি করে ফতোয়া প্রদান করেছেন ও তদনুযায়ী আমল করেছেন, যা পরবর্তীতে এই রীতি প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।
মোল্লা আলী ক্বারী (১০১৪ হি) মধ্য শাবানের রাতে সালাত আদায়ের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসগুলির অসারতা উল্লেখপূর্বক বলেন, সবচেয়ে আশ্চার্যের ব্যাপার হলো যে, যারা সুন্নাতের ইলমের সন্ধান পেয়েছেন তারা এগুলো দ্বারা প্রতারিত হন কি করে! এ সালাত চতুর্থ হিজরী শতকের পর ইসলামের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে যার উৎপত্তি হয়েছে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে। এ ব্যাপারে অসংখ্য জাল হাদীস তৈরী করা হয়েছে যার একটিও সঠিক বা নির্ভরযোগ্য নয়। (মোল্লা আলী ক্বারী, আল-আসরার, পৃ- ৩৩০-৩৩১; ইবনুল ক্বাইয়্যেম, আল-মানার আল-মুনীফ, পৃ- ৮৯-৯৯)
তিনি আরো বলেন, হে পাঠক, এসকল ভিত্তিহীন মিথ্যা হাদীস ‘কুতুল কুলুক’ ‘ইহয়িয়া-উ-উলুমিদ্দীন’ ও ইমাম সা’লাবীল তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ থাকার কারণে আপনারা প্রতারিত ও বিভ্রান্ত হবেন না। (মোল্লা আলী ক্বারী, আল মাসনূ, পৃ- ২০৮-২০৯)
ইসমাঈল বিন মুহাম্মাদ আজলুনীও (১১৬২ হি) অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। (আজলুনী, কাশফুল খাফা, ২/৫৫৪-৫৫৫)
আল্লামা শাওকানী (১২৫০ হি) শবে বরাতের রাত্রিতে আদায়কৃত এই সালাত সংক্রান্ত হাদীসের ভিত্তিহীণতা উল্লেখ পূর্বক বলেন, এসকল হাদীস দ্বারা এক দল ফকীহ প্রতারিত হয়েছেন। যেমন ‘ইহয়িয়াউ উলূমিদ্দীন’ গ্রন্থকার ইমাম গযালী ও অন্যান্যরা। এমনিভাবে কতিপয় মুফাসসিরও প্রতারিত হয়েছেন। এ সালাতের বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের জাল হাদীস রচিত হয়েছে। এ সকল হাদীস মাউযূ বা বানোয়াট হওয়ার অর্থ হলো, এই রাত্রিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত রাক’আত সালাত আদায়ের প্রচলন বাতিল ও ভিত্তিহীন। তবে কোন নির্ধারিত রাক’আত, সূরা বা পদ্ধতি ব্যতিরেকে সাধারণ ভাবে এই রাত্রিতে ইবাদত বা দোয়া করার বিষয়ে দুই একটি যয়ীফ হাদীস রয়েছে। (শাওকানী, আল-ফাওয়ায়েদ ১/৭৬)

তৃতীয়ত, আরো কিছু জাল বা অনির্ভরযোগ্য হাদীসঃ

১. মধ্য শাবানের রাতে কিয়াম ও দিনে সিয়াম
ইমাম ইবনু মাজাহ তাঁর সুনান গ্রন্থে নিম্নলিখিত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন: ‘আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাতে (সালাতে-দোয়ায়) দণ্ডায়মান থাক এবং দিবসে সিয়াম পালন কর। কারণ; ঐ দিন সুর্যাস্তের পর মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোন রিয্ক অনুসন্ধানকারী আছে কি? আমি তাকে রিয্ক প্রদান করব। কোন দুর্দশাগ্রস্থ ব্যক্তি আছে কি? তাকে আমি মুক্ত করব। এভাবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে।’
এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ তাঁর উস্তাদ হাসান বিন আলী আল-খাল্লাল থেকে, তিনি আব্দুর রাজ্জাক থেকে, তিনি মুয়াবিয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর থেকে, তিনি তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ বিন জাফর থেকে, তিনি হযরত আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৪৪৪)
ইবনু মাজাহ কর্তৃক সংকলিত হওয়ার কারনে হাদীসটি আমাদের সমাজে বহুল পরিচিত, প্রচারিত ও আলোচিত। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ হাদীসটিকে বানোয়াট বা অত্যান্ত দুর্বল পর্যায়ের বলে বর্ণনা করেছেন।
এ হাদীসটি একমাত্র ইবনু আবি সাবরাহ বর্ণনা করেছেন। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ এ হাদীস বর্ণনা করেননি। এ হাদীসে আলী ইবু আবি তালিব থেকে তাঁর কোন ছাত্র বর্ণনা করেননি। আব্দুল্লাহ বিন জাফর বিন আবি তালিব থেকেও তাঁর কোন ছাত্র হাদীসটি বর্ণনা করেননি। এমনকি মুয়াবিয়া ও ইবরাহিম বিন মুহাম্মদ থেকেও তাঁদের কোন ছাত্র হাদীসটি বর্ণনা করেননি। শুধুমাত্র ইবনু আবি সাবরাহ দাবী করেছেন যে, তিনি ইবরাহীম থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি শ্রবন করেছেন। তাঁর কাছ থেকে আব্দু রাজ্জাক ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন।
ইবনু আবি সাবরাহ (১৬২ হি) এর পূর্ননাম আবু বকর বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আবি সাবরাহ। তিনি মদীনার একজন বড় আলিম ও ফক্বীহ ছিলেন। কিন্তু তুলনামূলক নিরীক্ষা ও বিচারের মাধ্যমে হাদীসের ইমামগণ নিশ্চিত হয়েছেন যে, তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নিতেন। অসংখ্য ইমাম তাঁকে মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। তন্মধ্যে ইমাম আহমদ, ইয়াহয়িয়া বিন মাঈন, আলী ইবনুল মাদীনী, বুখারী, ইবনু আদী, ইবনু হিব্বান ও হাকিম নাইসাপূরী অন্যতম। (ইবনু হাজার, তাক্বরীব, পৃ- ৬৩২; তাহযীব, ১২/২৫-২৬)
এরই আলোকে আল্লাম শিহাব উদ্দীন আহমদ বিন আবি বকর আল-বুসীরী (৮৪০ হি) এ হাদীসের টীকায় বলেছেন, আবনু আবি সাবরাহর দুর্বলতার কারণে এ সনদটি দুর্বল। ইমাম আহমদ ও ইবনু মাঈন তাঁকে হাদীস বানোয়াটকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। (আল-বুছীরী, যাওয়ায়েদ ইবনে মাজাহ, পৃ- ২০৩)
শাইখ নাসির উদ্দীন আলবানী বলেছেন, অত্যন্ত দুর্বল বা বানোয়াট। তিনি আরো বলেন, সনদটি বানোয়াট। (আলবানী, দাঈফু সুনানি ইবনি মাজাহ, পৃ- ১০৩; যাঈফাহ, ৫/১৫৪)

২. দুই ঈদ ও মধ্য-শাবানের রাত্রিভর ইবাদত
একটি জাল হাদীসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যাক্ত মধ্য শাবানের রাত ও দুই ঈদের রাত ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার অন্তরের মৃত্যু হবে না যে দিন সকল অন্তর মরে যাবে। (ইবনু হাজার, তাক্বরীব, পৃ- ৬৩২; তাহযীব, ১২/২৫-২৬)
এই হাদীসের একমাত্র বর্ণনাকারী উপর্যুক্ত ঈসা ইবনু ইবরাহীম ইবনু তাহমান বাতিল হাদীস বর্ণনাকারী হিসাবে সুপরিচিত। ইমাম বুখারী, নাসায়ী, ইয়াহয়িয়া বিন মাঈন ও আবু হাতিম রাযি ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস একবাক্যে তাকে পরিত্যক্ত বা মিথ্যাবাদী রাবী বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ঈসা ইবনু ইবরাহীন নামক এই ব্যক্তি তার উস্তাদ হিসেবে যার নাম উল্লেখ করেছেন সেই ‘সালামা বিন সুলাইমান’ দুর্বল রাবী বলে পরিচিত। আর তার উস্তাদ হিসেবে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেই ‘মারওয়ান বিন সালিম’ মিথ্যা হাদীস বর্ণনার অভিযোগে অভিযুক্ত। (ইবনুল জাওযী, আল-ইলাল আল-মুতানাহিয়া ২/৫৬২; ইবনু হাজার, আল-ইসাবা ফী তাময়ীযীস সাহাবা ৫/৫৮০; তালখীস আল-হাবীর, ২/৬০৬)
এভাবে আমরা দেখছি যে, এই হাদীসটির সনদের রাবীগণ অধিকাংশই মিথ্যাবাদী বা অত্যন্ত দূর্বল। এরা ছাড়া কেউ এই হাদীস বর্ণনা করেননি। কাজেই হাদীসটি রানোয়াট পর্যায়ের।
এখানে উল্লেখ্য যে, আবূ উমামা (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবী থেকে একাধিক দুর্বল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত ইবাদতে জাগ্রত থাকবে তার অন্তরের মৃত্যু হবে না যে দিন সকল অন্তর মরে যাবে।’এ সকল বর্ণনায় দুই ঈদের রাতের সাথে মধ্য শাবানের রাতকে কেউ যুক্ত করেন নি। (ইবনু মাজাহ, আস সুনান ১/৫৬৭; আল-বূসীরী, মিসবাহুয যুজাজাহ ২/৮৫)

যাই হোক উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান যে এ সংক্রান্ত যতগুলো হাদীস আছে তাহার কোনটাই সহীহ নয়।

এখন পাঠকগনের কাছে আমার জিজ্ঞেসা, আমরা দীনের ব্যপারে কি ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি? সাওয়াব এর আশায় যদি এমন কিছু করি যা সহীহ হাদীসে নাই তাহলে সাওয়াবতো হবেই না বরং তা হবে সম্পূর্ণরূপে বিদ’আত। বড় ভাইয়ের কথায় যুক্তি কিছুটা হলেও আছে। একটা বিষয় পরিষ্কার; যেখানে সৌদি আরব বা দুবাইয়ে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত কি তাহা জানেই না সেখানে একটা ঘাপলা নিশ্চয়ই আছে। আল্লাহ জানেন কি সত্য আর কি মিথ্যা, তাঁর কাছে ফরিয়াদ তিনি যেন আমাদের সত্য ও সঠিক পথ দেখান।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৪,৪৭০ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

১০ টি মন্তব্য

  1. My opinion is here, when people will try to pleased Allah Subbhanutalla on that nigth its not that bad.But when they will take it as a tradetional thing then it’s always bad.

  2. আল্লাহ জানেন কি সত্য আর কি মিথ্যা, তাঁর কাছে ফরিয়াদ তিনি যেন আমাদের সত্য ও সঠিক পথ দেখান। আমিন।

    mamun

    @দ্য মুসলিম, আমিও ভাবছি সেই কথা।

  3. শবে বরাত নিয়ে দ্বন্দ আজকালকার ঘটনা নয়। অনেক আগে থেকে এই নিয়ে বিভিন্ন যুক্তি তর্ক-বিতর্ক শুনে আসছি। এমনকি গত শবে বরাতে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব শবে বরাতের পক্ষ নিয়ে অনেক দলিল পেশ করেছিলেন। এই নিয়ে এমনিতে সাধারণ মানুষ বেশ বিভ্রান্তিতে আছে। তাই এ ব্যপারে আমাদের কর্তৃপক্ষ কি বলে দেখা দরকার।

    আশা করি কর্তৃপক্ষ এই ব্যপারে সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করবেন।

  4. ইসলামের উপর আমার কোন অর্জিত ডিগ্রী নেই। তবে জ্ঞান বুঝে পাওয়ার পর থেকে ধর্মের প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল। যে কারণে প্রায় সব ধরনের আলেম ওলামার ওয়াজ-নসীহত শুনতাম এবং ইসলামের উপর লিখা কিছু্ বইপত্র পড়ার অভ্যাস ও গড়ে উঠেছে। ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত কোন দল, পীড় বা গোষ্টির প্রতি আমার কোন অন্ধ আনুগত্য ও নেই। আমার বুঝার ক্ষমতার মধ্যেথেকে কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী কোন নসীহত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি সাধ্যমত।
    পবিত্র শবেবরাত সম্পর্কে আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি তা হলো – পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফে লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত সম্পর্কে সরাসরি কোন বক্তব্য নেই। হাদীস শরীফে নিছফু শা’বান বা মধ্য শা’বানের রাতে ইবাদাত এবং পবিত্র মাহে রমাদান এর প্রস্তুতি হিসাবে ২টি রোজা রাখার কথা শুনেছি। ঐ রাতটিকে উপলক্ষ্যকরে বেশ কিছু মুসলমান মসজিদ মুখী হওয়াতে ওয়াজ-নসীহত এবং দ্বিনী আলোচনার মাধ্যমে দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
    কিন্তু ঐ রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, ঐ রাতে ইবাদাত করলে অনেক বছরের ইবাদাতের ছওয়াব পাওয়া যায়, ঘরে ঘরে মুরগী জবেহ, হালুয়া রুটি তৈরী ( যা কিছু কিছু আলেম ঘুরে ঘুরে ফাতেয়ার নামে পানিতে ফুক দিয়ে টাকা কামাই করেন আর মুরগী জবেহ করে দেয়ার টাকা নিয়ে থাকেন।) দলে দলে লোকেরা মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ান, অহেতুক মোমাবাতি জ্বালান ছওয়াবের উছিলায়। ঘর সাজানো, মসজিদ সাজানো, বাজি ফুটানো চলে মনের সুখে।
    পক্ষান্তরে যে রজনীর কথা পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ”লাইলাতুল কদ্‌র“ তা প্রায় উপেক্ষিত।

  5. আমার মতে শবেবরাত না পালন করাই ভালো। এটা তো এমন ইস্যু না জে – না পালন করলে পাপ হবে।
    তাহলে পালন করে যদি সন্দেহ থাকে জে বেদাত হতে পারে, তাহলে না করাই বেটার।
    যেসব বিষয়ে সন্দেহ থাকে এবং না করলে দোষ নাই তা আমার মতে না করলে ভালো কেননা করে যদি
    পাপ হয়।
    আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে সঠিক রাস্তা দেখান।

  6. আমাদের দেশে “শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত” নিয়ে যা হয় তা সত্যিই দুঃখজনক, তবে যেহেতু সহীহ হাদীসে আছে………
    “এই শা’বান মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়; এজন্য এই মাসে বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করা উচিত। (নাসাঈ, আস-সুনান ৪/২০১; আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/২০১)

    “শা’বান মাসের মধ্যম রজনী বা ১৫ই শা’বানের রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বন্দাদেরকে মাজর্না করেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।”

    তাই যারা শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত -এর অস্তিত্বকে একেবারে অস্বীকার করেন, তারাও স্পষ্ট ভ্রান্তিতে আছেন।

  7. শা’বান মাসের মধ্যম রজনী বা ১৫ই শা’বানের রাত ভালো রাত কিন্তু তা লাইলাতুল বরাত বা ভাগ্য পরিবর্তনের রাত কিন্তু বলা হয়নি।

    দ্য মুসলিম

    @আরিফ, একমত।

  8. @mamun,

    I agree with your big brother. I came to Canada and here and also in USA no mosque follows this day. Came to find that there is no such thing.

    Yes, only mosques managed strictly by the South Asian community may be doing some prayer arrangement.

    But YES, all mosques say that this month is very significant, so fast and pray more. This is the Sunnah of the Prophet.