লগইন রেজিস্ট্রেশন

‘বিদ’আতে হাসানাহ’ অর্থাৎ নামাযের পূর্বে মুখে উচ্চারিত নিয়্যাত কোথা থেকে এল?

লিখেছেন: ' মামুন' @ শুক্রবার, জানুয়ারি ১৫, ২০১০ (১২:৪৩ অপরাহ্ণ)

আমার গত পোষ্টটি ছিল বিদ’আত নিয়ে, আমরা প্রতিনিয়ত এই অদৃশ্য ফাঁদে পা রাখছি অথচ একটু সচেতন হলেই পার পেতে পারি সেই ভয়ঙ্কর আযাব থেকে! সকল বিদ’আতই গোমরাহী এবং ভ্রষ্টতা যার পরি নাম জাহান্নাম। বিদ’আতকে হাসানা বলা আরেকটি বিদ’আত! যেমন ধরুনঃ চুরি করা মহাপাপ, এখন আমি যদি মসজিদ থেকে কোরআনশরীফ চুরি করে নিয়ে বলি, এটা চুরিয়ে হাসানা অর্থাৎ উত্তম চুরি তাহলে কি আমি পাপের শাস্তিথেকে মুক্তি পাব? অর্থাৎ পাপ সারাজীবন পাপই এখানে উত্তম পাপ বা খারাপ বলে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার কোন মানে হয় না। যাই হোক এবার একটা চরম বিদ’আত নিয়ে আলোচনা করব যা পূর্বেও একবার করেছি।
নামাজে দাঁড়িয়ে মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করা বিদ’আতঃ

নাবী (সাঃ) তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু’হাত উত্তোলন করে সালাত আরম্ভ করতেন। এর পূর্বে মুখে কোন নিয়্যাতনামা পাঠ করতেন না। সুতরাং সালাত আরম্ভের পূর্বে মুখে উচ্চারণ করা নিয়্যাত পাঠ করা বিদ’আত। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলোঃ
১। মোল্লাহ আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ত্রিশ হাজার (ওয়াক্ত) সালাত আদায় করেছেন। তথাপি তাঁর থেকে এ কথা বর্ণিত নেই যে, আমি অমুক অমুক ওয়াক্ত সালাতে নিয়্যাত করছি। সুতরাং তাঁর এ নিয়্যাত না করাটাই সুন্নত। যেমন তাঁর কোন কাজ করাটা সুন্নাত। (জেনে রাখুন) শব্দ উচ্চারণ করে নিয়্যাত করা জায়িয নয়। কারণ এটি বিদ’আত। সুতরাং যে কাজ নাবী (সাঃ) করেননি তা যে করে সে বিদ’আতী। (মিরকাত ১/৩৬,৩৭)

২। ‘আব্দুল হাই লাখনৌভী (রহঃ) বলেনঃ মুখে নিয়্যাত পাঠ করা বিদ’আত। (সিরাতুল মুস্তাক্বীম)

৩। আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের কিছু হাফিয বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে সহীহ ও যঈফ কোন সানাদেও এ কথা প্রমানিত নেই যে, তিনি সালাত আরম্ভ করার সময় বলতেন যে, আমি এই এই সালাত আদায় করছি। কোন সাহাবী এবং তাবেঈ থেকেও প্রমাণিত নেই। বরং এ কথা বর্ণিত আছে যে, নাবী (সাঃ) সালাত আরম্ভের সময় কেবল তাকবীর বলতেন। তাই মুখে নিয়্যাত পাঠ করা বিদ’আত। (ফাতহুল ক্বাদীর ১/৩৮৬, কাবীরি ২৫২পৃঃ০

৪। ‘আব্দুল হাক্ব দেহলবী হানাফী (রহঃ) লিখেছেনঃ মুখে নিয়্যাত পাঠ করা না রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে, না সাহাবায়ি কিরাম হতে, না তাবেঈন হতে, কারো হতেই কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। এর পূর্বে মুখে নিয়্যাত পড়ার কোন শব্দ হাদীসে বর্ণিত হয়নি। সেজন্য মুহাদ্দিসগণ মুখে নিয়্যাত পাঠ করাকে বিদ’আত ও মাকরূহ বলেছেন। (ফাতহুল ক্বাদীর, মাদারিজুন নাবুওয়্যাত)

৫। আল্লামা শামী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ হিলয়্যাহতে এতটা বাড়তি আছে যে, চার ইমাম তেকেও মুখে নিয়্যাত পড়া প্রমাণিত নেই- (শামী ১/৩৮৬)। হানাফী ফিক্বাহ মুনয়্যাহতেও ঐরূপ আছে। (বাহরূর রায়িক ১/২৭৮)

৬। আশরাফ আলী থানবী (রাঃ) লিখেছেনঃ মুসল্লী যে সালাত আদায় করবে তা স্থির সংকল্প করে নিবে। মুখে নিয়্যাত পাঠ করার কোনই আবশ্যকতা নেই। বরং মনে মনে একটু চিন্তা করে নেয়াই যথেষ্ট যে, আমি (উদাহরণ সরূপ) যুহরের সালাত আদায় করছি- এতটুকু মনে নিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধলেই হয়ে যাবে। আর জন সমাজে যেসব নিয়্যাতনামা প্রচলিত আছে তা পাঠ করার কোনই আবশ্যকত নেই। (বেহেস্তি জেওর ২/১৭-১৮)

৭। হানাফী ফিক্বাহ দুররে মুখতারে রয়েছেঃ নিয়্যাতনামা অর্থাৎ ‘নাওয়ায়তুন আন…..’ পাঠ সম্পর্কে সহীহ হাদীস তো দুরের কথা কোন যঈফ হাদীসও খুজেঁ পাওয়া যায় না। বিশিষ্ট চারজন ইমামের কোন একজনও নিয়্যাতনামা পাঠ দ্বারা সালাত আরম্ভ করতেন না। সারকথা হচ্ছে, হাদীস ও ফিক্বাহ শাস্ত্র মন্থন করে এটাই জানা যায় যে, নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ করার বস্তু নয়। নিয়্যাতের নামে মুখে মুখে কিছু বলা সুন্নাতের বিপরীত, কাজেই মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করা বিদ’আত। (দুররে মুখতার ১/৪৯, হিদায়া ১/২২)

৮। কেরামত আলী জৌনপুরি হানাফী সাহেব লিখেছেনঃ অন্তরেই সালাতের নিয়্যাত করে নিবে অর্থাৎ মনে প্রাণে বুঝবে যে, আমি (যেমন) ফাজরের ফারয সালাত আদায় করছি। এজন্য মুখে নিয়্যাত পাঠের কোনই প্রয়োজন নেই। (রাহে নাযাত, ৯)

সম্ভবতঃ এ কারণেই হানাফী ফিক্বহের কোন গ্রন্থে যেমন হিদায়া, কুদূরী, ফাতহুল ক্বাদীর, নুরুল ইযাহ, দুররে মুখতার, মারাকিল ফারাহ, আল জাওহারুল নাইয়িরাহ, রদ্দুর মুহতার, বাহরূর রায়িক, মুনয়্যাতুল মুসল্লী, গুনয়াতুল মুস্তমলী প্রভৃতিতে সালাতের নিয়্যাতের কোন শব্দই খুঁজে পাওয়া যায় না। (সালাতে মুস্তফা)

৯। হাম্বালী ও মালিকী মাযহাবের ফাতাওয়াহঃ মালিকী মাযহাব অনুসারীগণের মতে মুখে উচ্চারণ করে এরূপ ন্যয়্যাত করা মাকরূহ এবং হাম্বলীদের মতে বিদ’আত। (মিরকাত, ১/৩৬)

১০) হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যম (রহঃ) বলেনঃ নিয়্যাত হচ্ছে সংকল্প করা। এর জায়গা মন ও হৃদয়। যার সাথে মুখের কোন সম্পর্ক নেই। এজন্যই নাবী (সাঃ) এবং তাঁর কোন সাহাবী থেকেও নিয়্যাতের ব্যাপারে কোন শব্দ পাওয়া যায় না। পাক হবার এবং সালাত শুরু করার সময় নিয়্যাতের নামে যেসব শব্দ তৈরী করা হয়েছে তা হল খুঁতখুঁতে লোকদের ধোঁকা দেবার জন্য শয়তানের কুমন্ত্রনা। নাবা (সাঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন বলতেন ‘আল্লাহু আকবার’ এবং এর আগে কিছু বলতেন না। নিয়্যাত শব্দের উচ্চারণ করতেন না। এ কথাও বলতেন না যে, অমুক সালাত পড়ছি ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে, চার রাক’আত ইমাম হয়ে কিংবা মুক্তাদী হয়ে। এ কথাও না যে, এটা আদায় করছি বা ক্বাযা করছি কিংবা ফারয সালাত পড়ছি। সুতরাং এসব বিদ’আত। নাবী (সাঃ) থেকে বিশুদ্ধ সানাদে কিংবা দুর্বল সানাদে অথবা মুসনাদ বা মুরসাল সানাদেও এরূপ (নিয়্যাতনামা) কখনো বর্ণিত হয়নি। তাঁর (সাঃ) সাহাবী থেকেও এর কোন প্রমাণ নেই। কোন তাবেঈ এবং চার ইমামও এরূপ নিয়্যাতনামা পড়াকে পছন্দ করেননি। (ইগাসাতুল লুহফান ১/১৩৬, যাদুল মা’আদ ১/৫১)

আসুন আমরা সাওয়াবের বা নাময শুদ্ধ হবার আশায় এরূপ বিদ’আত পরিত্যাগ করি। এ জাতীয় বিদ’আতকে হাসানা মনে করে পাপের বোঝা ভারী করার কোন দরকার নাই। আমাদের সামাজের আলিমগণ কি এতই পন্ডিত এবং কামেল যে নামাযে এরূপ নিয়্যাত নামা প্রচলন করে অসম্পূর্ণ নামাযের নিয়মকে পূর্ণতা দান করতে চান? এভাবে নামাজের অনেক নিয়মে ছেদন এবং সংযোজন করে তারা প্রকৃত নামাযকে রং-চঙ্গা করে আদায় করছে, এটা সুন্নাতের খেলাপ। নাবী (সাঃ) আল্লাহর শিখানো নিয়মেই নামাজ আদায় করেছেন এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একই নিয়মে পালন করেছেন। তিনি কখনো এমন, কখনো ওমন এজাতীয় ভেলকির মাধ্যমে সালাত আদায় করেন নাই। পরিশেষে বলি নামাজের নিয়ম একটাই, অনেকগুলো নয়। যারা অনেক নিয়মে বিশ্বাসি তারা হাদীসের সনদ মতন বিচার করলেই বুঝতে পারবেন কোনটি সহীহ আর কোনটি যঈফ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে এখন সহীহ এবং যঈফ হাদীস সিরিজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যে সকল মুহাদ্দিস কিরাম এসল হাদীসকে পৃথক করেছেন তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে কোন প্রশ্নের অবকাশ নাই। যেমন আল্লমা নাসিরুদ্দীন আলবানী তাদের অন্যতম। সুতরাং হাদীসে আছে বললেই তা সঠিক এমন কথার কোন ভিত্তি নাই। দেখতে হবে হাদীসের সনদ সহীহ না যঈফ।

আসুন আমরা বেঁছে বেঁছে এসকল বিদ’আতি কাজকে পরিত্যাগ করি। আমীন

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৭৮ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৩ টি মন্তব্য

  1. মুখে হাদীস উচ্চারণ ছাড়াও আমাদের দেশে গ্রাম এলাকায় একটা জিনিষ এখনো প্রচলিত, আর তা হলো “আরবীতে নিয়ত করা।” আমানতু বিল্লাহি….. … …
    তবে এখন মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে।

    এই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।

  2. আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের শিরক ও বিদাত চিন্তে এবং তা থেকে বাঁচার তৌফিক দিন

  3. হায় আল্লাহ! একি পোষ্ট, আমরা না জেনে কত যে বিদ’আতি কার্যকলাপে লিপ্ত!
    আজ থেকে নামাজের আগে নিয়্যত বাদ। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন। আমীন