পরকাল যে সত্যিই হবে তার যুক্তি
লিখেছেন: ' mamunipc' @ মঙ্গলবার, এপ্রিল ১১, ২০১৭ (৮:৩৯ অপরাহ্ণ)
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ﴿١٦﴾ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও, অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী (সূরা আ‘লা: ১৬-১৭)
১নং যুক্তি-
মানুষ সাধারণত দুটো কারণে মিথ্যা বলে। যথাঃ
১। মানুষ কোন না কোন লোভ বা স্বার্থের বশীভূত হয়ে-অথবা
২। কোন না কোন ভয়ের কারণে।
এ দুটো জিনিস যখন কারও সামনে থাকে না তখন সে সত্য কথাই বলে এটাই মানব প্রবৃত্তি। আমরা দেখি দুনিয়ার নবী রাসূল (সা.) সবাই বলেছেন পরকাল হবে এবং তাঁরা প্রত্যেকেই এমন ছিলেন যে, কোন প্রকার লোভ বা ভয় তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি। কাজেই তাঁরা যখন সবাই একই কথা বলেছেন তখনই আবশ্যই তা মিথ্যা হতে পারে না।
২নং যুক্তি -
যা সত্য সাক্ষ্য তা যতই মানুষেই (সাক্ষ্য) দিক না কেন প্রত্যেকের কথা একই প্রকার হয়। আর যা মিথ্যা সাক্ষ্য তা কখনও একটা সঙ্গের অন্যটার মিল হয় না। যেমন একই অংকের সঠিক উত্তর প্রত্যেকটিই একই প্রকার হয়, কিন্তু ভুল উত্তর কখনও একটার সঙ্গে অন্যটার মিল হয় না। এই যুক্তি মোতাবিক দেখা যায় আল্লাহর প্রত্যেক নবী আল্লাহর একত্ববাদ, রিসালত বা নবী রাসূল (সা.) গণের কার্যকলাপ ও যৌক্তিকতা এবং পরকাল সম্পর্কে হুবহু একই কথা বলেছেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে একথা মিথ্যা হলে সবার কথা একই প্রকার হতে পারতো না।
৩নং যুক্তি -
আল্লাহতে বিশ্বাসীগণ আমরা আল্লাহকে এভাবে পেয়েছি যে, যা কিছু আমাদের প্রয়োজন তা সবই তিনিই দেন। আর যা কিছু আমাদের মনের মৌলিক দাবী তা সবই তিনিই পূরণ করেন। এর ব্যতিক্রম আমরা পাইনি। আর লক্ষ্য করা গেছে যে, আল্লাহ সবই দেন বটে কিন্তু প্রয়োজনের পূর্বে দেন না। যেমন দুধের যখন প্রয়োজন ছিল তখন দুধ ঠিকই দিয়েছেন। দাঁতের প্রয়োজন ছিল না বলে দাঁত তখন দেননি। কিন্তু যখনই দাঁতের প্রয়োজন হয়েছে তখনই তিনি দাঁত দিয়েছেন।
দেখা যায় আল্লাহর সব কিছু দেয়ার ধারা মোতাবিক ভালো কাজের জন্য ভালো ফল এবং মন্দ কাজের জন্য মন্দ ফল মানব মনের এ দুটি প্রধান দাবী এখনও পূরণ করেননি। কিন্তু এ দাবী অবশ্যই পূরণ করবেন।
বলা বাহুল্য, মানব মনের সব চাইতে জোরালো এই দাবী দুটো পূরণের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ স্থায়ী জীবনের। যে জীবনের শাস্তি ও পুরস্কার ভোগ করার মত উপযুক্ত সময় পাওয়া যাবে। অর্থাৎ হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর বোমা ফেলে যে লোকটি এক মুহূর্তের মধ্যে কত হাজার হাজার লোককে বোমা বিস্ফোরণ করে মেরে ফেললো তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হলে হাজার হাজার বার তাকে মারা দরকার। কিন্তু এই পৃথিবীর জীবনে যেখানে একটা মানুষকে মাত্র একবারই মেরে ফেলা যায়, সেখানে একাধিক ব্যক্তির হত্যাকারীকে উচিৎ শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়, তাই মানব মনের দাবী হচ্ছে এই যে, এমন একটা চিরস্থায়ী জীবন দিতে হবে সেখানে একাধিক ব্যক্তির হত্যাকারীকে একাধিক বার হত্যা করা যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা এ পৃথিবীর উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এবং মানুষের ভালো করতে গিয়ে চরম জুলুম নির্যাতন ভোগ করেছেন তাদের ব্যাপারে একচেটিয়াভাবে প্রত্যেকের মনের দাবী এই যে, তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হোক এবং সে পুরস্কার ভোগ করার মত একটা দীর্ঘ সময়ও তাকে দেয়া হোক। মানুষের এই যে মৌলিক দাবী এটা পূরণ করার জন্যই আল্লাহকে কিয়ামত দিতে হবে। আর তা যদি আল্লাহ না ই দেন তবে ন্যায় বিচারক হিসেবে গণ্য হতে পারেন না। (নাউযুবিল্লাহ)
এ আলোচনা থেকে বুঝা গেলো পরকাল হতে হবে মানুষের প্রয়োজনেই। কাজেই তা আল্লাহ দিতে ওয়াদা করেছেন যেন তিনি ন্যায় বিচার করে তা কার্যকর করতে পারেন।