***আমি ফজরের নামাযে সময়মত উঠে পড়তে পারি না, কি করব?***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ সোমবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫ (১০:১২ অপরাহ্ণ)
আল হামদুলিল্লাহ, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহ।
মুসলিম মাত্র ২৪ ঘন্টায় ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়া আবশ্যক বিষয়। এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে ফজরের নামাজ সময় মত উঠে আদায় করতে অনেকেই সমর্থ হন না। কি কারণে সমর্থ হন না এবং এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কি করণীয় সেই বিষয়ে কিছু আলোচনা করব।
চাকুরী প্রার্থী যখন কোন ইন্টারভিউ দিতে যায় কিংবা কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যখন ব্যবসায়িক কোন চুক্তি করতে যান তখন কি চাকুরী প্রার্থী কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি হুট করে চলে যান কোন পূর্ব প্রস্তুতি/পরিকল্পনা ছাড়া? কিংবা যে সময়ে উপস্থিত হওয়ার কথা সেই সময়ের আধ ঘন্টা কিংবা আরো পরে যেয়ে উপস্থিত হন? স্বাভাবিকভাবে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েই এবং সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়, কেন? কারণ, এই বিষয়টির গুরুত্ব তার নিকট অনেক বেশী। আর ফজরের নামাজের ক্ষেত্রে যদি কেউ এই একই পরিমাপের গুরুত্ব যা সে উল্লেখিত বিষয়ের জন্য দিচ্ছে যদি দেয় তাহলে ফজরের নামাজ না পড়তে পারার কোন কারণ নেই।
কিছু বিষয় উল্লেখ করি,
১. নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।
উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান।
২। সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং
৫। রামাদান এর সিয়াম পালন করা।- সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়
২. মুসলিম/অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়াহ আততামীমী এবং উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা। সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়।
৩. সময়মত নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম আমল।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করলাম, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ সময়মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়
৪. কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে নামাজের।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দাহর নামাযের হিসাব নেওয়া হবে। যদি এটা(নামাযের হিসাব) ঠিক থাকে তাহলে তার বাকি কাজগুলো সঠিক(গ্রহণযোগ্য) বলে পরিগণিত হবে আর যদি এটা ঠিক না থাকে তাহলে বাকি কাজগুলো খারাপ(বাতিল) বলে পরিগণিত হবে।”(আত তাবারানী, আল জামী, হাদীসটি সহীহ)
৫. ফজরের নামাজ আদায় করা মুনাফিকের জন্য কষ্টকর
হাফস ইবনু উমার …………. উবাই ইবনু কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে ফজরের নামায আদায় করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ অমুক ব্যক্তি কি জামাআতে হাযির হয়েছে? সাহাবীরা বলেন-না। অতঃপর তিনি বলেনঃ অমুক ব্যক্তি কি নামাযে উপস্হিত হয়েছে? তারা বলেন, না। তিনি বলেনঃ এই দুই সময়ের (ফজর ও এশার) নামায আদায় করা মুনাফিকদের জন্য কষ্টকর। – সুনান আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়।
এখন গুরুত্ব অনুধাবন করুন, ফজরের সময় আমরা আল্লাহ তা’আলার সামনে দাড়াব; যিনি এই বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। অফিসের বসের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমরা বিশেষ প্রস্তুতি/সময় ঠিক রেখে উপস্থিত হই আর মহান আল্লাহ তা’আলার সামনে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য উপস্থিত হব তার জন্য কি বিশেষ প্রস্তুতি/সময় ঠিক রাখা উচিত নয়?
আল্লাহ তা’আলা আমাদের হক কথা বুঝার ও মানার তৌফিক দান করুন, আমীন।