***মাতৃভাষাঃ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১০ (৭:২১ অপরাহ্ণ)
ﺑﺴﻢ اﷲ اﻟﺮ ﺣﻤﻦ اﻟﺮ ﺣﻴﻢ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। আল্লাহ তাআলার শান্তি ও রহমত রাসূল ﷺ এর উপর ও তার পরিবার এবং সাহাবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের উপর বর্ষিত হোক।
প্রত্যেকটি ভাষা আল্লাহ তাআলার এক একটি নিয়ামত। জন্মের পর থেকে একটি শিশু ধীরে ধীরে তার চারপাশে ব্যবহৃত ভাষা শিখতে শুরু করে, ছোট শিশুর মুখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বুলি শুনতে কতই না ভালো লাগে, আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জাতিকে বিভিন্ন ভাষা দান করেছেন, প্রত্যেকেই যার যার ভাষাতে খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। অন্যের সাথে কথা বলতে, অন্যের কথা বুঝে আমরা আনন্দ অনুভব করি, অনেক সময় দুঃখ পাই। এই প্রত্যেকটি ভাষাই আল্লাহর তাআলার সৃষ্টির নিদর্শন।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“আকাশমালা ও যমীনের সৃষ্টি, তোমাদের পারস্পরিক ভাষা ও বর্ণ বৈচিত্র (নিসন্দেহে) তাঁর (কুদরতের) নিদর্শনসমূহের মাঝে (এক একটি বড়ো নিদর্শন); অবশ্যই জ্ঞানবান মানুষদের জন্যে এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে”। (সূরা আর রোমঃ ২২)
সুলায়মান ؑ পাখী, পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পারতেন। এই ভাষা বুঝতে পেরে সুলায়মান ؑ কিন্তু গর্ব করেননি, অহংকার করেন নি কিংবা অন্যদের বলে বেড়াননি আমি যা জানি তোমরা তা জান না! তিনি পাখী, পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পেরে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করেছেন, আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন, আল্লাহ যেন তাকে সৎকর্মশীলদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেন।
“তখন একটি স্ত্রী পিপড়া বললো, হে পিপীলিকার দল, তোমরা (দ্রুত) নিজ নিজ গর্তে ঢুকে পড়ো, (দেখো) এমন যেন না হয় সুলায়মান ও তার বাহিনী নিজেদের অজান্তে তোমাদের পায়ের নীচে পিষে ফেলবে। তার কথা শুনে সুলায়মান একটু মৃদু হাসি হাসলো এবং বললো, হে আমার মালিক, তুমি আমাকে তাওফীক দাও যাতে করে আমাকে ও আমার পিতামাতাকে তুমি যেসব নিয়ামত দান করেছ, আমি যেন (বিনয়ের সাথে) তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি, আমি যেন এমন সব নেক কাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো, (অতপর) তুমি তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে তোমার নেককার মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও”। (সূরা আন নামলঃ ১৮-১৯)
একটু লক্ষ্য করুন, দেখুন কি চমৎকার শিক্ষা রয়েছে আমাদের জন্যে। সুলায়ামান ؑ পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পেরে আল্লাহর সন্তুষ্টি সহকারে তৃপ্তির হাঁসি হাঁসলেন এরপর কি চমৎকার দোয়া করলেন আল্লাহ তাআলার নিকট। সুলায়ামন ؑ বললেন, হে আমার মালিক, তুমি আমাকের তাওফীক দাও যাতে করে আমাকে ও আমার পিতামাতাকে তুমি যেসব নিয়ামত দান করেছ, আমি যেন (বিনয়ের সাথে) তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা আদায় করার তাওফীক চাইলেন। এরপর কৃতজ্ঞতা কিভাবে আদায় করবেন তারও চমৎকার বর্ণনা দিলেন, আমি যেন এমন সব নেক কাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো অর্থাৎ ঐসকল কাজ যা করতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, যেসকল কাজ করলে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন। এরপর নেককাজ গুলো যেন আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত নেক বান্দাহদের মতো হয়, আল্লাহ যেন সেই নেক মানুষদের অন্তর্ভূক্ত করে নেন আর তাই তিনি বললেন, (অতপর) তুমি তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে তোমার নেককার মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও। আলহামদুলিল্লাহ, কি সুন্দর শিক্ষণীয়, চমৎকার একটি দৃষ্টান্ত।
আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলি, এটা আল্লাহ তাআলার একটা অশেষ নিয়ামত আমাদের জন্যে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আর এই কৃতজ্ঞতা আদায় করতে যেয়ে আমাদের আল্লাহর পছন্দীয় কাজ করতে হবে।
আসুন কথার মাধ্যমে কিভাবে আমরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতা অর্জন করতে পারি তার কিছু উপায় কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জেনে নিই।
মানুষের সাথে ভদ্র ভাষায় কথা বলতে হবে, গালাগাল করা যাবে না।
“দয়াময় (আল্লাহ তাআলা) এর বান্দাহ তো হচ্ছে তারা, যারা জমীনে নেহায়েত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা (অশালীন ভাষায়) তাদের সম্বোধন করে, তখন তারা নেহায়েত প্রশান্তভাবে জবাব দেয়” (সূরা আল ফুরকানঃ ৬৩)
অশালীন ভাষায় কথা বলা জাহেল লোকদের কাজ, জাহেল তারাই যারা আল্লাহ প্রদত্ত সত্য মেনে নেয় না বা জানলেও মানে না। আল্লাহর বান্দাহদের কোনভাবেই উচিত নয় অশালীন ভাষায় কথা বলা।
মানুষকে এক আল্লাহর একত্ববাদের দিকে ডাকতে হবে, সৎকাজের আদেশ দিতে হবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে হবে।
“তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন ব্যক্তির হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহ তাআলার দিকে ডাকে এবং সে (নিজেও) নেক কাজ করে এবং বলে, আমি তো মুসলামানদেরই একজন” (সূরা হা-মীম আস সাজদাঃ ৩৩)
“তোমরা মানুষদের সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে” (সূরা আল ইমরানঃ ১১০)
রাসূল ﷺ বলেছেন,
“মুসলমান (প্রকৃত) সেই ব্যক্তি, যার যবান(কথা) ও হাত থেকে মুসলামনগণ নিরাপদ থাকে” (বুখারী)
এখানে কথা থেকে নিরাপদ বলতে বুঝাচ্ছে, এক মুসলিম অন্য মুসলিমের দোষ অন্যের কাছে প্রকাশ করবে না, গিবত করবে না, মিথ্যা অপবাদ ছড়াবে না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে না, অশালীন ভাষায় কথা বলবে না প্রভৃতি।
রাসূল ﷺ বলেছেন,
“কোন মুসলামনকে গালি দেওয়া ফাসেকী” (বুখারী)
“হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা বেশী বেশী অনুমান করা থেকে বেঁচে থাক, (কেননা) কিছু কিছু (ক্ষেত্রে) অনুমান (আসলেই) অপরাধ এবং একে অপরের (দোষ খোঁজার জন্যে তার) পিছনে গোয়েন্দাগিরী করো না, একজন আরেকজনের গীবত করো না, তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে- আর (অবশ্যই) তোমরা এটা অত্যন্ত ঘৃণা করো; (এসব ব্যাপারে) আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন এবং তিনি একান্ত দয়ালু” (সূরা হুজুরাতঃ ১২)
“দূর্ভোগ রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে, যে (সামনে পেছনে মানুষদের) নিন্দা করে” (সূরা আলা হুমাযাহঃ ১)
প্রায়ই দেখা যায় আমরা অর্থহীন কথাবার্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিই। কথা বলতে বলতে অনেক সময় আমরা এমনসব কথা বলে ফেলি যা ইসলামী শরীয়াতে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি সবচেয়ে ভয়ংকর হলো এমনসব কথাও থাকে যা একজনকে ইসলাম থেকে বের করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট।
রাসূল ﷺ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে নয়তো নীরব থাকে” (বুখারী)
“তুমি যদি তাদের (কিছু) জিজ্ঞেস করো তারা বলবে, (না,) আমরা তো একটু অযথা কথাবার্তা ও হাসি কৌতুক করছিলাম মাত্র, তুমি (তাদের) বলো, তোমরা কি আল্লাহ তাআলা, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা দোষ ছাড়ানোর চেষ্টা করো না, একবার ঈমান আনার পর তোমরাই পুনরায় কাফের হয়ে গিয়েছিলে” (সূরা তওবাঃ ৬৫-৬৬)
কুরআনের কোন আয়াত নিয়ে, রাসূল ﷺ এর কোন সুন্নাহ নিয়ে কৌতুক, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা কাউকে আল্লাহর নির্দেশ তথা রাসূল ﷺ এর সহীহ সুন্নাহ পালন করতে দেখে এই রকম কথা বললে সে ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে ঠিক যেমনটি করে তীর ছোড়ার পর তা বের হয়ে যায়।
রাসূল ﷺ বলেছেন,
“তারা ইসলাম থেকে বেড়িয়ে যাবে ঠিক যেভাবে তীর ছোড়ার পর তা বের হয়ে যায়” (বুখারী)
এরপর রয়েছে মিথ্যা কথা বলা, প্রায়ই দেখা যায় আমরা মিথ্যা কথা বলি আর এভাবে একসময় মিথ্যা কথা বলাটাও একটা আর্টে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু মিথ্যা কথা বলা মুনাফিকের অন্যতম গুণগুলোর একটি। আর মুনাফিকের স্থান জাহান্নামের একদম নীচু স্তরে।
“এ মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করবে, তুমি সেদিন তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী খুজে পাবে না” (সূরা নিসাঃ ১৪৫)
আর সবশেষে যে কথাটি দিয়ে শেষ করব, যে মায়ের কাছ থেকে আমরা আল্লাহর এই অশেষ নিয়ামত ভাষা শিখতে পেরেছি সেই মায়ের সাথে তথা বাবার সাথে অশালীন ভাষায় কথাতো বলা যাবেই না এমনকি বিরক্তসূচক কোন শব্দও উচ্চারণ করা যাবে না।
“তোমাদের মালিক আদেশ করেছেন, তোমরা তাঁকে(আল্লাহকে) বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবাদত করো না এবং তোমরা তোমাদের পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের (সাথে) বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং কখনো তাদের ধমক দিয়ো না, তাদের সাথে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো”। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩)
“আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে ؓ বর্ণিত, আমি রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয়? তিনি বললেনঃ সময়মতো নামাজ আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা” (মুসলিম)
সবশেষে সুলায়মান ؑ এর দোয়া দিয়ে লেখাটি শেষ করছি,
“হে আমার মালিক, তুমি আমাকে তাওফীক দাও যাতে করে আমাকে ও আমার পিতামাতাকে তুমি যেসব নিয়ামত দান করেছ, আমি যেন (বিনয়ের সাথে) তার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি, আমি যেন এমন সব নেক কাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো, (অতপর) তুমি তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে তোমার নেককার মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও”। (সূরা আন নামলঃ ১৯)
সুলায়মান ؑ পাখী, পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পারতেন। এই ভাষা বুঝতে পেরে সুলায়মান ؑ কিন্তু গর্ব করেননি, অহংকার করেন নি কিংবা অন্যদের বলে বেড়াননি আমি যা জানি তোমরা তা জান না! তিনি পাখী, পিপড়াদের ভাষা বুঝতে পেরে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করেছেন, আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন, আল্লাহ যেন তাকে সৎকর্মশীলদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নেন।
খুবই শিক্ষনীয় কথা । আমাদের বাংলা ভাষা নিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত, অন্য কোনো অগ্রহনযোগ্য পন্হায় নয় ।
আপনার এই লেখাটি ভালো লাগলো । সময়োপুযোগী ।