***দুঃখজনক ঘটনা***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ শনিবার, এপ্রিল ২৪, ২০১০ (৭:৩৪ অপরাহ্ণ)
বগুড়ার শেরপুরের সাতারা নামাপাড়া গ্রামের একটি বাড়ির পাশে মাটি ভেদ করে গজিয়ে ওঠা অলৌকিক ফুল দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। এক নজর ফুলটি দেখতে আসা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ মনের আশা মেটাতে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস দান করছে। ফুলটি নিয়ে আশপাশের এলাকায় নানা কল্পকাহিনীরও বিস্তৃতি ঘটেছে।
গত বৃহস্পতিবার সাতারা নামাপাড়া গিয়ে দেখা গেছে, ফুল দেখার জন্য অজস্র নারী-পুরুষের ভিড়। এলাকার হজরত আলী জানান, তার বাড়ির পার্শ্বের একটি পতিত জমিতে গত বুধবার সìধ্যার দিকে বেশ দুর্গìধ ছড়ালে সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি ফুলের কলির মতো। দেখতে দেখতে রাত ১২টার মধ্যে তা দেড় ফুট উচ্চতার একটি ফুলের আকৃতি ধারণ করে। এলাকাবাসী ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে অলৌকিক মনে করে ওই স্খানটির চারদিকে বেড়া দেয় এবং ওপরে একটি সামিয়ানা টানিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্রঃ এখানে ক্লিক করুন
উপরের ঘটনাটি একটি আঁতকে উঠার মতো ঘটনা। প্রায়ই আমাদের দেশে এরকম ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অলৌকিক ঘটনার কথা বলে পীর-কবর পূজারীদের ব্যবসা রমরমা। এই উপরের ঘটনার দিকে খেয়াল করুন, ফুলটিতে মানুষ নগদ টাকা-পয়সা দান করছে যেন তাদের মনের আশা পূরা হয়! আল্লাহ আকবর। কত বড় শিরকের মাঝে জড়িয়ে পড়ছে এতগুলো মানুষ। আল্লাহর নিকট মনের আশা পূরণ করার কথা না জানিয়ে একটা ফুলের কাছে যেয়ে সেই কথা ব্যক্ত করছে। যে আশা পোষণ করা উচিত শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার নিকট সেই আশা তারা পোষণ করছে একটা ফুল গাছের নিকট! এই আকীদা সম্পন্ন মানুষগুলো যতই নামাজ পড়–ক, যতই রোজা রাখুক, যতই ভাল কাজ করুক তাদের সকল কাজগুলো যে ছাইয়ের মতো নিস্ফল তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
“অথচ (হে নবী), তোমার কাছে এবং সেসব (নবীদের) কাছেও যারা তোমার আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, এ (মর্মে) ওহী পাঠানো হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহ তাআলার সাথে (অন্যদের) শরীক কর তাহলে অবশ্যই তোমার (সব) আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থদের দলে শামিল হয়ে যাবে।” (সূরা ঝুমারঃ ৬৫)
সহীহ আকীদা না থাকলে কোন ইবাদতরেই আল্লাহ তাআলার নিকট মূল্য নেই। আল্লাহ সম্পর্কে না জানার অজ্ঞতার কারণে বা জানলেও না মানার কারণে আজকে অনেক মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট যেয়ে সাহায্য প্রার্থনা করছে, মানত করছে। আল্লাহু আকবর। আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় চাইছি।
কিছুদিন আগেও আরেকটি ঘটনা পড়েছিলাম, মসজিদের দেওয়ালে মরা লাশের ছবি(রং পুরাতন থাকায় একটা আকৃতি ফুটে উঠেছিল যেটাকে লাশের মতো দেখা গিয়েছিল) ভেসে উঠেছিল আর সেটা নিয়ে স্থানীয় কতিপয় মানুষ শিরকের রাস্তা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে তৎপর হয়েছিল। আর উপরোক্ত ঘটনাটিতে তারা গাছটির চারপাশে বেড়া দিয়ে উপরে সামিয়ানা টানিয়েছে, মানুষ ভক্তি সহকারে দেখতে যাচ্ছে, গাছের নিকট থেকে সাহায্য পাওয়ার আশায়!
আমাদের দেশে প্রায়ই বিভিন্ন ঘটনার জন্যে ১০০ আলেমের বিবৃতি দিয়ে পত্রিকায় তাদের মতামত প্রকাশ করা হয়, কিন্তু শিরকের মতো এতবড় ঘটনা আমাদের দেশে যে অহরহ ঘটছে তার জন্যে ১০০ জন তো দূরে থাক আমি ১ জন আলেমকেও বিবৃতি প্রকাশ করতে দেখিনি। আলেমগণের শিরকের বিষয়ে এই নিরব থাকা খুবই দুঃখজনক। রাসূল ﷺ মক্কার ১৩ বছরের জীবনে সাহাবীদের যত্নের সাথে সহীহ আকীদা শিক্ষা দিয়েছিলেন, আল্লাহ সম্পর্কিত জ্ঞান দান করেছিলেন, তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে জীবনব্যাপী সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু বড়ই দুঃখজনক যে আজকে আমাদের দেশ শিরকে শিরকে ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন পীরকে সিজদা করা, মাজারে সিজদা করা, পীর বা মৃত ব্যক্তির নিকট আশা পোষণ করা, মানত করা প্রভৃতি কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। আল্লাহু আকবর।
আমাদের দেশে অনেক মুসলিম দল রয়েছে যারা ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করার জন্যে সংগ্রাম করতে ব্যস্ত কিন্তু সেই সংগ্রামরত লোকগুলো যদি উপরোক্ত ঘটনার আকীদা সম্পন্ন হয় তাহলে সেই সংগ্রাম যে ব্যর্থ হয়ে যাবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিরক থেকে হিফাজত করুন এবং শিরক নির্মূল করার জন্যে সঠিক পন্থা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
একটি প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেলোঃ একেতো নাচুনী বুড়ি, তার উপর ঢোলের বাড়ি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিরক থেকে হিফাজত করুন এবং শিরক নির্মূল করার জন্যে সঠিক পন্থা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।