***Reminder: বরকতময় মাস রমাযান***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ রবিবার, জুন ১৩, ২০১০ (৫:৪৯ অপরাহ্ণ)
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আর মাত্র দুইমাস বাকি বরকতময়, কল্যাণময়, পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার মাস ‘রমাযান’! তাই এই বরকতময় মাসটি আসার আগেই আসুন আমরা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি!
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম(রোযা) ফরজ করা হল যেমন তোমাদের পূর্বেকার লোকদের উপর ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার” (সূরা বাকারাঃ ১৮৩)
অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“রমাযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরুপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে”। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)
সিয়াম বা রোযার মাহাত্ম্যঃ
আদম সন্তানের প্রত্যেক কাজেরই নেকী দশগুণ থেকে বাড়িয়ে সাতশ’গুণ পর্যন্ত করা হয়। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন, কিন্তু সিয়াম নয়। কারণ, এটা আমরই জন্য। তাই আমিই এর বদলা দেব। সে আমারই জন্য তার কামনা বাসনা ও খাওয়া দাওয়া ত্যাগ করেছে। সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি খুশী রয়েছে। একটি খুশী তার ইফতারের সময় এবং অপর খুশী তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। আর সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধের চেয়েও উত্তম। তাই তোমাদের কেউ সিয়াম অবস্থায় যখন থাকবে তখন সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং চেঁচামেচিও না করে। তথাপি তাকে যদি কেউ গাল দেয় কিংবা তার সাথে লড়াই চালায় তাহলে সে যেন বলে যে, আমি সায়িম(রোযাদার) ব্যক্তি। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
আবূ উমামাহ (রা) থেকে বর্ণিত যে, নাবী ﷺ বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোযা রাখে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার মাঝে এবং জাহান্নামের আগুনের মাঝে একটি গর্ত তৈরী করে দেন যা আসমান ও যমীনের মাঝের দূরত্বের মত। (তিরমিযী)
রমাযান মাসের ফযীলত ও মাহাত্ম্যঃ
আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং এক জুমাআহ থেকে অন্য জুমুআহ আর এক রমাযান থেকে অন্য রমাযান ওদের মাঝের পাপের খেসারতকারী হয়- যখন বড় বড় পাপ থেকে বিরত থাকা হয়। (মুসলিম, সহীহ তারগীব ওয়া আত তারহীব)
আমর ইবনে মুর্রাহ আলজুহানী (রা) বলেন, একজন লোক নাবী ﷺ এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার রায় কি? আমি যদি এই সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য কেউ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল। আর আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি ও যাকাত দান করি এবং রমাযানের সিয়াম রাখি ও সেই রাতে সালাতে দাঁড়াই তাহলে আমি কাদের মধ্যে হতে পারি? তিনি ﷺ বললেনঃ তুমি সিদ্দীক ও শহীদদের মধ্যে হতে পারবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান, সহীহ তারগীব ওয়া আত তারহীব)
সাহল ইবনে সাদ (রা) বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ জান্নাতে আটটি দরজা আছে, তন্মধ্যে একটি দরজার নাম ‘রাইয়্যান’। ওর মধ্যে দিয়ে কেবলমাত্র সিয়াম পালনকারী ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না। (বুখারী, মুসলিম)
আবূ হুরায়ারাহ (রা) থেকে বর্ণিত, নাবী ﷺ বলেনঃ তার উম্মতকে রামাযানের শেষ রাতে ক্ষমা করে দেয়া হয়। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! সেটা কি লাইলাতুল কাদর? তিনি ﷺ বললেন, না। বর একজন মজদূর যখন তার কাজ শেষ করে তখন তাকে পুরোপুরি তার বদলা দেওয়া হয়। (আহমদ, মিশকাত)
আর এক বর্ণনায় তিনি ﷺ বদ দু’আ দিয়ে বলেনঃ সেই ব্যক্তির নাক মাটিতে মিশে যাক, যে রমাযান পেল অথচ সে নিজেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত করে নিতে পারলো না। (তিরমিযী, মিশকাত)
অন্য বর্ণনায় আছে, জিবরীল আমীন (আ) তার ﷺ ঐ বদ দু’আতে আমীন! আমীন! বলেছিলেন। (ইবনে খুযাইমাহ)
রমাযানের সিয়ামের গুরত্বঃ
আবূ উমামাহ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ একদা আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে। তাদের গালটি ফাড়া। তাথেকে রক্ত ঝরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? বলা হল এরা তারা, রমাযান মাসে বিনা ওযরে যারা সিয়াম রাখে না। (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ বিনা ওযরে রমাযানের সিয়াম ত্যাগকারী কাফির। (আবূ ইয়ালা, দায়লামী, ফিকহুস সুন্নাহ)
যে ব্যক্তি শরীয়তী ওযর ছাড়া এ মাসের একটি রোযাও ছেড়ে দিবে সে যদি সারা জীবনেও সিয়াম পালন করে তবুও তার পাপের খেসারত হবে না। (বুখারী)
যে ব্যক্তি এ মুবারাক মাসেও আল্লাহকে রাযী করাতে পারল না, সে বড়ই অভাগা। (ইবনে হিব্বান)
এ মাসে জান্নাত ও রহমাতের দরজাগুলো খুলে যায় এবং শেষ পর্যন্ত একটিও বন্ধ হয় না। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং তন্মধ্যে একটিও খোলা হয় না। এ মাসে আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলার তরফ থেকে বারাকাত ও রাহমাত নাযিল হয়। এটা গুনাহের ক্ষমা ও তাওবাহ কবুলের মাস। (তাবারানী)
শেষ কথাঃ
বেশী বেশী কুরআন পড়া, হাদীস অধ্যায়ন, সূরা মুখস্থ করার চেষ্টা এখন থেকেই সুরু করে দিই যেন বরকতময় মাস রমাযান এলে বেশী বেশী সওয়াব অর্জন করতে পারি এবং আমাদের গুণাহসমূহ আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে মার্জনা করে নিতে পারি। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের রমাযান পর্যন্ত বাঁচার তৌফিক দেন। আমীন!
রমাযান সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করার জন্য নিম্নোক্ত বইটি খুবই চমৎকার-
নামঃ সিয়াম ও রমাযান
লেখকঃ হাফিজ শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবী (অধ্যাপক, কলিকাতা মাদরাসা আলিয়া)
মূল্যঃ নব্বই টাকা।
প্রাপ্তিস্থানঃ কাটাবনের বইয়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যায়।