লগইন রেজিস্ট্রেশন

***বিশ্বাস এবং সৎকর্মঃ দ্বিতীয় পর্ব***

লিখেছেন: ' manwithamission' @ শনিবার, জুন ১৯, ২০১০ (৯:১৬ পূর্বাহ্ণ)

পূর্বে প্রকাশিতের পর….
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম

সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস

এরপর আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তাহলো সৎকর্ম ব্যাতীত বিশ্বাস। আপনারা অনেক লোকদের দেখে থাকবেন যারা নামাজ পড়ে না কিন্তু তারা আপনাকে বলবে, আমার বিশ্বাস আমার অন্তরের মধ্যে রয়েছে। আমার বিশ্বাসকে দেখানোর জন্য আমার কোন সাইনবোর্ডের দরকার নেই যেমনটি তোমরা নামাজ, রোজা করার মাধ্যমে সাইনবোর্ড ধারণ করে তোমাদের বিশ্বাসগুলোকে প্রদর্শন করছ। আমার বিশ্বাস আমার অন্তরের মধ্যে রয়েছে, আমি এটার প্রতি আন্তরিকও আর আমি এটা প্রদর্শন করে দেখাতে চাই না। তবে ইসলামে এই ধরণের যুক্তি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই পরিস্কারভাবে বলেছেন, বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত আর যে কেউ এই নামাজ পরিত্যাগ করবে সে একজন অবিশ্বাসী তথা কাফির হয়ে যাবে। এটা হচ্ছে ইসলামের প্রধানতম বিষয়। কেউ বলছে তার বিশ্বাস তার অন্তরে রয়েছে কিন্তু নামাজ পড়ছে না তখন এই নামাজ না পড়াটা তার অন্তরের বিশ্বাসকে বাতিল করে দিচ্ছে অর্থাৎ তার সেই বিশ্বাসের কোন মূল্যই থাকছে না। আর এটাকে কোন বিশ্বাসই বলা যায় না বরং এটাকে কতগুলো কথার সমষ্টি বলা যায়। প্রকৃতপক্ষে এটাকে জ্ঞান বলা যায় আর বিশ্বাস এবং জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আর এটাতেই মানুষজন বিভ্রান্ত হয়ে পরে।

এখানে একটি বিষয় হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে নেওয়া, আপনি জানেন অবশ্যই আল্লাহর অস্তিত্ব রয়েছে, যাকে আমরা জ্ঞান বলতে পারি আর আরেকটি বিষয় হচ্ছে সেই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এখন এই জ্ঞান আপনাকে সৎকর্ম করতে বলবে না কিন্তু বিশ্বাস আপনাকে সৎকর্ম করতে বলবে। এটাই হচ্ছে এই দুইটির মধ্যে পার্থক্য। কাজেই যারা বলবে আমার বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু আসলে আমি নামাজ পড়ার বিষয়টি অনুভব করি না, তাদের এই ধরণের বিশ্বাসকে আমরা শয়তানের বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করতে পারি অর্থাৎ যে বিশ্বাস শয়তানের বিশ্বাসের মতো। কারণ শয়তান আল্লাহকে জানতো, আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করতো কিন্তু যখন তাকে আদেশ করা হলো আদমের সামনে সিজদা করার জন্য তখন সে তা অমান্য করেছিল। সে আল্লাহকে চিনতো কিন্তু তার মধ্যে বিশ্বাস অনুপস্থিত ছিল আর বিশ্বাস অনুপস্থিত থাকার কারণেই আল্লাহর অস্তিত্বের জ্ঞান তাকে আল্লাহর আদেশ পালনে প্ররোচিত করেনি। আর এটাই হচ্ছে বিশ্বাস এবং জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য। কাজেই যারা বলবে যে তাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু আল্লাহ তাদের যেভাবে কাজ করতে আদেশ করেছেন সেভাবে করছে না তাহলে প্রকৃতপক্ষে তাদের আল্লাহর প্রতি কোন বিশ্বাসই নেই। তাদের আল্লাহ সম্পর্কিত জ্ঞান রয়েছে, ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান তাদের রয়েছে আর মাঝেমাঝে আমরা এমন অনেক লোকের দেখা পাই যাদের আল্লাহ এবং ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান অনেক চমৎকার। তারা মুসলিম হিসেবেই জন্ম গ্রহণ করে আর তারা আপনাকে বলবে, হ্যাঁ ইসলাম তোমাকে এটা করতে বলে, ওটা করতে নিষেধ করে কিন্তু তারা নিজেরাই তা করে না। উদাহরণ স্বরুপ বলতে পারি, আমি যখন রিয়াদের একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম যেখানে অ্যারাবিক সেকশন এবং ইংলিশ সেকশন ছিল। অনেক আরব শিশু রয়েছে যারা নামাজ পড়ার জন্য, অজু করার জন্য, কোন কোন জিনিসগুলো অপরিহার্য এবং কিবলা কি সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখে। কিন্তু যখন নামাজের সময় হয় তারা অজু ছাড়াই নামাজ পরে ফেলে! কিন্তু আপনি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করেন নামাজ পরার জন্য কোন জিনিসটি আবশ্যক তারা বলবে, অজু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অজু ব্যতীত কোন নামাজ গ্রহণযোগ্য নয়। আর এটা হচ্ছে নামাজ পড়ার জন্য একটা মৌলিক বিষয়। কিন্তু এরপরও তারা অজু ব্যতীত নামাজ পরে! কারণ তারা জানে, যদি তারা নামাজ না পরে তাহলে তাদের শিক্ষক প্রিন্সিপালের নিকট রিপোর্ট করবে আর যার ফলে তারা বিপদে পরে যাবে। যখন তাদের শিক্ষক এসে তাদের সামনে উপস্থিত হয় আর তারা হয়তো অন্যকাজে ব্যস্ত ছিল কিন্তু শিক্ষককে দেখেই অজু ছাড়াই নামাজ পড়তে শুরু করে দেয়। আর এটাই হচ্ছে বিশ্বাস ব্যতীত জ্ঞান। অর্থাৎ তাদের মাঝে বিশ্বাস অনুপস্থিত। এই বিষয়টা খুবই বিপদজনক।

কাজেই যারা ইসলাম শিক্ষা দেন তাদেরকে এই বিষয়টির প্রতি খুবই সতর্ক হতে হবে। আমরা লোকজনকে এমন পন্থায় ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিব যাতে করে সেই শিক্ষা দিয়ে তারা যেন তাদের বিশ্বাসকে উন্নত করতে পারে। আমরা এমন পন্থায় দিব না যেন ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা দানের বিষয়টি শুধুমাত্র জ্ঞান বিতরণের মতে হয়ে যায়। অর্থাৎ তারা শুধু জানল ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান কি কিন্তু তাদের বিশ্বাস উন্নত হলো না। আর দূর্ভাগ্যজনক ভাবে শুধুমাত্র জ্ঞান বিতরণের বিষয়টি সব জায়গায় ঘটছে। আমরা যারা ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা দান করে থাকি তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের অন্তর থেকে শিক্ষা দান করি না। আমি বলছি না সকল শিক্ষকই এমন কিন্তু অধিকাংশই এমন। তারা এটাকে চাকুরী হিসেবে দেখে। তারা স্কুলে যায় এবং চাকুরী হিসেবে ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা দিয়ে থাকে। যার ফলে আমরা দেখতে পাই, ছাত্রদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান রয়েছে কিন্তু তাদের মাঝে বিশ্বাস অনুপস্থিত। কারণ বলা হয়ে থাকে, যা মুখ থেকে আসে তা কানের ভিতর দিয়ে চলে যায় আর যা অন্তর থেকে আসে তা অন্তরের মধ্যে অবস্থান করে। কাজেই যারা ইসলাম সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান করে থাকেন তাদের নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস থাকতে হবে। তারা ইসলামী শিক্ষা দানের বিষয়টি শুধুমাত্র চাকুরী হিসেবে দেখবেন না বরং আল্লাহ কর্তৃক তাদের উপর অর্পিত একটি দায়িত্ব হিসেবে দেখবেন, তারা যা শিক্ষা দান করবেন সে জন্য তারা আল্লাহর নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন। যদি শিক্ষকদের মাঝে এই ধরণের মনোভাব থাকে তাহলে যারা শিক্ষা গ্রহণ করছে তাদের জীবনের মাঝে আমরা এর একটি অর্থবহ ফলাফল দেখতে পাবো।

চলবে…..

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৬৮ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)