***বিশ্বাস এবং সৎকর্মঃ তৃতীয় পর্ব***
লিখেছেন: ' manwithamission' @ রবিবার, জুন ২৭, ২০১০ (১১:৫২ পূর্বাহ্ণ)
পূর্বে প্রকাশিতের পর…
***বিশ্বাস এবং সৎকর্মঃ প্রথম পর্ব***
***বিশ্বাস এবং সৎকর্মঃ দ্বিতীয় পর্ব***
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস
এরপর যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল, সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যাতীত বিশ্বাস। আপনারা অনেক মানুষকে পাবেন যাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অনেক মজবুত। কিন্তু বিশ্বাস মজবুত থাকলেও তারা সৎকর্মটি সঠিক পন্থায় করে না। তারা ঐ সকল বিষয়ের অনুসরণ করে যেগুলো এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম পর্যন্ত যা পৌছেছে অর্থাৎ যেগুলো তারা তাদের বাপ-দাদাদের মাধ্যমে পেয়েছে। এই ইসলামকে আমরা বলতে পারি কালচারাল ইসলাম আর খ্রিস্টান মিশনারীরা যারা মিশনারীর কাজে নিয়োজিত তারা এটাকে বলে থাকে Folk ইসলাম। আপনি যদি তাদের মিশনারী কাজের রিপোর্টগুলো পড়েন তাহলে দেখবেন সেখানে পরিস্কার ভাষায় লেখা রয়েছে যে, আমাদের Folk ইসলামের প্রতি বেশী জোর দিতে হবে, আর এভাবেই আমরা তাদের কাছে ঈসা (আ) বার্তা পৌছে দিতে পারবো। কারণ, Folk ইসলাম একজনের বিশ্বাসকে রক্ষা করতে পারে না। এই Folk ইসলামের মধ্যে এমন অনেক কিছুর অনুসরণ করা হয় যা ইসলাম অনুমোদন করে নি। আর এটা মিশনারীদের জন্যে অনেজ সহজ কারণ Folk ইসলামের সাথে খ্রিস্টিয়ানিটির অনেক মিল রয়েছে। তাদের রিপোর্টে লেখা রয়েছে, আমাদেরকে অবশ্যই ভাল মুসলমানদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে অর্থাৎ যাদের সঠিক বিশ্বাস রয়েছে আর যারা সৎকর্ম করে ঠিক সেইভাবে যেভাবে করতে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন। তারা এই ধরণের মুসলিমদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।
এই মিশনারীরা যে সকল জায়গায় তাদের কার্যক্রম চালাতে সফল হয়েছে আপনারা যদি সেদিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলো। মিশনারীরা এমনসব জায়গায় যায় যেখানকার মানুষগুলো খুবই দরিদ্র এবং অশিক্ষিত। তারা সেখানে যেয়ে তাদের টাকা দেয়, তাদের সাহায্য করে আর বলে আমরা তোমাদের সাহায্য করছি কারণ তোমাদের প্রতি ঈসা (আ) এর ভালবাসা রয়েছে এরপর সেই লোকগুলোকে তারা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করায়। এই একই ঘটনা ঘটছে ইন্দোনেশিয়াতেও যেখানে মানুষগুলো ইসলামের নামে এমন সব কাজ করছে যেগুলোর ইসলামে কোন অস্তিত্বই নেই। যদিও মিশনারীরা হাজার হাজার মুসলিমকে খ্রিস্টান বানাচ্ছে কিন্তু আপনি তাদের মাঝে একজন ইসলামিক স্কলার বা যে জানতো ইসলাম বলতে সত্যিই কি বুঝায় এমন কাউকে খুজে পাবেন না। বিপরীতদিকে আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, যারা খ্রিস্টান থেকে ইসলাম গ্রহণ করছে তাদের মধ্যে অনেক স্কলার রয়েছে। এটা পরিস্কার যে যারাই জ্ঞানী তারাই ইসলাম গ্রহণ করছে।
প্রকৃতপক্ষে অশিক্ষিত লোকদের বুঝানো খুবই কঠিন কারণ তারা যেভাবে ইসলাম পালন করছে তার প্রতি খুবই ইমোশনাল। সুতরাং এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি সঠিক পন্থায় সৎকর্ম করা আবশ্যক অর্থাৎ বিশ্বাস এবং সৎকর্মের সাথে সঠিক পন্থায় সৎকর্ম বিষয়টি থাকতে হবে। কারণ, কেউ যদি ভুল পন্থায় সৎকর্ম করে আর যদিও তার বিশ্বাস ঠিক থাকে কিন্তু এক পর্যায় যেয়ে সে শিরকে লিপ্ত হয়ে পরবে। উদাহরণ স্বরুপ আমরা বলতে পারি, ভারত এবং মিশরের মতো দেশের কথা, সেখানে যখন কোন সৎ লোক মারা যায় তারা তখন তার কবরের উপর মাজার তৈরী করা হয় এবং মানুষজন সেখানে যাওয়া শুরু করে, কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা শুরু করে, মৃত ব্যক্তিদের তারা উছিলা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থাৎ তারা মনে করে তাদের প্রার্থনা এই মৃত ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট পৌছে দিবে আর ফলশ্রুতিতে তাদের দোয়া কবুল হবে। আপনারা যদি ব্যক্তিগতভাবে এই ধরণের মানুষদের সাথে কথা বলেন তাহলে দেখতে পাবেন তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি খুবই দৃঢ়। এমনকি তারা তাদের বিশ্বাসের জন্য মরতেও রাজি কিংবা আপনারা যদি তাদের সামনে ইসলাম সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলেন তারা আপনাকে মেরে পর্যন্ত ফেলবে! কিন্তু ইবাদত কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত আর যার ফলশ্রুতিতে তারা শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা এমন পন্থায় ইবাদতে লিপ্ত হয়ে পড়ে যা তাদের বিশ্বাসকে বাতিল করে দেয়। কারণ, কুরআনে আল্লাহ তাআলা পরিস্কার করে বলেছেন, শিরক ব্যতীত বান্দাহ যত প্রকার গুণাহই করুক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিতে পারেন। শিরক যার মানে হচ্ছে অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে ইবাদত করা। এই গুণাহটাই হচ্ছে একমাত্র ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আর কেউ যদি এই শিরক করা অবস্থায় মারা যায় তখন সে নিজেকে গ্যারান্টি দিতে পারে যে সে চিরদিনের জন্য জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যাবে! আমাদের বিশ্বাস এবং সৎকর্ম হতে হবে সঠিক বিশ্বাস এবং সঠিক পন্থায় আর আমরা যদি তা করি আল্লাহ তাআলা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে এই দুনিয়া এবং পরকাল উভয় স্থানেই আমরা সাফল্য মন্ডিত হব।
এখন এটা আমাদের জন্য জানা আবশ্যক যে সঠিক বিশ্বাস বলতে আসলে কি বুঝায় বা সঠিক বিশ্বাসের জন্য আমাদের কি কি জানা প্রয়োজন। সঠিক বিশ্বাসের জন্য প্রথমেই আল্লাহকে চিনতে হবে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, যিনি এই সমগ্র বিশ্বকে পরিচালিত করছেন, আল্লাহর গুণাবলীকে এমনভাবে জানতে হবে যাতে করে আমরা সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর সৃষ্টির গুণাবলীর মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করতে সক্ষম হই। যার ফলে কোনগুলো আল্লাহর গুণাবলী আর কোনগুলো সৃষ্টির গুণাবলী সে সম্পর্কে আমাদের মনে কোন সন্দেহ থাকবে না এবং ইবাদত করতে হবে সরাসরি শুধুমাত্র সেই সৃষ্টিকর্তার জন্য। এই বিষয়টিকে আমাদের গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। যার ফলে আমরা কখনই এমন কারো ইবাদত করবো না যেখানে সেই ইবাদত বা উপাসনা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কোন সৃষ্টিকে আমরা আল্লাহ তাআলার গুণাবলী দিয়ে ভূষিত করবো না যদিও এই বিষয়টি বিভিন্ন উপায়ে সংগঠিত হতে পারে। আবার অনেক সময় আমরা কোন সৃষ্টিকে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী দিয়ে ফেলি নিজের অজান্তেই।
যার উৎকৃষ্ট একটি উদাহরণ হচ্ছে, আইনস্টাইনের ‘থিওরী অব রিয়েলিটিভিটি’। এই থিওরীটি হচ্ছে E=mc2 এখানে Energy (E) বা শক্তি = বস্তু এবং আলোর গতির দ্বিগুণ। আর এটি এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে যে, শক্তি বা বস্তু সৃষ্টি করা যায় না বা ধ্বংসও করা যায় না। যেখানে বস্তু শক্তিতে রুপান্তরিত হয় আবার শক্তি বস্তুতে রুপান্তরিত হয় আর এটা হচ্ছে একটি অবিরাম প্রক্রিয়া। কিন্তু এই তত্ত্বটিকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তা একটি শিরক! সূত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়, শক্তি বা বস্তুকে সৃষ্টিও করা যায় না আবার ধ্বংসও করা যায় না যা এই শক্তি বা বস্তকে যে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে অস্বীকার করা হয়। বলা হয়, শক্তিকে সৃষ্টি করা যায় না কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন একমাত্র এ গুণের অধিকারী। কাজেই যখন আমরা বলি শক্তিকে সৃষ্টি করা যায় না তখন আমরা শক্তিকে আল্লাহর বৈশিষ্ট্যে গুণান্বিত করি। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “ওয়া হুয়া খালাকা কুল্লি শাইয়িন” অর্থাৎ তিনি সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন। আবার, যখন আমরা বলি, শক্তিকে ধ্বংস করা যায় না তখন আবার আমরা আল্লাহর বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করি। কারণ আল্লাহ তাআলাই একমাত্র যিনি কখনও ধ্বংস হবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “কুল্লিমা আলাইহা ফানিন” অর্থাৎ এই বিশ্বের সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটাই হচ্ছে বাস্তব। কাজেই একজন মুসলিম যখন এই রকম থিওরী শিখবে বা শিখাবে তখন তাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সে শুধু এটুকুই গ্রহণ করতে পারবে যে, মানুষ শক্তিকে ধ্বংস বা সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু বিষয়টিকে যদি এইভাবে না নিয়ে খোলাখুলিভাবে নেওয়া হয় যেখানে শক্তিকে ধ্বংস বা সৃষ্টি করা যায় না তাহলে এটা শিরক হয়ে যাবে। কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈজ্ঞানিক এমন অনেক কিছুই আমরা ব্যাখ্যা করার জন্য গ্রহণ করছি যাতে শিরক অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। আর এই শিরকের বিষয়টি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও বিদ্যমান, সোসিওলজি তথা সমাজ-বিজ্ঞানেও এই শিরক অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
চলবে…..
প
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যতীত বিশ্বাস
এরপর যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল, সঠিক উপায়ে সৎকর্ম ব্যাতীত বিশ্বাস। আপনারা অনেক মানুষকে পাবেন যাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অনেক মজবুত। কিন্তু বিশ্বাস মজবুত থাকলেও তারা সৎকর্মটি সঠিক পন্থায় করে না। তারা ঐ সকল বিষয়ের অনুসরণ করে যেগুলো এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম পর্যন্ত যা পৌছেছে অর্থাৎ যেগুলো তারা তাদের বাপ-দাদাদের মাধ্যমে পেয়েছে। এই ইসলামকে আমরা বলতে পারি কালচারাল ইসলাম আর খ্রিস্টান মিশনারীরা যারা মিশনারীর কাজে নিয়োজিত তারা এটাকে বলে থাকে Folk ইসলাম। আপনি যদি তাদের মিশনারী কাজের রিপোর্টগুলো পড়েন তাহলে দেখবেন সেখানে পরিস্কার ভাষায় লেখা রয়েছে যে, আমাদের Folk ইসলামের প্রতি বেশী জোর দিতে হবে, আর এভাবেই আমরা তাদের কাছে ঈসা (আ) বার্তা পৌছে দিতে পারবো। কারণ, Folk ইসলাম একজনের বিশ্বাসকে রক্ষা করতে পারে না। এই Folk ইসলামের মধ্যে এমন অনেক কিছুর অনুসরণ করা হয় যা ইসলাম অনুমোদন করে নি। আর এটা মিশনারীদের জন্যে অনেজ সহজ কারণ Folk ইসলামের সাথে খ্রিস্টিয়ানিটির অনেক মিল রয়েছে। তাদের রিপোর্টে লেখা রয়েছে, আমাদেরকে অবশ্যই ভাল মুসলমানদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে অর্থাৎ যাদের সঠিক বিশ্বাস রয়েছে আর যারা সৎকর্ম করে ঠিক সেইভাবে যেভাবে করতে আল্লাহ নির্দেশ করেছেন। তারা এই ধরণের মুসলিমদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।
এই মিশনারীরা যে সকল জায়গায় তাদের কার্যক্রম চালাতে সফল হয়েছে আপনারা যদি সেদিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের মতো জায়গাগুলো। মিশনারীরা এমনসব জায়গায় যায় যেখানকার মানুষগুলো খুবই দরিদ্র এবং অশিক্ষিত। তারা সেখানে যেয়ে তাদের টাকা দেয়, তাদের সাহায্য করে আর বলে আমরা তোমাদের সাহায্য করছি কারণ তোমাদের প্রতি ঈসা (আ) এর ভালবাসা রয়েছে এরপর সেই লোকগুলোকে তারা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করায়। এই একই ঘটনা ঘটছে ইন্দোনেশিয়াতেও যেখানে মানুষগুলো ইসলামের নামে এমন সব কাজ করছে যেগুলোর ইসলামে কোন অস্তিত্বই নেই। যদিও মিশনারীরা হাজার হাজার মুসলিমকে খ্রিস্টান বানাচ্ছে কিন্তু আপনি তাদের মাঝে একজন ইসলামিক স্কলার বা যে জানতো ইসলাম বলতে সত্যিই কি বুঝায় এমন কাউকে খুজে পাবেন না। বিপরীতদিকে আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, যারা খ্রিস্টান থেকে ইসলাম গ্রহণ করছে তাদের মধ্যে অনেক স্কলার রয়েছে। এটা পরিস্কার যে যারাই জ্ঞানী তারাই ইসলাম গ্রহণ করছে।
প্রকৃতপক্ষে অশিক্ষিত লোকদের বুঝানো খুবই কঠিন কারণ তারা যেভাবে ইসলাম পালন করছে তার প্রতি খুবই ইমোশনাল। সুতরাং এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি সঠিক পন্থায় সৎকর্ম করা আবশ্যক অর্থাৎ বিশ্বাস এবং সৎকর্মের সাথে সঠিক পন্থায় সৎকর্ম বিষয়টি থাকতে হবে। কারণ, কেউ যদি ভুল পন্থায় সৎকর্ম করে আর যদিও তার বিশ্বাস ঠিক থাকে কিন্তু এক পর্যায় যেয়ে সে শিরকে লিপ্ত হয়ে পরবে। উদাহরণ স্বরুপ আমরা বলতে পারি, ভারত এবং মিশরের মতো দেশের কথা, সেখানে যখন কোন সৎ লোক মারা যায় তারা তখন তার কবরের উপর মাজার তৈরী করা হয় এবং মানুষজন সেখানে যাওয়া শুরু করে, কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা শুরু করে, মৃত ব্যক্তিদের তারা উছিলা হিসেবে গ্রহণ করে অর্থাৎ তারা মনে করে তাদের প্রার্থনা এই মৃত ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট পৌছে দিবে আর ফলশ্রুতিতে তাদের দোয়া কবুল হবে। আপনারা যদি ব্যক্তিগতভাবে এই ধরণের মানুষদের সাথে কথা বলেন তাহলে দেখতে পাবেন তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি খুবই দৃঢ়। এমনকি তারা তাদের বিশ্বাসের জন্য মরতেও রাজি কিংবা আপনারা যদি তাদের সামনে ইসলাম সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলেন তারা আপনাকে মেরে পর্যন্ত ফেলবে! কিন্তু ইবাদত কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত আর যার ফলশ্রুতিতে তারা শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা এমন পন্থায় ইবাদতে লিপ্ত হয়ে পড়ে যা তাদের বিশ্বাসকে বাতিল করে দেয়। কারণ, কুরআনে আল্লাহ তাআলা পরিস্কার করে বলেছেন, শিরক ব্যতীত বান্দাহ যত প্রকার গুণাহই করুক না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিতে পারেন। শিরক যার মানে হচ্ছে অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে ইবাদত করা। এই গুণাহটাই হচ্ছে একমাত্র ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আর কেউ যদি এই শিরক করা অবস্থায় মারা যায় তখন সে নিজেকে গ্যারান্টি দিতে পারে যে সে চিরদিনের জন্য জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যাবে! আমাদের বিশ্বাস এবং সৎকর্ম হতে হবে সঠিক বিশ্বাস এবং সঠিক পন্থায় আর আমরা যদি তা করি আল্লাহ তাআলা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে এই দুনিয়া এবং পরকাল উভয় স্থানেই আমরা সাফল্য মন্ডিত হব।
এখন এটা আমাদের জন্য জানা আবশ্যক যে সঠিক বিশ্বাস বলতে আসলে কি বুঝায় বা সঠিক বিশ্বাসের জন্য আমাদের কি কি জানা প্রয়োজন। সঠিক বিশ্বাসের জন্য প্রথমেই আল্লাহকে চিনতে হবে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, যিনি এই সমগ্র বিশ্বকে পরিচালিত করছেন, আল্লাহর গুণাবলীকে এমনভাবে জানতে হবে যাতে করে আমরা সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর সৃষ্টির গুণাবলীর মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করতে সক্ষম হই। যার ফলে কোনগুলো আল্লাহর গুণাবলী আর কোনগুলো সৃষ্টির গুণাবলী সে সম্পর্কে আমাদের মনে কোন সন্দেহ থাকবে না এবং ইবাদত করতে হবে সরাসরি শুধুমাত্র সেই সৃষ্টিকর্তার জন্য। এই বিষয়টিকে আমাদের গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। যার ফলে আমরা কখনই এমন কারো ইবাদত করবো না যেখানে সেই ইবাদত বা উপাসনা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কোন সৃষ্টিকে আমরা আল্লাহ তাআলার গুণাবলী দিয়ে ভূষিত করবো না যদিও এই বিষয়টি বিভিন্ন উপায়ে সংগঠিত হতে পারে। আবার অনেক সময় আমরা কোন সৃষ্টিকে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী দিয়ে ফেলি নিজের অজান্তেই।
যার উৎকৃষ্ট একটি উদাহরণ হচ্ছে, আইনস্টাইনের ‘থিওরী অব রিয়েলিটিভিটি’। এই থিওরীটি হচ্ছে E=mc2 এখানে Energy (E) বা শক্তি = বস্তু এবং আলোর গতির দ্বিগুণ। আর এটি এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে যে, শক্তি বা বস্তু সৃষ্টি করা যায় না বা ধ্বংসও করা যায় না। যেখানে বস্তু শক্তিতে রুপান্তরিত হয় আবার শক্তি বস্তুতে রুপান্তরিত হয় আর এটা হচ্ছে একটি অবিরাম প্রক্রিয়া। কিন্তু এই তত্ত্বটিকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তা একটি শিরক! সূত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়, শক্তি বা বস্তুকে সৃষ্টিও করা যায় না আবার ধ্বংসও করা যায় না যা এই শক্তি বা বস্তকে যে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে অস্বীকার করা হয়। বলা হয়, শক্তিকে সৃষ্টি করা যায় না কিন্তু শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন একমাত্র এ গুণের অধিকারী। কাজেই যখন আমরা বলি শক্তিকে সৃষ্টি করা যায় না তখন আমরা শক্তিকে আল্লাহর বৈশিষ্ট্যে গুণান্বিত করি। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “ওয়া হুয়া খালাকা কুল্লি শাইয়িন” অর্থাৎ তিনি সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন। আবার, যখন আমরা বলি, শক্তিকে ধ্বংস করা যায় না তখন আবার আমরা আল্লাহর বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করি। কারণ আল্লাহ তাআলাই একমাত্র যিনি কখনও ধ্বংস হবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “কুল্লিমা আলাইহা ফানিন” অর্থাৎ এই বিশ্বের সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটাই হচ্ছে বাস্তব। কাজেই একজন মুসলিম যখন এই রকম থিওরী শিখবে বা শিখাবে তখন তাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। সে শুধু এটুকুই গ্রহণ করতে পারবে যে, মানুষ শক্তিকে ধ্বংস বা সৃষ্টি করতে পারে না। কিন্তু বিষয়টিকে যদি এইভাবে না নিয়ে খোলাখুলিভাবে নেওয়া হয় যেখানে শক্তিকে ধ্বংস বা সৃষ্টি করা যায় না তাহলে এটা শিরক হয়ে যাবে। কাজেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বৈজ্ঞানিক এমন অনেক কিছুই আমরা ব্যাখ্যা করার জন্য গ্রহণ করছি যাতে শিরক অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। আর এই শিরকের বিষয়টি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও বিদ্যমান, সোসিওলজি তথা সমাজ-বিজ্ঞানেও এই শিরক অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
চলবে…..